বিনয় মানেই কবিতাগণিত, বিনয় মানেই সাধক
Binay Majumdar: বিনয় মজুমদার মানেই কবিতা। বিনয় মজুমদার মানেই গণিত। বিনয় মজুমদার মানেই কবিতাগণিত।
এক
সেই সময়টা নিয়ে এখন ভাবি। ১৯৬০-৭০ সময়কাল। ১৯৬০ সালে কবি বিনয় মজুমদার 'ফিরে এসো, চাকা'র কবিতা লিখতে শুরু করেন ('৫৭-য় ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে '৫৮-য় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে এবং '৫৯-এ ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট কলেজে কিছুদিন চাকরি করে চলে এসেছেন)। 'ফিরে এসো, চাকা'র কবিতা লিখতে লিখতে মানসিকভাবে অসুস্থ হতে শুরু করেন। কবিতায় আক্রান্ত বিনয়। ভালবাসার বিপন্ন আলোয় গ্রস্ত বিনয়। কিছু কবিতা লিখতে লিখতে তিনি ঘোরে পড়েছেন। সেই ঘোর থেকে নেমে আসছে আরও আরও কবিতা। মানুষটার জীবনই পালটে গেল। ১৯৬১ সালে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হন বিনয়। ছ'মাস পরে হাসপাতাল থেকে ফিরে আসেন। 'ফিরে এসো, চাকা' প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালের মার্চ মাসে, তখন নাম ছিল 'গায়ত্রীকে'। গ্রন্থজগৎ থেকে দেবকুমার বসু প্রকাশ করেন। বইটিতে ছিল ১৪টি কবিতা। কবিতাগুলির আলাদা কোনও শিরোনাম নেই। এই সময় দুর্গাপুরে স্টিল প্ল্যান্টে চাকরি করেন অল্প সময়ের জন্য। শেষ চাকরি ছেড়ে ঘোরগ্রস্ত বিনয় 'গায়ত্রীকে'র কবিতাগুলির কিছু পাল্টে, কিছু বাদ দিয়ে এবং আরও অনেক নতুন কবিতা যুক্ত করে তৈরি করেন 'ফিরে এসো, চাকা'। গ্রন্থজগৎ থেকেই বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। কবির ২৮তম জন্মদিনে। এবার শিরোনামহীন ৭৭টি কবিতা। উৎসর্গ করা হলো 'শ্রীমতী গায়ত্রী চক্রবর্তীকে'। কিন্তু মানসিক অস্থিরতা কাটেনি। ১৯৬৪ সালের ১৩ জুন প্রকাশিত হয় 'আমার ঈশ্বরীকে', এটা 'ফিরে এসো, চাকা'রই পরিমার্জিত সংস্করণ। কিছু কাটাকাটি, কয়েকটি নতুন কবিতা। উৎসর্গপত্রে লেখা 'আমার ঈশ্বরীকে'। জ্যোতির্ময় দত্ত, মীনাক্ষী দত্তরা সব করলেও প্রকাশকের নাম থাকে বিনয় মজুমদার। এরপর আবার 'ফিরে এসো, চাকা' নামে ফিরে আসা। ১৯৭০ সালের ১ মার্চ মীনাক্ষী দত্ত প্রকাশ করেন 'ফিরে এসো, চাকা'র কলকাতা-সংস্করণ। গ্রন্থজগৎ প্রকাশিত 'ফিরে এসো, চাকা'ই এখানে ফিরে আসে। এই সময়েই কবি কলকাতা ছেড়ে ঠাকুরনগরে মা-বাবার কাছে থাকতে শুরু করেন।
"প্রত্যাখ্যাত প্রেম আজ অসহ ধিক্কারে আত্মলীন। অগ্নি উদ্বমন ক'রে এ-গহ্বর ধীরে-ধীরে তার চারিপাশে বর্তমান পর্বতের প্রাচীর তুলেছে…"।
