রাজসভার কবি ও কাব্য : অনির্বাণ বসু
Bengali Short Story: কবি ঠিক করে নেয় আগামীর পথ, অন্নদামঙ্গল লিখবে ভারতচন্দ্র, কিন্তু সেই মহৎ কাব্য লেখবার জন্যই প্রথমে তাকে লিখতে হবে বিদ্যা ও সুন্দরের রঙ্গলীলা।
কাঠের টেবিলটার উপর ইতিউতি ছোটখাটো ফোকর, ঘুণ ধরে ক্রমে গর্তের আদল স্পষ্ট— সংশয়ী করে তোলে, কমদামি আসবাবের পরিবর্তে নতুনটি খরিদের যোগ্যতা সম্পর্কে তাচ্ছিল্যজ্ঞান করে এবং পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুলস্কেপ লাইনটানা পৃষ্ঠাগুলির মধ্যে থেকে প্রাথমিক খসড়া কিছু —রম্যগদ্যের জার্নালধর্মী লেখা মূলত, বুঝি বা এতদিনকার যাপনকে ভেংচি কাটে। জীর্ণ সেই টেবিলের উপর দু’হাত রেখে পুরো শরীরের ভার ছেড়ে কোনওরকমে দাঁড়িয়ে আছে কাঁধ ঝুলে পড়া উত্তর-চল্লিশের এক যুবক, পেশায় অধ্যাপক, নেশায় সাহিত্যিক।
দেশের বিষয়ে চারপাশ উত্তপ্ত হয়ে আছে এখনও, তার মাঝেই ব্যক্তিগত পরিসরে নেমে এসেছে বিপর্যয়। সামনে মোহন হাতছানি, গ্রহণে পারিবারিক সংকট থেকে মুক্তি, তবু মন মানতে চাইছে না। ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে আছে তারকনাথ। ওদের কাগজে যে সে আগে লেখেনি, তা নয়; যদিও এবার ওই তরফে ফরমায়েশ যা, সেটাকেই মেনে নিতে সায় দিচ্ছে না ওর মন। এদিকে অধ্যাপনার মাইনে চোখে দেখা যায় না, বাংলা ভাষায় লিখে উপরি তেমন একটা রোজগার হয় না, ফলত পরিচিত কারও কাছে ধার চাইতেও সাহস হয় না। তাছাড়া, হাত পাততে বরাবরের অনীহা তার।
অরুণাচলপ্রদেশের সীমানায় ভারতের লাগোয়া জমি নিয়ে চিনে সৈন্যদের সঙ্গে দেশিয় সেনাবাহিনীর গুলিগোলা থেমে গেলেও লড়াইয়ের সবটা স্তিমিত হয়ে যায়নি; বস্তুত, জিইয়েই রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি যেদিন ছাপা হয়েছিল খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায়— ‘নেফা ও লাদকে চিনের যুগপৎ প্রচণ্ড আক্রমণ’ শিরোনামে, ইউনিভার্সিটিতে সেদিন ক্লাস ছিল তারকনাথের। সিটি কলেজের চাকরি ছেড়েছে বছর সাতেক হবে, কী একটা কাজে সেদিন যেতে হয়েছিল ওদিকে; আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে হাঁটতে হাঁটতে তখন বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে এসে পৌঁছেছে সে, মুখে মুখে ভেসে আসা খবরের টুকরো পৌঁছে গিয়েছিল তার কানে। প্রেসিডেন্সি কলেজের ভিতর দেওয়ালে, ক্যান্টিন আর ট্যাঙ্কের মধ্যবর্তী প্রাচীরগাত্রে, ছাত্র ফেডারেশনের শৈবাল লিখে দিয়েছে-
জনতা যখনই চায় বস্ত্র ও খাদ্য
সীমান্তে বেজে ওঠে যুদ্ধের বাদ্য
আরও পড়ুন- সাইকেল: অমৃতা সরকার
শৈবালের উপর সেদিন মনে মনে খুশিই হয়েছিল তারকনাথ; নিজের ছাত্রের ভূমিকায় গর্বিত শিক্ষক। বছর কয়েক আগে, ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি, কার্জন পার্কের আলো নিভিয়ে গ্রাম থেকে আসা চাষিদের যখন পিটিয়ে মেরেছিল পুলিশ আর তার ঠিক পরের দিন ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে শুরু হওয়া ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালিয়ে খুন করেছিল তরতাজা দুই ছাত্রকে, তারও কিছু পরে সেই গুলিচালনার বিরুদ্ধে তারকনাথ যখন লিখে ফেলতে পেরেছিল সম্পূর্ণ একটা গল্প, তখন যেমন তৃপ্তি পেয়েছিল, শৈবালের লেখা দু’টি লাইনও ওই মুহূর্তে তেমনই অনুভব এনে দিয়েছিল ওর মনে।
