উত্তরপ্রদেশে বিজেপির হার 'পরিকল্পিত'! গোপন নথি হাতে নিয়ে যুদ্ধ শুরু যোগীর
Yogi Adityanath: রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত সাত বছর ধরে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির শাসন রয়েছে। তা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনের থেকে যে ধরনের সাহায্য় আশা করা যায়, তা বহুক্ষেত্রেই বাসিন্দারা পাচ্ছেন না। যে কারণে ক্ষোভ জমছে মানুষের মন...
বিজেপির খাস গড় বলতে যা বোঝায়, উত্তরপ্দেশ ঠিক তাই। গোবলয়ের রাজ্য বলে কথা,যেখানে যত্ন করে বিজেপি গড়ে তুলেছে রামমন্দির। বিজেপির খাস লোকের হাতে যে রাজ্যের ভার, সেখানেই লোকসভা ভোটে মারাত্মক ভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। এমনকী অযোধ্যার রামমন্দির যেখানে, সেই ফৈজাবাদ কেন্দ্রেও গো-হারান হেরেছে বিজেপি। কেন এই হার? কেন উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল এল না বিজেপির? সেই রিপোর্ট হাতে আসার পরেই ময়দানে যোগী।
তার পর্যালোচনায় নেমে একাধিক কারণকে ভোটের খারাপ ফলাফলের জন্য দাবি করেছে উত্তরপ্রদেশ বিজেপি। দলীয় কর্মীদের অসন্তোষ থেকে শুরু করে যথাযথ প্রার্থীকে টিকিট না দেওয়ার অভিযোগ। এমনকী আঙুল উঠেছে জেলা প্রশাসনের যথেষ্ট সহায়তার অভাবের মতো বিষয়ের দিকেও। সম্প্রতি ভোট পরবর্তী ফলাফল ও তার কারণ পর্যালোচনার জন্য উত্তরপ্রদেশে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে বিজেপি। বিজেপির এই ভয়ঙ্কর খারাপ ফলাফলের কারণ খতিয়ে দেখাই ছিল সেই টাস্ক ফোর্সের কাজ।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশই উলটে গেল! কে গিলে ফেলল রাম মন্দিরের সাফল্য?
সেই টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট সম্প্রতি জমা পড়ে যোগী সরকারের কাছে। আর সেই রিপোর্ট হাতে আসার পরেই একাধিক জেলার জেলাশাসককে বদলি করে দেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। নয় নয় করেও এক ডজনের কাছাকাছি জেলাশাসককে বদলি করেছেন যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন। আর মজার ব্যাপার, যে সব জেলাগুলিতে জেলাশাসক বদল হয়েছে, সেই জেলাগুলিতেই লোকসভা ভোটে গো-হারান হেরেছে বিজেপি।
কী রয়েছে আদতে সেই টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে? তাদের বিশ্লেষণ বলছে, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে মোট ৩২টি আসন কম পেয়েছে বিজেপি। ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশে যেখানে ৬২টি আসন পেয়েছিল বিজেপি, সেখানে এবার তাদের আসন সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৩-এ। একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, উত্তরপ্রদেশে যদি ঠিকঠাক ফলাফল করত বিজেপি, অর্থাৎ যদি উত্তরপ্রদেশের আসন ঠিকমতো ধরে রাখতে পারত বিজেপি, তাহলে কেন্দ্রে বিজেপির এই শরিক নির্ভরতা থাকত না কোনও মতেই। এবারে কার্যত কিং মেকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন বিহারের নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নায়ডু। যে কারণে সরকার গড়ার পরিবর্তে একাধিক মন্ত্রক ও দফতরের দাবি জানাতে পেরেছিলেন এনডিএ শরিকেরা।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত সাত বছর ধরে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির শাসন রয়েছে। তা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনের থেকে যে ধরনের সাহায্য় আশা করা যায়, তা বহুক্ষেত্রেই বাসিন্দারা পাচ্ছেন না। যে কারণে ক্ষোভ জমছে মানুষের মনে। যার প্রভাব পড়েছে ভোটবাক্সে। জানা গিয়েছে, ওই রিপোর্টের পরে কৌশম্বি, চিত্রকোট, শ্রাবস্তি, সীতাপুর, বস্তি, সাহরনপুর, বান্দা, মোরাদাবাদ, সীতাপুর, শম্ভল, কাইসারগঞ্জ, অউরাইয়ার জেলার জেলাশাসককে সরিয়ে দেওয়া হয় তড়িঘড়ি।