১৩৮৩ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ মাসে (১৯৭৬?) প্রকাশিত হয় 'ফিরে এসো, চাকা'র অরুণা সংস্করণ। ততদিনে কবি বাংলা কবিতার নগরকেন্দ্রিক হইহল্লা ছেড়ে আত্মগোপন করেছেন পল্লীগ্রামে। ১৯৬০-৭০ সময়কালে কবিতা ও থেঁতলে যাওয়া মন সামলাতে সামলাতে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছেন বিনয়। 'অধিকন্তু', 'অঘ্রাণের অনুভূতিমালা', 'ঈশ্বরীর' এইসব কাব্যগ্রন্থের কবিতা এই দশ বছরে লেখা। বিনয়ের এই কবিতাঘূর্ণিগূলি মন দিয়ে বিচার করলে এক রক্তাক্ত আত্মাকে দেখা যায়। শত আঘাতেও যে আত্মা কবিতা অবলম্বনে আমাদেরকে দিতে চায় একটি দর্শন, একটি গণিতপ্রতিম সত্য। মনে রাখতে হবে বিনয় মজুমদার একজন প্রথম শ্রেণির গণিতজ্ঞও ছিলেন। স্বদেশের, বিদেশের লাইব্রেরিতে রক্ষিত আছে বিনয় মজুমদারের উদ্ভাবিত গণিত। পৃথিবীতে আর কি এমন মানুষের উদাহরণ আছে যিনি একই সঙ্গে প্রথম শ্রেণির কবি ও প্রথম শ্রেণির গণিতজ্ঞ? মনে পড়ে অনেক ঘুঘুডাকা দুপুরে ঠাকুরনগরে তাঁর বাসভবনে গিয়ে দেখেছি কাঠকয়লা দিয়ে দেওয়ালে অঙ্ক লিখছেন কবি।
দুই
আমরা বিনয় মজুমদারকে জেনেছি ১৯৮৬ সালে যখন অসুস্থ বিনয়কে সরকারি উদ্যোগে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়, তখন। সংবাদপত্র পড়ে জানা গেল এত বড় একজন কবি আমাদের পাশের জনপদে থাকেন। বনগাঁ থেকে গোবরডাঙা কলেজে পড়তে যেতাম, সেই ৮৬-৮৭ সাল নাগাদ তাঁর বাড়িতে যাওয়া শুরু। রটনা, তিনি পাগল। আমি কোনওদিন তাঁর আচরণে অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি। অসুস্থ হতে দেখেছি। ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না দেখেছি। কিন্তু সুস্থ অবস্থায় অত্যন্ত ভদ্র আচরণ করতেন। শিশুর মতন হাসতেন। এক কলেজ-পালানো দুপুরে তিনি যেই শুনলেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'মেঘনাদবধ কাব্য' আমাদের পাঠ্য, চোখ বুজে পাঁচালি পড়বার মতো সুরে সুরে মুখস্থ বলে যেতে থাকলেন প্রথম সর্গ। সেই বিস্ময় আমার আজও কাটেনি।
ক্রমে অমলেন্দু বিশ্বাস, তীর্থঙ্কর মৈত্র, বৈদ্যনাথ দলপতি, রণজিৎ হালদার, বিষ্ণুপদ বালার মতো স্থানীয় কবিদের সঙ্গে আলাপ হলো। তাঁরাই তখন কবির সান্নিধ্যে থাকতেন। পত্রিকা প্রকাশ করতেন। কবি অসুস্থ হলে তাঁর চিকিৎসার জন্য ঝাঁপাতেন। সেই যে ওদের সঙ্গে ভিড়ে গেলাম, আর পড়াশোনা হলো না। জীবন ছুটে গেল সর্বনাশের দিকে। এতদিন পরে খুব মনে হয়, এই তুচ্ছ জীবনে বলবার মতো যদি কিছু থাকে, তা