বাংলা মাধ্যমের ছেলেমেয়েরাও এখন খিচুড়ি বাংলা বলে

পয়লা বৈশাখের দিনটাতে ব্যবসায়ীদের পালনীয় নিয়মের মধ্যে পড়ে হালখাতা। গঙ্গায় যাওয়া, কালীঘাটে যাওয়া, সন্ধেবেলা নতুন খাতা খোলা- ইত্যাদি এই ব্যবসায়িক ঐতিহ্যর মধ্যে পড়ে। আরেকটি ঐতিহ্য হল পারিবারিক। যার মধ্যে রয়েছে নতুন জামাকাপড় পরা, খাওয়াদাওয়া, গুরুজনদের প্রণাম করা, আর মেয়েদের নানা ব্রতকথা। এটা মূলত হিন্দুদের কথাই বললাম। মুসলমানদের রীতিনীতি এক্ষেত্রে আমি জানি না। মোদ্দায়, আমার এই বয়সে, এইসব আচারের থেকে আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। আমি দেবতায় বিশ্বাস করি না। কাজেই পুজো বা হালখাতায় আমি নেই। আর জামা আমার যথেষ্ট আছে, তাতে বাকি জীবনটা চলে যাবে।

আরও পড়ুন: ‘বাংলা নববর্ষে হিন্দি গান গাইব না’, বলেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

আমি তবে কী চাই? আমি চাই, এই যে আমাদের বাঙালিত্ব চাগাড় দিয়ে ওঠে কিছু কিছু তারিখে, সে একুশে ফেব্রুয়ারি হোক, পয়লা বৈশাখ হোক, পঁচিশে বৈশাখ হোক বা উনিশে মে (বরাক উপত্যকার শহিদ দিবস)- এই বাঙালিত্বটা আমাদের ভাষার মধ্যে বজায় থাকুক! বাঙালিকে অন্য কোনওভাবে চেনা যায় না সে মুখ না খুললে। তার ভাষাতেই তার বাঙালিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়, ধর্মে নয়, পোশাকে নয়, খাবারদাবারেও আমরা যথেষ্ট আন্তর্জাতিক হয়ে গেছি এখন। কাজেই, বাংলা ভাষাটা যাতে বাংলা ভাষার মতো শোনায়, এই প্রত্যাশাটাই আমার থাকে এখন।

ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা একটা খিচুড়ি বাংলা বলে, বাংলা মাধ্যমের ছেলেমেয়েরাও এখন খিচুড়ি বাংলা বলে। ক'দিন আগেই এই নিয়ে যথেচ্ছ তর্ক হয়ে গেল, কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, সার্বিকভাবে ইংরেজি এখন একটা ডমিনেটি‌ং ল্যাঙ্গুয়েজ, যা সারা পৃথিবীর ভাষার ওপর প্রভুত্ব করে বেড়াচ্ছে। ফলে ইংরেজির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে বাংলা, এখন অবশ্য যে কোনও ভাষার মধ্যেই ইংরেজির প্রভাব ঢুকে গেছে! ইংরেজি বলতে পারলে আমরা একটা ক্লাসে উন্নীত হই, যাতে সাধারণ যেসব বাঙালি স্কুলে পড়েনি, তাদের সঙ্গে আমাদের একটা তফাৎ হয়ে যায়। তাদের আমরা আগে 'ছোটলোক' বলতাম, এখন তেমন বলতে সাহস করি না, 'অশিক্ষিত' ইত্যাদি বলি। এই শ্রেণিভেদটা যেন না থাকে, আর আমাদের ভাষাটা যেন মোটামুটি বাংলার মতো শোনায়। বিভিন্ন ভাষা থেকে নানা শব্দ অবশ্যই বাংলায় এসেছে। সেগুলিকে আমরা বাংলা বলেই ব্যবহার করব। কিন্তু দিনের শেষে তা যেন বাংলার মতো শোনায়, এটুকুই আমার প্রার্থনা।

নববর্ষে কিছু প্রার্থনা করলেই তা মিলবে, এমনটা আমি মনে করি না। তবে এটুকু বলতে পারি, চারপাশে খুন, ধর্ষণ, গণতন্ত্রের যে হত্যা আমরা দেখছি, তা থেকে যেন আমরা মুক্তি পাই। দেশ থেকে যেন এই দুর্গতি আমরা দূর করতে পারি।

More Articles