বেস্টসেলার শব্দটার মধ্যেই লুকিয়ে গোলমাল

Bestseller Bengali Literature Sanmatrananda : মানুষকে আকর্ষণ করা তো লেখকের মূল উদ্দেশ্য নয়। তার নিজের ভাবনা থেকে সে লিখবে। এত কথা ভেবে সে লিখবে না।

সুকল্প চট্টোপাধ্যায় : বাংলা ভাষা বা পৃথিবীর যে কোনও ভাষায় এমন একটা কথা প্রচলিত আছে যে, বইগুলো 'বেস্টসেলার' হয়। আমার ধারণা, 'বেস্ট' বলে তো কিছু হয় না। কারণ, তার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। একটা বই ৫০০০ বিক্রি হলে আরেকটা বই ৬০০০ বিক্রি হতে পারে। কিন্তু 'বেস্টসেলার' বললে একটা আশাতীত বিক্রির কথা আমরা ভাবি। সাধারণত আমরা দেখি, সেই সমস্ত বইগুলো নিয়ে জনমানসে একটা প্রচলিত ধারণা আছে। তাঁরা ভাবেন, সেই বইগুলো হয় খুব চটুল, না হলে খুব লোকরঞ্জনী ভাষায় লেখা। সেই ধারণাটাকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত প্রমাণিত করেছে 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা'। অন্তত তিনটে স্তরের ভাষা নিয়ে একটা উপন্যাস বলা যেতে পারে একে। এই বই নতুন সারস্বত দিগন্তও খুলে দিয়েছে। এমন একটা উপন্যাস যেটা পড়ার জন্য পাঠকের নিজস্ব একটা প্রস্তুতির প্রয়োজন। এরকম একটা উপন্যাস তথাকথিত ‘বেস্টসেলার’ এই সত্যটাকে তো আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারব না। এই বিষয়টাকে আপনি এখন কীভাবে দেখেন?

সন্মাত্রানন্দ শোভন : প্রথমে পরিসংখ্যান তত্ত্বের ছাত্র হিসেবে আমি বলতে চাই, এই ‘বেস্টসেলার’ অভিধাটা খুব একটা well defined নয়। মানে, এমন কোনও পরিসংখ্যান এখানে নেই। কত ছাপা হয়েছে? কত বিক্রি হয়েছে? ঠিক কত সংখ্যায় পৌঁছলে আমরা তাকে বেস্টসেলার বলব? এগুলো খুব ডিফাইনড নয়। আসলে, 'বেস্টসেলার' শব্দটি উচ্ছ্বসিত মানুষদের অভিধা। যার সঙ্গে সংখ্যাতত্ত্বের খুব একটা যোগাযোগ নেই। তাহলেও যখন কোনও একটা বইকে বেস্টসেলার বলা হচ্ছে, তখন আসলে সেটা বিপুল জনপ্রিয়তাকে ইঙ্গিত করছে। এখন ‘নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা’ ২০টা মুদ্রণে পৌঁছে গিয়েছে বা ‘ছায়া চরাচর’ ১০টা মুদ্রণ অতিক্রম করে গেছে। সেই কারণেই হয়তো উচ্ছ্বসিত মানুষ বেস্ট সেলার বলছে। otherwise, বেস্ট সেলার বলতে ওই well defined ভাবে বলা সম্ভব নয়।

আসলে এই শব্দটার মধ্যে একটা গোলমাল আছে। ‘বেস্ট’, ‘বেটার’ এইসব বললেই একটা সংখ্যার নিরিখে কথা বলা উচিত। কিন্তু আমাদের বাংলা ভাষায় এমন অনেক পরিভাষা ঢুকে গিয়েছে... সব ভাষাতেই অবশ্য ঢুকে যায়। মানে যা সুসংজ্ঞায়িত কোনও অভিধা নয় আর কি।

পরের অংশে বললে যে, চটুল হলে তা বেস্টসেলার হয়। আসলে এইটাও খুব একটা জোরালো ভাবনা নয়। কারণ, আমার যে বইপত্রগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলো কোনও চটুল ভাষায় লেখা নয়। তা বেশ কঠিন, এবং খুব ধীরে ধীরে পড়তে হয়, মনোযোগ দিয়ে, অনেকদিন ধরে। সেটা পাঠকমাত্রেই জানেন। তাহলে যদি আমাকে এরকম একটা প্রশ্ন করা হয় যে, ওই অতীশ দীপঙ্করকে নিয়ে লেখা বা মধুসূদন সরস্বতীকে নিয়ে লেখা, বৌদ্ধ দর্শন কিংবা নব্য ন্যায় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা অত মানুষের কাছে প্রিয় হল কীভাবে?

