‘বাংলাদেশি’ তকমা! ওড়িশায় কেন নির্যাতনের শিকার বাংলার শ্রমিকেরা?
Bengali Labour Harassed in Odisha: ওড়িশার ভদ্রক জেলায় ফেরিওয়ালার কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের বাসিন্দারা। প্রায় দু'দশক ধরেই ওই কাজ করে আসছেন তাঁরা।
কিছুদিন আগেই শাসক বদল হয়েছে পড়শি রাজ্য ওড়িশায়। পঁচিশ বছরের বিজু জনতা দলের শাসন শেষ হয়ে সেখানে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। এবার সেই বিজেপি শাসিত ওড়িশায় উঠল গুরুতর অভিযোগ। ওড়িশায় কাজ করতে গিয়ে অত্যাচারিত একাধিক বাংলার শ্রমিক। প্রায়শই রোজগারের আশায় ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান এই বাংলার শ্রমিকেরা। এবার ওড়িশায় কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মুর্শিদাবাদের শতাধিক বাসিন্দা। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে বলে তাঁদের পাল্টা নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
ওড়িশার ভদ্রক জেলায় ফেরিওয়ালার কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের বাসিন্দারা। প্রায় দু'দশক ধরেই ওই কাজ করে আসছেন তাঁরা। কিন্তু সম্প্রতি বিজেপি শাসিত ওড়িশায় হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের। যার জেরে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা নিজের কাজকর্ম ছেড়ে ফের বাংলায় ফিরে আসতে হয়।
সম্প্রতি সইরুদ্দিন মোমিন, রকিবউদ্দিন মোমিন ও মনজরুল শেখ নামে তিনি পরিযায়ী শ্রমিক ভদ্রক ছেড়ে পালিয়ে আসেন সমসেরগঞ্জের মহিস্থলী গ্রামে। তাঁরা তিনজনেই গুরুতর আহত অবস্থায় এ রাজ্যে ফিরেছেন বলে জানা গিয়েছে। ওড়িশা ছেড়ে ফেরার আগে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান তাঁরা। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বিজেপি সমর্থকেরা ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে চড়াও হন তাঁদের উপরে।
আরও পড়ুন: উই দ্য পিপল: পাতা উল্টে ভারত ভ্রমণ করায় যে বই
সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা যায়নি। ওড়িশার খাদগিরি থানার ডুমুডুমা রহমদ এলাকায় পশ্চিমবাংলা থেকে আসা ফেরিওয়ালাদের নিগ্রহ করা হচ্ছে বলে দেখা যায় সেখানে। ওই সব বাংলা থেকে কাজ করতে যাওয়া ফেরিওয়ালাদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
ঠিক কী কারণে মারধর? জানা গিয়েছে, পশ্চিমবাংলা থেকে কাজ করতে যাওয়া ওই সব শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে কোণঠাসা করা হয়। এমনকী তাঁদের কাছ থেতে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করার নথি পর্যন্ত দেখতে চাওয়া হয়। আর তা দেখাতে অস্বীকার করতেই তাঁদেরকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
সাইরুল জানান, এক সন্ধ্যায় কয়েক জন এসে তাঁদের কাছ থেকে ওই কাগজ দেখতে চান। তাদের পরিচয় ও কেন কাগজ দেখাতে হবে, জানতে চাইতেই তাঁদের উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। চলে ব্যাট দিয়ে মারধর। তারপর তাঁরা ভদ্রক গ্রামীণ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তারা। প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওড়িশায় বিভিন্ন জিনিসপত্র ফেরি করছেন সাইরুল। মনজরুল জানালেন, কলকাতা থেকে বিভিন্ন প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ও পোশাক বোঝাই করে ওড়িশার চরাম্পা গ্রাম ও তার সংলগ্ন গ্রামগুলিতে বিক্রি করতেন তাঁরা। প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে এই কাজ করতেন তারা। সম্প্রতি ওই হামলার পরে প্রাণ বাঁচাতে এ রাজ্যে ফিরে আসেন তাঁরা।
মুর্শিদাবাদের ওই বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিছু দিন আগে দুই ব্যক্তি তাঁদের কাছে গিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করেন। হকারদের অভিযোগ, তাঁদের বাংলাদেশি বলে প্রচার করা হয়েছিল তার পর ফেসবুকে। সেই ভিডিও ছড়ানোর পরেই নানা ভাবে তাঁদের নিগ্রহের চেষ্টা করেন। তবে কেবল সাইরুল বা মনজরুলরাই নয়। প্রায় একশো জন পশ্চিমবাংলাবাসী রয়েছেন ভদ্রকে, যারা সাইরুলদের মতোই ওড়িশায় হকারি করে সংসারনির্বাহ করেন। তাঁদের বেশিরভাগই ভয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন এই পরিস্থিতিতে।
আরও পড়ুন:১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে পিষে মেরেছিল ট্রেন, রুটির টুকরোরা আজও জ্যান্ত
শুধু সাইরুলরা নন। বীরভূমের নলহাটির এক বাসিন্দা যখন সাইকেলে করে কাপড় ফেরি করছিলেন, সেসময়ই তাঁকে ঘিরে ধরে বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হয়। আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেথানে দেখা যায় মুহাম্মদ আবুল কাশেম নামে এক প্লাস্টিক দ্রব্যের ফেরিওয়ালাকে মারধর করতে। তাঁদের ওড়িশা ছেড়ে চলে যাওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চলছে বলে মারধর শুরু হয় সেখানকার ওইসব অহিন্দু ফেরিওয়ালাদের, যারা আদতে পশ্চিমবাংলার বাসিন্দা। ঘটনাটি ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর কানে। আর তা শোনার পরেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন ক্ষুব্ধ মমতা। বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদেও। জঙ্গিপুর লোকসভা আসনের তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমান এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ভদ্রকে ইতিমধ্যে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে ওড়িশা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। ওই ঘটনায় স্থানীয় বিজেপি নেতা সায়ান পারিদাকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও খবর।