মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য আবিষ্কার! ৩০,০০০,০০০,০০০ সূর্যকে গিলে খেতে পারে এই দানব!

The Biggest Black hole: একটি নক্ষত্রের মৃত্যু হলে একটি ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়। আর এই ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র অত্যন্ত বেশি।

নক্ষত্রের মৃত্যু হলে জন্ম নেয় এক আঁধার। এই আঁধারের গর্ভ গিলে খেতে পারে সমস্ত কিছু। আমাদের যাবতীয় বেঁচে থাকা, যাবতীয় অস্তিত্ব এই অন্ধকার হাঁ মুখের কাছে শীতকালীন পর্ণমোচী বৃক্ষ। নক্ষত্রেরা মরতে মরতে সেই আঁধারকে করে তোলে বৃহৎ, যেমনই বৃহৎ যে সেসবের কোনও পরিমাপ কখনও সম্ভবই নয়। কথা হচ্ছে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে। একটি নক্ষত্র যখন তার জীবনের শেষ দিকে চলে আসে, সেই নক্ষত্রের মৃত্যু ব্ল্যাকহোলের জন্ম দেয়। এই ব্ল্যাকহো মহাবিশ্বের সেই সর্বগ্রাসী রহস্য যার মধ্য দিয়ে আলো অবধি গলতে পারে না। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্ল্যাকহোলটি আবিষ্কার করেছেন। এই ব্ল্যাকহোল এতই বৃহৎ যে আমাদের সৌরজগৎ নেহাতই শিশু। এমন এক মিলিয়ন নয়, কয়েক বিলিয়ন সূর্যকে গ্রাস করতে পারে এই কৃষ্ণগহ্বর।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত বৃহত্তম ব্ল্যাকহোলগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে এইটি। এটি সূর্যের ভরের ৩০ বিলিয়ন গুণ বেশি বলে অনুমান করা হচ্ছে। সহজ করে বলতে গেলে দাঁড়ায়, এই ব্ল্যাকহোলটি ৩০ বিলিয়ন সূর্যকে নিমেষে গিলে খেতে পারে! অভাবনীয় হলেও, এই কারণেই এই নয়া কৃষ্ণগহ্বরটি এত রহস্যজনক।

গবেষকরা বলেছেন, মহাকর্ষীয় লেন্সিং ব্যবহার করে খুঁজে পাওয়া প্রথম ব্ল্যাকহোল এটি। এই বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক নোটিশ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

কৃষ্ণ গহ্বর কী?

একটি নক্ষত্রের মৃত্যু হলে একটি ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়। আর এই ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র অত্যন্ত বেশি, অভাবনীয় রকমের বেশি। যে কারণে মৃত নক্ষত্রের আলোকে আটকে রেখে তার মধ্যেকার ছোট্ট আগ্রাসী স্থানে চাপা পড়ে যায় সবকিছু। এই ব্ল্যাকহোলের মাধ্যাকর্ষণ এত শক্তিশালী হওয়াতে বস্তুটি ছোট্ট জায়গায় চাপা পড়ে। যেহেতু এই ব্ল্যাকহোল থেকে কোনও আলো বেরোতে পারে না তাই মানুষ ব্ল্যাকহোল দেখতে পায় না।

আরও পড়ুন- অসাধ্য সাধন বিজ্ঞানীদের! আলো যেখানে যায় না, সেই কৃষ্ণগহ্বরের ছবি এল প্রকাশ্যে

নাসার মতে, ব্ল্যাকহোলের দু'টি প্রধান শ্রেণি রয়েছে যা এযাবৎ ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি জুড়ে সূর্যের ভরের তিন থেকে কয়েক ডজন গুণ বেশি ভর বিশিষ্ট স্টেলার মাস ব্ল্যাকহোলগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। বেশিরভাগ বড় গ্যালাক্সিগুলির কেন্দ্রস্থলে পাওয়া যায় ১,০০,০০০ থেকে বিলিয়ন সৌর ভরের বিশালাকার গহ্বরগুলি।

সবচেয়ে বড় ব্ল্যাকহোলের সন্ধান মিলল কীভাবে?

এই আবিষ্কারটি প্রায় দুই দশকের কাজের ফলাফল। ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রফেসর অ্যালিস্টার এজ প্রথম লক্ষ্য করেছিলেন বিষয়টি। ২০০৪ সালে একটি গ্যালাক্সি সমীক্ষার চিত্র পর্যালোচনা করার সময় একটি মহাকর্ষীয় লেন্সের এক বিশাল চাপ দেখতে পান। গবেষকদের দলটি মাধ্যাকর্ষণ লেন্সিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই বিশেষ পদ্ধতিতে, সামনের একটি গ্যালাক্সি আরও দূরবর্তী কোনও বস্তু থেকে আলোকে বাঁকিয়ে দেয় এবং ব্ল্যাকহোল খুঁজে বের করার জন্য সেটিকে ব্যবহার করে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে, একটি গ্যালাক্সির ভিতরে ব্ল্যাকহোল আলোকে কীভাবে বাঁকানো হয় তা পরীক্ষা করার জন্য গবেষকরা সুপার কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেন।

বিভিন্ন ভরের ব্ল্যাকহোলের প্রতিটি সিমুলেশন সহ, মহাবিশ্বের মধ্য দিয়ে কয়েক হাজার বার ঘোরাফেরা করা আলোকেও নিরীক্ষণ করা হয়। গবেষকরা যখন তাদের একটি সিমুলেশনে এক আল্ট্রামাসিভ ব্ল্যাকহোলকে অন্তর্ভুক্ত করেন, তখন দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে পৃথিবীতে পৌঁছনোর জন্য আলোর পথটি বাস্তব চিত্রগুলিতে দেখা পথের সঙ্গে মিলে যায়। গবেষকদের আশা, ভবিষ্যতে বড় আকারের টেলিস্কোপগুলি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আরও দূরবর্তী ব্ল্যাকহোলকে বুঝতে, জানতে সাহায্য করবে।

More Articles