মাটি খুঁড়তেই মেলে ৪৫০০ বছরের প্রাচীন সূর্যমন্দির, শিহরণ জাগায় মিশরের যে ইতিহাস
Sun Temple in Egypt : মাটির তলায় এত এত বছর শায়িত থাকা সত্ত্বেও ধ্বংসাবশেষ দেখে সহজেই আঁচ করা যায় সেই মন্দিরের অসাধারণ স্থাপত্য সম্পর্কে। শিহরণ জাগায় এই আবিষ্কার।
মাটির নিচেই লুকিয়ে ছিল আস্ত একটা মন্দির, প্রত্নতাত্বিক খননে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৪৫০০ বছরে পুরনো এই দেবালয়। গত ৫০ বছরের মধ্যে এটিই মিশরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মিশর বলতেই প্রথমে মাথায় আসে মমির কথা, পিরামিডের কথা। প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয় এই শহর। এখানে মাটির নীচে শায়িত রয়েছে অজস্র ইতিহাস, তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই সূর্য মন্দির। মনে করা হয়, মিশরের প্রাচীন শাসকেরা ছয়টি সূর্যমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এগুলোর সবকটিরই বয়স প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরের কাছাকাছি। যার মধ্যে চারটি সূর্যমন্দির নির্মাণ করেন মিশরের প্রাচীন শাসক ফারাওদ। জানা গিয়েছে যে, সর্বশেষ খুঁজে পাওয়া এই মন্দিরটিও নির্মাণ করে ফারাওদ। প্রথম সূর্য মন্দিরটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ১২৫ বছর আগে, আর দ্বিতীয়টি সূর্যমন্দিরটি আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮৯৮ সালে। শেষ খুঁজে পাওয়া মন্দিরটি হল তৃতীয়। অর্থাৎ পুরাতাত্বিক তথ্য অনুযায়ী আরও তিনটি সূর্য মন্দিরের হদিশ পাওয়া এখনও বাকি।
প্রাচীন মিশরে উপাস্য দেবদেবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সূর্যদেবতা ‘রা’। মিশর থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্যারিরাস ও নথি অনুযায়ী সূর্য দেবের উপাসনাই সেই সময় সব থেকে বেশি করে প্রচলিত ছিল। ঠিক তাই একই সঙ্গে এতগুলি সূর্যমন্দির নির্মাণের কথা জানা যায়। মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে ১২ মাইল দক্ষিণে আবু ঘুরাবের পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ একটি এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক কাজ করতে গিয়ে এই সূর্যমন্দিরটির সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।
আরও পড়ুন - মমিতে লুকিয়ে অবিশ্বাস্য রহস্য! মিশরের এই সম্রাটকে নিয়ে যে প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি
মাটির তলায় এত এত বছর শায়িত থাকা সত্ত্বেও ধ্বংসাবশেষ দেখে সহজেই আঁচ করা যায় সেই মন্দিরের অসাধারণ স্থাপত্য সম্পর্কে। মন্দিরের ভিতরে ছিল বিরাট গর্ভগৃহ। সেখানে রয়েছে বিশাল লম্বা এক স্তম্ভ। অনুমান করা হচ্ছে, সেখানেই সকলে মিলে সূর্য দেবেরভআরাধনা করত। মেডিটেরানিয়ান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল কালচারের হয়ে এই পুরাতাত্ত্বিক গবেষণাটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিরেক্টর মাসিমিলিয়ানো নুজলো জানান, ঊনিশ শতকে এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছিল। তবে গত ৫০ বছরের মধ্যে এ সংক্রান্ত এত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আর কিছু হয়নি। ১৮৯৮ সালে পাওয়া মন্দিরটির নিচ থেকেই গবেষকরা খুঁজে পান সর্বশেষ আবিষ্কৃত মন্দিরটির ধ্বংসস্তূপ। মাটি ও কাদার তৈরি বিভিন্ন ইট এবং স্তম্ভ দেখেই আঁচ করা গিয়েছিল এর অস্বিত্ব সম্পর্কে। অবশেষে সেখানে দীর্ঘ খনন কার্য চালায় গবেষকরা।
মিশরের পোলিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ফর মেডিটেরানিয়ান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল কালচারের তরফে এক দল প্রত্নতাত্বিক দায়িত্বে ছিলেন এই অভিযানের। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন মিশরতত্ত্বের অধ্যাপক মাসিমিলানো নুজলো। যদিও এখনও এই পুরনো সূর্যমন্দিরটির পুরোপুরি খোঁজ মেলেনি বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা। সামান্য অংশই প্রকাশ্যে এসেছে। তার পর থেকেই টানা দুই বছর ধরে গবেষকরা লেগে রয়েছেন এই পুরতাত্বিক সংগ্রহের কাজে। আরও অনেক অজানা তথ্য উঠে আসতে পারে যে কোনও মুহূর্তেই। এই ঘটনা নিয়ে তাই আজও শিহরিত সকলেই।