পাতায় পাতায় রোমাঞ্চ, রক্ত গরম গোয়েন্দাগিরি! কেন স্বপনকুমারকে ভুলে গেল বাঙালি?
Swapankumar Goenda Books : স্বাধীনতা-পরবর্তী টালমাটাল সমাজে সরকারি প্রশাসন নিরাপত্তাদানে ব্যর্থ— জনমানসের এই অভাববোধ পূরবে কে? দীপক ছাড়া আবার কে!
—নাম কী মশাই?
—চ্যাটার্জী... দীপক চ্যাটার্জী।
সিনে-মাধ্যমে কিছুকাল পরেই পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য একটি সিনেমা আনতে চলেছেন, 'বাদামী হায়নার কবলে'। আনতেই পারেন। তাতে এত হইচইয়ের কী আছে? আছে! কারণ— ফেলুদা-ব্যোমকেশ-কিরীটী-শবর-সোনাদা-গোগোলের ভিড়ে এবার নাকি 'এই এক নূতন'! আগে বাংলা গোয়েন্দাকাহিনিতে এমনটা নাকি আর দেখা যায়নি! শোনা যাচ্ছে, এ ছবি তৈরি হচ্ছে জনৈক 'স্বপনকুমার'-এর লেখা গোয়েন্দা কাহিনি থেকে। বাজার সরগরম। প্রশ্ন গোঁতাচ্ছে দর্শকদের, কে এই স্বপনকুমার? কেন স্বপনকুমার?
প্রথম উত্তরটা নিশ্চয়ই জানবেন ২০২৩ সালের ষাটোর্ধ্বরা। তবে তাঁরাও আশ্চর্য হবেন জেনে— শ্রীস্বপনকুমার নামে আদতে নেই কেউই! ওইটি গত শতকের জনপ্রিয় সাহিত্যে সবচেয়ে বড় ও বহুবিক্রিত ব্র্যান্ডনেম মাত্র, যাঁর আবডালে লুকিয়ে আছেন সমরেন্দ্রনাথ পাণ্ডে নামের এক অবাঙালি ভাগ্যান্বেষী কলমজীবী।
গ্রাম, মফসসল অথবা শহরে ষাট-সত্তর দশকে কৈশোর কাটানো অনেকেই জেনেছেন 'স্বপনকুমার' ঠিক কী, সরাসরি বা লুকিয়েও— কারণ আশি-নব্বইয়ের দশক অবধিও ১৮x১২ বর্গসেমি ক্ষেত্রফলের চেহারায় রঙিন পেপারব্যাকের আকর্ষণীয় চকচকে মলাটে তাঁর লেখা ৪০ পাতার চটি বইগুলি বাজারে সুলভ ছিল। চটিবই শুনে মুখ ঘোরালেন? দীপক চ্যাটার্জীর গল্পে কিন্তু ছিল না অশ্লীলতার নাম-গন্ধও, মলাট থেকে মলাট প্রতি পাতায় ঠাসা রহস্য-রোমাঞ্চের ঘনঘটার মধ্যে হিল্লোলিত দেহবল্লরী নিয়ে বড়জোর দেখা দিয়ে যেত একজন সুন্দরী ভ্যাম্প, এই মাত্র। সে পাঁচকড়িবাবুর স্ট্রিপটিজ-সুন্দরী জুমেলিয়া যেভাবে জোৎস্নারাতে গোয়েন্দাকুলশিরোমণি দেবেন্দ্রবিজয়ের মন পাওয়ার চেষ্টা করেছিল— তার চাইতে ঢের বেশি নিরিমিষ। নন্দনতত্ত্বের প্রশ্নে 'রোমাঞ্চ' তৈরিই ছিল স্বপনকুমারের ব্যবহৃত প্রতিটি বাক্যের নির্ধারিত নিয়তি, কিন্তু তাহলেও কেন এই বিস্মৃতি?
আরও পড়ুন- নিছক গোয়েন্দা নয়, সে ‘সত্যান্বেষী’! কেন নিজেকে এমনটা বলত শরদিন্দুর ব্যোমকেশ?
