বাংলার রাজনীতির শেষ 'ভদ্রলোক'! প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
Buddhadeb Bhattacharjee Death: বৃহস্পতিবার সকালেও প্রাণ ছিল তাঁর, প্রাতঃরাশও করেছিলেন। তারপরেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এই বাম নেতা।
কেউ বলেন, তাঁর একটা সিদ্ধান্তেই চুরমার হয়ে গেল বাংলার ভবিষ্যৎ। কেউ বলেন, রাজনীতিতে শেষ 'ভদ্রলোক' ছিলেন তিনি, তিনি গেছেন বিনয় গেছে। কেউ বলেন বাংলার রাজনীতিতে বামশাসনের কফিনে তিনিই শেষ পেরেক পুঁতেছিলেন। নানা জনের নানা মতের মাঝে তবু, সকলে যে বিষয়ে একমত, কমিউনিস্ট ভাবধারাকে জীবন দিয়ে লালন করে গেছেন এই মানুষটিই। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রয়াত হলেন বাম জমানার শেষ সেনাপতি। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনাবসান হলো বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর জানান তাঁর সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার সকালেও প্রাণ ছিল তাঁর, প্রাতঃরাশও করেছিলেন। তারপরেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এই বাম নেতা। পাম অ্যাভিনিউয়ে নিজের বাড়িতেই তিনি প্রয়াত হন। বুধবার রাতেই বুদ্ধদেবের শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়। রাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও ঠিক করা হয় বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসবেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে কিছুতেই যেতে চাইতেন না বুদ্ধদেব। তাই বাড়িতেই চিকিৎসকদের ডেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন বুদ্ধদেব। নেবুলাইজ়ার দেওয়ার চেষ্টা হয়। সেই সময়েই তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকরা এসে বুদ্ধদেবকে প্রয়াত ঘোষণা করেন। দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন বুদ্ধদেব। বারেবারেই হাসপাতালে গিয়েছে। সব যুদ্ধই জিতে ফিরেছিলেন। দীর্ঘ জীবন উপন্যাসের শেষ পাতাটা হাসপাতালে নয়, লেখা হলো নিজের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই।
আরও পড়ুন-৪০০ স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে জীবন কাটল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের, সততার সহজপাঠ ছিল হাতের কাছেই
২৯ জুলাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল হাসপাতালে। ৯ অগাস্ট হাসপাতাল থেকে বিপন্মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন বুদ্ধদেব। বেশ কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে ছিলেন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বুদ্ধদেব। ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছিল তাঁর। ১২ দিনের মাথায় বিপদ কাটিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (সিওপিডি)-তে ভুগছিলেন বুদ্ধদেব। বহু বছর ধরেই এই কারণেই গৃহবন্দি তিনি। ২০২০ সালে কোভিড মহামারীকালেও ডিসেম্বরে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বুদ্ধদেব। সেবারও ভেন্টিলেশনেই ছিলেন। ২০২১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি কোভিডে আক্রান্ত হন তিনি। কোভিডকেও জয় করে নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শরীরের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই অবশেষে সাঙ্গ হলো, ৮ অগাস্ট।
২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব। এই ১১ বছরের শাসনকালের শেষ পাঁচ বছরে বাংলার রাজনীতি চরম টালমাটাল হয়। বুদ্ধদেব বলেছিলেন শিল্প হবে রাজ্যে, কর্মসংস্থান হবে। টাটা গোষ্ঠীকে শিল্পের জন্য জমি দিতে গিয়েই বিপত্তি। জমি অধিগ্রহণ পদ্ধতি নিয়ে চম উত্তাল হয় রাজ্য। তৃণমূল এই জমি আন্দোলনকে ঘিরে মাঠে নামে। সারা রাজ্য কেঁপে যায় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ইস্যুতে। ২০০৬ সালে ২৩৫ আসনে জিতেছিল বামেরা। ঠিক ৫ বছর পর, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান হয়। ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও মরণোত্তর দেহদান করে গিয়েছেন। সেই প্রক্রিয়া কোথায়, কীভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন। ফলে দিল্লির নেতাদেরও তাঁর শেষযাত্রায় একটা ভূমিকা থাকবে। আপাতত পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট ফ্ল্যাটেই তাঁর মরদেহ রাখা হচ্ছে।