ব্যাট তুলে রাখছেন সানিয়া, যে পথ তিনি পেরিয়ে এলেন....
মা হবার পরে খেলাধুলা থেকে প্রায় কয়েক মাইল দূরে ছিলেন তিনি। গত বছরই টেনিস কোর্টে ফের প্রত্যাবর্তন। কিন্তু, প্রত্যাবর্তনটা মোটেও তাঁর মনের মত হল না। বুধবার অস্ট্রেলিয়া ওপেন পরাজয়ের পরেই, উপলব্ধি করলেন, বয়স হয়েছে। আর শরীর সায় দিচ্ছে না। আর সেই কারণেই সিদ্ধান্ত অবসরের। সাংবাদিক সম্মেলনে এই একই কারণ প্রদর্শন করে ঘোষণা করলেন ২০২২ মরশুম তাঁর জন্য শেষ। তিনি ভারতের টেনিসসুন্দরী সানিয়া মির্জা। ১৯৯৬ সালে যখন ভারতীয় টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ আটলান্টা অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতলেন, তখন ভারতের টেনিসপ্রেমীরা চাইছিলেন যেন, মহিলাদের দিক থেকেও কেউ ভারতের টেনিসকে এরকম একটি জায়গায় পৌঁছে দিক। সেই বিন্দু থেকেই উত্থান সানিয়া মির্জার।
ভারতের মতো দেশে যেখানে টেনিস খেলাকে কোনোভাবেই তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না, সেই দেশ থেকে উঠে এসে বিশ্বের আঙিনায় নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন সানিয়া মির্জা। একাধিক দেশে, একাধিক প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে পদক জিতে সানিয়া মির্জা হয়ে উঠেছিলেন ভারতের টেনিস তারকাদের মধ্যে অন্যতম। সানিয়ার এই উত্থান ভারতের মহিলা টেনিস তারকাদের কাছেও অনুপ্রেরণার। নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম উদাহরণ হওয়ার পাশাপাশি ভারতের ক্রিকেটপ্রেমী জনতার মনে টেনিসের প্রতি ভালোবাসা জন্মানোর ক্ষেত্রেও অন্যতম ভূমিকা ছিল সানিয়া মির্জার। একাধিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, আমেরিকান ওপেন, সিঙ্গেল এবং মিক্স ডাবলসের একাধিক খেতাব রয়েছে সানিয়া মির্জার ঝুলিতে। তার সঙ্গে, অলিম্পিকেও ভারতের হয়ে সানিয়া মির্জার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। চলুন আরো একবার ফিরে দেখা যাক, কীভাবে হায়দরাবাদের একজন সাধারন ঘরের মেয়ে থেকে দেশের একজন প্রথম সারির ক্রীড়াতারকা হওয়ার এই জার্নিটা।
সানিয়া মির্জা বর্তমানে ভারতের সর্বকালের সবচেয়ে সফল মহিলা টেনিস খেলোয়াড়। এছাড়াও মহিলাদের ডাবলসের ক্রমতালিকায় তিনি রয়েছেন একেবারে প্রথমেই। তার ঝুলিতে রয়েছে ৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম যেগুলির মধ্যে তিনটি মহিলাদের ডাবলসে এবং তিনটি রয়েছে মিক্সড ডাবলসে। ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ২০১২ তে ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং ২০১৪ সালে ইউএস ওপেনে জয়লাভ করেছিলেন সানিয়া মির্জা। এছাড়াও মহিলাদের ডাবলস, ২০১৫ উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেন ও ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। তবে, ২০১৩ সালের পর তাকে আর সিঙ্গলসের ময়দানে দেখা যায়নি। তার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে ডাবলস খেলেছিলেন। সিঙ্গেলসের ক্রমতালিকায় তিনি একবার উঠে এসেছিলেন ২৭ নম্বরে। বিশ্বের তাবড় তাবড় টেনিস খেলোয়াড়দের পিছনে ফেলে এই জায়গায় এসেছিলেন তিনি।
ডাবলসের ক্ষেত্রেও তার রেকর্ড নেহাৎ কম কিছু না। দীর্ঘ ৯১ সপ্তাহ ধরে ডাবলসের তালিকায় তিনি ছিলেন এক নম্বরে। মার্টিনা হিঙ্গিস এর সঙ্গে সানিয়া মির্জার জুটি অনেকের মনেই এখনো সজীব। ২০১৫ সালে মার্টিনা এবং সানিয়া নিজেদের সেরা পারফর্মেন্স দিয়েছিল। একটানা ৪৪টি জয় করার রেকর্ড ছিল মার্টিনা হিঙ্গিস এবং সানিয়া মির্জার জুটির কাছে। এছাড়াও পরবর্তীতে রোহন বোপান্নার সঙ্গে জুটি বেঁধে একাধিক ম্যাচ জিতেছেন সানিয়া মির্জা। এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসের মত একাধিক সাম্মানিক প্রতিযোগিতায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন সানিয়া মির্জা। এমনকি টোকিও অলিম্পিক ২০২০-তেও আমরা তাকে পারফর্ম করতে দেখেছিলাম। সেখানে খুব একটা বেশি সাফল্য না পেলেও, তিনি যে ভারতীয় মহিলা টেনিসের এক নম্বর তারকা সেটা দীর্ঘ ২০ বছরের ক্যারিয়ারে বারবার প্রমাণ করে দিয়েছেন সানিয়া মির্জা।
সানিয়ার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০০১ সালে আইটিএফ সার্কিট থেকে। সেখানে তিনি নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রথম বছর সাফল্য না পেলেও, ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ ২০০২-য়ে ওই আইটিএফ প্রতিযোগিতায় তিনটি সিঙ্গেল টাইটেল এবং একটি ডাবল টাইটেল জিতে খবরের শিরোনামে উঠে আসেন সানিয়া মির্জা। তারপরে ২০০৩, আইটিএফ সার্কিটে আবারো তিনটি সিঙ্গেল এবং একটি ডবলে জয়লাভ। তবে তার জীবনের প্রথম বড়ো পদকটি আসে হায়দ্রাবাদের WTA থেকে। এই সার্কিটে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ডাবলস টাইটেল জিতে নিয়ে টেনিস বিশ্বে নিজের অভিষেকের ঘোষণা করে দেন সানিয়া।
২০০৫ সালে হায়দ্রাবাদ WTA-র ফাইনালে এ.বন্দরেনকোকে হারিয়ে মেইন টাইটেল জিতে সকলকে চমকে দেন সানিয়া। এছাড়া ওই একই বছর ফরেস্ট হিলসে রানার্সআপ, জাপান ওপেনের সেমিফাইনাল, দুবাই ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন সানিয়া মির্জা। এছাড়াও এই বছরেই প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে গ্র্যান্ড স্লাম পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিলেন সানিয়া। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তৃতীয় রাউন্ডে পরাজিত হয়ে গেলেও হাল ছেড়ে দেননি। বরং পরের আমেরিকান ওপেনে চতুর্থ রাউন্ড অবধি কোয়ালিফাই করেছিলেন সানিয়া মির্জা। এই বছরেই সেরা ৫০ মহিলা টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিলেন সানিয়া। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন পেশাদারভাবে তিনি টেনিস খেলবেন। আর আজ ৩৫ বছর বয়সে তিনি ভারতের টেনিস জগতের সবথেকে উজ্বল তারকাদের মধ্যে একজন। চলুন নজর রাখা যাক তার খেতাব তালিকায়।
গ্র্যান্ড স্ল্যাম
যে কোনো টেনিস খেলোয়াড়ের জন্য সবথেকে সম্মানীয় খেতাবটি হলো গ্র্যান্ড স্ল্যাম। সানিয়া মির্জার খেতাবের ঝুলিতে রয়েছে সর্বমোট ৬টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, যার মধ্যে সবথেকে উল্লেখনীয় হলো ২০০৯ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের গ্র্যান্ড স্ল্যাম। মহেশ ভূপতির সঙ্গে জুটি বেঁধে অস্ট্রেলিয় ওপেনের মিক্সড ডাবলস বিভাগে নিজের জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় সানিয়া মির্জার। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম থেকেই এই জুটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে শুরু করেছিল। কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি তাদেরকে একটি সেটেও হারের সম্মুখীন হতে হয়নি। তবে কোয়ার্টার-ফাইনালে তাদের অশ্বমেধের ঘোড়াকে প্রথম বাধা দিয়েছিল কানাডার আলেকজান্দ্রা ওজনিয়াক এবং ড্যানিয়েল নেস্টর জুটি। প্রথম সেটে ৩-৬ পয়েন্টে হারের সম্মুখীন হলেও, পরের দুটি সেটে দুর্দান্ত কাম-ব্যাক করে ২০০৯ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমি ফাইনালে পৌঁছে যান মহেশ ভূপতি এবং সানিয়া মির্জা। সেমিফাইনালে চেক রিপাবলিকের ইভেটা বেনেসভা এবং লুকাস দলাউহি-র ৬-৪, ৬-১ সেটে পরাস্ত করে ফাইনালে ওঠেন মহেশ ভূপতি সানিয়া মির্জা জুটি।
ফাইনালে তারা মুখোমুখি হন ইজরায়েলের অ্যান্ডি রাম এবং ফ্রান্সের নাতালি ডেকি জুটির। প্রথমদিকে কিছুটা চাপে শুরু করলেও পরবর্তীতে ফিরে আসেন মহেশ ও সানিয়া। ৬-৩, ৬-১ সেটে ইজরাইলি জুটিকে পরাস্ত করে ২০০৯ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে নেন সানিয়া মির্জা এবং মহেশ ভূপতি।
ভারতকে আরো একবার গর্বিত করে ২০১২ ফরাসি ওপেনেও জয় ছিনিয়ে নেন সানিয়া মির্জা। ফরাসি ওপেনের মিক্সড ডাবলসেও তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন মহেশ ভূপতি। তিন বছর পরে ২০০৯ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের স্মৃতিকে আরো একবার জীবিত করে তুলেছিলেন মহেশ এবং সানিয়া। রোল্যান্ড গ্যারসের মাটিতে পলিশ-মেক্সিকান জুটি ক্লডিয়া জ্যানস-ইগ্নাসিক এবং সান্তিয়াগো গোঞ্জালেসকে ৭-৬, ৬-১ সেটে পরাস্ত করে দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নেন সানিয়া মির্জা।
তাঁর ঝুলিতে পরবর্তী গ্র্যান্ড স্ল্যাম আসে ২০১৪ সালের আমেরিকার ওপেনে। সেখানে ব্রাজিলিয়ান পার্টনার ব্রুনো সোয়ারেসের সঙ্গে জুটি বেঁধে ২০১৪ ইউএস ওপেনে জয়লাভ করেন সানিয়া মির্জা। এই ওপেনে প্রথম থেকেই জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন ব্রুনো এবং সানিয়া। ফাইনালে আমেরিকার এবিগেল স্পিয়ার্স এবং মেক্সিকোর সান্তিয়াগো গোঞ্জালেসকে টাইব্রেকারে পরাস্ত করে ২০১৪ ইউএস ওপেনের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করেন সানিয়া মির্জা।
