সুপ্রিম পর্যবেক্ষণে তোলপাড়! নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় রায় দেওয়ার 'অযোগ্য' অভিজিৎ?
Calcutta High Court Justice Abhijit Ganguly: কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে ওই মামলার শুনানির জন্য নতুন বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে।
আন্দোলনের সম্মুখে একজন নেতা প্রয়োজন, অথবা একজন 'সম্ভাবনা'। সমস্ত অন্ধকারের মধ্যে আলো, সমস্ত মিথ্যার মধ্যে সত্য, সমস্ত দুর্নীতির মধ্যে মূল্যবোধ- এটুকুই চেয়েচিন্তে এসেছেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ। পশ্চিমবঙ্গে চাকরি চেয়ে আন্দোলনরত মানুষ এমন সম্ভাবনা-সত্য-আলো-মূল্যবোধের পরাকাষ্ঠা হিসেবে পেয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকার খেলা এবং যোগ্যদের চাকরি না পাওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা মানুষ বিচারপতিকে সামনে রেখে আশা ভরসা পেয়েছেন। কী হবে, যদি একদিন রাতারাতি মূল সমেত উৎপাটিত হয়ে যায় সম্ভাবনার সেই বিশাল বৃক্ষ? হতে যে পারে সেই আশঙ্কা ইতিমধ্যেই উস্কে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। কেন এমন আশঙ্কা? টেলিভিশনে কোনও সংবাদমাধ্যমে অভিজিৎ কোনও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কিনা জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে শুক্রবারের মধ্যে এই বিষয়টি হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে, নির্দেশ প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের।
বিষয়টি হচ্ছে, কোনও বিচারপতিই বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না। যদি তিনি এমনটা করে ফেলেন তাহলে তিনি ওই মামলার শুনানি করবেন না। যদি বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেক্ষেত্রে তিনি ওই মামলার শুনানি করার অধিকার হারিয়েছেন। সেক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে ওই মামলার শুনানির জন্য নতুন বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কারণ পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- এবার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখেও মমতা-স্তুতি!পালটে গেলেন বিচারপতি?
আসলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক পিটিশনে জানিয়েছেন, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে প্রথম থেকেই লক্ষ্যবস্তু করে রেখেছেন। যে মামলায় তিনি জড়িত নন সেই মামলাতেও তাঁকে জেরা করার কথা বলা হচ্ছে। এর আগে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারেও তাঁর নামে মন্তব্য করেছেন অভিজিৎ, জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গটি সুপ্রিম কোর্টে তোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। ২০২২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সাক্ষাৎকারের আগে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। অভিষেকের আইনজীবী বিষয়টি তোলার পরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, ‘‘ওই ইন্টারভিউতে কী রয়েছে, তা আমাদের দেখা দরকার।’’
সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পরেই হালে পানি পেয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বেগতিকে পড়তে পারেন এই ধারণা জনমানসে প্রোথিত করতে চাইছেন অনেক নেতাই। ফেসবুকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ একটি নাতিদীর্ঘ পোস্ট লিখে বুঝিয়ে দিয়েছেন, চরম অস্বস্তিতে পড়তে চলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অভিজিতের অস্বস্তি মানেই শাসক দলের স্বস্তি একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এটি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে জড়িত মামলা। "বিচারপতি আচরণের জন্য আমাদের এব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এটা ঠিক নয়।" কিন্তু 'একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব'-কে সুবিচার দেওয়ার লক্ষ্যে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির মামলা ফাইলবন্দি হয়ে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই তীব্র হচ্ছে না তো? শাসকদল যেভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছে, আইন দিয়েই আইনকে কাটতে চাইছে তাতে রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের সামনে থেকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভরসা সরিয়ে দিলে আন্দোলনের মেরুদণ্ড দুর্বল করা যাবে এ তো সহজ অঙ্ক।