কারণ, 'স্বপনকুমার'-এর কাহিনি খুব একটা 'উঁচুদরের সাহিত্য' নয়, ও হলো 'পাল্প-ফিকশন'! বৃহত্তর জনরুচিকে তুষ্ট করে বলে ভালো বিক্রি-টিক্রি হয় বটে, কিন্তু তার কৌলীন্য নেই। সাহিত্যের মর্যাদায় বরাবরই 'গোয়েন্দা গল্প' একটু খাটো— কিন্তু তাদের মধ্যেও আবার স্বপনকুমারের গোয়েন্দা গল্পকে তেমন উপরের দিকে রাখা যায় না, যেমনটা যায় সত্যজিৎ-এর 'ফেলুদা'-কে। 'সন্দেশ' বা 'দেশ'-এর শারদ-সংখ্যায় আত্মপ্রকাশের সম্মান পাওয়া আর 'বটতলা'-গোত্রীয় প্রকাশকের মরচে পড়া লেটারপ্রেস থেকে উজিয়ে ওঠার মধ্যে একটা স্বাভাবিক 'জাতিভেদ' তো থাকবেই, তাই না? আসলে 'স্টেটাসের' এই ফারাকটাই হয়তো ছিল মূল কারণ। যে কারণে পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে আশির দশকের শেষ অবধি প্রায় চল্লিশ বছর একচেটিয়া পাঠকদের মনোরঞ্জন করেও স্বপনকুমার ও তার মানসপুত্র 'দীপক' হারিয়ে গেলেন সাহিত্যের আলোচনা আর ইতিহাসে চিহ্নটিও না রেখে। কলেজস্ট্রিটের পুরনো বইয়ের দোকানে ঢুঁ দিলে এখনও পাওয়া যেতে পারে— 'কালনাগিনী', 'ড্রাগন', 'বাজপাখি', 'ইন্দ্রজিৎ' প্রভৃতি দুর্ধর্ষ দুশমনদের সঙ্গে স্বপনকুমারের 'হার্ড বয়েলড' গোয়েন্দা (যাকে সুপারহিরো বা super sleuth ভাবাই বাঞ্ছনীয়!)— শ্রী দীপক চ্যাটার্জীর সঙ্গে তার শত্রুদের জি-জান টকরারের অনবদ্য কাহিনিগুলি, দামও পকেটসই, মাত্র চার আনা থেকে একটাকা।
'হার্ড বয়েলড'-এ এসে আটকালেন কি পাঠক? এ আদতে অ্যাকশনধর্মী গোয়েন্দার মার্কিনি পরিভাষা। যে গোয়েন্দা শুধু 'বুদ্ধির খেলা' খেলেন না, খেলেন দস্তুরমতো 'মওত কা খেল'ও— তিনিই 'হার্ড বয়েলড ডিটেকটিভ'। উনিশ শতকের মাঝামাঝি যখন সাহিত্যে গোয়েন্দা গল্প-উপন্যাসের ধারা শুরু হয়, গোয়েন্দার অস্ত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল 'বুদ্ধি', কারণ আগ্নেয়াস্ত্র তো প্রশাসনের আছেই৷ পুলিশ তা নিয়েও কিছু করতে পারে না বলেই তো বারবার স্পটলাইট পড়ে গোয়েন্দা, থুড়ি প্রাইভেট ডিটেকটিভের উপর। হ্যাট, কোট, পাইপ আর আতসকাঁচে সে উনিশ শতকের ত্রাতা বিষ্ণু, পুলিশও যাকে যারপরনাই সাহায্য ও সমীহ করে। লাইসেন্স করা বন্দুক কখনও কখনও থাকে বৈকি তার, কিন্তু তা ব্যবহার করতে হয় না তেমন। কারণ এই গোয়েন্দার জীবন বিপন্ন হয় না আদৌ। একই ছকে বহু গোয়েন্দা কাহিনি বেরোনোর পর আমেরিকায় রেমন্ড শ্যান্ডলার, ড্যাশিয়াল হ্যামেট প্রভৃতি নতুন জমানার লেখকরা এই ক্লাসিক্যাল ফর্মুলার একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে এসে অল্প বাস্তবতা আনতে চাইলেন গোয়েন্দা গল্পে। 