১৫ দিনে ধসে পড়ল ন'টি সেতু! কেন একের পর এক ব্রিজ ভাঙছে বিহারেই?

Bihar Bridge Collapse: ৩ জুলাই আরও তিনটি সেতু ভেঙে পড়ে বিহারে। গত ১৫ দিনের বৃষ্টিতে এই নিয়ে ন'টি সেতু ভাঙল বিহারে।

এত অল্প সময়ের মধ্যে সেতুগুলির ক্রমাগত ধসে পড়া নিয়ে বিচলিত নীতীশ কুমার সরকার সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে বলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ মানুষের বড় অংশ যাতায়াতের জন্য এই সেতুগুলির উপর নির্ভরশীল। গাফিলতির কোন চরম পর্যায়ে কাজ হলে সেতুগুলি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে! বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার দায় বর্তাবে কার উপর?

অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়াররা, বর্তমান ইঞ্জিনিয়াররা যুক্তি দিয়ে বলছেন, খারাপ মানের উপকরণ ব্যবহার করা এই সেতু ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ। নির্ধারিত নকশা না মেনেই সেতু তৈরি করা, নিম্নমানের নিয়ন্ত্রণ, ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের তদারকি না করা এবং নিয়ম লঙ্ঘনের কারণেই বিহারের সেতু বিপর্যায় ঘটছে। তাঁদের দাবি, সিমেন্ট, বালি, পাথরের চিপ এবং লোহার রডের নির্ধারিত অনুপাতও মেনে চলা হয়নি সেতু নির্মাণে।

আরও পড়ুন- কখনও গুজব, কখনও প্রবল ভিড়! ভারতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর যে ইতিহাস স্তব্ধ করে দেয়

ইঞ্জিনিয়াররা যাই বলুন, সরকারি আধিকারিকরা বলছেন উপরে হিমালয়-নেপাল থেকে প্রবল জলপ্রবাহের জন্যই এই দুর্দশা। হিমালয়ের জল বিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলিতে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল বাড়িয়েছে৷ এই প্রবল চাপের ফলেই সেতু ভাঙছে। নাহলে ১৮ জুন থেকে ধসে পড়া বেশিরভাগ সেতুই উত্তর বিহারে কী করে অবস্থিত হতে পারে। নেপাল থেকে প্রচুর পরিমাণে জল আসার কারণে প্রতি বছরই উত্তর বিহার জলে ডুবে যায়।

গত ১৮ জুন আরারিয়ায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু ভেঙে পড়ার পরই একে একে বাকি সেতুগুলির ধসে পড়ার খবর আসতে থাকে। আরারিয়ার ওই সেতুটি তখনও উদ্বোধনও হয়নি। এর পরে ২২ জুন সিওয়ানে একটি খালের উপর পুরনো সেতু ভেঙে পড়ে। পরের দিনই ২৩ জুন, মতিহারিতে একটি নির্মীয়মাণ সেতু ভেঙে পড়ে। ২৫ জুন, মধুবনীতে একটি সেতুর গার্ডার ধসে পড়ে জলের প্রবল স্রোতে ভেসে যায়। কিষাণগঞ্জ জেলায় ২৭ জুন এবং ৩০ জুন পরপর দু'টি সেতু ভেঙে পড়ে। এই দু'টি সেতু তৈরি হয়েছিল ২০১১ এবং ২০০৭ সালে।

আরও পড়ুন- যোগীরাজ্যের গণপিটুনি-সংস্কৃতি বাংলাতেও! একের পর এক ঘটনায় প্রশ্ন 

৩ জুলাই আরও তিনটি সেতু ভেঙে পড়ে বিহারে। গত ১৫ দিনের বৃষ্টিতে এই নিয়ে ন'টি সেতু ভাঙল বিহারে। সিওয়ান জেলার এই তিনটি সেতুই ৩০ থেকে ৮০ বছর আগে তৈরি। প্রথমে সিওয়ান জেলার দেওরিয়া ব্লকে গণ্ডকী নদীর উপর একটি ছোট সেতুর একটি অংশ ভোর ৫টা নাগাদ ভেঙে পড়ে। পরে জেলার তেঘরা ব্লকে আরেকটি ছোট সেতুরও একই পরিণতি হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, সরানে আরও দু'টি ছোট সেতু ভেঙে পড়েছে।

এর মধ্যে জনতা বাজার এলাকায় একটি ছোট সেতুর বয়স ১০০ বছর। আরেকটি সেতু যেটি ভেঙে পড়েছে সেটি লাহলাদপুর এলাকায় অবস্থিত, ২৫ বছর আগে তৈরি হয়েছিল সেটি।

বিহারের গ্রামীণ পূর্ত বিভাগ, গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগ, সড়ক নির্মাণ বিভাগ এবং বিহার রাজ্য পুল নির্মাণ নিগম প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন ঠিকাদার এবং নির্বাহক সংস্থার মাধ্যমে সেতু নির্মাণের কাজ করে। সেতুগুলি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা বা মুখ্যমন্ত্রী যোগাযোগ যোজনা বা কেন্দ্রের হাইওয়ে প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হচ্ছে কিনা তার উপর নির্ভর করে গোটা বিষয়টি। তাহলে সরকারি টেন্ডার ডেকে, বরাত দিয়ে তৈরি এই সেতুগুলির গাফিলতি রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারেরই নয় কি? 

More Articles