কলমি বিরিয়ানি: অমর মিত্র
Bangla Short Story: সাক্ষাৎকার দেওয়ার আগে আমি একটা বিড়ি ধরিয়েছিলাম। বিড়ি শেষ করে বললাম, দিন তো গুনে রাখিনি, অনেকদিন মনে হয় কিন্তু আজ বিরিয়ানি খেয়েছি।
লোকটার নাম যা হোক কিছু। কিন্তু একটা নাম তো নিতে হবে? ধরা যাক গনগনে। যা লিখতে গেলে গঙ্গনে হয়ে যায়। গঙ্গনের মানে কী? লোকটা বলল, গঙ্গা মায়ের বেটা। আর গনগনে? লোকটা বলল, আগুন আগুন আগুন। আগুনে পুড়িয়ে দেব সব। পুড়িয়ে ঝাঁজরা করে দেব। আমার নাম ফনফনে, আমি লোকটার নাম এই দিলাম।
লোকটা এই গ্রামের কেউ না কিন্তু এই থানার তো বটে। থানায় অনেক গ্রাম। তারপরে নদী। তারপরে অন্য থানা। সেই থানা থেকে নদী পেরিয়ে আসতে পারে লোকটা। অথবা এই থানার যে কোনও মৌজায় ওর বাড়ি হতে পারে। সেখানে লোকটা জন্মেছে কিংবা জন্মায়নি, যা কিছু হতে পারে। সে এখন আমার হত্তাকত্তা বিধাতা বলা যায়। আমার খাওয়া পরার ভার নিয়েছে। লোকটার বেশ গায়ে-গতরে চেহারা। মস্ত হাঁড়ির মতো মাথা। কুতকুতে চোখ। গালে পাতলা দাড়ি। কপালে সিঁদুরের ফোটা। রক্তবস্ত্র থাকলে কাপালিক। লোকটা এসেছিল জীবন সাধুর ডাকে। জীবন সাধু এই গ্রামের একজন। করত মাস্টারি। অবসর নিয়ে ভাবল গ্রাম দখল করবে। গ্রামের শাসনভার নেবে। এখন গ্রামের শাসনভার নির্বাচিত একটা সংগঠনের উপর। তাদের একজন নেতা। নেতার পদের নাম লিডার। তারপর ডেপুটি লিডার দু'জন। অ্যাসিস্ট্যান্ট লিডার চারজন। তারপর সদস্য ছয়জন। এই সংগঠনের নাম গ্রাম পরিষদ। আমরা গ্রাম পরিষদ নিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলাম। স্বস্তিতে ছিলাম। সেই সময় গনগনে এল গ্রামে। সে রাত্তিরে এসেছিল, না দিনে এসেছিল তা নিয়ে ধন্দ আছে। কেউ বলে দিনে। একটা চারচাকা গাড়ি তাকে নামিয়ে দিয়ে গেছে কিংবা ফেলে দিয়ে গেছে। ফেলে দিয়ে যাওয়া মানে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। যে গ্রামে থাকত সেখানে কোনও অন্যায় করেছে, ফলে তাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাড়িয়ে না দিলে সে এখানে এসেছে কেন? এই গ্রামে তার কিছুই নেই, তবু এসেছে। ভবঘুরেরা এমনি আসে। উদ্দেশ্যবিহীন হয়ে এসে পড়ে। নানারকম কথা বলে, কোথায় নদী পেরিয়েছে, কোথায় পাহাড় ঘুরে এসেছে, বনের ভিতরে ডাকাতের হাতে পড়েছিল, এমনি কত কথা। সেই কথায় মজে যায় গাঁয়ের মানুষ। তারপর হঠাৎ করে সে উধাও। না বলে কয়ে। তখন তার জন্য একটা ঘর বেঁধে দেওয়ার কথা হচ্ছিল। জমি দেখা শেষ হয়েছিল, ঘর তৈরি আরম্ভ হবে-হবে করা হচ্ছিল, সেই সময়ে সে উধাও।
বুড়োরা বলল, এমনি হয়, ভবঘুরেদের কোথাও মন বসে না, সারাজীবন তারা ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।
কিন্তু এই গনগনে অন্য রকম। ভবঘুরে নয়। যদিও সে বলল, হ্যাঁ সাধু মশায়, এ জায়গা ভালো, আমি নেমে পড়লাম, অনেকদিন আসব-আসব করছি, আসা হয় না, আর সাধু আছে এই কথা শুনেছিলাম।
সাধু বলল, যদি আমি না থাকতাম?
