বিজেপির গান্ধী-মুক্ত ভারতের কৌশল না কি মোদি আমলেই যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন নেতাজি!

Netaji Subhash and Mahatma Gandhi: মোদির মুখে বারবার নেতাজির নাম এবং জাতীয়তাবাদে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়দের ভূমিকা উঠে এসেছে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে খানিকটা নিষ্ক্রিয় হয়েছেন মহাত্মা গান্ধী।

১৫ অগস্ট, ২০২২। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে লালকেল্লায় উঠল তুফান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের ভাষণে একসারিতে বসালেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং বিনায়ক দামোদর সভারকারকে! শোরগোল উঠল। বিতর্কও হল বিস্তর। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, দামোদর সাভারকার, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের তরফে নাথুরাম গডসে, রাজনৈতিক আদর্শ, নীতি; বিশেষত, ইস্যু জিইয়ে রাখার কৌশলে এই সমস্ত নামই উঠেছে বারবার। একে অন্যের তুলনায় ঠিক কতটা বেশি প্রাসঙ্গিক, তাও স্পষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে বারবার। কিন্তু এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে, দেশ স্বাধীনের ৭৫ বছর পরে দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন বক্তব্য কি শুধুই কথার কথা! তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। আর এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণের মধ্যগগনে ফের উদীয়মান হয়েছে এক নাম। যাঁর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে সবটা। তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা পালনকারী নেতাজি বরাবর প্রাসঙ্গিক থাকলেও মোদি জমানায় কি নেতাজিকে যোগ্য সম্মান দিচ্ছে সরকার। নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির কৃতিত্বে কি নেতাজি অতিগুরুত্ব পাচ্ছেন। তাঁর আত্মত্যাগ ফের সম্মান পাচ্ছে দেশজুড়ে? নাকি এর অন্তরালে রয়েছে ভিন্ন কোনও উদ্দেশ্য?

মোদির ‘এক আসনে তিনজন’ বক্তব্য এবং সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কেন নেতাজি প্রসঙ্গ! কেন ফের নেতাজিকে নিয়ে চর্চা? কেন নেতাজি মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের কাজ সফল না হলেও তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে সবটা। বঙ্গসন্তানের অপরিসীম অবদান যা কংগ্রেস আমলে খানিকটা চেপে রাখার অভিযোগ উঠত, সেখানে এতটা পরিবর্তন কি শুধুই রাজনৈতিক স্বার্থে! বরাবর আলোচনার কেন্দ্রে থাকা নেতাজি সুভাষচন্দ্র ইস্যুতে উঠছে এই একাধিক প্রশ্ন। কেউ বলছেন যোগ্য সম্মান! কেউ বলছেন রাজপথে, বর্তমানের কর্তব্যপথে নেতাজি মূর্তি স্থাপনের আবহে নাকি লুকিয়ে আছে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক কারণও! যা নেতাজির দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান বিষয়ক নয়, এ আসলেই দু’টি গোষ্ঠী, দু’টি ভিন্ন মনোভাবের মধ্যে সুক্ষ্ম বিভাজন রেখার প্রকাশ। কেন বলা হচ্ছে এমন? কেন নেতাজির মতো মহাপুরুষের, বিপ্লবের প্রতিমূর্তির নামের প্রসঙ্গ বারবার উঠতেই বিতর্ক দানা বাঁধছে!