স্মৃতির এইসব তাড়নাই মুহূর্তের জন্য থিতু হতে দিচ্ছে না তারকনাথকে। টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়া ওর শরীর, এখন, যদিও নিথর, বুকে কিংবা পিঠে আলতো হাত রাখলে বোঝা যাবে শুধু হৃৎপিণ্ডের দ্রুত চলাচল, তবু ভিতরে ভেঙেচুরে যাচ্ছে প্রতিপল। এমন নয় যে, এর আগে কখনও ‘সরস’ কাগজটায় লেখেনি সে; প্রায় ত্রিশ বছর আগে, যখন শুধুই কবিতা লিখত ও, দুটো কবিতা— ‘নমস্কার’ আর ‘চারণ’ তো ওই পত্রিকাতেই ছাপা হয়েছিল ছয় মাসের ব্যবধানে। পরের বছরের বর্ষাতেই ‘সরস’ ছেপেছিল ওর প্রথম গল্প ‘নিশীথের মায়া’। তারপর থেকে এতগুলো বছরে তো তারকনাথ কম লেখেনি ওদের কাগজগুলোয়! তবু এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা; এমন অভূতপূর্ব অবস্থায় এর আগে কখনও পড়তে হয়নি তাকে। সংরূপের ফরমায়েশ মোতাবেক ‘সরস’-এ হয়তো ক্বচিৎ-কদাচ লিখেছে সে, কিন্তু এবার বিষয় পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে।
কিছু বছর আগে পাস্তেরনাকের ‘ডক্টর জিভাগো’ কিংবা নোবেল পাওয়া তেমন কোনও আলোড়ন তুলতে পারেনি বাঙালি বিদ্বৎসমাজে— রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে যৎসামান্য ভেসে আসা সংলাপ ছাড়া। আর এবার কেমন যেন সব বদলে গেল আচমকা। তারকনাথ ভাবে, দেশপ্রেমের থেকে বড় জিগির দুনিয়ায় বোধহয় আর কিছুই নেই। দেশভাগের পরে পরেই তা একবার মালুম হয়েছিল। ততদিনে জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতার কলেজে চলে এসেছে তারকনাথ, ধর্মতলা স্ট্রিটের ছেচল্লিশ নম্বর বাড়িটাও বেবাক শুনশান হয়ে গেল; মার্কাস স্ক্যোয়ার থেকে কলাবাগানের দিকে যেতে হঠাৎই একটা বাড়ির দেওয়ালে চোখ চলে গিয়েছিল ওর, দেখেছিল, ছাঁদ কাটা হরফে লেখা, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’। দেওয়ালজোড়া সেই সিদ্ধান্তবাক্যের উপর কালো রঙে কারা যেন দাগিয়ে দিয়ে গেছে প্রতিসিদ্ধান্ত, ‘গদ্দার’; দেশদ্রোহী। এসবই বছর পনেরো আগের কথা। সেই এক যুগেরও বেশি সময় আগে রাস্তা জুড়ে, কথোপকথনে, টিপ্পনিতে মায় সর্বত্র, দেশপ্রেমের স্ফূরণ দেখেছিল তারকনাথ।
তারকনাথ নিজে কখনও কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য না হলেও কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি প্রচ্ছন্ন একটা সমর্থন তার প্রথমাবধিই প্রায়, ফরিদপুরে থাকার শেষ কয়েক বছর থেকে মূলত, অটুট ছিল, স্তালিনের মৃত্যুর পর হাঙ্গেরিতে বিংশতিতম সোভিয়েত কংগ্রেসে নিকিতা খ্রুশ্চেভের ওই ভাষণের পরও যা টাল খায়নি বিন্দুমাত্র। অথচ বছর খানেক আগে নেফা সীমান্তে চিনে সেনাদের সঙ্গে ভারতীয় ফৌজের বোমা-গুলির বিনিময় মুহূর্তের জন্য চারপাশ সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে তারকনাথকে। তার সেই সংশয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি ছিল না আদৌ, বরং ছিল আশেপাশের উন্মার্গগামী মানুষজনের উপর। সাম্যের গানে মাতোয়ারা প্রতিবেশীদের দেখে নিমাইকে ঘিরে