-তুমি যে থাকবে তা আমাকে বলা হয়েছিল।
-তার মানে তুমি এমনি নেমে পড়োনি, আসবে বলেই এসেছ।
গনগনে বলল, তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছিল তারা।
-তারা কারা? সাধু মশায়ের বুক স্ফীত হয়ে ওঠে, তার খোঁজ রাখে দূরের মানুষও!
আরও পড়ুন- পোলিং পার্টি ১৩৫ : সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
গনগনে বলেছিল, তারা কারা তা জানতে পারবে, তারা অনেকদিন আত্মগোপন করেছিল, সঙ্ঘের লোক, এখন সুসময়ে বেরিয়ে আসছে, বলছে বিপ্লবের সময় এসে গেছে, এখন ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
জীবন সাধু মন দিয়ে শুনছিল, সে বলল, তোমাদের সঙ্ঘের নাম কী?
গনগনে বলল, মহামানুষ সঙ্ঘ।
জীবন অবাক, এমএমএস?
-ইয়েস, এমএমএস।
-আমি তো মহামানুষের নীতিই সারাজীবন ফলো করেছি, সকালে ব্যায়াম করি, তারপর ধ্যান করি, তারপর নিবেদন করি, তারপর নিজের কাজ, তারপর বিকেলে আবার ধ্যান। মুসলমানরা যেমন সকাল-বিকেল নমাজ পড়ে, আমিও তেমনি ধ্যান করি ক’জনকে নিয়ে, সকালে এবং বিকেলে, এবার ধ্যানের সময় বাড়াতে হবে, বেলায় করতে হবে, ঘুমের আগে করতে হবে।
-কার ধ্যান করো?
-কেন সঙ্ঘগুরু মহামানব সুভাষভাইয়ের।
গনগনে বলল, আমিও তো তার চিন্তা করি।
জীবন সাধু বলল, আমাদের সৌভাগ্য যে তিনি ইহলোকে আবার এসেছেন।
-ভগবানের অসীম করুণা।
জীবন বলল, আমরা সৌভাগ্যবান আমাদের মাথার উপর তিনি আছেন।
-তিনি স্বয়ম্ভু, তিনিই কৃষ্ণ, তিনিই ভগত সিং, তিনিই সুভাষচন্দ্র আর তিনিই হের হিটলার।
লম্বা হাত সামনে অনুভূমিক রেখে গনগনে বলে উঠল, জয় সুভাষভাই।
-তাহলে তুমি গুরুভাই, এবার গাঁ দখল করে নিতে হবে।
জীবন সাধুর কাছে আমি এসব শুনেছি যে তা নয়। জীবন আমাকে বললেও, যা কথা হয়েছিল সব বলতে পারবে না। কিছু বেশি বলবে, কিছু কম বলবে। তার ভিতর থেকেই আমাকে সব বুঝে নিতে হবে। নাহলে অনাহারে থাকতে হবে। জীবন সাধু আমাকে বলে, সুভাষভাই বলেন, তাঁর ভিতরে ভগত সিং, সুভাষচন্দ্র বোস। তিনি কৃষ্ণের অবতার। একের পর এক গ্রাম, নগর নিজের কর্তৃত্বে এনে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে দেশের মাটিকে প্রণাম করে বিদায় নেবেন। তখন এই দেশ, মহাদেশ হয়ে উঠবে। পাশের দেশ মাথা নুইয়ে থাকবে এই দেশের সামনে। জীবন আমার সঙ্গে গনগনে মশায়ের আলাপ করিয়ে দেওয়ার পর এসব কথা বলে একটা ফর্ম ধরিয়ে দিল। আমি ফনফনে রায়। খুব রোগা বলে ফনফনে বলে অনেকে। আসলে আমি খেতে না পেয়ে ফনফনে। গায়ে গত্তি নেই। একটা সময় অনাহারে কেটেছিল অনেকদিন। এখনও কাগজে কলমে অনাহার। গনগনে স্যার আসার পর, আমি অনাহারে আছি, এই খবর যে কী করে দিকে দিকে রটে গেল, ক্যামেরা আর টিভির বুম হাতে সাংবাদিক কিংবা খবর সংগ্রাহক হাজির। আমার সাক্ষাৎকার নিতে লাগল,