হলো বিনয় মজুমদারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিভার আশেপাশে ঘুরঘুর করেছি বেশ কিছুকাল। "চতুর্দিকে সরস পাতার/ মাঝে থাকা শিরীষের বিশুষ্ক ফলের মতো আমি/ জীবনযাপন করি"- তখন বুঝিনি এই কবিতার মর্মার্থ, কিন্তু কী এক আকর্ষণে প্রথম খেয়াল করেছিলাম যশোর রোডের শিরীষ গাছে সবুজ পাতার মাঝে সত্যিই লম্বা শুকনো ফল ঝুলে থাকে। পর্যবেক্ষণকে দর্শনে পরিণত করতেন বিনয়। তাঁকে কলকাতার কিছু মাতব্বর কবি জীবনানন্দের ছায়া বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জীবনানন্দ অন্যরকম। বিনয় মজুমদারের গণিত-মস্তিষ্ক কবিতায় যোগ করেছিল 'পর্যবেক্ষণ' থেকে নেওয়া 'সিদ্ধান্ত'। দুই কবি আলাদা পথের। পৃথিবীর অমর বিরহের কবিতা রচনা করেছেন বিনয়, যা বেদনা ছাপিয়ে জগৎসত্যে পরিণত হয়েছে।
স্পষ্ট ভাষায় অস্পষ্ট কথা বলা, একটা অনুষঙ্গ থেকে আর একটা অনুষঙ্গে চলে যাওয়া- এটাই জীবনানন্দের খেলা। অজস্র বিষয় নিয়ে লিখেছেন কিন্তু যে-বিষয় নিয়েই লিখুন না কেন, খেলাটা এমনই। আর বিনয় মজুমদার? তিনি স্পষ্ট গাণিতিক সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যান কবিতা প্রয়াসকে। দূর থেকে আলতো ভাষা-ব্যবহার দেখেই তাঁকে 'জীবনানন্দের মতো' বললে তাড়াহুড়ো হয়ে যায়, কবিতার 'অন্তর'টাকে দেখা হয় না। বিনয়ের সমসাময়িক বেশ কিছু কবি এই ভুল করেছেন। কারণ কবিতা নিয়ে শান্ত অবস্থান তখন তাঁদের ছিল না। ভোগবাদী সমাজ তাঁদেরকে গ্রাস করেছিল আষ্টেপৃষ্টে। কবিতার 'অন্তর' দেখতে গেলে যে মনটা প্রয়োজন, তাকে নষ্ট করে দেয় ভোগসুখের উল্লাস। বিনয়ের একটা বিখ্যাত কবিতায় আছে-
"সতত বিশ্বাস হয়, প্রায় সব আয়োজনই হয়ে গেছে, তবু / কেবল নির্ভুলভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না এখনো..."।
এটাই কবির মূল কথা। কী? নির্ভুলভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। অর্থাৎ এই কবিতার বিষয় সম্পর্ক-ভাঙার কষ্ট। কত কবি এই বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। শোকার্ত হয়েছেন। আবেগী হয়েছেন। বিষ খেতে চেয়েছেন। পরজন্মে অপেক্ষা করতে চেয়েছেন। কিন্তু বিনয় মজুমদার কী চেয়েছেন? একটি কবিতা। যে কবিতা আসলে গণিতের মতো করে চিরসত্য পর্যবেক্ষণ করতে চায়। ফলে 'নির্ভুল ভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না'- এই বাক্যের সমর্থনে তিনি কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠিত সত্যকে তুলে ধরতে চাইছেন। কবিতার পরের অংশে তা আছে-