'বুদ্ধির ধাঁধা' থেকে গোয়েন্দা গল্পকে 'অ্যাকশন-থ্রিলার'-এর দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় গোয়েন্দাকে করা হলো সাধারণ দোষেগুণে পূর্ণ মানুষ। অপরাধী ধাওয়া করতে রাস্তায় সশস্ত্র নামানো হলো তাকে, ফলত মাঝেমধ্যেই তার কানের দু-ইঞ্চি পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই করে পেরিয়ে যেতে লাগল সীসার গরমাগরম বুলেট! সুতরাং, পাইপমুখো গোয়েন্দারা আর নিজের প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মরে-কাঠ-মক্কেলের বৈঠকখানায় বসে বসে লাইব্রেরিতে পড়ে থাকা ডেডবডিটির মৃত্যুবিবরণ তালাশ করতে পারলেন না। আগেকার 'ক্লাসিক্যাল' ঘরানা ছেড়ে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পালটানো সময়ে তাঁকে ফিরতে হলো কড়াপাকের গোয়েন্দা, অর্থাৎ 'হার্ড বয়েলড' হয়ে। জীবনে এল ঝুঁকি, ডিটেকশনের থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল অ্যাকশন। আগের দশকে শুকতারার পাতায় ঘনশ্যাম চৌধুরীর কেদার-বদ্রীর সঙ্গে পরিচয় থাকলে এই কিসিমের গোয়েন্দাগিরিটা নেহাত অচেনা মনে হবে না কারওই।
এই হলো দীপক চ্যাটার্জীদের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট। কিন্তু এতে তো ঠিক স্পষ্ট হয় না বাংলা হার্ড বয়েলড-এর তাচ্ছিল্য আর অনাদরের 'সাহিত্যিক' কারণ। অনেকের মতে সমস্যাটা অন্যত্র। একদিন গোয়েন্দা গল্পের শুরুয়াৎ হয়েছিল বিদেশ-বিভুঁইয়ে। ভারতে তখন ইংরেজ-রাজ। কাব্য, নাটক, উপন্যাস এবং আরও অন্য সমস্ত সাহিত্যের মতো গোয়েন্দা গল্পেরও ছাঁচটা এখানের বাংলাভাষার লেখকরা নিয়েছিলেন বিদেশের মডেল ধার করেই। কিন্তু, হার্ড বয়েলড-এর কাহিনি ফাঁদতে যে রকম সমাজ বা অপরাধ দরকার হয় তেমনটা তো বঙ্গদেশে নেই। বাস্তবে এখানের চূড়ান্ত অপরাধের পরাকাষ্ঠা— পরকীয়ার কেলেঙ্কারি, সম্পত্তির জন্য ভাই-ভাই লাঠালাঠি বা শরিকি বিবাদ। কাজেই বাস্তবতার প্রয়োজনে আসা কড়াপাকের গোয়েন্দারা বাংলার মাটিতে হয়ে উঠলেন রূপকথার ডালিমকুমারটি, যেন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন!
আলোর গতিতে দৌড়ানো, অন্ধকূপ থেকে ব্যাখ্যাতীত 'আশ্চর্য উপায়ে' বেরিয়ে আসা, মাঝসমুদ্রে ঝুপ করে ডুবে আবার ভুস্ করে ভেসে ওঠা, পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া, বিষ চিবিয়ে হজম করা, এমনকী দু'হাতে পিস্তলসহ রেনপাইপ বেয়ে তরতরিয়ে নেমে আসা— ইত্যাদি 'প্রায়-অলৌকিক' ক্রিয়াকলাপে অজর অমর গোয়েন্দারা অসম্ভবকে সম্ভব করতে লাগলেন। দীপকের কাহিনিও এর ব্যতিক্রম নয়— খুব হাস্যকর মনে হচ্ছে দীপক চ্যাটার্জীকে? আরেক বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দার নাম নিয়ে ফেললেই সেটা কিন্তু আর হবে না— তিনিও দীপকেরই সমসাময়িক এবং দীপক-গোত্রেরই গোয়েন্দা! পার্থক্য এটাই যে দীপকের দুর্ধর্ষ কাহিনি যখন বাংলার সস্তা চটি বইতে বেরোচ্ছে, তখন তিনি কেবল আমেরিকান হওয়ার সুবাদে নভেল থেকে এন্ট্রি পেয়ে যাচ্ছেন হলিউডি সিনেমার পর্দাতেও। বন্ড...জেমস বন্ড৷ হাজার হাস্যকর ও অবাস্তব প্রযুক্তি, অ্যাকশন, অতিরেকের পরেও তা কিন্তু আমাদের হাসায়নি, সে কি তাহলে তার মার্কিনি সাহেবিয়ানায় আমাদের সসম্ভ্রম স্যালুট? ওই যে প্রথমেই বলেছি, স্বপনকুমার আসলে ঘোর জাতিবিদ্বেষের শিকার এবং তা স্বাধীন ভারতেই— এছাড়া আর অন্য কোনও বাস্তব কারণ নেই তাকে ভুলে যাওয়ার।
আরও পড়ুন- সেক্স জার্নাল, জ্যোতিষ থেকে গোয়েন্দা গল্প! বর্ণময় জীবন ছিল স্বপনকুমারের
তবে দীপক প্রথম নন, তার আগেও বাংলায় এরকম অ্যাকশনধর্মী গোয়েন্দা বহু এসেছে, কিন্তু যথারীতি আমরা মনে রাখিনি, যেমন রাখতাম না স্বপনকুমারের দীপককেও— যদি না প্রয়াত গবেষক অদ্রীশ বিশ্বাস আগের দশকে মহাফেজখানার অন্ধকার বিস্মৃতি থেকে স্বপনকুমারকে উদ্ধার না করতেন এবং চর্চায় ফেরাতেন। পাশাপাশি পাল্প-সাহিত্যিক হলেও স্বপনকুমার পঞ্চাশের দশকে 'দেব সাহিত্য কুটির'-এর মতো বড় প্রকাশনার আনুকূল্য পেয়েছিলেন, যা বাকি হার্ড বয়েলড লেখকরা পাননি, তাই স্বপনকুমারকে পুনরাবিষ্কার অসম্ভব হয়নি। দেবালয় ভট্টাচার্যের এই ছবির জন্য দর্শক আশায় থাকবে অবশ্যই কিন্তু মনে রাখতে হবে যাবতীয় শৈল্পিক ভালো-মন্দের বাইনারির বাইরে 'বাদামী হায়নার কবলে' একটি ঐতিহাসিক মাইলস্টোন, যার আগে রয়ে গেছে প্রায় দুই দশকের পথ, যাতে প্রথম পা রেখেছিলেন অদ্রীশ। আকাডেমিক তর্কাতর্কির বাইরেও এই পথ আদতে দীর্ঘদিন ধরে ভুলে যাওয়ার এবং ভুলিয়ে দেওয়ার রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথ, যার শেষে রয়েছে ফেলুদা-ব্যোমকেশ-কিরীটীদের পাশে বিস্মৃত দীপকের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠালাভ।
স্বাধীনতা-পরবর্তী টালমাটাল সমাজে সরকারি প্রশাসন নিরাপত্তাদানে ব্যর্থ— জনমানসের এই অভাববোধ পূরবে কে? দীপক ছাড়া আবার কে! সরকারের বিকল্প হিসেবে ধনতান্ত্রিক সমাজে তাই উঠে আসতে হলো 'কথা-কম-কাজ-বেশি' বেসরকারি এজেন্ট দীপক চ্যাটার্জীদের। ঠিক গোয়েন্দা-গল্পের অপরাধী নয়, বরং তাকে যুঝতে হল 'পাবলিক এনিমি'-দের সঙ্গে কারণ সেটাই যে সেই সময়ের জনগণের চাহিদা! রুপোলি পর্দায় যখনই ভিলেনের মুখে আছড়ে পড়েছে হিরোর বিরাশি সিক্কার বজ্রমুঠি, সুপারম্যান বা সলমান খানের ছদ্মবেশে সেখানে কি আসলে আমরাই ছিলাম না বরাবর? ঠিক এভাবেই আইনি এক্তিয়ারকে ছাপিয়ে, তার থেকেও অধিক গণদাবির পতাকাবাহী হয়ে উঠেছিলেন সেদিনের দীপক... দীপক চ্যাটার্জী।
স্বপনকুমারের কাহিনির বিশেষত্ব, গোয়েন্দা দীপকের পাশাপাশি আকর্ষণীয় হতো তার প্রায় সব শত্রু ও অপরাধীরাও। জমকালো ছদ্মনামের এই ভিলেনরা নানা কাহিনিতে ফিরে ফিরে আসত বারবার। এভাবে তৈরি হতো কাহিনিমালা বা সিরিজ। কিরীটীর গল্পে যেমন বিখ্যাত হয়ে আছেন 'কালো ভ্রমর' তেমনি দীপকেরও পেটেন্ট ভিলেন 'ড্রাগন' বা 'কালনাগিনী'।
ব্যোমকেশ-কিরীটীর পরে এলেও, এইসব ক্লাসিক্যাল গোয়েন্দার ক্যারিশ্ম্যাটিক মুন্সিয়ানার সামনে 'কালজয়ী' হতে পারেনি হার্ডবয়েলড দীপক, তবে হয়েছিল 'বেস্টসেলার'। কিন্তু এত বদনাম আর নিন্দার পরেও ভাবতে ইচ্ছে হয়, ঠিক কোন জাদুবলে চল্লিশ বছর ধরে স্বপনকুমারের বই তুলে নিতেন আট থেকে আশি? কোন নির্দিষ্ট সমাজ-পরিস্থিতি কাটতি বাড়িয়েছিল স্বপনকুমারের অবাস্তব কাহিনিমালার? অদ্রীশেরই মতো এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই খুঁজতে চাইবেন কোনওদিন আর কোনও গবেষক... আমাদের জন্য বরং থাক কলকাতায় কখন হানা দেয় বাদামী হায়না, তারই অপেক্ষা।