অনেকেই বলছেন, নেতাজি অনন্য। অসাধারণ। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর নেতাজি রহস্যের সমাধান না হলেও নেতাজি প্রসঙ্গে তিনি এগিয়ে। তাঁর দলের নেতাজি নিয়ে নড়াচড়া চোখে পড়ার মতো। আর এখানেই দেশভক্তি, জাতীয়তাবাদী সত্ত্বার অন্তরালেও উঠে আসছে রাজনীতি। যা নেতাজির সময়কাল থেকেও যে খুব কম ছিল, এও বলেন না ঐতিহাসিকদের কেউই। কেন বলা হয় এমন? দাবি, আসলে নেতাজি আবহে আর একজনের নাম ভুলিয়ে দেওয়ার কৌশল নেওয়া হচ্ছে! যেখানে একদা ঠান্ডা লড়াইয়ে যুক্ত নেতাজি এবং মহাত্মা গান্ধীর সেই আবহ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট সরকার। যা একের সঙ্গে অন্যের সহাবস্থান নয়, একের আবহে অন্যকে ভুলিয়ে রাখার কৌশল হতে পারে। যে কৌশল, কংগ্রেস জমানায় বারবার নেতাজিকে নিয়েও হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। তার বদলাই কি নিচ্ছে বিজেপি? নেতাজিকে ঢাল করে সাভারকার, শ্যামাপ্রসাদ থেকে লালবাহাদুর শাস্ত্রী- কংগ্রেস আমলের বিতর্কিত, ব্রাত্যদের তুলে আনার মাধ্যমে কংগ্রেস-মুক্ত ভারতে জাতীয়তাবাদ মানে শুধুই বিজেপি; এই ধারণাই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে বিজেপি! ঢাল রূপে নেতাজি আসলে গান্ধীবাদ আর গান্ধী-নির্মূলের অস্ত্র হিসেবে কাজ করছেন!

ইন্ডিয়া গেটে শুধু মূর্তি স্থাপন নয়। ২০১৪ সাল থেকে মোদির মুখে বারবার নেতাজির নাম এবং জাতীয়তাবাদে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়দের ভূমিকা উঠে এসেছে। যেখানে দাঁড়িয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে খানিকটা নিষ্ক্রিয় হয়েছেন মহাত্মা গান্ধী। নরেন্দ্র মোদি ‘বাপু’র নাম স্মরণে রাখলেও দেশজুড়ে বিজেপি বা আরএসএস, গান্ধী-তুলনায় সামনে এনেছে নেতাজিকে। যা তাঁর মৃত্যু রহস্য ছাপিয়ে, তাঁর যোগ্য বিচারের আবহ কাটিয়ে, তুলে নিয়ে এসেছে নেতাজির গান্ধী-বিবাদ। কেন?

আরও পড়ুন-আসল সুভাষকে ভুলিয়ে দিতেই স্ট্যাচু নির্মাণ, কর্তব্যপথ খুঁজে নিন নেতাজিপ্রেমীরাই

দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের আবহে নেতাজি এবং মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ, নীতির ফারাক ছিল‌ই। দু’জনের মধ্যে বাহ্যিক সম্পর্ক মলিন থাকলেও অভ্যন্তরে ছিল দ্বন্দ্ব। নেতাজির দেওয়া নামে ‘জাতির জনক’ গান্ধীজি, সুভাষকে ‘দেশপ্রেমিকদের দেশপ্রেমিক’ বললেও কংগ্রেস এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নেতাজি-গান্ধীজি বিরোধ ছিলই।

‘স্বাধীনতা অর্জন না স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া’

গান্ধী-নেতাজি মনোমালিন্যের প্রথম সূত্র ছিল, স্বাধীনতা কীভাবে আসবে। গান্ধী বলতেন, স্বাধীনতা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অর্জন করতে হবে। আবার নেতাজি বলতেন, অর্জন করতে হলে আন্দোলন, প্রতি-আক্রমণ আর লড়াই চাই। নইলে আজীবন বশ্যতা স্বীকার করেই থাকতে হবে। অর্থাৎ দেশের মুক্তিতে চাই ছিনিয়ে নেওয়ার কৌশল। ১৯২১ সালের কংগ্রেস-যোগ এবং অসহযোগিতা আন্দোলন, যে বিবাদ প্রথম থেকেই বাড়িয়ে তোলে।

চরম এবং নরমপন্থী লড়াই

বিনয়, বাদল, দীনেশ অথবা ভগৎ সিং। স্বাধীনতা পেতে বশ্যতা নয় আন্দোলন আর দুর্বৃত্তদের আক্রমণ! সমগ্র উনিশ দশকের প্রথম পর্বে যে আবহ সৃষ্টি করেছিলেন এঁরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও প্রায় তাইই চাইতেন। প্রাপ্য অধিকার, ন্যায্য দাবি আদায়ের ভূমিকা এমনই লড়াকু হোক, এমনই বলতেন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে গান্ধী সর্বদা ধীরে চলো নীতির কথা বলেন। অহিংসার নামে ধৈর্যের কথা বলতেন। যা দেশজুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং প্রাণ দেওয়া বিপ্লবীদের পছন্দের ছিল না! এখানেই নেতাজি এবং গান্ধীর সুপ্ত বিবাদ বাড়ে। চৌরিচৌরার ঘটনা নিয়েও সৃষ্টি হয় সমস্যা।