"সকল ফুলের কাছে এত মোহময় মনে যাবার পরেও / মানুষেরা কিন্তু মাংসরন্ধনকালীন ঘ্রাণ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।/ বর্ণাবলেপনগুলি কাছে গেলে অর্থহীন, অতি স্থূল ব'লে মনে হয়। / অথচ আলেখ্যশ্রেণী কিছুটা দূরত্ব হেতু মনোলোভা হয়ে ফুটে ওঠে।"
নির্ভুল সম্পর্ক তৈরি করা যায় না, কারণ ফুলের গন্ধের থেকে মাংস রান্নার গন্ধে মানুষ বেশি লোভী। বর্ণাবলেপন অর্থাৎ রংবাহারি কিছুকে কাছ থেকে দেখলে ভালো লাগে না, তার মোটা দাগগুলো মনকে কষ্ট দেয়। চিত্র উপভোগ করতে হলে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়। বিনয় বলতে চাইছেন শর্তহীন সম্পর্ক হয় না আর শর্তাধীন সম্পর্ক নির্ভুল নয়। প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে বিনয় এবার লক্ষ্য করেন-
"হে আলেখ্য, অপচয় চিরকাল পৃথিবীতে আছে;/ এই যে অমেয় জল,--- মেঘে মেঘে তনুভূত জল---/ এর কতটুকু আর ফসলের দেহে আসে বলো?/ ফসলের ঋতুতেও অধিকাংশ শুষে নেয় মাটি।"
নির্ভুল হয় না, তবু সম্পর্ক করতে চেয়ে মানুষ নিজের প্রাণশক্তির, কামনার যে অপচয় করে, তা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, এটাই দেখাচ্ছেন কবি বিনয়। মানুষের ট্রাজেডি এখানেই। সম্পর্কের জন্য কাতর হবে তার মন, কিন্তু সম্পর্ক কখনও নির্ভুল হবে না। তাহলে বেদনাহত প্রেমিক কী পাবে?
"তবু কী আশ্চর্য, দ্যাখো, উপবিষ্ট মশা উড়ে গেলে / তার এই উড়ে যাওয়া ঈষৎ সংগীতময় হয়।"
উড়ে যাওয়া অর্থাৎ চলে যাওয়া। মশা উড়ে গেলে ডানার কম্পনে যে শব্দ হয়, তা 'ঈষৎ সংগীত'। সম্পর্ক ভাঙার বেদনা যে পেয়েছে তার জন্য ঈষৎ সংগীত পড়ে থাকে।
তিন
বিনয় মজুমদারকে আমার মনে হয় গাজনের সন্ন্যাসীর মতো। সহ্যশক্তি বাড়ানোর জন্য, ভালোবাসার গভীরতা পরীক্ষার জন্য যারা কাঁটায় ঝাঁপ দেন, আগুনে হাঁটেন। মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন বলে যারা তাঁকে পাগল বলে তুচ্ছ করেছেন, তারা পাগল শব্দের অতলকে দেখতে পাননি। বিনয় মজুমদার সত্যিই পাগল ছিলেন, কণ্টকাকীর্ণ বাস্তবকে অগ্রাহ্য করবার শক্তিধর পাগল। যে আশ্চর্য পাগল ১৯৬৭ সালে 'কবি সীমান্ত মানে না' বলে পায়ে হেঁটে ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার পার হতে গিয়ে জেলে যান। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে এক সময় মানসিক চিকিৎসালয়ে দুই বিস্ময়কর প্রতিভা বিনয় মজুমদার ও ঋত্বিক ঘটক পাশাপাশি ছিলেন। ভাবা যায়!
