অন্তর্বর্তী সরকার গড়া নিয়ে বঙ্গভবনে বৈঠক, গুরুত্ব পাবে পড়ুয়াদের একগুচ্ছ দাবি?

Bangladesh Student's Proposal: পড়ুয়াদের আন্দোলনের জেরেই হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা কী হওয়া দরকার, তা নিয়েও একগুচ্ছ প্রস্তাব রয়েছে পড়ুয়াদের।

পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলনের জের ধরে বাংলাদেশে এত বিশালাকার ধারণ করল গণবিক্ষোভ, তার শুরুটা হয়েছিল ছাত্র আন্দোলন দিয়ে। সোমবার সরকার পতনের পরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছিল, তাঁদের আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি। একগুচ্ছ দাবি এখনও রয়েছে তাঁদের। তার মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গড়া থেকে শুরু করে দোষীদের শাস্তির মতো একগুচ্ছ দাবিদাওয়া। ফলে সেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের এখনও স্তিমিত হয়নি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় উত্তেজনা রয়েছে এখনও। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সরকারও ভেঙে দিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিন। ভাঙা হয়ে গিয়েছে সংসদও। দেশ চালাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কারা থাকবেন? এই নিয়ে ইতিমধ্যেই বৈঠকে বঙ্গভবনে বসেছে বৈঠক। পাশাপাশি সেই সরকার গড়া নিয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন পড়ুয়ারাও।

বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও তিনবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সদস্যের একটি দল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ বৈঠক শুরু হয় বলে প্রথম আলো সূত্রের খবর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যপক তানজীমউদ্দীন। বৈঠক শেষে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন নাহিদ।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ব্যাপক রদবদল! সরানো হল হাসিনা ঘনিষ্ঠ মেজরকে

গত জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনে জয় নিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। তবে কোটা সংস্কার ঘিরে জুন মাসে শুরু হওয়া ছাত্র বিক্ষোভ জুলাইয়ের শেষ ও আগস্টের শুরুর দিকে ব্যাপক সরকারবিরোধী আন্দোলন রূপ নেয়। তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে সোমবার পদত্যাগ করেন হাসিনা। জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে বোন রেহানাকে নিয়ে ছাড়েন দেশ। আপাতত ভারতে রয়েছেন তাঁরা।

পড়ুয়াদের আন্দোলনের জেরেই হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা কী হওয়া দরকার, তা নিয়েও একগুচ্ছ প্রস্তাব রয়েছে পড়ুয়াদের। সেই প্রস্তাবের শুরুতেই রয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার দাবি। শোনা গিয়েছে সেই প্রস্তাবে মত রয়েছে নোবেলজয়ীরও। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আর যাঁদের রাখার প্রস্তাব করেছেন পড়ুয়ারা, তাঁরা হলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, মতিউর রহমান চৌধুরী (মানবজমিন), ড. আসিফ নজরুল, ড. সলিমুলিলাহ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. সাখাওয়াত হোসেন, মেজর জেনারেল মুনিরুজজামান, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, ডা: পিনাকী ভট্টাচার্য, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং প্রজেশ চাকমা।

এখানেই শেষ নয়, আরও বেশ কিছু প্রস্তাব রয়েছে পড়ুয়াদের। তাঁদের বক্তব্য, সরকারের মেয়াদ ৩-৬ বছর (সর্বোচ্চ) হোক। মেয়াদ শেষের ৩ মাস আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট বিকেলের মধ্যেই সরকার গঠন করতে হবে। পার্লামেন্ট অবশ্য তাঁদের দাবি মেনে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির অপসারণ বা পদত্যাগ এবং দলবাজ বিচারপতিদের অপসারণ চেয়েছেন তাঁরা। তিন বাহিনী বাদে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিভিন্ন প্রধানদের অবসরে পাঠানোরও দাবি জানিয়েছেন পড়ুয়ারা।

এখানেই শেষ নয়। আরও কয়েক দফা প্রস্তাব দিয়েছেন পড়ুয়ারা। তার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বাতিলের পাশাপাশি সরকারের সমস্ত চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ বাতিলের প্রস্তাব। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মঞ্চের দাবি, ছাত্র-নাগরিক হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আহত ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণও দিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ইস্যুতে কোন পথে এগোবে ভারত? হাসিনাকে নিয়ে যা জানালেন জয়শঙ্কর

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেমে পুলিশ ও বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চলে গিয়েছে অসংখ্যা প্রাণ। তাঁদের কথা স্মরণে রেখে জুলাই মাসকে জাতীয় শোকের মাস ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছেন পড়ুয়ারা। একইসঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে ও শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের এই সমস্ত দাবিই মঙ্গলবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে বঙ্গভবনের বৈঠকে। আর তার পরেই সরকারের রূপরেখা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে খবর।

More Articles