তবে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ এখানেই শেষ নয় মোটেই। যোগী আদিত্যনাথের প্রবল জনপ্রিয়তা, উত্তরপ্রদেশের হিন্দুত্ববাদী হাওয়া সত্ত্বেও সেখানে গেরুয়া শিবিরের এই হারের নেপথ্যে রয়েছে দলের প্রচার কৌশলও। তেমনটাই মনে করছে টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট। ভোটের আগে বিজেপি দাবি করেছিল, এই লোকসভা নির্বাচনে চারশো আসন পেলে বিজেপি সংবিধান পরিবর্তন করে দেবে। বিরোধীরা নিশানা করেছিল বিজেপির সেই দাবিকেই। বিরোধীদের সেই প্রচার আসলে জনমানসে বিজেপির বিরুদ্ধে অন্যমত গড়ে তুলেছিল। সংবিধান পরিবর্তন হলে সংরক্ষণ থাকবে না, আর এই প্রচারের জেরে দলিত সমাজের বড় অংশের ভোটই গিয়েছে সমাজবাদী পার্টির দিকে। যার মাশুল গুনতে হয়েছে বিজেপিকে।
টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট এ-ও বলছে, রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের রিপোর্টগুলিকে তেমন ভাবে পাত্তা দেয়নি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের পছন্দ করা প্রার্থীর উপর আস্থা দেখায়নি স্থানীয় নেতৃত্ব। স্থানীয় কর্মীদের সেই অনাস্থা প্রভাব ফেলেছে ভোটবাক্সেও। একই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির এই বাজে ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ার নেপথ্যে রয়েছে রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজের ক্ষোভও। তেমনটাই মনে করছে ওই রিপোর্ট। রাজকোটের বিজেপি সাংসদ পুরুষোত্তম রূপালা ভোটের আগে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে গিয়েছেন রাজপুতদের নিয়ে। তার প্রভাব দেখা গিয়েছে ভোটের রেজাল্টে। পূর্বাঞ্চলে যেখানে ২০১৯ সালে সাতাশটি কেন্দ্রের মধ্যে কুড়িটিই পকেটস্থ করেছিল বিজেপি, এবার সেই সংখ্যাটাই নেমে আসে ১১-তে। টাস্ক ফোর্সের এই রিপোর্টের পরে দলের এক কর্তা জানিয়েছেন, বিজেপির এই পতন নাকি অনেকটাই স্ক্রিপ্টেড অর্থাৎ পরিকল্পিত। অর্থাৎ বিজেপি নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্তেই যে জয়ের শিকে ছেড়েনি যোগীরাজ্যে বিজেপির কপালে, তা এককথায় মেনেছেন সকলেই।
আরও পড়ুন: খোদ উত্তরপ্রদেশেই ইন্ডিয়ার কাছে হেরে ভূত বিজেপি! কেন এই শোচনীয় হার?
অযোধ্যায় রামমন্দিরকে কেন্দ্র করেও ক্ষোভ জমেছিল অযোধ্যা ও উত্তরপ্রদেশবাসীর মনে। সাড়ম্বরে অযোধ্যার নির্মাণ ও উদ্বোধন হলেও সেখানে গুরুত্ব পাননি অযোধ্যার সাধারণ মানুষ। বরং রামমন্দির গড়ার জন্য একের পর এক বিপাকই বেড়েছে শুধু। মন্দির গড়তে গিয়ে অযোধ্যার রাস্তার অবস্থা হয়েছে দুর্বিসহ। অসংখ্য স্থানীয় দোকানদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে বাড়িঘর। তাদের অনেকেই পুনর্বাসন পাননি বলেই দাবি। এই সমস্ত কিছুই যেন আর বেশি করে উত্তরপ্রদেশের মানুষকে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপির থেকে। যার ফায়দা ঘরে তুলেছে সেখানে সমাজবাদী পার্টি। আর খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে।