৮০ হাজারের অনুমতি নিয়ে ২.৫ লক্ষ সমাগম! হাথরাসে কেন মহিলারাই পদপিষ্ট হলেন বেশি?
Hathras Stampede: ভোলেবাবার কনভয় যখন হাথরাসের অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে বেরোচ্ছে, মহিলাদের হুড়োহুড়ি বাবার পা ছোঁবেন বলে। পদপিষ্ট হওয়ার সেই শুরু।
আড়াই লাখ ভক্ত জমা হয়েছিল কেবল এক ডাকে। ডেকেছিলেন ভোলে বাবা ওরফে নারায়ণ সাকার হরি, ওরফে সাকার বিশ্ব হরি। বৃষ্টিমুখর ভারতবর্ষ। অত্যধিক ভিড়, তেমন ভ্যাপসা আবহাওয়া, চরম আর্দ্রতা, পিচ্ছিল মাঠ! সব উপেক্ষা করে তবু আড়াই লক্ষ মানুষ এসেছেন ভোলে বাবার কথা শুনবেন বলে। ভোলে বাবার চোখে সানগ্লাস, গায়ে থ্রি-পিস স্যুট, ভোলের বাবার থেকে আমজনতার দূরত্ব অনেক। তবু তাঁকে দেখার ভিড়। ভোলে বাবা যে রাস্তা দিয়ে যাবেন সেই রাস্তায় মাটি কপালে ছোঁয়ালেই ঘুচে যাবে দুঃখ, চাকরি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পেটের টান সব সমস্যা মিটে যাবে ভোলে বাবার একটি বাণীতে! এই বিশ্বাসে ভর করে ১২১ জন মারা গেলেন। ভোলে বাবার পদযাত্রা যাবে যে পথ দিয়ে সে পথ থেকে সরানো হচ্ছিল মহিলা ভক্তদের। ভোলে বাবা যে মাটিতে হেঁটেছিলেন সেই মাটি সংগ্রহের জন্য আকুলিবিকুলি করছিলেন মহিলারা। সব মিলে ভোলে বাবার পায়ে হাঁটা মাটিতেই পিষে মরে গেলেন ১২১ জন। ভোলে বাবা তো পগার পার! স্বজনহারাদের কান্না মিশে আছে ওই মাটিতে কেবল।
যারা মারা গেছেন, বেশিরভাগই মহিলা। ভোলে বাবার সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাকার বিশ্ব হরি বা ভোলেবাবার কনভয় যখন হাথরাসের অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে বেরোচ্ছে, মহিলাদের হুড়োহুড়ি বাবার পা ছোঁবেন বলে। পদপিষ্ট হওয়ার সেই শুরু। আয়োজকরা বিলাসবহুল গাড়ির কনভয় বেরনোর জন্য অনুষ্ঠানস্থল থেকে মূল রাস্তা পর্যন্ত একটি করিডোর তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। করিডোরের দুই পাশেই বিশাল জনসমাগম। এই মানুষরা সেই মাটি কুড়োতে চেয়েছিলেন যেখান দিয়ে বাবার বিলাসবহুল গাড়ি পেরোচ্ছে। এই হট্টগোলের ফলেই পদপিষ্ট হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেছে হাথরাসে।
আরও পড়ুন- তাঁকে দেখতে গিয়েই পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১২১! কে এই হাথরাসের ভোলে বাবা?
প্রচণ্ড আর্দ্রতা, দমবন্ধকর পরিস্থিতি, অত্যধিক ভিড়ের কারণে ভিড় অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে কোনওরকমে বাড়ি ফেরার বাস ধরতেও মরিয়া ছিলেন আগত ভক্তরা। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, হরিয়ানার মতো বিভিন্ন রাজ্য ও জেলা থেকেও ভোলে বাবার ভক্তরা এসেছিলেন। এফআইআর অনুযায়ী, এই অনুষ্ঠানের জন্য ২.৫ লক্ষ মানুষ জমা হয়েছিলেন। অথচ পুলিশের অনুমতি ছিল মাত্র ৮০ হাজার মানুষের জমায়েতের।
অর্থাৎ ৮০ হাজার লোকের অনুমতি নিয়ে আড়াই লক্ষ লোক ঢোকানো হয়েছে। কার অনুমতিতে? আয়োজকরা সব জেনেও নিয়ম ভেঙেছেন? যদি অত্যধিক ভক্তসমাগম হয়েই থাকে তা ঠেকাতে কেন প্রয়োজনীয় পুলিশ মোতায়েন হয়নি? এই বৃষ্টির মধ্যে পিচ্ছিল রাস্তা, এবড়োখেবড়ো পথ, হুড়োহুড়ি আটকাতে ব্যর্থতা- বিশাল অব্যবস্থাপনাই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটাল।
আরও পড়ুন- কখনও গুজব, কখনও প্রবল ভিড়! ভারতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর যে ইতিহাস স্তব্ধ করে দেয়
অপর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনেক মহিলাই ভোলে বাবার গাড়ির পিছনে দৌড়ে যান তাঁকে এক ঝলক দেখতে বা নিদেনপক্ষে গাড়ি ছুঁতে, যা পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়। পদপিষ্ট হওয়ার পর হাসপাতালে দেহগুলি আনা হলে সেখানেও ভিড় জমে যায়। আহতদের বাঁচানোর লড়াইয়ে হাসপাতালগুলিও অব্যবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। প্রশ্ন এখানেই, ৮০ হাজারের জায়গায় ২.৫ লক্ষ লোক হলো কোনও সতর্কতা ছাড়াই? কীভাবে এই ঘটনার পরে ওই ধর্মগুরু নিরাপদে চলে যেতে পারলেন? তাঁকে দেখতে যে মানুষরা এলেন, যারা তাঁকে ছুঁতে গিয়ে, তাঁর হেঁটে যাওয়া মাটি নিতে গিয়ে পিষে মরে গেলেন তাঁদের জন্য একবারও থামল না ধর্মগুরুর বিলাসবহুল গাড়ি?