তার একটা উত্তর এই যে, একটা গল্প বা উপন্যাসে অনেকগুলো লেয়ার থাকে। লেয়ার অর্থাৎ, এখানে কাহিনির স্তর। তারপর চরিত্রগুলোরও একটা স্তর থাকে। পরিবেশ বর্ণনার একটা লেয়ার থাকে। আর একেবারে গভীরে গিয়ে চিন্তার একটা লেয়ার থাকে। গভীর ওই চিন্তা, তার জ্ঞান লেখাটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন সব পাঠক সব স্তরে প্রবেশ করে না। আমি দেখেছি যে, কেউ হয়তো বইটা পড়েছেন। আমি তাঁর সঙ্গে কথাও বলেছি। তিনি হয়তো কেবল গল্পটুকুই পড়েছেন। গল্পের পেছনের যে চিন্তা, সেগুলো তিনি স্পর্শ করতে পারেননি। কেউ হয়তো ওই ভাষার সৌকর্যে মুগ্ধ হয়েছে। কিন্তু তার থেকে আর গভীর স্তরে যায়নি। কেউ বা হয়তো 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা', 'ছায়াচরাচর' প্রভৃতিতে স্থান মাহাত্ম্যে আটকে গিয়েছে, আর গভীরে যায়নি। আবার এমন বিরল শ্রেণীর পাঠকও আছেন যারা একেবারে তলদেশে গিয়ে চিন্তার স্তরকে স্পর্শ করেছেন, সেই চিন্তাকে অনেক সময় আক্রমণ করেছেন এবং তার অসংগতিও দেখিয়েছেন। ব্যাপারটা এই যে, সবাই তো আর সব স্তর অবধি ডুব দেবে না। কিন্তু এখন যদি কোনও লেখক খুব আনকম্প্রোমাইজিং হন তিনি ওই ওপরের লেয়ারগুলো সব ছেঁটে বাদ দিয়ে দেবেন। কেবল চিন্তা আর তার অনুষঙ্গটুকুই নিজের লেখায় রাখলে তাঁর পাঠকের সংখ্যা কমে যাবে।

আমাদের গ্রামের দিকে ধানের গোলার মধ্যে ধান রাখা হয়; মরাই আর কি। তার বাইরের দিকে খই, মুড়কি এইসব ছড়ানো থাকে। ভেতরে থাকে আসল জিনিস। রাতের বেলা ইঁদুরগুলো এসে বাইরের ওই খই, মুড়কি খেয়ে বাড়ি চলে যায়।

সুকল্প : (হাসি) ...

সন্মাত্রানন্দ : আবার কিছু কিছু সেয়ানা ইঁদুর আছে যারা ওই খই-মুড়কি পেরিয়ে গিয়ে গোলায় ঢুকে পড়ে ধান খেয়ে চাষিকে শেষ করে দেয়। এখন চাষি যদি এতটাই আনকম্প্রোমাইজিং হন যে বাইরের দিকে কোনও খই-মুড়কি ছড়াবেন না, সেটা কোনও লঘুতা নয়। সেটা কাহিনির প্রয়োজনে আসছে, উপন্যাসের প্রয়োজনেই আমাকে একটা গল্প বহন করতে হচ্ছে। এই বিভিন্ন স্তরের লেখাগুলো বিভিন্ন শ্রেণির পাঠককে আকর্ষণ করে। কেউ হয়তো দর্শন চিন্তার জন্য পড়ে, কেউ হয়তো শুধু গল্পটা থেকে আনন্দ পাওয়ার জন্য পড়ে। কেউ হয়তো চরিত্র বা পরিবেশটাকে উপভোগ করার জন্য পড়ে। সবাই শেষ স্তর অবধি যায় না। কিন্তু যদি এমন হয় যে, একটা লেখা মানে একটাই লেয়ার থাকবে... ওই যে শুধু চিন্তাটাই থাকবে বা শুধু কাহিনিই থাকবে। তাহলে যারা চিন্তার খোরাক পেতে চায় তারা যদি কেবল কাহিনিটা পড়তে আসে তাহলে সেটা তারা রিপেলড হয়ে যাবে। তাদের ভালো লাগবে না। তারা পড়বে না। সেটা একটা কারণ বলে আমার মনে হয়েছে যে, শুধুমাত্র লঘু গল্প দিয়েই মানুষকে আকর্ষণ করা যায় তা নয়। আর মানুষকে আকর্ষণ করা তো লেখকের মূল উদ্দেশ্য নয়। তার নিজের ভাবনা থেকে সে লিখবে। এত কথা ভেবে সে লিখবে না। কিন্তু ঘটনাক্রমে যদি সে একটা লেয়ার স্টোরি লিখতে পারে যার স্টোরিলাইনটাও রিচ হবে, দার্শনিক ব্যাপারটাও দৃঢ় হবে তাহলে একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। বই হচ্ছে সবথেকে আনপ্রেডিক্টবল জিনিস, যার সম্ভাবনা তৈরি হয়, এবং অনেক পাঠকের কাছে পৌঁছনো যায়।

দ্বিতীয় কথা, যদি আমার কাহিনিটা খুব বেশি কলকাতাকেন্দ্রিক হয় তাহলেও পাঠক সম্ভাবনা কমে যায়। যদি আমার কাহিনিটার কিছুটা অংশ বাংলাদেশের কোনও গ্রামে হয়, কিছুটা অংশ কলকাতা শহর হয়, কিছুটা আবার কলকাতার বাইরের কোনও প্রদেশে হয় তখন অন্যরকম ব্যাপার ঘটে। আমি যদি মেদিনীপুরের লোক হই তাহলে সেই গল্পটার প্রতি একটা আকর্ষণ থাকবে যেখানে আমার শহরের কথা বলা হয়েছে। তবে সবশেষে এটা বলতে চাই, যে, এরকম পরিকল্পনা করে তো আর লিখতে বসা যায় না। কিন্তু যদি একটা ঘটনা বা সমাপতন ঘটে যায়, একটা কেমিস্ট্রি তৈরি হয়, যাতে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে আবদ্ধ না থেকে দেশের বিস্তৃত ভূখণ্ডের উপর সেই উপন্যাসটা আধারিত হয় এবং যদি সেই রচনাটির নানা স্তর থাকে, তাহলে নানা ধরনের পাঠক আকৃষ্ট হতে পারে। সেই বইটির বিক্রিও অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। তখন ওইরকম একটা উচ্ছ্বসিত অভিধা প্রয়োগ করা যেতে পারে যে, সেটা বেস্টসেলার।

সুকল্প : যেহেতু পাঠক হিসেবে 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটে' বা তার পরবর্তী বইগুলো নিয়ে আমরা আগেও আড্ডা মেরেছি। বেস্টসেলার নিয়ে বিশ্লেষণের নিরিখেই আপনার ব্যক্তিগত লেখক সত্ত্বার জায়গায় একটু ঢুকতে চাই। 'নাস্তিক পণ্ডিত'-এর পর আপনি 'ছায়াচরাচর' লিখলেন। এই বইটি নিয়ে এর আগেও আপনার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমার মতো কয়েকজন পাঠক মনে করেন, উপন্যাস হিসেবে 'ছায়াচরাচর' 'নাস্তিক'-এর অনেক ওপরে। সেটা হয়তো আপনার মাল্টি লেয়ারড চরিত্র মধুসূদন সরস্বতী, যা একেবারেই অজানা অধ্যায়, চমৎকৃত হওয়ার সম্ভাবনাগুলোকে চরিত্র করে তোলা এবং সর্বোপরি চিন্তনের যেই জায়গাটা, এর গভীরতা আমাদের কাছে আরও অনেক। যদিও 'নাস্তিক'-এর তুলনায় পাতার সংখ্যা কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার মতে ওই উপন্যাসটি আপনার সেরা লেখা বলে মনে হয়। পরবর্তীতে আপনি অন্য গতিপথে গিয়েছেন, 'দীনেশ গুপ্তের রিভলভার' বেরিয়েছে। আপনার নতুন লেখা উপন্যাস ‘হাওয়ার মতন নেশার মতন’,- সে আমরা পড়েছি ধারাবাহিকভাবে সংবাদপত্রে।

এই যে 'নাস্তিক'-এর একটা বিপুল জনপ্রিয়তা... বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছল 'নাস্তিক'। সিঁথির মোড়ের মতো একটা জায়গায়, একটা জনপদের মধ্যে ছোট্ট বইয়ের দোকান। সেই দোকানদারও কিন্তু সগর্বে বলেন, আমি ৫০০ কপি 'নাস্তিক পণ্ডিত' বিক্রি করেছি। আজকে ব্যাপারটা এমন হয়ে গিয়েছে যে, অনেকেই এটা বাড়িতে রাখছেন। সেটাই একটা স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে গিয়েছে। এটা তো একটা বিষয়। 'নাস্তিক'-এর বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরে অন্য উপন্যাস লেখার সময় বা প্রকাশের সময় কোথাও কি শঙ্কা তৈরি হয় যে আমি পরের লেখাটায়ও মানুষের প্রত্যাশা পরিপূরণ করতে পারব? এইরকম শঙ্কা কি আপনার হয়েছিল?

সন্মাত্রানন্দ : না এই ব্যাপারটা আমার কখনো হয়নি। 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা' প্রথম উপন্যাস। তো সেটা যখন লিখতে শুরু করেছি তখন কিন্তু 'ছায়াচরাচর'-এর ভাবনাও একইসঙ্গে আমার মাথায় এসেছিল। আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, এই দুটোর মধ্যে কোনটা আগে করা যায়। তখন সে আমাকে 'নাস্তিক' বলে। যদি না বলতো, তাহলে কি হতো জানি না। আমি প্রকাশককে 'ছায়াচরাচর', 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা' প্রকাশিত হওয়ার ৭-৮ মাসের মধ্যে দিয়েছি। আগেই বললাম যে, 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা'-য় যে লেয়ারগুলো আছে, ছায়াচরচরে কিন্তু অতগুলো স্তর নেই। সেখানে কেবল সেই সময়টাই রয়েছে। আগে যে ধানের মরাইয়ের উদাহরণটা বললাম... কাউকে অশ্রদ্ধা করে কিছু বলছি না। বলতে চাইছি যে, কিছু মানুষ যারা উপন্যাসের বিভিন্ন স্তর আস্বাদন করতে পারেন। এখানে সেই বাইরের দিকের লেয়ারটা কম পড়ে গিয়েছিল। তার ফলে পাঠক প্রথম দিকে আসেনি। মানে, তারা ওরকম কোনও অবজারভার নয়। আমি ইচ্ছে করেই রাখিনি কারণ আমি কখনও রিপিট করিনি। আর 'ছায়াচরাচর' ও 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা' দুটি বইয়েরই প্রকাশকালের ব্যবধানটা খুব কম।

সুকল্প : খুব কম ...

সন্মাত্রানন্দ : এটাও ছায়াচরাচরের পক্ষে স্বাস্থ্যকর হয়নি। মানে, তার জনপ্রিয়তা বা লোকপ্রিয়তার দিক থেকে এটা বিপজ্জনক হয়েছিল। কারণ তখন 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা'ই মানুষ ঠিকঠাক করে পড়ে ওঠেনি। এখনও তো পড়ছে। কাজেই সঙ্গে সঙ্গে তখন বের করে দিয়েছিলাম। আমি অত ভাবিনি যে কী হবে না হবে। আরেকটা জিনিস হল, 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা' প্রথম উপন্যাস। যে কোনও কাজ থেকে মানুষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, তার নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো বুঝতে পারে। ওই বইটা পরে পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যে, এখানে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা অবশ্যই আছে। কোথাও একটু কম খেললে হতো। কোথাও হয়তো একটু বাড়ালে ভালো হতো।

যেমন, অতীশ দীপঙ্করের তিব্বতে যাওয়ার পরে যে ঘটনাগুলো, সেটা তথ্যের অপ্রতুলতা থাকলেও কল্পনার বিস্তার করা যেতে পারত। সেটা আরেকটু বড় হতে পারত। অন্য দিকে হয়তো কোথাও কোথাও অনর্থক একটু বেশি হয়ে গিয়েছে। সেই জায়গাগুলো কমানো যেত। তা সেইগুলি আস্তে আস্তে বুঝতে সময় লাগল। ফলে 'ছায়াচরাচর'-এ আমি সেই খুঁতগুলো ছাড়াতে চেষ্টা করলাম আর কি। যে কারণে তুমি একাই শুধু নও আরও অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি যারা দুটোই পড়েছেন তারা... বেশিরভাগ মানুষই বলেছেন 'ছায়াচরাচর' তাদের কাছে 'নাস্তিক'-এর থেকে প্রিয়তর। তবে আমি নিজেই এই দুইয়ের ভেতর তুলনা করিনি। দুটো বিষয়বস্তু একেবারে আলাদা, ভিন্ন জগত, দুটো লেখার স্টাইলও আলাদা। আসলে একজন লেখক যখন লেখেন তিনি এত কথা চিন্তা করবেন না।

সুকল্প : না না ...

