মস্তিষ্ক কুড়ে খাচ্ছে অ্যামিবা, পর পর মৃত্যু! ভয়ঙ্কর সংক্রমণ ঘিরে আতঙ্ক
Brain-Eating Amoeba: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একবার মাথায় প্রবেশ করলে প্রায় ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে এই অ্যামিবা।
এককোষী প্রাণী অ্যামিবা, আনুবীক্ষণিকও বটে। সেই অ্যামিবাই এবার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কেরলে। একবার শরীরে ঢুকতে পারলেই শেষ। প্রাণঘাতী অ্যামিবা নাকি সরাসরি হামলা করছে মাথায়। খেয়ে ফেলছে মস্তিষ্কের সমস্ত ঘিলু। বিরল এই সংক্রমণে গত তিন মাসে তিন জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনায় ছড়িয়েছে আতঙ্ক।
কোঝিকোরের বাসিন্দা ১৪ বছরের এক কিশোর পুকুরে স্নান করতে নেমেছিল। তার পর হঠাৎ করেই জ্বর আসে। শুরু হয় বমিও। ভুল বকতে শুরু করে কিশোর। বেগতিক দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান বাড়ির লোকেরা। তবে বাঁচানো যায়নি ছেলেটিকে। জানা গিয়েছে, তার মস্তিষ্ক নাকি কুড়ে কুড়ে খেয়েছে অ্যামিবা।
আরও পড়ুন: বিতর্কই তবে সত্যি? কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে দেহে বাড়ছে হার্ট, মস্তিষ্কের বিরল রোগ!
এমনই ভয়ঙ্কর সেই সংক্রমণ। চিকিৎসকেরা জানান, ডাক্তারির ভাষায় একে বলা হয় অ্য়ামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস। যার সংক্রমণ ঘটায় এক ধরনের অনুজীব। যার বিজ্ঞানসম্মত নাম নায়গ্লেরিয়া ফাউলেরি। সাধারণ ভাবে মানুষ তাকে বলেন, ঘিলুখেকো অ্যামিবা। একবার শরীরে প্রবেশ করলে নাকি সোজা মাথায় গিয়ে আক্রমণ করে সেটি। ক্রমে সেটি কুরে কুরে খেতে শুরু করে মাথার কোষ। অচিরেই মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তি। সাধারণ ভাবে এই অ্যামিবা নাকি থাকে জলে। ফলে মনে করা হচ্ছে, পুকুরে স্নান করতে নেমেই ওই অ্যামিবা তার শরীরে ঢোকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। তবে এখনও পর্যন্ত এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই বিশেষজ্ঞদের কাছে।
কেরলে এমন ঘটনা অবশ্য প্রথম নয়। মে মাসের শেষের দিকে কেরলের মলপ্পুরম জেলায় বছর পাঁচেকের একটি শিশু আক্রান্ত হয়েছিল এই রোগে। বাড়ির লোকের সঙ্গেই পাশের এক নদীতে স্নান করতে নেমেছিল সে। তার পর থেকে শুরু হয় মাথার যন্ত্রণা। সঙ্গে বমি বমি ভাব। অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে তাকে কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বেশ কিছুদিন সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায় মেয়েটি। চিকিৎসকেরা জানান, কোনও পরজীবী নাক, মুখ বা কানের ছিদ্র দিয়ে সোজা মাথায় পৌঁছে গিয়েছিল। যার আক্রমণেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। কুন্নুরেও বছর তেরোর এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে একই রকম সংক্রমণে। গত ২৫ জুন মারা যায় সে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একবার মাথায় প্রবেশ করলে প্রায় ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে এই অ্যামিবা। যার আক্রমণে শরীরে অ্য়ামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস নামে একটি রোগ সংক্রমিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। অ্যামিবা দেহে প্রবেশ করলে একই সঙ্গে মেনিনজাইটিস ও এনসেফেলাইটিসের মতো উপসর্গ দেখা দেয় রোগীর দেহে। প্রাথমিক পর্যায়ে মাথা যন্ত্রণা, জ্বর ও বমি শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত কোমা ও তার পর মৃত্যু। অণুজীবটি দেহে প্রবেশ করার এক থেকে ১২ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গ সৃষ্টির ৫ দিনের মধ্যেই সাধারণত মৃত্যু হয় রোগীর।
এই নিয়ে তিনটি শিশুর মৃত্য়ু হল কেরলে মারণ অ্যামিবার সংক্রমণে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে রাজ্য জুড়ে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ইতিমধ্যেই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একগুচ্ছ সতর্কতার কথাও জানিয়েছে তারা। গরমের সময়ে জলের কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে তারা। এই সময় জলস্তর কম থাকায় ওই অ্যামিবাগুলির বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। একই সঙ্গে পুকুরে বা নদীতে স্নানের সময় নাকের ক্লিপ ব্যবহার করার কথা বলেছেন তারা। বিশেষত পলি পড়া জলে এই ধরনের অ্যামিবার থাকার সম্ভাবনা বেশি। সেই ধরনের জল এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কলের জল ব্যবহার করার সময় ফুটিয়ে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে সিডিসি-র তরফে। পুল এবং স্পা মালিকদের নিয়মিত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জলে ক্লোরিন ব্যবহারেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:সদ্য বাবা হয়েছেন? টেরও পাচ্ছেন না অথচ ভয়াবহ এই রোগ জাঁকিয়ে বসছে…
সমস্যা হচ্ছে, এই নেগেলেরিয়া ফাউলেরি সংক্রমণের তেমন কোনও কার্যকরী চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত এ দেশে হয় না। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে যা চিকিৎসা হচ্ছে, তা এই রোগের জন্য যথাযথ নয়। ফলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বেশিরভাগ আক্রান্তই। একের পর এক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই ঘিলুখেকো অ্যামিবার সংক্রমণ ভয় বাড়িয়েছে গোটা দেশেই। করোনার পরে কি এবার তবে অ্যামিবার হামলা? বিশেষত বারবার শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় আরও বেড়েছে উদ্বেগ।