ঘরে তৈরি 'বিশেষ টোটকা' খেয়ে চামড়া নীল! নীল মানুষের কাহিনি শুনে আঁতকে উঠেছে বিশ্ব!
Blue Skin Man: যে সম্পূরক বা ফুড সাপ্লিমেন্টটি তিনি নিয়মিত খেতেন তার একটি অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল।
কৃষ্ণ কালো। কিন্তু 'ব্ল্যাক ইজ দ্য বিউটি' হালেফিলে প্রচার পেতে শুরু করলেও কৃষ্ণের সময় কালো দেবতা বিষয়টি কেমন মানাবে ঠাহর করা যায়নি। তাই শ্যাম হলেন নীল। নীল রঙের এক দেবতা। ক্যালেন্ডারে, মূর্তিতে সবেতেই কৃষ্ণের রং নীল, আশমানি! এমনকী কালো কে কালো না বলে শ্যামবর্ণ বলা শুরু হলো! নীল মানুষ পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে নানা কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিতে। যেখানে ভিনগ্রহের বাসিন্দার গল্প বলা হয় সেখানে নীল রঙের জীবই আঁকা হয়। নীল এক রহস্য বলেই, খাপ খেয়ে যায় সবেতে। কিন্তু যদি সত্যিই কোনও মানুষের রং হয় নীল? হয়েছে। নিজেরই অজান্তেই দেহের রং সম্পূর্ণ নীল হয়ে গিয়েছে এক ব্যক্তির। কীভাবে? কারণ জানলে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়। নীল চামড়ার এই ব্যক্তির নাম পল ক্যারাসন। আর্থ্রাইটিস, ডার্মাটাইটিস এবং আরও কিছু রোগের উপসর্গ কমানোর জন্য বছরের পর বছর ধরে বাড়িতে তৈরি বিশেষ খাদ্য পরিপূরক খেতেন এই ব্যক্তি। আর সেই থেকেই ধীরে ধীরে নীল হয়ে উঠতে থাকেন পল।
যে সম্পূরক বা ফুড সাপ্লিমেন্টটি তিনি নিয়মিত খেতেন তার একটি অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল। এই সাপ্লিমেন্টের মধ্যে থাকা কলয়ডাল সিলভার পলের ত্বককে নীল করে দেয়। ২০০৮ সালে জাতীয় টেলিভিশনে ওয়াশিংটন নেটিভ শুরু হওয়ার পর পল ক্যারাসনের গল্প ভাইরাল হতে শুরু করে। সেই সময় এক সাক্ষাৎকারে দেখা যায় তার ত্বকের রঙ একেবারে গাঢ় নীল!
দীর্ঘদিন ধরে পল ক্যারাসন একটি পানীয় খেতেন। একটি পত্রিকায় পল পড়েছিলেন, সিলভার ক্লোরাইড কলয়েডের ব্যাপক স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। তাই এই সিলভার ক্লোরাইড কলয়েডের একটি পানীয় বাড়িতে তৈরি করে নিয়মিত খেতে শুরু করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, চামড়ার রোগ ঠেকাতে তিনি তার মুখে সিলভার কম্পাউন্ড দ্রবণও ঘষতেন।
আরও পড়ুন- শরীর থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে চোখ, ঝুলছে চামড়া, রাক্ষুসে এই মাছ দেখে ভিরমি খাবেন আপনিও
পল ক্যারাসনের দাবি, ঘরে তৈরি এই টোটকা তার অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং আর্থ্রাইটিসের সমস্যার নিরাময় করেছে। আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি পেয়েছেন, আরজিরিয়া। আরজিরিয়া এমন একটি অবস্থা যা রুপোর সংস্পর্শে বা রুপো গ্রহণের কারণে ত্বককে নীল বা ধূসর করে তোলে। এই বিশেষ অবস্থাটি অপরিবর্তনীয়, অর্থাৎ চামড়া আর কখনই আগের মতো হয় না।
তবে চামড়ার রং যে বদলে যাচ্ছে, তা নিজে নাকি মোটেও বুঝতে পারেননি। একজন বন্ধু বিষয়টি লক্ষ্য করে একদিন হঠাৎ পল ক্যারাসনকে জানান। তার আগে তিনি বুঝতেই পারেননি নীল মানুষ হয়ে উঠছেন পল। পলের একজন বন্ধু বেশ কিছুকাল পরে পলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তখন তিনি চামড়ার এই অস্বাভাবিকতা দেখে পলকে জিজ্ঞেস করেন, কী সমস্যা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিষটির অস্বাভাবিকতা সেই প্রথম জানতে পারেন চিকিৎসকরাও।
নীল চামড়ার কারণে পলকে আশেপাশের মানুষ 'ব্লু ম্যান', 'পাপা স্মার্ফ' নামে ডাকতে শুরু করেন। যদিও বিষয়টি মোটেও পছন্দ করতেন না তিনি। চারপাশের মানুষ তাঁকে এভাবে দেখুক, এভাবে রাস্তায় ফিরে ফিরে তাকাক, তা চাইতেন না তিনি। কোনও দিন কি নিজের আসল গায়ের রং আর ফিরে পাবেন, প্রশ্ন করা হলে চুপ করে যেতেন পল। এই উত্তর জানা ছিল না কারও! বেশি দিন অবশ্য উত্তর খুঁজতেও হয়নি তাঁকে। হার্ট অ্যাটাক হয়, নিউমোনিয়া হয়। তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়। ২০১৩ সালে ৬২ বছর বয়সে প্রয়াত হন এই নীল মানুষ। ঘরোয়া টোটকা যাকে করে তুলেছিল প্রকৃত অর্থেই 'শ্যামবর্ণ'।