-স্যার কতদিন না খেয়ে আছেন? একটি মেয়ে জিজ্ঞেস করল। বয়স তার চব্বিশ-পঁচিশ, গায়ের রঙ ময়লা-ময়লা, চোখে ছিল সানগ্লাস, আমাকে দেখে তা খুলে ব্যাগে রাখল। মুখে হাসিটি লেগে আছে। জিনস আর চেক শার্ট পরা। মাথার চুল পনিটেল। হাসলে গালে টোল পড়ে। আমি এসব খুঁটিয়ে লক্ষ্য করেছিলাম, কেননা সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে আমাকে তারা পেটভরে বিরিয়ানি আর মাংস খাইয়েছিল। তারপর ছিল সন্দেশ আর আইসক্রিম। সাক্ষাৎকার দেওয়ার আগে আমি একটা বিড়ি ধরিয়েছিলাম। বিড়ি শেষ করে বললাম, দিন তো গুনে রাখিনি, অনেকদিন মনে হয় কিন্তু আজ বিরিয়ানি খেয়েছি।
মেয়েটি তার বুম সরিয়ে নিয়ে বলল, ওসব বলবেন না, বলুন খাননি অনেকদিন।
-আচ্ছা বিরিয়ানি, সন্দেশ খাইনি বহুদিন।
-তা বললে হবে না স্যার, বলতে হবে ডাল-ভাত খাননি বহুদিন, বিরিয়ানি বড়লোকের খাবার।
-আমি সেইটাই চাই, চিকেন চাপ আর রুমালি রোটি।
মেয়ে তার পনিটেল দুলিয়ে বলল, এসব নয় স্যার, বলুন অনাহারে আছেন, গেঁড়ি গুগলি, পিঁপড়ের ডিম, ব্যাঙার ছাতু, মেটে আলু, কলমি শাক সেদ্ধ, এসব পেলেই বর্তে যাবেন।
মাথা নাড়লাম আমি। বললাম, হতে পারে না, ওসব আমি খেয়ে মরব নাকি! ওসব যারা খায়, তাদের কাছে যেতেই পারবে না।
-প্লিজ স্যার, এই সাক্ষাৎকার না নিতে পারলে আমার চাকরি থাকবে না।
সুতরাং আমি রাজি হলাম। জীবন সাধুও বলল, যা খেতে চাও সব পাবে, ইন্টারভিউটা দাও, যা বলে ঠেস মারা উত্তর দাও।
এরপর কত প্রশ্ন, না খেয়ে কতদিন থাকা যায়? না খেয়ে মানুষ কতদিন বাঁচে, কেমন লাগে না খেয়ে? খাওয়া ভালো, নাকি না খাওয়া ভালো? যা হয় বললাম। অনেক কথা মেয়েটার মনমতো বললাম। যা তার পছন্দ হবে না, বাদ দিয়ে দেবে বলল। পরে লাভ হলো মাটন বিরিয়ানি, আর আইসক্রিম এবং সন্দেশ। সেই সাক্ষাৎকার টেলিভিশনে দেখানো হলে গ্রাম পরিষদের আটজনই চলে এল। তারা আমাকে বলতে লাগল, তাদের না বলে এই সাক্ষাৎকার দেওয়া ঠিক হয়নি।
আমি বললাম, কী করব, খুব খিদে পেয়েছিল যে।
-খিদে পেয়েছিল তো আমাদের বলনি কেন?
