মিনারেল ওয়াটার নয়, বাজার ধরছে 'কালো জল'! স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী এই পানীয়?
Black Water: এই জলের মধ্যে ফুলভিক অ্যাসিড (এফভিএ) থাকে যা একে চারকোলের রঙ দেয়, যার জন্যই মূলত জলটির রং কালো হয়। জানা গেছে, এতে উপস্থিত খনিজ এবং ভিটামিন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী
ইতিমধ্যেই ফিটনেস প্রেমীদের মধ্যে ব্ল্যাক ওয়াটার খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উঠছে। এই ব্ল্যাক ওয়াটার বা যাকে আমরা বাংলায় বলি কালো জল সুস্বাস্থ্যের এক অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অনেকেই হয়তো মালাইকা অরোরা, শ্রুতি হাসানের মতো তাবড় সেলিব্রিটিদের হাতে কালো জলের এই বোতলটি আগেও দেখেছেন । সম্প্রতি জানা গেল যে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক স্বয়ং বিরাট কোহলিও এই জল পান করা শুরু করেছেন। অতএব, একথা বলাই বাহুল্য যে জলটি নিতান্তই উপকারী। অনেকেই জানতে আগ্রহী যে, এই পানীয়টি কী দিয়ে তৈরি এবং এটি কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের উপকার করতে সক্ষম।
ব্ল্যাক ওয়াটার, যাকে স্পোর্টস ড্রিংক বা এনার্জি ড্রিংকও বলা চলে, আসলে ক্ষারীয় জল। একটি পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, এই জল পিএইচ স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরে অম্লতার ভারসাম্য রক্ষা করে। এই জলের মধ্যে ফুলভিক অ্যাসিড (এফভিএ) থাকে যা একে চারকোলের রঙ দেয়, যার জন্যই মূলত জলটির রং কালো হয়। জানা গেছে, এতে উপস্থিত খনিজ এবং ভিটামিন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল সংক্রান্ত সমস্যায় সাহায্য করে। কেবল তাই নয়, শরীরের ওজন বজায় রাখতেও এর বিশেষ প্রভাব রয়েছে। এছাড়াও, এই জলের অণুগুলি বেশি পরিমাণ পুষ্টি ধরে রাখতে সক্ষম যার ফলে শরীর খুব তাড়াতাড়ি সেগুলি শোষণ করতে পারে।
আরও পড়ুন- অচেনা ভিডিও কলে যৌন হাতছানি, সাড়া দিলেই বিপদ! কীভাবে সতর্ক হবেন, জেনে নিন
তবে এত কিছুর পরেও ক্ষারীয় জল যে স্বাস্থ্যকর, তা বলা মুশকিল। কারণ ক্ষারীয় জলের উপকারিতা সম্পর্কে বিশেষ বৈজ্ঞানিক তথ্য বা প্রমাণ নেই। যদিও কিছু প্রবক্তার মতে, এটি আরও হাইড্রেটিং এবং অনাক্রম্যতার জন্য ভালো, যদিও এই সাপেক্ষে খুব কমই তথ্যসাপেক্ষ প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং এই জল ব্যবহার করার আগে চিকিৎসক বা ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা যাচাই করা। যদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে চাইলে খেয়ে দেখাই যায়।
অনলাইনে খুব সহজেই পাওয়া যায় এই জল। এমনকী এই কালো জল তৈরির জন্য একটি ভারতীয় ব্র্যান্ডও রয়েছে। কালো জলের ৫০০ মিলির ৬ টি বোতলের প্যাকেটের দাম ৫০০ টাকার একটু বেশি। বলা বাহুল্য, এটি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য যথেষ্টই ব্যয় বহুল। জল একটি প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় পানীয়। প্রতিদিন আমাদের অন্তত ৩ থেকে ৫ লিটার জল খাওয়া উচিত। এই অবস্থায় প্রতিদিন প্রায় ১,০০০ টাকার বেশি দামের জল খাওয়া সাধারণ মানুষের ভাবনারও অতীত।