অসুস্থ এই মহাপ্রতিভাকে আলোকোজ্জ্বল কাব্যভুবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল বলে উপেক্ষা করেছিল নগরের সাহিত্য সমাজ। অথচ আমরা প্রতিবেশী হিসেবে দেখেছি তিনি সরল জীবনযাপন করেন, শিশুকে আদর করেন, অতিথিকে চা খাওয়ান, চাষি-শ্রমিকদের সঙ্গে গল্পগুজব করেন, পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেন, গণিতের কৌতূহলী ছাত্রদের সঙ্গে গণিত নিয়ে আলোচনায় মাতেন। মাঝে মাঝে মানসিক ব্যাধি তাঁকে কাবু করে ফেললে হাসপাতালে ভর্তি হতেন তিনি। সুস্থ হয়ে আবার ফিরতেন শিমুলপুর গ্রামে। ঠাকুরনগরের শিক্ষিত প্রজন্ম ও তাঁর সন্তানপ্রতিম কবি-শিল্পীরা আগলে রাখতেন তাঁকে।
আসলে বিনয়ের ছিল নিজের সঙ্গে গভীর সারসের খেলা! সেখানে পৌঁছনোর যোগ্যতা আমাদের কারও ছিল না। যে নিঃসঙ্গতাকে তিনি লালন করতেন পরম ঘোরে, সেই নিঃসঙ্গতাই তাঁকে সামাজিক সফলতা থেকে দূরে রেখেছে, মাঝে মাঝেই নিয়ে গেছে অসুস্থতা নামক আকাশের সুদূরতায়...আমরা পাশ থেকে শুধু দেখেছি ভাঙা বাড়িতে শুয়ে আছেন বিনয়...
বা পাশের বাড়ি থেকে আসা রাতের ভাত খাচ্ছেন একা একা... বা আকাশের দিকে আঙুল তুলে বিড়বিড় করছেন...বা হাসপাতালে নার্সকে লিখে দিচ্ছেন কবিতা... বা ঘরের ভেতর হেগেমুতে উলটে পড়ে আছেন।
বিনয় মজুমদার মানেই একটা অসুখ-অসুখ ব্যাপার চারদিকে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে অন্য বিষয়টি। বড় চাকরি ও অন্যান্য উন্নয়ন-রুচি ছেড়ে শুধু কবিতার জন্যই জীবদ্দশা কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিনয় এবং এই সিদ্ধান্তের জন্য অনুতাপ করেননি কোনওদিন। মেনে নিয়েছেন সব দুর্যোগ। অতএব গল্পগাছা বাদ। বিনয় মজুমদার মানেই কবিতা। বিনয় মজুমদার মানেই গণিত। বিনয় মজুমদার মানেই কবিতাগণিত। তাঁর কবিতায় গণিতের অবস্থান বিষয়ে বই লেখা হয়েছে, গবেষণা চলছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিনয় মজুমদার অনেক আগে থেকেই পাঠ্য। পশ্চিমবঙ্গেও তিনি এখন পাঠ্য হয়েছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিনয় মজুমদারের বসতভিটায় তাঁর অনুরাগীরা কবির স্মৃতিতে পাঠাগার করেছেন। তৈরি হচ্ছে অনুষ্ঠান গৃহ। মৃত্যুর পর যত দিন যাচ্ছে, ততই বিনয় মজুমদার প্রকৃত কবির মতো বিস্তার লাভ করছেন। সত্যের বর্ণালি ক্রমপ্রসারিত।
আমি বিশ্বাস করি বিনয় দুঃখী ছিলেন না, দরিদ্র ছিলেন না, অসহায় ছিলেন না, ছিলেন সাধক। আমাদের ভোগবাদী দৃষ্টিতে তাঁকে দরিদ্র ব্যক্তি মনে হয়েছে। তাঁর তন্ময়তাকে তাঁর কবিতা দিয়েই বোঝানো যায়-
"নিষ্পেষণে ক্রমে ক্রমে অঙ্গারের মতন সংযমে হীরকের জন্ম হয়, দ্যুতিময়, আত্মসমাহিত।"
মনে করুন পৃথিবীর অমর এক কবিতাকে -
"আমি রোগে মুগ্ধ হয়ে দৃশ্য দেখি, দেখি জানালায়
আকাশের লালা ঝরে বাতাসের আশ্রয়ে আশ্রয়ে..."
রোগে 'মুগ্ধ' ? আকাশের লালা?
ঈশ্বরের মতো অভিমান ছাড়া আকাশের লালা ঝরা ইহজন্মে দেখতে পাওয়া অসম্ভব!