নন্দীগ্রামে জয়জয়কার শুভেন্দুরই! সমবায় নির্বাচনে বিজেপির দাপটে ধুয়েমুছে সাফ তৃণমূল

Co-operative election Nandigram: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রামের ১ ব্লকের হরিপুরের প্রিয়ানগরী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে ১২টি আসনের মধ্যে ১১টিতেই জিতল বিজ...

লোকসভা ভোটে প্রায় গোটা রাজ্য জুড়েই মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। জয়ের ধারা অব্যবহিত রেখে বাংলায় বেশিরভাগ আসনই নিজেদের দখলে রেখেছে তৃণমূল। কার্যত কাজে আসেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদের জোয়ার। লোকসভা ভোটের রাজ্যের বেশিরভাগ আসন হাতছাড়া হলেও নন্দীগ্রামের জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে বিজেপি। ব্যতিক্রম হল না নন্দীগ্রামের সমবায় নির্বাচনেও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রামের ১ ব্লকের হরিপুরের প্রিয়ানগরী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে ১২টি আসনের মধ্যে ১১টিতেই জিতল বিজেপি। কার্যত ভরাডুবি হল তৃণমূলের।

সেই ১৯৬৩ সালে তৈরি হয়েছিল নন্দীগ্রামের এই সমবায়টি। এতদিন সেখানে পরিচালন সমিতির সদস্য মনোনীত করা হত। এই প্রথম সেখানে সমবায়ে নির্বাচন হল। যেখানে মোট আসন হল ১২ টি এবং ভোটার সংখ্যা ৬৬০। ১২ টি আসনেই এখানে প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। তবে সবকটি আসনে প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল। ১২ টির মধ্যে ২ আসন বাদে ১০টিতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়। অন্যদিকে, বামেদের পক্ষ থেকে ৩ টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। রবিবার কড়া নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ হয়। বিকেলে ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, একটি বাদে সব ক’টি আসনেই জিতেছে বিজেপি। অর্থাৎ ১২টি আসনের মধ্যে ১১ টি আসনেই জয়ী হয়েছে বিজেপি আর তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ১ টি আসন। গত লোকসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রের অন্তর্গত নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ন’হাজার। সেই ছবি এ বার দেখা গেল সমবায় ভোটেও।

আরও পড়ুন: তৃণমূল সমর্থককে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মার! ভোট মিটলেও শান্তি ফিরল না সন্দেশখালিতে

প্রিয়ানগরী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ২১ জানুয়ারি। তবে নানা কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২৫ মে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও লোকসভা চলে আসায় উপযুক্ত বাহিনী দিতে না পারার কারণে আজ ২৩ জুন ভোটের দিন ধার্য করা হয়। নন্দীগ্রামের ক্ষমতা দখলে রেখে স্বাভাবিক ভাবেই খুশির ঝড় গেরুয়াশিবির। ফলাফল বেরোতেই বিজয় উৎসবে মেতে ওঠে পদ্মশিবিরের কর্মী সমর্থকেরা। অভিযোগ উঠেছে, সেই সময় নাকি দুই বিজেপি কর্মীকে পাকড়াও করে পুলিশ। তা নিয়ে বিজেপি সমর্থকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি লেগে যায় পুলিশ। বিজেপির দাবি, কী কারণে দলীয় কর্মীদের গ্রেফতার করা হল, তা স্পষ্ট ভাবে জানায়নি পুলিশ। তমলুক সংগঠনিক জেলার বিজেপির সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘আজ একেবারে উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে। হলদিয়ার মহকুমাশাসক সকাল থেকেই এখানে উপস্থিত ছিলেন। ভোটের ফলঘোষণার পরেই দুই বিজেপি কর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। কেন এই গ্রেফতার, তা জানানো হয়নি। তৃণমূল ভোটে হেরে যাওয়াতেই অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুলিশ।

এদিকে, তৃণমূলের তরফে অভিযোগ তোলা হয় ভোটের আগের দিন থেকেই তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিজেপির তরফে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের শাসিয়ে পর্যন্ত আসা হয়। তবে এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতা মেঘনাথ পাল। তিনি বলেন, ‘এখানে তৃণমূল বা বামেদের কোনও সংগঠন নেই। বামেরা গড়ে তিনটি পাঁচটি করে ভোট পেয়েছে। আর তৃণমূল পেয়েছে ৩০-৩৫টি করে ভোট। এতে বোঝা যাচ্ছে মানুষ বিজেপিকে চাই। হেরে যাওয়ার পর এখন তৃণমূল নানান কথা বলছে।"

যদিও এই হারকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখতে চাইছে তৃণমূল। নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক নির্বাচন। প্রান্তিক মানুষেরা এখানে টাকার লেনদেন করেন। তাঁরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন এই ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু এই নির্বাচনকে সামনে রেখে রণংদেহি মেজাজে ছিল বিজেপি। বহিরাগত বাইক বাহিনীকে এলাকায় জড়ো করে ভোট করিয়েছে তারা। লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি। তাই এই সমবায়ের নির্বাচনে মেঘনাদ পালের নেতৃত্বে বিজেপির লোকেরা অতিসক্রিয় হয়ে এলাকার দখল নিয়ে এই ভোটে জয়লাভ করেছে।’’

আরও পড়ুন: গ্রাম দখলের টোটকা এখনও শুভেন্দুর অধরাই! নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি কেবলই বুদবুদ?

যদিও নন্দীগ্রামের সমবায় নির্বাচনে হেরে গেলেও সিঙ্গুরে কিন্তু ফলাফল গিয়েছে তৃণমূলের পক্ষেই। প্রায় ৩৫ বছর পরে সিপিএমের হাত থেকে সিঙ্গুরের সমবায় সমিতির দখল নিয়েছে তৃণমূল। রবিবার সিঙ্গুর বিধানসভার নসিবপুর অঞ্চলের গোবিন্দপুর সমবায় সমিতির নির্বাচন ছিল। সেখানে মোট ৪৫ আসনেই জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থীরা। সিপিএম ও বিজেপি সমবায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, তাদের শূন্য হাতে ফিরতে হয়। নন্দীগ্রামে তৃণমূলের হারে যে খানিকটা হলেও মলম লাগাতে পেরেছে সিঙ্গুরের এই জয়, তা বলাই যায়।

More Articles