২০১৫-তে তৈরি হয় বহুচর্চিত সুইডেনের জনপ্রিয় টেনিস তারকা মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটি বেঁধে ডাবলস খেলা শুরু করেন সানিয়া মির্জা; তৈরি হয় বহুচর্চিত সানিয়া মির্জা-মার্টিনা হিঙ্গিস জুটি। মির্জা এবং হিঙ্গিস জোট বেঁধে বহু প্রতিযোগিতায় ব্যাক-টু-ব্যাক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করেছেন। এই জয়ের ধারা শুরু হয় ২০১৫ উইম্বলডন থেকে, যেখানে ফাইনালে রাশিয়ার জুটি এক্তারিনা মাকারোভা ও ইলিনা ভেজনিনাকে ফাইনালে স্ট্রেট সেটে পরাস্ত করেন সানিয়া মির্জা এবং মার্টিনা হিঙ্গিস। তারপরে ২০১৫ আমেরিকান ওপেন এবং ২০১৬-তে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে পরপর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। ২০১৫ থেকে ২০১৬ এই সময়টা ছিল সানিয়া মির্জার ক্যারিয়ারের সবথেকে ভালো সময়, যেখানে মার্টিনা হিঙ্গিসের সাথে সাথে জুটি বেঁধে তিনি গ্র্যান্ড স্ল্যামের হ্যাটট্রিক করেছিলেন।
সিঙ্গলস এবং ডাবলস কেরিয়ার
ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে সানিয়া মির্জা সবথেকে বেশি রেকর্ড তৈরি করেছিলেন সিঙ্গলসে। তবে, ২০১৩ সালে তার সিঙ্গলসের যাত্রা শেষ হয় কব্জিতে একটি চোট পাওয়ার কারণে। তবে ২০১৩ পর্যন্ত সানিয়া মির্জার সিঙ্গেলস ক্যারিয়ার একেবারে যে খারাপ ছিল তেমন নয়। বরং, ২০০৫ সালে ভারতের প্রথম টেনিস তারকা হিসেবে হায়দ্রাবাদ ওপেনে WTA সিঙ্গলস টাইটেল জয় করেন তিনি। ২০০৭ সালে তিনি নিজের সিঙ্গেলস ক্যারিয়ারের একেবারে মধ্যগগনে ছিলেন। সেই সময়ে WTA সিঙ্গেলস ক্রমতালিকায় ২৭ নম্বরে উঠে এসেছিলেন তিনি। তাকেই রেকর্ড এখনও পর্যন্ত কোন ভারতীয় টেনিস তারকা ভাঙতে পারেনি। অন্যদিকে, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে WTA ডাবলসের ক্রমতালিকায় ১ নম্বরে উঠে আসেন সানিয়া মির্জা। ভারতীয় টেনিস ইতিহাসে সানিয়া ছিলেন একমাত্র টেনিস তারকা যিনি ডাবলস ক্রমতালিকায় ১ নম্বর স্থান অর্জন করতে পেরেছেন। এমনকি, ATP স্টেজেও শুধুমাত্র লিয়েন্ডার পেজ এবং মহেশ ভূপতি শুধুমাত্র এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছিলেন। তবে, ২০১৭ জানুয়ারির পর থেকে সানিয়া মির্জার ক্যারিয়ার গ্রাফ ধীরে ধীরে নীচে নামতে শুরু করে। এখনো পর্যন্ত তার ঝুলিতে রয়েছে ৪২টি WTA ডাবলস খেতাব।
অলিম্পিকে সানিয়া
নিজের দেশের হয়ে অলিম্পিকে পদক নিয়ে আসা প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বপ্ন। সানিয়া মির্জাও তার থেকে আলাদা কিছু নন। একটি সাক্ষাৎকারে সানিয়া মির্জা বলেছিলেন, 'অলিম্পিক পোডিয়ামে ভারতের পতাকাকে উত্তোলিত হতে দেখা আমার কাছে একটা স্বপ্নের মত। আমি ছোট থেকেই অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছিলাম, এবং এই সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি।' ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক থেকে সানিয়া মির্জার অলিম্পিক ক্যারিয়ার শুরু। তারপরে ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক, ২০১৬ রিও অলিম্পিক এবং সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। তবে ভারতকে খেতাব জেতাতে তিনি পারেননি।
এশিয়ান গেমস এবং কমনওয়েলথ গেমস ক্যারিয়ার