সন্মাত্রানন্দ : আমার লেখাটা কত জনের কাছে যাবে, সেটা বেস্টসেলার হবে কি না, এসব কথা তার ভাবনার মধ্যেই থাকবে না। এমন তো হতেই পারত যে 'নাস্তিক'টাই হয়তো খুব জনপ্রিয় হয়েছে বাকি উপন্যাসগুলো যদি এমন হতো যে একেবারেই মানুষ নিল না। এটা তো হতেই পারত। সেটা তো হয়নি।

সুকল্প : এটা কেমন লাগে যখন পাঠক এসে খোঁজ করেন যে ওঁর পরের বইটা কবে আসছে ? এটা তো একটা বাজারের ছবি... মানে আমাদের বাংলার পাঠ বাজারের এটা তো একটা ...

সন্মাত্রানন্দ : অনেকের কাছে এটার কমপ্লিট সেট আছে।

সুকল্প : হ্যাঁ হ্যাঁ কমপ্লিট সেট আছে। এবার তাঁরা ক্রমাগত এসে বলেন, 'আচ্ছা ওঁর নতুন বই কোনটা?' আমরা যখন দোকানে থাকি ,তখন আমাদের কাছে এই প্রশ্ন আসে। আপনার উপন্যাস নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন আসে। এই যে খোঁজটা, নিরন্তর সন্মাত্রানন্দের লেখালেখি নিয়ে সাধারণ পাঠকের যে খোঁজ এটাও তো একটা বিষয়! আজ বেস্টসেলার বলতে যে ব্যাপারটা সবাই বলতে চায় এই খোঁজটাও তো তার অন্তর্গত, নাকি?

সন্মাত্রানন্দ : হ্যাঁ, সে তো নিশ্চয়ই! তবে সেটা কিন্তু পাঠকের কৃপা ছাড়া আর কিছুই না। আমি বলতে চাইছি যে, লেখক এমন কোনও রসায়ন বের করতে পারেন না যা দিয়ে তিনি তাঁর প্রত্যেকটি বইকে পাঠকপ্রিয় করে তুলতে পারেন। এটা হতে পারে না। এখনও কিছু সংখ্যক নিবিষ্ট পাঠক আছেন, যারা খবর রাখেন নিয়মিত। আমার তো প্রকাশিত বই ছাড়া পত্র-পত্রিকায় কতটুকুই বা বেরোয়! তা সত্ত্বেও তাঁরা যে খুঁজে নিয়ে কেনেন, পড়েন আবার সেটা নিয়ে মতামতও দেন। তাঁরা বলেন যে, এটা এরকম হয়েছে ওটা ওরকম হয়েছিল, এটা অতটা ভালো লাগল না। ওইটা আরেকটু ভালো লাগল। এটা যে তাঁরা করে চলেছেন নিরন্তর, একটা প্রমোশন করার চেষ্টা করে চলেছেন, সত্যি কথা সেটা তাঁদের সহৃদয়তা। সেটায় আমাদের খুব একটা হাত নেই। লেখকের বা প্রকাশকেরও হাত নেই। এটা পাঠকের মন ছুঁয়ে গিয়েছে হয়তো। তাঁরা আরও এক্সপ্লোর করতে চাইছেন, আমার যে কল্পনার জগতটা, তাঁদের সঙ্গে তো মিলে গিয়েছে। সেখানে অনেক মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার জড়িয়ে আছে আর কি।

সুকল্প : হয়তো এটাও হতে পারে যে, আপনার রচনায় যে প্রতিবেশ রচিত হয়, তার সঙ্গে বাঙালি পাঠক আগে থেকে পরিচিত ছিল না। এর আগে কখনো পায়নি যেটা আপনি দিয়েছেন।

সন্মাত্রানন্দ : আসলে, আমি যে ধারায় যা হোক কিছু একটা করি, সেখানে কয়েকজনের কাছে খুব কৃতজ্ঞতা আছে – একজন হচ্ছেন বাণী বসু, আরেকজন হচ্ছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সাহেব। তারপরে রবিদা, মানে রবিশঙ্কর বল। ওঁরা কিন্তু নিজেদের লেখায় বাঁক পরিবর্তন করেছেন। মানে, ওদের আগে এটা ভাবাই যেত না যে, ওইরকম দুটো মানুষ কবরের নীচে শুয়ে কথা বলছে, আর সেই কথার ভেতর দিয়েই এই উপন্যাসের বয়ান তৈরি হচ্ছে। এতটাই এক্সেপশনাল ভাবনা এই বাংলায়। অন্যদিকে বিদেশে হয়তো এমন কাজ হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এগুলি বা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের 'চিলেকোঠার সেপাই' – ওসব জায়গায় যে ব্যতিক্রমী চিন্তা... উপন্যাস যে শুধু কাহিনি নির্ভর নয়, চিন্তাপ্রধানও হতে পারে সেই পথটা কিন্তু এঁরাই তৈরি করেছেন। সেটা আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্বীকার করি।

সুকল্প : একদম। লেখায় পূর্বপুরুষের রক্ত অনুপস্থিত থাকাটা তো কোনও কাজের কাজ নয় ...

সন্মাত্রানন্দ : হ্যাঁ, এটা ধীরে ধীরেই রাস্তাটা তৈরি হয়ে আসছিল। মানুষ ক্রমশ ঠাসবুনোট প্লট এবং কাহিনিতে বিরক্ত; এতে এক শ্রেণীর পাঠক বিরক্ত হতে শুরু করেছিলেন। তাঁরা একটু চিন্তার অবয়বকে স্পর্শ করতে চাইছিলেন।

সুকল্প : যে সময়টায় আমরা ক্রমাগত খুব সস্তা কিছু থ্রিলার নির্ভর পাঠকমনকে লক্ষ করছিলাম। যে থ্রিলারগুলো আসতো এবং কয়েক হাজার কপি বিক্রি হয়ে গেল , পরে সেটার কথা কেউ মনেও রাখল না। সেখানে দাঁড়িয়ে আপনি যখন 'নাস্তিক' লিখছেন, যেটাকে আমি 'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'র বাংলা কাগজ ‘এই সময়’- পত্রিকায় ‘দার্শনিক থ্রিলার’ লিখেছিলাম। Philosophical Thriller, তো এই Philosophical Thriller-এ আপনি হাত দিলেন। আচ্ছা এই যে থ্রিলার এলিমেন্টটা, আপনার এই চিন্তার গভীরতার অতলান্তিক সমস্ত স্তর, বিভিন্ন মাল্টি লেয়ারড ক্যারেকটার এবং গল্প, তারপর ফিলোজফি - এতকিছু রেখেও থ্রিলার এলিমেন্টটা অটুট। আপনার মনে হয় না যে, তথাকথিত ‘বেস্টসেলার’ হওয়ার পেছনে এই জিনিসটি কোথাও একটা বড় ভূমিকা নেয়?

সন্মাত্রানন্দ : সেটা করে কিন্তু খুবই অসচেতনভাবে করে। আইনস্টাইন বলতেন যে, বিস্ময় জ্ঞানের থেকে অনেক বড়। আমরা যখনই কিছু এক্সপ্লোর করি... ধরা যাক, 'আমি তোমাকে ভালোবাসি' মানে মনের স্তরগুলোকে এক্সপ্লোর করি। যতই খুঁজি, ততই নতুন জিনিস উপস্থিত হয়, তখন আমি বিস্মিত না হয়ে পারি না। যে কোনও জ্ঞানচর্চার সঙ্গেই এই রোমাঞ্চ জড়িয়ে আছে। শুধু সেই থ্রিলটাকে খাতায় কলমে কথা সাহিত্যের উপকরণ হিসেবে কম ব্যবহার করেছেন আমার পূর্বসূরিরা। এবার আমার এসব উপন্যাস যদি নব্বইয়ের দশকে বেরোত, তাহলে আমার মনে হয় তা অনেকে গ্রহণ করত না। কারণ তখনও কাহিনি চেপে বসে আছে পাঠকের মনে। পাঠক একটা নিটোল কাহিনি চাইছে। তাতে থ্রিলার এলিমেন্ট থাক বা না থাক, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।

কিন্তু তারপরে যখন একুশ শতক এল, মানুষের কাছে থ্রিল ক্রমশ মনোটোনাস লাগতে শুরু করল, তার কাছে প্রত্যেকটা দিন আগের দিনের পুনরাবৃত্তি বলে মনে হচ্ছে। শত উপভোগের উপকরণ থাকা সত্ত্বেও এটা মনে হচ্ছে। সেরকম একটা সময়ে একদল মানুষ থ্রিলার লিখেছেন এবং সেই থ্রিলার মানুষ পড়েছে। সেটা হয়তো সেই বছরই পড়েছে তারপর হয়তো ভুলে গিয়েছে। সে হোক। কিন্তু আমার যেটা মনে হয়েছে যে আমি যদি কোনও একটা অন্বেষণ করি, জ্ঞানের অন্বেষণ হলেও সেখানে থ্রিল থাকা অবশ্যম্ভাবী। আমি ব্যাপারটা সেভাবেই বুঝেছি এবং সেভাবেই লিখেছি। হয়তো সেটাকে যে সবসময় গোয়েন্দা গল্প বা হাড়হিম করা কাহিনিতেই থাকতে হবে এমন কিন্তু নয়। সেই এলিমেন্টটা কিন্তু পাঠক গ্রহণ করেছেন। হয়তো সেটাও একটা কারণ হতে পারে এই আর কি। তবে ওই একটু আগেই বললাম যে, বেস্টসেলার বড্ড লুসলি ইউজড একটা টার্ম।