Mahatma Gandhi and Netaji

দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের আবহে নেতাজি এবং মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ, নীতির ফারাক ছিল‌ই।

ত্রিপুরা অধিবেশন

১৯৩৯ সালে জাতীয় কংগ্রেসের ত্রিপুরা অধিবেশন। সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু বক্তব্য রাখেন ওই অধিবেশনে। সেখানে সুভাষ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য জাপান সেনার সাহায্যের পক্ষে মত দেন কিন্তু বিরোধিতা করেন গান্ধী। সেখানেই মতবিরোধ চরমে ওঠে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন নিয়ে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ না পট্টভি সিতারামাইয়া। কে কার সমর্থনে প্রার্থী, তা নিয়েও বিবাদ বাধে। নির্বাচন হয়। পরে গান্ধীর মুখে প্রশংসা শোনা গেলেও তিনি এবং নেহরু নেতাজির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন আগে।

নেতাজি-উদ্যোগ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ব্রিটিশের কথায় ভারতের সাহায্য। পরাধীন দেশের প্রভুকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আত্মবলিদান মানতে পারেননি নেতাজি। বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ভারতের স্বাধীনতা দেওয়ার মিথ্যা ব্রিটিশ-আশ্বাস খানিকটা সন্তষ্ট করতে পারে গান্ধীদের। এখানেই ফের সরব হন নেতাজি। তা নিয়েও বাধে বিরোধ। এদিকে নেতাজির সমান্তরাল প্রশাসন, বিদেশ যাত্রা, এনআইএ বাহিনী তৈরি, কংগ্রেসের সেই সময়ের নেতাদের খুব একটা ভাল লাগেনি। প্রাক্তন কংগ্রেস নেতার জনপ্রিয়তা এবং 'বাড়বাড়ন্ত' ভাল চোখে নেয়নি কংগ্রেস। অনেকেই বলেন, ১৯৪২ সালে বিদেশ থেকে নেতাজির “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা”-র ডাক ভাল লাগেনি গান্ধীদের।

দেশত্যাগ এবং অন্তর্ধান রহস্য

বিদেশে বসেই দেশের স্বাধীনতার জন্য সুভাষের একের পর এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, লড়াই নাড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশদের। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই মহীরুহ, কংগ্রেসকে ছাপিয়ে সবটা ‘হাইজ্যাক’ করে নেবেন এমন চাইছিলেন না গান্ধীরাও! ঠিক এই পরিস্থিতি এবং নেতাজির প্রবল জনপ্রিয়তার মধ্যেই সামনে আসে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির আগে আগে জানা যায়, ১৯৪৫ সালের ১৮ অগাস্ট তাইওয়ানের তাইহোকু (বর্তমান তাইপে) এরোড্রমে এক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে। তারপর নানা বিতর্ক এবং গবেষণায় সামনে আসে এই তথ্য মিথ্যা। অনেকেই বলেন, সমকালীন পরিস্থিতি অনুযায়ী, নেতাজি-অস্বস্তি ঘরে এবং বাইরে খুব একটা ভালোভাবে নেননি বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা। ব্রিটিশ শাসকরাও একই অবস্থায় ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে নেতাজিহীন একটা অবস্থা প্রয়োজন ছিল! অনেকেই দাবি করেন, এই কারণে নেতাজির অন্তর্ধান সামনে আনা। তিনি যে আর নেই, এটাকে প্রতিষ্ঠিত করা। তারপর থেকেই সেই রহস্য আজও আবৃত।

যদিও মোদি-আমলে, ২০১৫-১৬ সালে কিছু সরকারি ও গোয়েন্দা নথিতে ১৯৪৫-এর ১৮ অগাস্টের পর নেতাজির রাশিয়ায় অবস্থান, এমনকি ভারতের মাটিতে ফিরে আসার বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই সব নথি থেকে জানা যায়, ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত নেতাজির পরিবারের সদস্যদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারিও ছিল। নেতাজির অন্তর্ধানের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত যে কয়েকটি তত্ত্ব পাওয়া যায়, তার মধ্যে প্রধান তিনটি হল- উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা, রাশিয়ায় স্তালিনের কারাগারে নির্যাতনে মৃত্যু, সন্ন্যাসী হয়ে ভারতে ফিরে আসা।