-বলেছি, তোমরা বলেছিল ক’দিন সহ্য করতে, কতদিন সহ্য করব?
-গ্রামের জন্য, দশের জন্য এইটুকু করতে হয়, না খেয়ে মানুষ মরে না।
আমি বললাম, কত খবর আসে না খেয়ে মরার, ফ্যামিলিশুদ্ধ মারা গেছে অনাহারে।
-সব মিথ্যে সংবাদ, তুমি ভুল পথে চলেছ।
আমি চুপ করে থাকলাম। আমি খেতে পাই না তা নয়। ভাত-ডাল, সবজি, ডিম পাই। জীবন সাধু দেয়। জীবন সাধুই চ্যানেলের মেয়েটিকে ডেকে এনেছিল নতুন লোক গনগনের কথায়। গনগনের বুদ্ধিতে। তাতেই সাড়া পড়ে গেছে। আমি জীবন সাধুর আশ্রয়ে ছিলাম। তার সঙ্গে ধ্যান করতাম, গান করতাম, নিরামিষ খেতাম কিন্তু মাংস পেতাম সপ্তাহে দু’দিন। আমি আর সাধু মশায় খেতাম। সাধু শুধু বলত, সময়েই কাজে লাগানো হবে।
গ্রাম পরিষদ বলল, এইটি বৈধ সাক্ষাৎকার নয়।
আমি বললাম, খিদে সহ্য করা যায় না, ফলপাকুড় নেই এখন, তাই সাক্ষাৎকার দিয়েছি।
-আমরা দেব খাদ্য, চিন্তা নেই।
আমি রাজি হলাম। কিন্তু জানতাম না, গনগনে এসে যাবে। গনগনে বলল, আমরা তোমাকে খাদ্য দেব, বল জয় সুভাষভাই।
বললাম। হাত সামনে এগিয়ে দিয়ে বললাম, জয় সুভাষভাই।
-জয় সুভাষভাই, বলো জয় ভগত সিং, জ্য ক্ষুদিরাম, জ্য বিনয়, জ্য যে নাম ইচ্ছে বলে যাও, যার নাম বলবে, তারাই ভগবান, ফ্রিডম ফাইটার। আমি হাত বাড়িয়ে বললাম, জ্য ফনফনে, জ্য জ্য জ্য গনগনে, জ্য জীবনভাই।
তারপর গ্রাম পরিষদ জানতে পেরে আমাকে নোটিশ পাঠাল চৌকিদার দিয়ে। চৌকিদার বলল, অবশ্যই যেতে হবে, না গেলে নাম কাটা যাবে।
কোথায় নাম লেখা আছে ? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
চৌকিদার মাথা দোলায়, বলল, লিস্টিতে।
-কিসের লিস্টি ?
চৌকিদার বলল, অত জানলে সে দফাদার হয়ে যেত কিংবা সেপাই।
গনগনে বলল, তুমি যেও না, তোমার পক্ষে সুভাষভাই আছে। আমি গেলাম না কিন্তু দ্বিতীয় নোটিশ নিয়ে এল চৌকিদারের উপর দফাদার। বলল, না গেলে সব্বোনাশ হয়ে যাবে, কম্পিউটার থেকে বাদ চলে যাবে। সুতরাং গেলাম। ভয় করছিল। সত্যি যদি নাম কাটা যায়, তখন কী হবে? খাই না খাই, নাম রাখতেই হবে। সুভাষভাই বহুদূরের মানুষ, এরপর যদি এরা আমার কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যায়?
আরও পড়ুন- কবিতা ও তার মাকড়সা: অলোকপর্ণা
লিডার আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কোন পক্ষে?
-আপনার পক্ষে স্যার।
-তাহলে ওসব বলছিলে কেন হাটে?
-কীসব স্যার?
