চুপি চুপি কেড়ে নিতে পারে জীবন, কেন এত বাড়ছে নীরবে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা?
Silent Heart Attack : এই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি এতই নীরবে ছড়িয়ে পড়ে যে রোগী প্রায়শই এটিকে কম গুরুতর ভেবে এড়িয়ে যায়, আর এর জেরেই হতে পারে সমূহ বিপদ
মাত্র কুড়ি কিংবা ত্রিশ বছর বয়সেই হার্ট অ্যাটাক, আজকাল আকছার শোনা যাচ্ছে এই ঘটনা। কম বয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ছে দিনদিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে থেকে কোনও রকম নোটিশ ছাড়াই হুট করে নেমে আসছে এই রোগ। এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যাচ্ছে অচিরেই। সম্প্রতি খবরে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনের কাছে ১৭ বছর বয়সী একটি ছেলে হঠাৎই নীরব হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ছেলেটি মহাকালেশ্বর মন্দিরের সহকারী পুরোহিতের ছেলে। শোনা যায়, রংপঞ্চমী উপলক্ষে শোভাযাত্রায় অংশও নিয়েছিল সে।
নীরব হৃদরোগ, ইংরেজি প্রতিশব্দটা বললে হয়তো চিনতে সুবিধা হবে, সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক। স্বাভাবিক হৃদরোগ জনিত সমস্যার সঙ্গে এর মূল তফাৎ হল এটার ক্ষেত্রে আগে থেকে কোনও রকম সতর্কতা নেওয়ার সুযোগ থাকে না। এই ক্ষেত্রে, লক্ষণগুলির মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের তীব্রতার অভাব রয়েছে। যদিও সাধারণভাবে এটি হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগ হিসেবেই বিবেচ্য হয়, তবে এটি তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকারক কারণ এই ক্ষেত্রে রোগী আগে থেকে কোনও লক্ষণ অনুভব করতে পারে না। হার্ভার্ড রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক, হল একটি সাইলেন্ট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (SMI) হিসাবে পরিচিত সমস্যা, ৪৫ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী এটিই। এবং মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশি আঘাত করে।
আরও পড়ুন - মৃত্যু বেড়ে দুই, দেশ জুড়ে নয়া ত্রাস হংকং ফ্লু, জানেন সতর্ক থাকতে কী কী করবেন?
এই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি এতই নীরবে ছড়িয়ে পড়ে যে রোগী প্রায়শই এটিকে কম গুরুতর ভেবে এড়িয়ে যায়। ফলে চিকিৎসায় একটা গাফিলতি থেকেই যায় ভিতরে ভিতরে। হার্ভার্ডের ভাস্কুলার ডিজিজ প্রতিরোধ কর্মসূচির পরিচালক ডাঃ জর্জ প্লুটস্কি বলেছেন, “এই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলি খুব হালকা মনে হতে পারে। এগুলি এতটাই সংক্ষিপ্ত হয় যে নিয়মিত অস্বস্তি অনুভূত হলেও বিশেষ গুরুতর বলে মনে হয় না।
হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সাধারণ লক্ষণগুলি হল বুকে ব্যথা, বুকে শক্ত চাপ, বাহুতে, ঘাড়ে, চোয়ালে ছুরিকাঘাতের মতো ব্যথা এবং হঠাৎ শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা। সাধারণত এই উপসর্গগুলো কিছুই সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। ফলে এর জন্য যে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে এমন ভাবনাও সাধারণ ভাবে মাথায় আসে না সহজে। কিন্তু কোনও কারণে এই লক্ষণগুলি দেখলে, তৎক্ষণাৎ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এবং রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন - বিয়ে বাড়িতে ব্যাপক ডিজে! যে কোনও মুহূর্তে হার্ট অ্যাটাক কাড়বে আপনার প্রাণ
২০১৫ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ৪৫ থেকে ৮৪ বছর বয়সী ২০০০ জন লোককে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যাদের কার্ডিওভাসকুলার সংক্রান্ত কোনও রোগ ছিল না। দশ বছর পরে, গবেষকরা দেখতে পান যে তাদের শরীরে প্রায় আশি শতাংশ মায়োকার্ডিয়াল দাগ দেখা গিয়েছে। যা প্রমাণ করে যে এই সময়ের মধ্যেই কখনও না কখনও তাদের নীরবেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। সমস্ত ধরনের হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে প্রায় ৫০% থেকে ৮০% মানুষের সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল এই আশি শতাংশ লোকের কেউই আগে থেকে এই গবেষণা সম্পর্কে অবগত ছিল না। তথ্যে আরও লক্ষ্য করা গেছে, সামগ্রিকভাবে, মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এই মায়োকার্ডিয়াল দাগের প্রাদুর্ভাব পাঁচ গুণ বেশি। নীরবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির মূল কারণগুলি হল হার্ট অ্যাটাকের মতোই। যেমন ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা, নিয়মিত শরীরচর্চার অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের মতো বিপাকীয় ব্যাধি। নীরবে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে যদিও সাধারণত এই কোনও লক্ষণই আগে থেকে দেখা যায় না, যা শরীরের উপর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যেহেতু না জানিয়েই আক্রমণ করে এই রোগ তাই আরও বেশি করে সতর্কতা প্রয়োজন সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের বিষয়ে।