‘কুরুসভায় সেদিন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ হয়েছিল!’ মোদি-শাহকে মনে করিয়ে দিলেন মহুয়া
Mahua Moitra: মহাভারতের কুরুসভার তুলনা টেনে মহুয়া বলেন, ‘‘৮ ডিসেম্বর কুরুসভা হয়েছিল সংসদে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করেছিলেন দুঃশাসন। ধৃতরাষ্ট্র সে দিন অন্ধ ছিলেন।’’
একা রাহুলে রক্ষে নেই, মহুয়া দোসর। কার্যত বিরোধীদের চাপে এমনই পরিস্থিতি গেরুয়া শিবিরের। প্রায় দশ বছর পর লোকসভা বিরোধী দলনেতা পেয়েছে। অন্যদিকে, কিছুদিন আগেই টাকা নিয়ে প্রশ্ন করার মামলায় সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তবে ২০২৪ লোকসভা ভোটে ওই কেন্দ্র থেকেই জিতে ফের সসম্মানে লোকসভায় ফিরেছেন মহুয়া। আর ফিরেই বিরোধীদের উদ্দেশ্যে এক হাত নিলেন গেরুয়া শিবিরকে। কার্যত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটুকুও না দিয়ে তাঁর সাংসদপদ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল সে সময়। সেই ঘটনাকে এদিন মহাভারতের কৌরবসভার সঙ্গে তুলনা করে মহুয়া জানান, সেদিন ভরা সভায় বস্ত্রহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু দুঃশাসনবাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য কৃষ্ণের মতোই তাঁর রক্ষক হয়েছেন কৃষ্ণনগরের মানুষ। আর সেই প্রসঙ্গ তুলেই এদিন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ শানান মহুয়া।
এদিন লোকসভা অধিবেশনে আগাগোড়াই তিনি মোদিকে আক্রমণ করে গিয়েছেন। যদিও মহুয়া বলতে উঠতেই লোকসভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটি লক্ষ্য করে মহুয়া সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমার কথা শুনে যান। ভয় পাবেন না। আমার কেন্দ্রে দু’বার এসেছেন। এ বার আমার কথা শুনে যান।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অবশ্য সেই কথায় কর্ণপাত করতে দেখা যায়নি। এদিন সায়নী ঘোষের দ্রৌপদী-মন্তব্যকে টেবিল বাজিয়ে সমর্থন জোগান তৃণমূলের আরেক সাংসদ সায়নী ঘোষ।
আরও পড়ুন: ‘হিন্দুই নন!’ লোকসভায় সরাসরি আক্রমণ রাহুলের, উত্তর দিতে কালঘাম ছুটল টিম মোদির
গত বছর ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখ। লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সেদিন সংসদ থেকে বেরিয়েই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, শেষ দেখে ছাড়বেন। কার্যত যুদ্ধ করেই সেই হারানো মাটি ফের দখল করে নিয়েছেন মহুয়া। সোমবার সেই ব্যপারটি নিয়েই ফের বিজেপিকে বিঁধলেন তৃণমূলনেত্রী। নাম না করেই প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেন, ‘‘আমাকে বসানোর চক্করে জনতা আপনার ৬৩ জন সাংসদকে বসিয়ে দিয়েছে।’’ তা যে খুব ভুল বলেছেন মহুয়া, তা নয়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি ৩০৩টি আসন জিতেছিল একাই। এবার তার জায়গায় হাতে এসেছে মাত্র ২৪০টি। এনডিএ শরিকদের সমর্থন জুটিয়ে কোনও মতে সরকার গড়তে পেরেছে মোদি বাহিনী। সেই প্রসঙ্গেই এদিন ফের খোঁচা দেন মহুয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমায় বসাবেন না, আরও ভারী পড়বে।’’
