বিজেপি বনাম তৃণমূল, দুর্নীতির এক দশক
BJP and TMC Scams in India : নারদা স্টিং অপারেশনের পরেও নিরঙ্কুশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফেরে তৃণমূল। দুর্নীতি নিয়ে মানুষের কিছু এসে যায়?
সাল ১৯৮৯। দেশের অলিগলিতে স্লোগান ওঠে, "গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়"। বোফর্স কামান কেনায় বেনিয়মের বিশাল অভিযোগ ওঠে রাজীবের বিরুদ্ধে। সুইডিশ রেডিয়োয় সেই দুর্নীতির খবর সম্প্রচারিত হয়। ভোটের দেওয়ালে বোফর্সকে ইস্যু করতে দেরি করেনি বিরোধীরা। দেশজুড়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওঠা এই স্লোগানের জেরেই বিরোধীদের অর্ধেক কাজ সারা হয়ে যায়। লোকসভা ভোটে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের কাছে রাজীব হেরে যান।
আসলে স্বাধীনতার পর দেশে দুর্নীতি যে কত অবতারে এসেছে, তা গুনে শেষ করা যায় না। স্বাধীনতার বছর গড়াতে না গড়াতেই ১৯৪৮ সালে জিপ কেলেঙ্কারি। ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে, বিদেশি সংস্থা থেকে জিপ কেনার অর্ডারে সই করে দেন কৃষ্ণমেনন। ব্রিটেনে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার প্রোটোকলের ধার ধারেননি।
২০১৬ সালে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা যেন পুরনো সেই বেনিয়মের কপিক্যাট। অনিল আম্বানির সংস্থাকে বেআইনিভাবে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। টাকার অঙ্কটা ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এই লেনদেনে কোনও দুর্নীতি খুঁজে পায়নি।
আরও পড়ুন- মানুষের সমর্থন ছাড়া দুর্নীতি হয় না, রাজ্যকে ভাগাড় করেছে জনতাই?
যে বোফর্সে দুর্নীতির গন্ধ, সেটাই কারগিলের সামরিক অভিযানে অন্যতম প্রধান অস্ত্র। আবার ওই কারগিল যুদ্ধের পরেই কফিন কেনায় বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে। হালের নীরব মোদি-পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক দুর্নীতির কথায় আসা যাক। ১৪ হাজার কোটি টাকার আর্থিক তছরূপ। ডুবতে বসে রাষ্ট্রায়ত্ব এই ব্যাঙ্ক।
হর্ষদ মেহতার শেয়ার বাজার দুর্নীতি, দিল্লির কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতি, টু-জি স্পেকট্রাম থেকে কয়লাবণ্টন- লক্ষ-লক্ষ কোটি কোটি টাকার নয় ছয় হয় এই দেশে। আর এই টাকা সাধারণ মানুষের করের টাকা।
বাংলাও তো পিছিয়ে নেই। তবে বাঙালি ভুলে গিয়েছে বেঙ্গল ল্যাম্প কেলেঙ্কারির কথা। সে আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা৷ মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসু বেঙ্গল ল্যাম্প কোম্পানিতে চাকরি করতেন৷ জ্যোতিবাবুর নির্দেশে বেঙ্গল ল্যাম্প কোম্পানির বরাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পূর্তমন্ত্রী যতীন চক্রবর্তীর নোট ফাঁস হয়ে যায়। রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে ওঠে কিন্তু ভোটের বাক্সে তার কোনও প্রভাব পড়েছিল কি?
আরও পড়ুন- কোটি কোটি টাকা নয় ছয়! আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের নামে আসলে কী চলছে দেশে?
২০১৬ সালের 'কুখ্যাত' নারদা স্টিং অপারেশন! বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে কাগজে মুড়ে টাকা নিতে দেখা যায় শাসক দল তৃণমূলের নেতাদের। নারদা স্টিং অপারেশনের ফুটেজ বিজেপি অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করে দেখানো হয়। ভোটের ফল কী? নিরঙ্কুশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফেরে তৃণমূল।
তারপর হালের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলা। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট উদ্ধার করে কোটি কোটি টাকা। গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। গরুপাচার মামলার কথাই ধরা যাক না। শাসক দলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রত ওরফে কেষ্ট সেই দুর্নীতির দায়ে এখন তিহাড়ে।
কিন্তু এত এত পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির ছাপ কি আদৌ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে পড়ে? ইএভিএমের বোতাম পছন্দের আগে তাঁরা কি এগুলো মাথায় রাখেন? নাকি সুকৌশলে মগজে কার্ফু জারি করার নিত্যনতুন ফন্দি বের করে ফেলেন রাজনীতির কারবারিরা। আলোচনায় প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে বাংলা যা ভাবছে। দেখুন আজ সন্ধ্যায়। সাংবাদিক, বিশ্লেষকরা কী বলছেন? আজকের পর্ব, বিজেপি বনাম তৃণমূল, দুর্নীতির এক দশক। প্রতি সোম, বুধ, শুক্র সন্ধে ৭ টা থেকে - কলকাতা ২৪x৭ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং inscript.me এর ফেসবুক পেজে চোখ রাখুন।