ঐতিহ্যের মৃত্যু! কলকাতার বুকে কেন প্রাচীন বিস্কুট কারখানা বন্ধ করে দিল ব্রিটানিয়া?

Britannia Biscuit Factory Closed: কলকাতার বুকে এত বড় কারখানায় হঠাৎ সমস্ত স্থায়ী কর্মীরা ভিআরএস নিচ্ছেনই বা কেন? কেনই বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উৎপাদন?

রাজ্যে শিল্প শব্দটিই মস্করার মতো হয়ে গিয়েছে শেষ কয়েক বছরে। গত কয়েক বছরে একাধিক সংস্থায় ছাঁটাইও হয়েছে ব্যাপক হারে, শুধু বাংলা না সারা দেশেই প্রায়। ২০২৪ সালে যেন সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা অপেক্ষা করেছিল পশ্চিমবঙ্গের জন্য। নতুন চাকরি বা কর্মসংস্থানের খবর নেই। তবে চাকরি যাওয়ার, অবসর নিতে বাধ্য করার খবর আছে। ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড জানিয়েছে, কলকাতার তারাতলায় তাদের যে কারখানা রয়েছে সেখানকার সমস্ত স্থায়ী কর্মীরা স্বেচ্ছা অবসর (ভিআরএস) নিচ্ছেন।

তারাতলায় ব্রিটানিয়া কোম্পানির এই কারখানায় স্থায়ী কর্মী ছিলেন ১২২ জন, অস্থায়ী কর্মী ছিলেন ২৫০ জন। আড়াই হাজার টন উৎপাদন হতো প্রতি বছর। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে যে ২৫০ জন অস্থায়ী কর্মী কারখানায় কাজ করছিলেন তাঁদেরকে কোম্পানি কোনও টাকাপয়সা না দিয়েই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। স্থায়ী কর্মী যাঁরা ১০ বছরের উপরে চাকরি করছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ২২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে সংস্থা। আর ৬ থেকে ১০ বছর যাঁরা চাকরি করেছেন তাঁদেরকে ১৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর চেয়েও কম বছর কাজ করছিলেন যাঁরা তাঁদেরকে ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে কোম্পানি। কিন্তু অস্থায়ী কর্মীদের কোনও টাকা পয়সা এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ।

আরও পড়ুন- মোদির তৃতীয় দফায় কি বিকল্প মিডিয়ার মুখ বন্ধ করা হবে?

কিন্তু কলকাতার বুকে এত বড় কারখানায় হঠাৎ সমস্ত স্থায়ী কর্মীরা ভিআরএস নিচ্ছেনই বা কেন? কেনই বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উৎপাদন? তারাতলার এই কারখানাটি ছিল দেশের মধ্যে ব্রিটানিয়া সংস্থার দ্বিতীয় বৃহত্তম কারখানা। এই কারখানার জমিটি সাত দশকেরও বেশি আগে কোম্পানিকে ইজারা দিয়েছিল পূর্ববর্তী কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট (বর্তমানে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট ট্রাস্ট)। ব্রিটানিয়া বিস্কুটের বাজার এই রাজ্যে বেশ বড়। ২০১৮ সালে ব্রিটানিয়ার তরফে রাজ্যে নতুন কারখানা তৈরির কথাও বলা হয়েছিল। নতুন কারখানা তো দূর অস্ত, ১৯৪৭ সালে স্থাপিত তারাতলার বিশাল কারখানাটি বন্ধই করে দিল ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ।

শেয়ার বাজারে ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের স্টকটির দাম ৫৩১১ টাকা। শেষ এক বছরের নিরিখে, ব্রিটানিয়ার শেয়ারের দাম ৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তবে গত এক সপ্তাহে তা পড়তির দিকে। গত পাঁচ দিনের নিরিখে ব্রিটানিয়ার শেয়ার ১.৮০ শতাংশ নীচে নেমেছে। সোমবার ব্রিটানিয়ার শেয়ার ০.৩৪ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্নের সম্মুখীন হয়েছে।

আরও পড়ুন- ২৪ জন কর্মী নিয়ে নিট-নেটের মতো পরীক্ষা পরিচালনা! NTA-এর ভয়াবহ গাফিলতি ফাঁস

সংস্থার একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, কারখানার সমস্ত স্থায়ীরা ভিআরএস নিলেও কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কোনও বৈষয়িক প্রভাব পড়বে না। কোম্পানির তরফে স্টক এক্সচেঞ্জে জানানো হয়েছে, তারাতলার সব কর্মীদের ভিআরএস দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটানিয়া এর আগে মুম্বই ও চেন্নাইতেও নিজেদের কারখানা বন্ধ করেছে। তারাতলার কারখানায় মে মাস থেকেই উৎপাদন বন্ধ ছিল। জুনের শেষে এসে পাকাপাকি জানিয়ে দেওয়া হলো, কারখানা বন্ধ হচ্ছে। প্রায় ৩০০ কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত এখন। কলকাতা পোর্টের যে জমিতে ব্রিটানিয়ার কারখানাটি রয়েছে, তার আরও ২৪ বছরের লিজ সত্ত্ব রয়েছে সংস্থার হাতে। উৎপাদনই যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কারখানাটির কী হবে? সেই উত্তরও জানা নেই এখনও।

More Articles