মহাভারতের কুরুসভার তুলনা টেনে মহুয়া বলেন, ‘‘৮ ডিসেম্বর কুরুসভা হয়েছিল সংসদে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করেছিলেন দুঃশাসন। ধৃতরাষ্ট্র সে দিন অন্ধ ছিলেন।’’এর পরেই মহুয়া পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানালেন, যাঁরা সে দিন তাঁর ‘বস্ত্রহরণ’-এ শামিল হয়েছিলেন, সেই এথিক্স কমিটির সদস্যদের লোকসভা ভোটে কী ফল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এথিক্স কমিটি আমার বহিষ্কারে অনুমোদন দিয়েছিল। সেখানে ১০ জন সদস্য ছিলেন এবং এক জন চেয়ারপার্সন। পাঁচ জন সদস্য ছিলেন বিজেপির। তাঁদের মধ্যে চার জনই হেরে গিয়েছেন। চেয়ারপার্সনও হেরেছেন। কংগ্রেসের যে সাংসদ তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন, তিনিও হেরেছেন। মহারাষ্ট্রের যে সাংসদ বিজেপির হয়ে বিতর্ক তুলেছিলেন, তিনিও হেরেছেন। কৃষ্ণের মতো কৃষ্ণনগরবাসী আমায় রক্ষা করেছিলেন।’’
স্পষ্টবাদী মহুয়াকে শুধু লোকসভা থেকে বহিষ্কারই নয়, একের পর এক তদন্তকারী এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখিয়ে গিয়েছে বিজেপি, অভিযোগ এমনটাই। সেই দুঃসময়ের কথা উল্লেখ করে মহুয়া সোমবার সংসদে জানান, ‘‘অনেকে বলতেন, সাংসদপদ হারিয়েছো, বাড়ি হারিয়েছো। ইউটেরাসও অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়েছিল আমার। কিন্তু, কী জিতেছি জানেন? রাহুলজি যা বলেন, তা জিতেছো— ‘ভয় থেকে মুক্তি।’ তোমার ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতর কেউ হারাতে পারেনি আমাকে।’’
লোকসভা ভোটের আগে দু'বার কৃষ্ণনগরে যান মোদি। তবে তাতে তেমন লাভ হয়নি। তার পরেও বিজেপি সমর্থিত প্রার্থী গো-হারান হেরে যান মহুয়ার কাছে। মহুয়ার দাবি, যেখানে যেখানে মোদি সভা করেছেন, বেশিরভাগ জায়গাতেই হেরেছে বিজেপি। রামমন্দির, ধর্মের ধুয়ো তুলেও ভোটের বৈতরণী পার করতে পারেনি বিজেপি। অযোধ্যার রামমন্দিরের অবস্থান যেখানে, সেই ফৈজাবাদ কেন্দ্রেও মুথ থুবড়ে পড়েছি বিজেপি। এই প্রসঙ্গে মহুয়ার খোঁচা, ‘‘রাম বলল, থাক, আমার নামে আর নয়। অতি দর্পে হত লঙ্কা।’’ আর এই দর্পের জন্যই নাকি ‘গণদেবতা’ শাস্তি দিয়েছে মোদীকে, তেমনটাই মনে করছেন মহুয়া।
আরও পড়ুন:মোদির সঙ্গে মাথা নত করে করমর্দন! ওম বিড়লাকে কর্তব্য মনে করালেন রাহুল গান্ধি
তবে শুধু বিজেপিকে আক্রমণ করেই থেমে থাকেননি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ভাষণে উল্লিখিত ছ'টি বিষয় তুলে ধরেও মোদি সরকারকে কটাক্ষ করেন এদিন মহুয়া। মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের হাত গুটিয়ে থাকা থেকে শুরু করে লোকসভায় বিজেপির মহিলা সাংসদের সংখ্যা কমে যাওয়া, সেসব নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। একাধিক বার মোদির ভোটমুখী প্রচারে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণ প্রকাশ পেয়েছে। তা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ তো দূরের কার্যত মূক-বধির হয়েই বসেছিল নির্বাচন কমিশন। একের পর এক রেল দুর্ঘটনা, দিল্লির মতো মেট্রোপলিটন শহরে বিমানবন্দরের বেহাল দশা- সব প্রসঙ্গই এসেছে তাঁর বক্তৃতায়। মহুয়ার এদিন সাফ কথা, ‘‘ভারতবাসী ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করবে এই সরকারের পতনের জন্য।’’
কার্যত লোকসভায় এদিন এমন 'অগ্নিকন্যা'র ভূমিকাতেই গর্জে উঠতে দেখা গিয়েছে মহুয়াকে। গত ২৪ জুন শুরু হয়েছে লোকসভার প্রথম অধিবেশন। সোমবার রাহুলের আক্রমণে এমনিতেই দিশাহারা হয়ে পড়ে গেরুয়া শিবির। এর পর গোদের উপর বিষফোঁড়া আবার মহুয়া মৈত্র। সব মিলিয়ে এ বারের লোকসভা অধিবেশন যে খুব সুখকর হবে না টিম-মোদির জন্য, তা ভালোই মালুম হচ্ছে।