লিডার বলল, জয় সুভাষভাই, জ্য ভগাত সিং।
-ভগত সিং সুভাষভাই তো ভগত সিং আর সুভাষচন্দ্র বোস।
লিডার বলল, সুভাষভাই তার নাম নয়। স্কুল সার্টিফিকেটে নাম ছিল রত্নাকর মেহতা, এখন তিনি সুভাষভাই হয়ে গেছেন। বলছেন, তিনি মরে যাওয়ার পর তিনি জন্মেছেন, ভগত সিংয়ের ফাঁসির পর তিনি জন্মেছেন, সুতরাং তিনি অবতার, ভগত সিং আর সুভাষচন্দ্র তিনিই। সুতরাং এখন আর বলা যাবে না সুভাষভাই। সুভাষচন্দ্র নাম চলবে না এখানে।
লেকিন সুভাষচন্দ্র, ফ্রিডম ফাইটার, আপনারা স্যার ছেড়ে দিলেন, পাবলিক জ্য ভগত সিং জয় সুভাষচন্দ্র বলবেই।
-অত জানিনে, উনি বলছেন উনিই সুভাষজি, সুতরাং বলা যাবে না, সুভাষজি বললেই ওনার কাছে সব খবর চলে যাচ্ছে, ভগত সিংজি বললেও তাই, সব ক্রেডিট উনি পেয়ে যাচ্ছে, তাই হাটে গিয়ে জয় রত্নাকর বলতে পারো।
-রত্নাকর তো তাঁর নাম বললেন।
-পরিত্যাগ করেছেন, এখন রত্নাকর হলো বাল্মীকি মুনি।
ফনফনে বলল, তাহলে ওঁরা বিরিয়ানি দেবেন না।
-আমরা তোমাকে বিরিয়ানি দেব, মাটন চিকেন এগ বিরিয়ানি, বড় বড় আলু।
-দেবেন, আমাকে তখন কী করতে হবে ?
-বলতে হবে, জ্য জগন্নাথ।
-জগন্নাথ কে ?
-ঠাকুর জগন্নাথ।
আমার মনে পড়ল, জগন্নাথ ভুঁইয়া এই লিডারের নাম, এই নামে ধ্বনি দিলে সব তাঁর কাছে চলে যাবে। সে কথা বলতে লিডার বলল, তুমি আমার নাম মনে রেখেছ কিন্তু সব যাবে জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ দেবের নিকটে।
এ খুব গ্যাঁড়াকলের ব্যাপার। আমাকে নিয়মিত আহার গ্রহণ করতে হবে, তার জন্য কারও না কারও পক্ষে কথা বলতে হবে। জগন্নাথ ভুঁইয়ার চ্যালা আর সুভাষ ভাইয়ার চ্যালা আমাকে বিপদে ফেলেছে। আমি ফনফনে। আমি গনগনের কাছে ফিরে বললাম, তুমি কোন পক্ষে?
গনগনে বলল, সুভাষভাই, তা তুমি জানো না?
-জানি কিন্তু আরও জেনে নিলাম, জানার কোনও শেষ নেই।
গনগনে বলল, আছে শেষ। শুনে রাখ, শিগগির বিপ্লব হবে, হবেই, সব আমাদের হবে, হাট-বাট, পুষ্করিণী, দিঘি, প্রান্তর, গাছগাছালি, আকাশ, মেঘ বৃষ্টি, শীত বসন্ত সব আমাদের হবে, সুভাষভাই আসছেন, হাটে গিয়ে তা বলবে, বিরিয়ানি পাবে তখন প্রত্যেকদিন, গ্যারান্টি সহকারে বলছি।
আমি বললাম। কী বললাম মনে নেই। কিন্তু আমি এখন ভাত আর কলমি শাক খাচ্ছি, গেঁড়ি-গুগলি আর মেটে আলু খাচ্ছি। এসব খেয়ে বেঁচেও আছি। হাটে গিয়ে একবার জগন্নাথের নাম শুনি একবার সুভাষভাইয়ের নাম শুনি। শীত বসন্ত, পুকুর-দিঘি, সব আমারই আছে। পুকুরঘাটে গিয়ে কলমি তুলি আর জঙ্গলে গিয়ে মেটে আলু, প্রান্তর পার হয়ে যাই সকাল হলে। নিজের খাদ্য নিজেকে নিজেই জোগাতে বেরোতে হয়।