সানিয়া মির্জার ঝুলিতে এশিয়ান গেমসের ৮টি পদক রয়েছে। ২০০২ এশিয়ান গেমসে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই টেনিস লেজেন্ড লিয়েন্ডার পেজ এর সঙ্গে জুটি বেঁধে মিক্সড ডাবলস প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জেতেন সানিয়া মির্জা। এরপর ২০০৬ দোহা এশিয়ান গেমসে ওমেন্স ডাবলস ইভেন্টে সোনা, ২০১৪ এশিয়ান গেমসের মিক্সড ডাবলস ইভেন্টে সোনা জেতেন সানিয়া মির্জা। অন্তঃসত্ত্বা থাকার কারণে ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমসে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
সঙ্গেই কমনওয়েলথ গেমসেও সানিয়ার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। ২০১০ কমনওয়েলথ গেমস দিয়ে সানিয়া মির্জা নিজের কমনওয়েলথ গেমস ক্যারিয়ার শুরু করেন। রাশমী চক্রবর্তীর সঙ্গে উমেন্স ডাবলস ইভেন্টে ব্রোঞ্জ সহ সিঙ্গেলস ইভেন্টে রূপো জয় করেন সানিয়া। এছাড়াও একাধিক আফ্রও এশিয়ান গেমসেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সানিয়া মির্জা।
মহিলা টেনিস জগতে এই দুরন্ত পারফরম্যান্সের জন্য ২০১৫ সালে বিবিসি সেরা ১০০ জন অনুপ্রেরণামূলক মহিলাদের তালিকায় নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন সানিয়া মির্জা। ভারতের টেনিসের ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকার ২০০৪ সালে তাকে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও, ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী, ২০১৫ সালে রাজীব গান্ধী খেলরত্ন (বর্তমান নাম মেজর ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন পুরস্কার) এবং ২০১৬ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার অর্জন করেছিলেন সানিয়া মির্জা।
তবে, ২০১৮ সালে ছেলের জন্মের পর টেনিস কোর্ট থেকে বছর খানেকের জন্য বিরতি নিয়েছিলেন সানিয়া মির্জা। দুবছর পর ২৬ কেজি ওজন কমিয়ে আবার ফিরে আসেন টেনিস জগতে। প্রত্যাবর্তনের পর ইউক্রেনের নাদিয়া কিচেনোকের সাথে জুটি বেঁধে হোবার্ট ইন্টারন্যাশনালে মহিলাদের ডাবলসের শিরোপা জয় করেছিলেন সানিয়া মির্জা। তবে, তারপর থেকে ধীরে ধীরে খেলার মান নামতে থাকে সানিয়া মির্জার। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকেও তার পারফরম্যান্স তেমন একটা ভালো ছিল না। তখন থেকেই হয়তো তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আর তিনি খেলতে পারবেন না। তারপরে ২০২২ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে প্রথম রাউন্ডেই পরাজয়। স্লোভেনিয়ার তামারা জিদানসেক এবং কাজা জুবানের কাছে স্ট্রেট সেটে পরাস্ত হন সানিয়া মির্জা। তারপরেই আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা।
এদিন ম্যাচ হেরে সানিয়া মির্জা বললেন, 'আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটাই হবে আমার শেষ মরশুম। আমি এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে খেলছি। আমি পুরো মরশুম খেলতে পারব কিনা জানিনা, তবে আমি পুরো মরশুমে থাকতে চাই।' স্লোভেনিয়ার এই তারকা-জুটির কাছে পরাস্ত হওয়ার পরেই ৩৫ বছর বয়সি এই টেনিস তারকা হয়তো বুঝতে পেরেছেন, আর শরীর সায় দেবে না। এরপরে খেললে হয়তো আরো হারের সম্মুখীন হতে হবে। তাই এবারই শেষ, এরপরই নিজের প্রিয় ৱ্যাকেটটা তুলে রাখার ঘোষণা করে টেনিসকে চিরবিদায় জানালেন সানিয়া মির্জা।