লঙ্কা হইতে সাবধান! ভূত মরিচের এক কামড়েই ফুটো হতে পারে ব্রহ্মতালুও!

Bhut Jalokiya : ২০০৭ সালের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বলা হয়েছিল ভূত মরিচ নাকি বিশ্বের উষ্ণতম মরিচ

জিভে ঠেকাতেই ছলছল করে উঠলো চোখ দুটো, আর কামড় দিলে তো কথাই নেই! রসগোল্লা, পান্তোয়া তো দূর খাঁটি নলেন গুড় এসেও সে বিপদ সামাল দিতে পারবে না। এমনই তার ঝাঁঝ! শুধু স্বাদে নয়, নামেও বেশ ঝাঁঝালো সে। দেখতে ছোটখাটো এই জাতের লঙ্কাটির নাম ভূত মরিচ বা ভূত জালোকিয়া। ভূত লঙ্কাও বলে কেউ কেউ। মোদ্দা কথা ভূতে ভয় না পাওয়া মানুষটিও যে লঙ্কা ভূতে জব্দ হবেন এ নিশ্চিত। সটান ব্রহ্মতালু পর্যন্ত না নাড়িয়ে রক্ষে নেই!

২০০৭ সালের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বলা হয়েছিল যে, এই ভূত মরিচ নাকি বিশ্বের উষ্ণতম মরিচ। স্বাদ নিলেই ছ্যাঁকা! তাবাসকো সসের চেয়েও ৪০০ গুণ বেশি ঝাল এই লঙ্কায়। এক মিলিয়নেরও বেশি স্কোভিল হিট ইউনিট (এসএইচইউ) রেট দেওয়া হয়েছে এই মরিচকে। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে উত্তপ্ত মরিচ গজানোর দৌড়ে ভূত মরিচটি পিছনে ফেলেছে তাবড় তাবড় প্রতিযোগীদেরও। ২০১১ সালে এবং ২০১৩ সালে যথাক্রমে ত্রিনিদাদ বৃশ্চিক বাচটি মরিচ এবং ক্যারোলিনা রিপার মরিচকে ছড়িয়ে মুকুটখানাও বাগিয়ে রেখে ভূত লঙ্কাই।

আরও পড়ুন : চৈতের চাঁদ আর মরিচ পান্তার দাস্তান

স্বাদ এক হলেও নামে অভিনবত্ব রয়েছে এই লঙ্কার। ভূত মরিচ বা ভূত জালোকিয়া ছাড়াও কামরাঙা মরিচ, বোম্বাই মরিচ এবং নাগা মরিচ নামেও ডাকা হয় একে। ভূত মরিচ বা ভূত জোলোকিয়া শব্দটির অসমিয়া ভাষায় আক্ষরিক অর্থ ভুটানিজ মরিচ। মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতে চাষ করা একটি স্বতন্ত্র হাইব্রিড লঙ্কা এটি। এটি ক্যাপসিকাম চিনেসেন্স এবং ক্যাপসিকাম ফ্রুটসেন নামক উদ্ভিদের শঙ্কর প্রজাতি।

এই লঙ্কার ছাল পাতলা হলেও অত্যন্ত ঝাল তাতেই।একটিও বীজ জিভে যদি রাখা হয়, তবে আর মিনিট তিরিশের আগে রক্ষে নেই! সহ্য করতে হবে ভীষণ জ্বালা! আসাম এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি, জোরহাট এবং আই সি এ আর –এর যৌথ উদ্যোগে গবেষণা চলছে এই লঙ্কা নিয়ে। এর মধ্যে যে ক্যাপসাইসিন থাকে, তা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরিতে। আর্থরাইটিস, মাইগ্রেন, সাইনাস এবং চর্মরোগের মতো রোগ নিরাময়ের এছাড়াও আরশোলা, পিঁপড়ে ইত্যাদি পোকামাকড়ের নিয়ামক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভূত লঙ্কা। সাধারণ লঙ্কায় যেখানে ১% ক্যাপসাইসিন থাকে সেখানে এই ভূত লঙ্কায় থাকে ৩-৫%। তাই বিদেশের বাজারেও এই লঙ্কার ক্যাপসাইসিন ও অলেরেসিনের চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। আসাম থেকে বর্তমানে এই লঙ্কা রপ্তানি করা হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার বহু জায়গায়। তবে এটি খুব বেশি খেলে পেটের সমস্যা এবং ডায়রিয়া হতে পারে। তাই আচার অথবা রান্নায় বেশি ব্যবহার করলে বিপদে পড়তে হবে ঠিকই তবে অন্যান্য রোগের বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভরসা করতেই হয় ভূত লঙ্কাকে।

More Articles