শূন্য থেকে সংখ্যায় ফিরতে বড় সিদ্ধান্ত বামেদের! কী হতে চলেছে নয়া স্ট্র্যাটেজি?

CPM: আর এ প্রসঙ্গেই সিপিএমের সবজান্তা মনোভাব ত্যাগের কথা বলেছেন সেলিম। তাঁর কথায়, ‘আমরাই সব জানি, অন্যেরা জানেন না, এমনটা যেন না হয়।’’ শুধু দলের কর্মীসদস্য বা সমর্থক নয়, একই সঙ্গে জেলাস্তরে পর্যালোচনাও শুরু করে দিয়েছে সি...

আরও একবার নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সিপিএম। লোকসভা ভোটে রুজি-রুটির প্রতিশ্রুতি নিয়ে ময়দানে নেমেছিল বামেরা। একরাশ নতুন সম্ভাবনাময় মুখ, মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ- সবই কার্যত বিফলে গিয়েছে শেষপর্যন্ত। ২০২৪ লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে একটি আসনও পকেটে পুরতে পারেনি বামেরা। আর তার পরেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে জোর সমালোচনা। শুধু বাইরেই নয়, দলের অন্দরেও শুরু হয়েছে এই হারের পর্যালোচনা। এবার বামেদের অবস্থান নিয়ে বড় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

অনেকেই বলছেন, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পের জোরেই ভোটের নদী পার করেছে তৃণমূল। অনেকেই সেই প্রকল্পকে সরকারের দেওয়া মহিলাদের ভিক্ষা বলেও ব্যাখ্যা করেন। সম্প্রতি সেই বক্তব্যের জোর নিন্দা করেছিলেন সেলিম। বামপন্থি মতাদর্শর সঙ্গে সরকারের এই ধরনের ভাতা-প্রকল্পের কোনও বিরোধ নেই বলেও জানিয়ে দেন তিনি। এবার সিপিএমের দলীয় অবস্থান নিয়ে ফের বড়সড় বার্তা দিলেন সেলিম। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর 'সবজান্তা' মনোভাব পরিত্যাগ করতে চায় সিপিএম। ভোটে হারের পর্যালোচনা এবার আর কমিটি স্তরেই সীমিত রাখতে চায় না আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ থেকে দলের সাম্প্রতিকতম অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের এই বরিষ্ঠ নেতা।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সত্যিই মহিলাদের ‘ভিক্ষা’? কী বললেন মহম্মদ সেলিম?

সূত্রের খবর, এতদিন পর্যন্ত নির্বাচনী পর্যালোচনা মূলত হত সিপিএমের কমিটি স্তরেই। কখনও কখনও এ ব্যাপারে সমর্থকদেরও মতামত নেওয়া হয়েছে। তবে এ বার সেই স্ট্র্যাটেজি থেকে বেরিয়ে এই প্রথম বৃত্তটিকে আরও ছড়িয়ে দিতে চাইছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, মোটামুটি তিন ধাপে পর্যালোচনার পরিকল্পনা রয়েছে বামেদের। প্রাথমিক ধাপ দলীয় সদস্যদের পর্যালোচনা। আর সেই ধাপ সম্পূর্ণ হলে শোনা হবে কর্মী সমর্থকদের মতামত। এমনকী যাঁরা রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত নয়, হয়তো তারা বামেদের ভোটও দেননি। কিন্তু নানা ভাবে দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন, সাহায্য করেছেন নানা পর্যায়ে, তাঁদের মতামতকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বামেদের।

আর এ প্রসঙ্গেই সিপিএমের সবজান্তা মনোভাব ত্যাগের কথা বলেছেন সেলিম। তাঁর কথায়, ‘আমরাই সব জানি, অন্যেরা জানেন না, এমনটা যেন না হয়।’’ শুধু দলের কর্মীসদস্য বা সমর্থক নয়, একই সঙ্গে জেলাস্তরে পর্যালোচনাও শুরু করে দিয়েছে সিপিএম। নির্বাচনী পর্যালোচনায় যাতে কোনও রকম ফাঁক না থেকে যায়, তার জন্য নির্দিষ্ট পয়েন্টে ফর্মও ছাপা হয়েছে দলের তরফে। ইতিমধ্যেই সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠক হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী ১৯-২০ জুন রাজ্যকমিটির বৈঠক রয়েছে। তার পর ২৮ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে।

শুধু সেলিম নয়, এর মধ্যে হস্তক্ষেপ করেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। তিনি জানিয়েছেন, ভোটে দলের ফলাফলে তাঁরা হতাশ। বাংলার ফলাফল তো বটেই, তার চেয়েও দল হতাশ কেরলের ফলাফল নিয়ে। সে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বাম সরকার হওয়া সত্ত্বেও সেখানে একটির বেশি আসন পায়নি তারা। কেরলে বিজেপির মাথা তোলা এবামেরাবং একটি লোকসভা আসন জিতে যাওয়া নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত বাম শীর্ষ নেতৃত্ব।

আরও পড়ুন: সিপিএমের নতুন মুখরা বামের ভোট রামে যাওয়া ঠেকাতে পারবে এবার?

বাংলায় যেন বামেদের পিছন ছাড়ছে না শূন্য। সেই কবে থেকে পরের পর ভোটে একটিও আসন জিততে পারেনি বামেরা। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের প্রাথমিক পর্যালোচনা বলছে, যে যে আসনে এবার বামেরা লড়েছিল, সেই তেইশটির মধ্যে অন্তত কুড়িটি আসনে কিন্তু ২০২১ সালের তুলনায় ভোট সামান্য হলেও বেড়েছে। ২০০৬ সাল থেকে সিপিএমের যে উল্টোগুনতি শুরু হয়েছিল, তা অনেকাংশেই ঠেকানো গিয়েছে এই লোকসভা ভোটে। এবার সেটাকে পজিটিভ ধরেই নিজেদের বৃত্তকে বাড়িয়ে পুরনো ভুল সংশোধন করে নিতে চাইছে বামেরা। এখন দেখার নতুন এই নীল নকশা বামেদের জমি ফিরিয়ে দিতে পারে কি না আদৌ।

 

More Articles