আরও পড়ুন- শুধু নাবালিকা নয়, প্রতিদিন যৌন নিপীড়নের শিকার কত নাবালক, চমকে দেবে এই তথ্য
ব্ল্যাক ওয়াটারের এই গুণাবলী কিন্তু সার্বিকভাবে প্রমাণিত নয়। তা হলে প্রায় ২০০-২৫০ টাকা লিটার প্রতি খরচ করা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? এখন ব্ল্যাক ওয়াটার সেলেব্রিটি ট্রেন্ড। তবে আমাদের মতো দেশে এই ট্রেন্ড কতটা কার্যকর, ভেবে দেখা প্রয়োজন। কারণ দু’বেলা সুষম আহারই অনেকের জোটে না। এই জল অবশ্যই তাঁদের জন্য নয়। যাঁরা এই জল পান করার ক্ষমতা রাখেন, তাঁরা অত্যন্ত ধনী। কিন্তু খাবার থেকেও তাঁরা এই একই পুষ্টিগুণ পেতে পারেন। তার জন্য এই বিশেষ জলের প্রয়োজন কতটা, এই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এত বেশি সংখ্যক সেলেব্রিটিকে হঠাৎ করে এই ব্ল্যাক ওয়াটার খেতে দেখে তাই মনে হওয়া অস্বাভাবিক না যে এটি কোনও বিজ্ঞাপনের অংশ নয় তো!
কালো জল আসলে এক ধরনের ক্ষারীয় জল বা অ্যালকালাইন ওয়াটার। স্পোর্টস ড্রিঙ্ক বা এনার্জি ড্রিঙ্ক হিসেবেই ধরা হয় এই পানীয়কে। আসলে এর উপকরণের মধ্যে অন্যতম হল- ফ্লুভিক (FvA) অ্যাসিড। ফলে পানীয়ের রঙ কালচে দেখায়। রিপোর্ট বলছে, আমাদের শরীরের pH level নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ব্ল্যাক ওয়াটার। সেই সঙ্গে এটাও দাবি করা হয়েছে যে, এর মধ্যে কিছু ভিটামিন ও মিনারেল আছে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আসলে অ্যালকালাইন ওয়াটার বা ক্ষারীয় জলের উপযোগিতা সম্বন্ধে খুবই কম বৈজ্ঞানিক তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে। তাই শরীরের জন্য এর উপকারিতা নিয়ে একটু সংশয় থেকেই যায়। তবে কিছু তথ্য থেকে জানা যায়, ক্ষারীয় জলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরের ইমিউনিটির জন্য ভালো এবং শরীরকে হাইড্রেট করতেও সক্ষম। যদিও এটা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারাটা একটু মুশকিল! কারণ এই বিষয়ে গবেষণার খুব অল্প তথ্যই আমাদের হাতে উঠে এসেছে। তাই কেউ যদি এই জল নিজেদের ডায়েটের তালিকায় যোগ করতে চান, তাহলে তাঁকে ডাক্তার অথবা ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন অথবা কতটা খেতে হবে, এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন।
ভাদোদরার একটি স্টার্টআপ, Evocus নামক একটি ভারতীয় কোম্পানি প্রথম কালো ক্ষারীয় জলের ধারণা চালু করেছে। ব্ল্যাক ওয়াটারের একটি বোতলের দাম ১০০ টাকা যেখানে একটি সাধারণ মিনারেল ওয়াটার বোতলের দাম মাত্র ২০ থেকে ৪০ টাকা । ক্ষার ভিত্তিক জল তার অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য সেলিব্রিটিদের কাছে প্রিয়। ধীরে ধীরে এটি প্রচলিত হলেও এখনও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছয়নি, আর এর দামও সাধারণ মানুষের জন্য যথেষ্ট ব্যয় সাপেক্ষ। তাই যতদিন না এই জলের দাম কমছে ততদিন এর বিক্রিও সামান্য গণ্ডির মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে।