অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াই কেড়ে নিল বাপ্পি লাহিড়ির প্রাণ, নিঃশব্দে হানা দেয় এই ঘাতক অসুখ
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুশোক তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাঙালি। রাত পোহাতেই বাঙালির ঘুম ভাঙলো আরও এক মৃত্যুর খবরে। বুধবার সকালে খবর আসে বাপি লাহিড়ী মারা গিয়েছেন মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে। ৬৯ বছর বয়সেই বিদায় নিলেন হিন্দি ছবিতে ডিস্কো গানের সম্রাট। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে মুম্বাইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালের ডিরেক্টর ডঃ দীপক ন মযোশী জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন প্রবীণ এই সঙ্গীত পরিচালক। একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। জানা গেছে মধ্যরাতে ওএসএ (OSA) বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত বছর করোনা আক্রান্ত হলেও সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। এবারে আর শেষ রক্ষা হল না, চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন বাংলার ছেলে বাপ্পি লাহিড়ি।
তাঁর মৃত্যুর পর ভারতীয়রা অনেকেই গুগল সার্চ করে জানতে চাইছেন এই রোগের ব্যাপারে।চলুন জেনে নেওয়া যাক এই রোগের খুঁটিনাটি-
ওএসএ (OSA) বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া কী?
এটি হল একধরনের শ্বাসযন্ত্র ও শ্বাসনালীর জটিল সমস্যা।তবে বিরল নয়। গবেষণায় পাওয়া গেছে, ভারতীয় মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ। পুরুষদের মধ্যে ১৩.৭% প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৭.৫% মধ্য প্রাপ্ত বয়স্ক এই রোগে আক্রান্ত হন ভারতে।মেনোপজে মহিলাদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি এক ধরনের লাইফ স্টাইল ডিজিজও।
ডাক্তারি পরিভাষায় বিভিন্ন ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া রয়েছে তার মধ্যে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই রোগে ঘুমের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসক্রিয়া অনিয়মিত হয়ে পড়ে।অনেকসময় ঘুমের মধ্যে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় যা মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গলার পেশী মুখগহবরের আলজিহ্বা, জিহ্বা এবং টনসিলকে ধরে রাখে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির গলার পেশী অতিমাত্রায় শিথিল হয়ে যায় ফলে শ্বাসক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হয়। মাত্র ১০ সেকেন্ড শ্বাসক্রিয়া ব্যাহত হলেই দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়ে ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
কী কী কারণে এই রোগ হতে পারে?
১. এই রোগের অন্যতম কারণ স্থূলতা। টনসিল বড় হয়ে গেলেও এই রোগ হতে পারে।
২. হাইপারটেশন, পলিসিস্টিকওভারির মতো সমস্যা থেকেও এই রোগ দেখা দিতে পারে।
৩. স্নায়ুর সমস্যার কারণেও এই রোগ হতে পারে।
৪. অন্তঃসত্ত্বা মহিলারাও এই রোগে আক্রান্ত হন।
৫. ধূমপানের অভ্যাস থেকেও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে।
লক্ষণগুলি কী?
১. সশব্দে নাক ডাকাই এই রোগের প্রাথমিক ও প্রধান লক্ষণ। নাক ডাকার সমস্যা বেড়ে যাওয়ার অর্থ এই রোগে ঝুঁকির পরিমাণও বাড়ছে।
২.ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ হয়েও আসে অনেক সময়।
৩. আচমকা রাতের বেলায় ঘুম ভেঙে যায় এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির।
৪. ঘুমের মধ্যে মুখ শুকিয়েও উঠতে পারে
৫. আক্রান্ত ব্যক্তি অতিমাত্রায় ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন।স্লিপ সাইকেল সম্পূর্ণ না হওয়ায় একটু বসে থাকলেই ঘুমিয়ে পড়েন।
৬. অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ব্যক্তির ওজন বাড়তে থাকে ফলে ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যার প্রবণতা বেড়ে যায়।
৭. সবকিছু ভুলে যাওয়া এবং ঘুম থেকেই উঠেই মাথা যন্ত্রণা হতে পারে আক্রান্ত রোগীর।
রোগের চিকিৎসা
• এই উপসর্গগুলি নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে তাঁরা ব্যক্তির স্লিপ স্টাডি করে দেখেন। সিপ্যাপ মেশিন ব্যবহার করে ঘুমের সাইকেল ঠিক করা হয়।
• অ্যাডিনয়েড টনসিলে সমস্যা দেখা দিলে টনসিল অপারেশন করে দেওয়া হয়।
•জিভের পুরু অংশ অনেক সময় অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়।
•দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
•ইউভিলা বা অ্যালজিহ্বা অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়।