আরজি কর: ধৃত সন্দীপদের হেফাজতে নিতে চাইছে সিবিআই! নেপথ্যে কোন কারণ?
CBI on Sandip Ghosh: গ্রেফতারের পরেও কেন সন্দীপের মতো চাঁইকে নিজের হেফাজতে নিতে চাইছে না সিবিআই? স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সিবিআই তদন্তভার হাতে নিলেও তেমন কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি তদন্তে এখনও। দুর্নীতি মামলায় আরজি কর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তবে তাদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য কোনও রকম আবেদন করতে দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। বরং তার বদলে ওই চার জনের আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজত চাওয়া হয়। কিন্তু গ্রেফতারের পরেও কেন সন্দীপের মতো চাঁইকে নিজের হেফাজতে নিতে চাইছে না সিবিআই? স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
আদালতে সন্দীপদের নিজেদের হেফাজতে চাওয়া না নিয়ে সিবিআই আদালতে ভর্ৎসনার মুখেও পড়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। মঙ্গলবার আলিপুর সিবিআই আদালতে শুনানির সময় দেখা যায়, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দুর্নীতি মামলায় ধৃত একজনকেও নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করেনি সিবিআই। কার্যত এদিন ধৃত সন্দীপ ঘোষ, বিপ্লব সিনহা, আফসার আলি এবং সুমন হাজরাকে আদালতে পেশ করার পরে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, যে ইলেকট্রনিকস গ্যাজেট বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেগুলি থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যে প্রক্রিয়ার জন্য কিছুটা সময় লাগবে। তাই এখন সন্দীপ-সহ চারজনকে নিজেদের হেফাজতে চাইছে না। পরবর্তীতে দরকার হলে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করবে।
আরও পড়ুন: আরজি কর: ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহে গাফিলতি? কতটা ক্ষতি করতে পারে তদন্তের?
আপাতত ওই চার অভিযুক্তের জন্য আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজত চেয়েছে সিবিআই। এদিন সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে জানান, আমরা বাকি ৭ দিনের সিবিআই হেফাজতের জন্য পরবর্তীতে আবেদন করব। তাঁর যুক্তি, ইতিমধ্যেই ডিজিটাল এভিডেন্স ক্লোনিং করার আবেদন করা হয়েছে। সেটা সময়সাপেক্ষ। তাই সেই রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত জেলে রাখা হোক। তাঁর আরও দাবি, ন্যায় সুরক্ষা সংহিতা মেনেই এভাবে আবেদন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বাকি ৭ দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেই রিপোর্ট এলেই আবার হেফাজতের জন্য আবেদন করা হবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে আদৌ কি এভাবে ভেঙে ভেঙে অর্থাৎ দিন বদলে বদলে হেফাজতে নেওয়া সম্ভব? যদিও ভারতীয় ন্যায় সুরক্ষা সংহিতার ১৮৭ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী তদন্তকারী সংস্থার কাছে এই সুবিধা রয়েছে। প্রয়োজন হলে ১৪ + ৬০ দিনের হিসাবে হেফাজতে নেওয়া যেতে পারে। সেই স্বাধীনতা সিবিআইয়ের হাতে অবশ্যই রয়েছে।
এদিন শুনানি চলাকালীন একাধিক বিস্ফোরক দাবি করেছেন আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী। তিনি জানিয়েছেন, জেরায় কন্ট্রাক্ট-এর গরমিলের বিষয়টি কিছুতেই পরিষ্কার করছেন না ধৃত সন্দীপ ঘোষ অর্থাৎ আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। পাশাপাশি আইনজীবী এ-ও জানান, তদন্তে প্রচুর নথি মিলেছে। আমরা আরও কিছু লোকের যোগ পাচ্ছি যারা সন্দীপের সঙ্গে যুক্ত। মোবাইল, ল্যাপটপ, হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর তার জন্যই তদন্তকারীদের বেশ কিছুটা সময় প্রয়োজন। ওই সব তথ্য হাতে পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে সুবিধা হবে বলেই দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের কাজের ফেরার নির্দেশকে মানছেন না জুনিয়র ডাক্তাররা! কী দাবি তাঁদের?
আর এই মধ্যের সময়টুকু সাময়িক ভাবে সন্দীপ ঘোষ-সহ বাকি ধৃতদের জেল হেফাজতে রাখার দাবি করেছে সিবিআই। আইনজীবী জানান, নথি ও ডিজিটাল এভিডেন্সের রিপোর্ট এলেই ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে। এদিন ধৃতদের জেল হেফাজতের মেয়াদ কমানোর জন্য আদালতে আবেদন করতে দেখা যায় সন্দীপ ঘোষের আইনজীবীকে। তবে গ্রাহ্য হয়নি সেই আর্জি। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সন্দীপ-সহ ৪ ধৃতকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশই দিয়েছে শেষপর্যন্ত আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত। সেক্ষেত্রে ওই চার জনকে প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।