সুকল্প : আসলে একটা ধারণা হেজিমোনির মতো পাঠক বা গোটা জাতির চেপে বসে। জাতিই শুধু কেন বলব, গোটা পৃথিবীর পাঠকসত্তার ওপরই এই অভিধাটা শাসন করে কোথাও।

সন্মাত্রানন্দ : হ্যাঁ, সে তো করেই। সমস্ত অভিধাই যে সুসংজ্ঞায়িত হবে তার কোনও মানে নেই। বেশিরভাগ অভিধাই সুসংজ্ঞায়িত নয়।

সুকল্প : একদমই তাই। এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনার লেখার একটা বড় কথা ইনস্ক্রিপ্টের পাঠকদের জানাতে ইচ্ছে করছে। আপনি কিন্তু কোনও ফর্মুলায় বিশ্বাস করেননি। মানে, একটা ফর্মুলায় আমার এই বইটা প্রচুর বিক্রি হয়েছে। তার ফলে আমি একই ফর্মুলায় আবদ্ধ থাকব একেবারেই নয়। দুটো উপন্যাসের পরে 'হাওয়ার মতন নেশার মতন' এবং তার আগে 'দীনেশ গুপ্তের রিভলভার' - এই প্রত্যেকটি জার্নিই কিন্তু আলাদা আলাদা পথে। এবং 'হাওয়ার মতন নেশার মতন'-এ এসে তো আমরা অন্য সন্মাত্রানন্দকে পেলাম। এই যে আপনার ক্রমাগত এক্সপ্লোর করে যাওয়া, বিভিন্ন বর্ণিল পথে আপনার যে যাত্রা এই ব্যাপারটা তথাকথিত ‘বেস্টসেলার’ হওয়ার পরেও করতে ভয় করে না?

সন্মাত্রানন্দ : না। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে যে, যদি আমি কোনওদিন একটা ফর্মুলা আবিষ্কার করে ফেলি এবং সেটাই মেনে চলতে শুরু করি, সেদিন থেকেই আমার লেখালেখির আনন্দ শেষ হয়ে যাবে। কারণ, আমি তো অলরেডি ফর্মুলাটা বের করে ফেলেছি! এবার তো আমি ফর্মুলায় মেটেরিয়াল ঢালব আর সে বেরিয়ে আসবে। ওই যে কবিতার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ভাঙা-গড়ার যে ব্যাপারটা থাকে... মানে নিজেকে ভেঙে আবার নতুন করে যে গড়া। এক একটা বই আসলে একজন কবি বা লেখকের যাত্রাপথের একটা মাইলস্টোন। সেটা চিহ্নিত করে যে এরপর থেকে তুমি আবার অন্যভাবে ভাবো। এই অন্যভাবে ভাবার মধ্যে আনন্দ অনেক বেশি আর কি। ভয় আর কী করব! বই তো খুবই আনপ্রেডিক্টবল জিনিস। আজকে মানুষ পড়ছেন ঠিক আছে, কালকে যদি না পড়েন তাতে কি আর লেখা বন্ধ করে দেব! লিখব। যে অল্প কয়েকজন পড়বেন, পড়বেন। হ্যাঁ, ওইভাবে আর কি। এইভাবেই চলতে হবে। ভয়ের মধ্যে হাঁটাটাই উত্তেজনার। তবে ওরকম কোনও ফর্মুলা আবিষ্কার করা যায় কি না আমার সন্দেহ আছে।