আরও পড়ুন-নেতাজির প্রিয় বাহন! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়ে আশি বছরের ফোর্ড জিপ এখন কলকাতার বাসিন্দা

নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সত্যিই তিনি মৃত নাকি লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পরের বিতর্কের মতোই নেতাজিকে শেষ করার কৌশল নেওয়া হয়েছিল? এই সন্দেহ প্রকাশ করেন কেউ কেউ। নেতাজির মহিমান্বিত রাজনৈতিক ও বিপ্লবী জীবন নিয়ে আলোচনার মধ্যেই উঠে আসে নেতাজির অনুপস্থিতিতে চক্রান্তের তত্ত্বও। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতবর্ষ স্বাধীন করার লক্ষ্যে যে নেতাজি কলকাতার এলগিন রোডের বাড়ি থেকে ব্রিটিশদের নজরদারি এড়িয়ে বিহার, পেশোয়ার, আফগানিস্তান, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানিতে যান, তিনিই কীভাবে দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি না দেখেই বিলীন হলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। কেউ কেউ বলেন, নেতাজি থাকলে ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা প্রথমত যে শর্তে হয়েছিল, তা মানতেন না। উপরন্তু, নেতাজির আলোকে জহরলাল নেহরু প্রধানমন্ত্রী হতেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠত। নেতাজি-প্রভাব এড়িয়ে যাওয়ার মধ্যেও প্রাসঙ্গিক হয়েছে দীর্ঘসময় ধরে নেতাজি এবং গান্ধীজি ঠান্ডা বিবাদ! মতাদর্শগত ভিন্নতা!

এই বিবাদকেই কাজে লাগাচ্ছে কি বিজেপি। কংগ্রেসের, মহাত্মা গান্ধীর দেশের প্রতি সর্বাধিক অবদানের যে প্রচার, তা মিথ্যা করে দেওয়ার কৌশল আসলে কংগ্রেস মুক্ত ভারত এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি কংগ্রেসের অবদানের সার্বিক প্রভাব খর্ব করার কৌশল! বারবার আরএসএসেএর স্বাধীনতা-পর্বে ‘নগণ্য ভূমিকা’ নিয়ে যে প্রশ্ন ওঠে তাও চেপে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। অন্যান্য বিজেপি-প্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম উঠে আসার পথে নেতাজিই তবে ঢাল? নেতাজিই আসল অস্ত্র, যে অস্ত্রের ধারে মুহূর্তেই নষ্ট হতে পারে গান্ধী, নেহেরু প্রভাব।

প্রসঙ্গত, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে মহাত্মা গান্ধীর অবদান, কংগ্রেসের ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য বিপরীতভাবে নেতাজির অবদানও ভোলার নয়। কিন্তু গান্ধী বা কংগ্রেসের ভূমিকার তুলনায় বঙ্গের নেতাজি সুভাষচন্দ্র অনেক এগিয়ে। যাঁর দেশের প্রতি আনুগত্য, ভাবাদর্শ তৎকালীন দেশপ্রেমিকদের মধ্যে নয়, এই ভারতের কোটি কোটি জনতার মধ্যে এখনও সমান জনপ্রিয়। অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে গান্ধী না নেতাজি, কে বেশি গুরুত্বের; এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর না পাওয়া গেলেও নেতাজি যে একটু হলেও বেশি প্রভাবের, তা বলাই যায়। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস শাসনে নেতাজির প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন হয়েছে কি না, তা তাঁর অন্তর্ধান রহস্যের, তাঁর মৃত্যুর বিচারের মতোই অধরা। সেখানে দাঁড়িয়ে মোদি শাসনের ভারতে নেতাজি গুরুত্ব এবং সঠিক মর্যাদায় নেতাজি অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু তার মধ্যেও নেতাজি আর গান্ধীজি বিবাদ এবং কংগ্রেস-বিজেপি বিবাদ লুক্কায়িত। নেতাজি-গান্ধী লড়াই এখন কংগ্রেস-বিজেপি লড়াইয়ে পর্যবসিত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

More Articles