কোনও দিনও আবিষ্কার হবে না ক্যান্সারের চিকিৎসা! ভয়াবহ যে তথ্য কাঁপিয়ে দিল বিশ্বকে
Cancer Treatment: প্রতিটি ব্যক্তির জন্য এবং প্রতিটি ক্যান্সারের ধরন এত স্বতন্ত্র, এত পৃথক যে একটিই নির্দিষ্ট চিকিত্সার মাধ্যমে সবকিছুকে সারিয়ে ফেলা প্রায় অসম্ভব।
ক্যান্সার। এমন এক রোগ, যা থেকে সেরে ওঠা ইদানীংকালে সম্ভব হলেও, ভুক্তভোগীরা জানেন, ক্যান্সার জীবন প্রায় শেষ করে দেয়। শুধু আক্রান্তের নয়, আশেপাশের সব মানুষের জীবনেই ক্যান্সার এমন এক প্রভাব ফেলে যায় যা থেকে বেরনো দুষ্কর। সম্প্রতি গবেষকরা এমন এক তথ্য জানিয়েছেন, যা ক্যান্সারের ভীতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকশো গুণ! গবেষকরা জানাচ্ছেন, ক্যান্সারের কোনও সর্বজনীন চিকিৎসা কোনওদিনই সম্ভব হবে না। টিউমার বৃদ্ধির বিষয়ে এক নতুন বিশ্লেষণ বলছে, দিনে দিনে ক্যান্সার ঠেকানোর উপায় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। নয় বছর ধরে সাতটি ভিন্ন গবেষণায় বিস্তৃত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফুসফুসের ক্যান্সারের বিকাশের প্রায় অসীম এক ক্ষমতা রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, টিউমার হতে দেওয়ার আগেই সাবধান হতে হবে, টিউমার হয়ে গেলে তা সারিয়ে ফেরা অসম্ভবপর।
কেন আমরা এখনও ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারিনি? বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটা বিষয় অন্তত খুবই স্পষ্ট। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত দুইজন জীবনের কোনও না কোনও সময়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবেনই। ক্যান্সার কতখানি বেড়েছে তার উত্তর মেলে আমাদের চারপাশেই। প্রত্যেক মানুষই নিজের পরিবারে এবং পরিচিত বৃত্তে এমন কাউকে চেনেন যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়টি হচ্ছে, প্রতিটি ব্যক্তির জন্য এবং প্রতিটি ক্যান্সারের ধরন এত স্বতন্ত্র, এত পৃথক যে একটিই নির্দিষ্ট চিকিত্সার মাধ্যমে সব কিছুকে সারিয়ে ফেলা প্রায় অসম্ভব। কিছু কিছু ক্যান্সারের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে, কিছু ক্যান্সার ততটা মারণ নয়। কিন্তু একটি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যা কাজ করে যায় তা প্রায়ই অন্যটির ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। যদিও ক্যান্সার আক্রান্তদের বেঁচে থাকার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, তাও এই বিষয়টিও প্রায় নিশ্চিত ক্যান্সারের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা কখনই বাস্তবায়িত হবে না।
আরও পড়ুন- ব্রেন ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিরল পদক্ষেপ, তাক লাগাল কলকাতার এই সরকারি হাসপাতাল
TracerX নামক এক বিশাল বিশ্লেষণে, নয় বছর ধরে ৪২১ জন রোগীর ১২৬ টি নন-স্মল সেল ফুসফুস ক্যান্সারের টিউমারের বিকাশ এবং বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে রাখেন গবেষকরা। গবেষকরা বায়োপসি করেন এবং টিউমারগুলির গঠন লক্ষ্য করেন। একইসঙ্গে কীভাবে ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল, এই বিষয়টিও লক্ষ্য করেন। এত বড়ভাবে এমন পরীক্ষার উদ্যোগ আগে কখনও নেওয়া হয়নি।
গবেষকরা ক্যান্সার কীভাবে আলাদা আলাদা হয় এবং কীভাবে তা ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে টিউমারের মধ্যে অনন্য কোষের সংখ্যা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি মূল বিষয় আবিষ্কার করেছেন। প্রথমত, আক্রমণাত্মক ক্যান্সার কোষ সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে টিউমারের বিকাশের শুরুতে। মেটাস্ট্যাসিস প্রতিরোধ করার জন্য প্রাথমিকভাবে ক্যান্সারের কোশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এটি কার্যকরী হতে পারে, যেখানে ক্যান্সার নিরাময় করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন- সবচেয়ে বেশি মৃত্যু এতেই, হু হু করে অল্প বয়সী মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে যে বিশেষ ক্যান্সার
এরপর গবেষকরা দেখেন, অস্ত্রোপচার করে টিউমার অপসারণের পরে কোন কোন ক্যান্সারগুলি ফের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারা দেখেন, যে টিউমারগুলিতে সবচেয়ে বেশি কোশের ক্লোন রয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি জিনগত পার্থক্য রয়েছে সেই ধরনের ক্যান্সার টিউমার শরীরের অন্যান্য অংশে ফের দেখা দিতে পারে।
অবশেষে গবেষকরা দেখেন, যদি একজন রোগীর রক্ত টিউমার ডিএনএর টুকরোগুলির জন্য বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ার ২০০ দিন আগেই সেটি ফিরে আসছে। অর্থাৎ হাতে বেশ কিছুটা সময় থেকছে প্রতিরোধমূলক চিকিত্সা শুরু করার জন্য। পাশাপাশি এই সমস্ত তথ্য মিলে উচ্চ-ঝুঁকির টিউমারগুলির পূর্বাভাস মিলতে পারে এবং তাদের প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে। তবে, গবেষকরা বলছেন, ক্যান্সার নিয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাবে না।
শেষ পর্যায়ের টিউমারে অনেক বেশি সংখ্যক কোশ থাকে, কয়েকশ বিলিয়ন কোশ থাকতে পারে। তাই শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার আক্রান্তদের ক্ষেত্রে নিরাময় ঘটানো কঠিন কাজ। ফলে নিশ্চিত করে একটিই চিকিৎসা সব ক্যান্সার নির্মূল করতে পারবে, এমনটার ভবিষ্যতে কোনও আশা দেখছেন না তারা। তবে প্রতিরোধ, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্তকরণ এবং ক্যান্সার ফিরে আসার প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্তকরণের উপর জোর দিলে মানুষের জীবন কম জটিল হবে, মনে করছেন তারা।