মাতোয়ারা ভক্তদলের কথা মনে হত যার, সেই তারকনাথ অবাক বিস্ময়ে দেখেছিল, দেশপ্রেমের নামে সেই তারাই কীভাবে নিজের নিজের চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে করে ফেলল। দেশের প্রধান বলল, ভারতমাতা আক্রান্ত; ভারতভূমি আক্রমণ করেছে চিনদেশ আর অমনি সবাই সমবেত হুক্কা-ধ্বনিতে হাঁকডাক শুরু করে দিল; এমনই তার প্রাবল্য যেন বা অন্য কোনও সম্ভাবনা, কোনও বিরুদ্ধমত হতে নেই, হতে পারে না। বলার মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি শুধু বলেছিল, চিন ভারত আক্রমণ করেনি। যেটা ঘটেছে, সেটা সীমান্ত-সংঘর্ষ, বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য-সমর্থক মাত্রেই তখন হয়ে গেল দেশদ্রোহী। এসবই কয়েক মাস আগের কথা, তার স্বচক্ষে দেখা। সেই সময় হয়তো কারও পক্ষেই সবটা বুঝে ওঠা সম্ভব ছিল না। তারকনাথই যেমন; যে মাওয়ের নেতৃত্বে বিপ্লব হয়েছে চিনে, সেই লোকই তখন চিনের ক্ষমতায়, সে কী করে এই হামলা করায়! উলটোদিকে ভারতকে সমর্থন করছে আমেরিকার পাশাপাশি সোভিয়েত ইউনিয়নও! খোদ রবীন্দ্রনাথই প্রথমে বুঝে উঠতে পারেননি মুসোলিনিকে; নেহাত রমাঁ রল্যাঁ আর সৌমেন ঠাকুর বুঝিয়েছিলেন ওঁকে! নিখাদ সাহিত্যের ছাত্র এবং অধ্যাপক, ধুতি-পাঞ্জাবি, চোখে ঈষৎ পুরু কালো ফ্রেমের চশমা এই মানুষটিও সেদিন সম্পূর্ণ পড়ে উঠতে পারেনি সময়কে।
অশক্ত মনে নির্ভার শরীরটিকে কোনওমতে টেনে চেয়ারে বসে পড়ে তারকনাথ। টেবিলে পড়ে থাকা ফাউন্টেন পেনটি হাতে নেয়; প্যাঁচ ঘুরিয়ে খাপখানা একবার খোলে, পরক্ষণে আটকায়, ফের খোলে। তারপর পেনটা রেখে টেবিলের উপর এলিয়ে থাকা ল্যাম্পের সুইচে আঙুল রাখে। বাল্ব জ্বলে, নেভে, পুনরায় জ্বলে ওঠে, নিভে যায় তৎক্ষণাৎ। জ্বলে, নেভে। নেভে, জ্বলে। ঈষৎ পুরু কালো ফ্রেমের চশমা, মালিকানাহীন, টেবিলে পড়ে থেকে সাক্ষী হয়ে যায় চকিত আলোর বিচ্ছুরণের।
মাস দেড়েকের মধ্যে থেমে গেছে যে যুদ্ধ, তাকেই বাঁচিয়ে রাখতে চায় বাজার, অর্থনীতি, বিস্তারে রাজনীতি— বিলক্ষণ বোঝে তারকনাথ। তা না হলে ‘সরস’ পত্রিকা কেন সব লেখক-শিল্পীদের একজোট করতে চাইছে? কেনই বা তাদের দিয়ে লিখিয়ে নিতে চাইছে শিল্পসৃষ্টির ক্ষেত্রে স্বাধীনতার, শিল্পীর স্বাধীনতার গুরুত্ব বিষয়ক নিবন্ধ? তারকনাথ এই জাতীয় লেখা ইতোমধ্যে পড়েছে বেশ কয়েকটা, পড়ে বুঝেছে, শিল্পীদের এই স্বাধীনতা বিষয়ে লেখা মোটেও ভারতীয় শাসনকাঠামোর শৃঙ্খল প্রসঙ্গে নয়; বিপরীতে কমিউনিস্ট পার্টির পার্টিজান-শিল্পীদের ক্ষেত্রে দলীয় আভ্যন্তরীণ গঠনকে, সমূহ নির্দেশকে আক্রমণ করে।
যে তারকনাথ আদর্শবাদী, সে লিখতে চায় না এমন ফরমায়েশি লেখা; কিন্তু যখনই চেয়ার থেকে ঘাড় হেলিয়ে আলগোছে একবার চেয়ে দেখে ভিতর ঘরের দিকে, অবিন্যস্ত বিছানায় আলুথালু স্ত্রীর মুমূর্ষু মুখ দেখতে পায়, তখন আর নিজেকে সামলাতে পারে না। ডাক্তার নিদান দিয়েছে, অপারেশন ব্যতিরেকে আশাকে বাঁচানোর আর কোনও পথ নেই। এদিকে অধ্যাপনায় যে বেতন, তাতে খরচ কুলোবে না। সেদিন কাগজের দপ্তরে নিজের আপত্তিটুকু জানিয়ে বেরিয়ে আসছিল যখন, পিছু ডেকেছিল ঘোষবাবু, "গাঙ্গুলিমশাই, এখন বাড়ি যান। বাড়ি ফিরে আরেকবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। এই লেখাটার জন্য যে পারিশ্রমিক পাবেন আপনি, সেটা দিয়ে কিন্তু অনায়াসে আপনার স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারবেন।"
টেবিল ল্যাম্পের আলোটা জ্বেলে রেখে ফাউন্টেন পেনের খাপ আবারও খোলে তারকনাথ। রুলটানা ফুলস্কেপ কাগজের দিস্তা টেনে নেয়। আড়াআড়ি লেখে, ‘পরাধীন শিল্পীর স্বাধীনতা হয় না কোনও। আর্থিকভাবে স্বাধীন নয় যে মানুষ, তার কাছে স্বাধীনতা সোনার পাথরবাটি।" লিখে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে, দলা পাকিয়ে ছেড়ে দেয় পায়ের কাছের প্লাস্টিকের লম্বাটে ঝুড়িতে, মর্ত্যে গড়িয়ে এসে থমকে থামে সুবর্ণগোলক।
আরও পড়ুন- নসু মোড়লের বাদা: হামিরউদ্দিন মিদ্যা
চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে তারকনাথ। পায়ে পায়ে দেওয়াল-আলমারির কাছে যায়। কাচ সরিয়ে পৃথুল একটি বই নামিয়ে আনে। আবারও চেয়ারে এসে বসে। বছর আট আগে কলকাতার কর্নওয়ালিস স্ট্রিট থেকে ছাপা বইটির মলাট ওলটায়। মদনমোহন গোস্বামীর ‘রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র’। দুই দশক আগে ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে এমএ ডিগ্রি নিয়ে যখন বেরিয়ে এসেছিল, ভারতচন্দ্রের জীবন সম্পর্কে তখনও তেমন কিছু জানত না সে। এই গোঁসাই তাকে জানিয়েছে রায়গুণাকরের চড়াই-উৎরাই, অনুভব করিয়েছে দগ্ধ জীবনের জ্বালা-যন্ত্রণাকে। বইটি তারকনাথের আগেও পড়া, কিন্তু আবারও মাথা ভরে দেয় কাগজের স্বকীয় গন্ধের ভিতর।
শুরুর দিন থেকেই শুধু অন্নদামঙ্গল, নতুন ধরনের এক মঙ্গলকাব্য লিখতে চায় ভারতচন্দ্র, অথচ সে কাব্য যে রাজানুগ্রহ পাবে না মোটে, সেই বিষয়ে নির্দ্বিধ কবি স্বয়ং। রাজার মন না ভরলে পেট ভরবে না কবির। রাজার মন যে কীসে ভরে, কবি জানে না। রাজসভার এককোণে বসে বসে ভারত দিন কতক জরিপ করেছে অমাত্যদের; তারপর সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। রাজসভায় উপস্থিত পাত্র-মিত্রদের মন মজলে রাজার মনও ভেজে। কবি অপাঙ্গে দেখেছে, জেনেছে, আদিরসে ডুবে মরে হতাশাগ্রস্ত ধর্ষকামীর দল। কবি ঠিক করে নেয় আগামীর পথ, অন্নদামঙ্গল লিখবে ভারতচন্দ্র, কিন্তু সেই মহৎ কাব্য লেখবার জন্যই প্রথমে তাকে লিখতে হবে বিদ্যা ও সুন্দরের রঙ্গলীলা।
পড়তে পড়তে কখন দিনের আলো ফুটে যায়, বোঝে না তারকনাথ। ল্যাম্পের আলো আর জানলার গরাদ গলে-আসা সূর্যালোক পিছলে যায় কাঠের উপর। বৈদ্যুতিক আলো ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে কিছুক্ষণেই। চেয়ার ছেড়ে উঠে ভিতর ঘরের দিকে তাকায় তারকনাথ। আশার মুখ যন্ত্রণাহীন, ঘুমন্ত। কাছে এসে স্ত্রীর কপালে আলতো হাত রাখে সে। পরক্ষণে ফিরে যায় টেবিলের কাছে। চেয়ার টেনে বসে পড়ে। দেরাজ খুলে বের করে আনে লেটার-হেড। ঘোষবাবুকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখে তারকনাথ, যেখানে শিল্পীর স্বাধীনতা নিয়ে লেখায় সম্মতি জানানোর পাশাপাশি রয়ে যায় নগণ্য একটি অনুরোধ। আসন্ন শারদোৎসবে পত্রিকার পুজোসংখ্যায় কবি ভারতচন্দ্রের জীবনের উপর উপন্যাস লিখতে চায় লেখক।