সুকল্প : এই যে ফর্মুলার কথা আপনি বললেন। একটা জিনিস এখন খুব শোনা যাচ্ছে এবং এটা নিয়ে চর্চা চলছে গোটা পৃথিবীতে। সেটা হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এই এআই তথাকথিত ‘ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ল্ড’-এ ঢুকে পড়েছে। কোথাও শোনা যাচ্ছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে কবিতা লেখানো হচ্ছে। উপন্যাস বা গল্প লেখানো হয়েছে কিনা আমার জানা নেই সেটা। 'বেস্টসেলার'-এর জন্য যদি কোনও ফর্মুলা আবিষ্কৃত হয়... আপনি তো বিজ্ঞানের ছাত্র এবং শিক্ষক। আপনার কি মনে হয়, ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনওদিন কেউ বেস্টসেলিং কিছু লিখছে; কারণ ফিট করে দেওয়ার ফর্মুলা সে পেয়ে গিয়েছে। মানুষই তো এই নিয়ম তৈরি করে। তাহলে সেই সময়টা কেমন হতে পারে ভবিষ্যতে? মানে ধরুন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স উপন্যাস লিখছে।

সন্মাত্রানন্দ : আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানে লেম্যানের মতো করে তুমি যতটুকু জানো ততটুকুই জানি। মানে যেভাবে একজন স্পেশালিস্ট জানেন আমি সেভাবে তো জানি না। তবে ওদের যে প্রকল্প সেটার দিকে তাকিয়ে মনে হয়, যদি ওরকম ফর্মুলা তৈরিও হয় এবং তার ভিত্তিতে যদি কবিতা-গল্প-উপন্যাস লেখাও হয়, তাহলেও মানুষের মন সন্তুষ্ট হবে না। অসন্তোষ দেখাবে। এবং মানুষের এই যে অসন্তোষ, তা থেকেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে তারা প্রত্যাখ্যান করবে। তখন নিজে নিজে লিখতে চাইবে। মানে ওটা অত সহজে যে একটা টেলার মেড ব্যাপার করে দেওয়া যাবে আমি মনে করি না। আর যদি করাও যায় তাহলেও মানুষ কিন্তু তাতে তৃপ্ত হবে না। একটা সময় পরে বেরিয়ে আসবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স থেকে যেটা তৈরি হবে সেটা তো নিখুঁত জিনিস হবে। তাই তো? মানুষ নিখুঁত জিনিস পছন্দ করে না, মানুষ খুঁতযুক্ত জিনিসই পছন্দ করে। মানুষ একটি সুন্দর মুখ পছন্দ করে না, সে ঠোঁটের নীচে একটি তিল থাকলে তাকে বিউটি স্পট বলে। কোথাও একটু খুঁত না থাকলে তাকে সে সৃষ্টি বলে স্বীকার করে না। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে হয়তো একজন কবির কবিতার সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে ওই একই প্যাটার্নের বেশকিছু কবিতা লিখে দেবে। আমরা খুঁজব সেই কবি বা লেখকের লেখায় অসঙ্গতির সৌন্দর্য আছে কিনা।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আমাকে অসঙ্গতির সৌন্দর্য দেবে না। যা দেবে তা হচ্ছে সঙ্গতি এবং পরিমিতির পরাকাষ্ঠা। অর্থাৎ নিখুঁত। জিনিসটা এমনই যে, রামকিঙ্কর বেইজের সমস্ত ভাস্কর্য স্টাডি করে একটা কোনও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যন্ত্র দিয়ে একটি ভাস্কর্য তৈরি করা, যেটি ঠিক ওঁর স্টাইলের মতো হল। তখন সেটির যারা উপভোক্তা, তাঁরা দেখতে চাইবেন যে, রামকিঙ্কর তাঁর প্রথাবদ্ধ জায়গা থেকে বেরিয়ে গিয়ে যে 'অ-রামকিঙ্কর' হয়ে উঠতে পেরেছেন কিনা। যেটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিতে পারবে না। এবং তার ভিতর দিয়েই সৃষ্টির নতুন উন্মেষ সাধিত হবে।

সুকল্প : অনেক ধন্যবাদ। আমরা বেস্টসেলার নিয়ে আলোচনা করতে বসেছিলাম। তার ভিতর থেকে আমাদের অনেক কাণ্ড হয়ে গেল। আপনার কাছ থেকে একটা নতুন দার্শনিক সন্দর্ভ নিয়ে শেষ করছি। আমি আশা করি, ইনস্ক্রিপ্টের পাঠকেরাও এটি পড়ে আনন্দ পাবেন। আপনাকে ইনস্ক্রিপ্টের তরফ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার তরফ থেকে অনেক ধন্যবাদ।

সন্মাত্রানন্দ : তোমাকে আর ইনস্ক্রিপ্টের যারা এটি পড়বেন তাদের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

More Articles