জোর তল্লাশি এবার আরজি করের মর্গে, কী খুঁজছেন সিবিআই গোয়েন্দারা?
CBI in RG Kar Morgue: বৃহস্পতিবার দুপুরে সিবিআইয়ের পাঁচ সদস্যের একটি দল এসে পৌঁছন আরজি কর হাসপাতালে। আর তার পরেই সোজা চলে আসেন মর্গে।
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বার তদন্তের স্বার্থে আরজি কর হাসপাতালে হানা দিয়েছে সিবিআই কর্তারা। গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলায় সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ। রাজ্যের হাত থেকে সেই মামলার তদন্তভার গিয়েছিল সিবিআইয়ের হাতে। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে মামলা হস্তান্তরের পরে একাধিক বার তদন্তের স্বার্থে আরজি কর হাসপাতালে গিয়েছে সিবিআই। বৃহস্পতিবার ফের আরজি করে হানা দিলেন সিবিআই আধিকারিকেরা। এবারের গন্তব্য মর্গ।
তদন্তভার বুঝে নেওয়ার পরেই ঘটনাস্থল খুঁটিয়ে দেখতে লেজার স্ক্য়াানার নিয়ে আরজি করে হাজির হয়েছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থলের থ্রিডি লেজার ম্যাপিংও করেছিলেন তারা। তবে এবার আর ঘটনাস্থল নয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিবিআইয়ের পাঁচ সদস্যের একটি দল এসে পৌঁছন আরজি কর হাসপাতালে। আর তার পরেই সোজা চলে আসেন মর্গ অর্থাৎ মৃতদেহ সংরক্ষণ বিভাগে। সেখান থেকে নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে দেখা যায় তদন্তকারীদের। কথা বলেন ওই বিভাগের বিভিন্ন কর্মীদের সঙ্গেও।
আরও পড়ুন: ‘কেসটাকে জলে ফেলে দিল!’ টিএমসিপি-র সভা থেকে সিবিআইকেই কটাক্ষ মমতা-অভিষেকের
একদিন আগেই ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মেয়ো রোডের সভা থেকে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে জোর কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি কর তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে নেমে একে একে প্রকাশ্যে এসেছে একাধিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। চিকিৎসক ধর্ষণ-খুনে রাজ্যের পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক পুলিশকে। সেই সঞ্জয় রায়ের মনস্তাত্বিক প্রোফাইল তৈরি করার জন্য আনানো হয় এক বিশেষজ্ঞ মনোবিদ। ইতিমধ্যেই সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ টেস্টও করিয়েছে সিবিআই। তাতে সামনে এসেছে বেশ কিছু তথ্য।
এদিকে তদন্তভার বুঝে নেওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই আরজি কর কলেজের প্রাক্তন সন্দীপ ঘোষকে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। কখনও আবার সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়েছেন সিবিআই গোয়েন্দারাই। বাড়ির তল্লাশিও নেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। বৃহস্পতিবারও প্রায় নিয়মমাফিকই হাজিরা দিতে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। যে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়ঙ্কর সব দুর্নীতির অভিযোগ। আর্থিক দুর্নীতি তো বটেই, এমনকী হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহ লোপাটের অভিযোগও রয়েছে সন্দীপের বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, সেই সম্পর্কে তদন্ত করতেই এদিন সরাসরি আরজি করের মর্গে হানা দিয়েছিল সিবিআই।
শুধু কি মৃতদেহ লোপাট, হাসপাতালের জৈব বর্জ্য নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে প্রাক্তন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। আর এ কাজ একা নয়, আরও অনেকেই আছে অভিযুক্তদের তালিকায়। নাম রয়েছে ‘সন্দীপ ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত আরজি করের ফরন্সিকের শিক্ষক দেবাশিস সোমের। সন্দীপের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে এই সমস্ত অভিযোগ দায়ের করেছেন সন্দীপদেরই প্রাক্তন সহকর্মী আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। ওই মামলার সূত্রে সন্দীপের পাশাপাশি সিজিও এবং নিজাম প্যালেসে ডেকে একাধিক বার জেরা করা হয়েছে দেবাশিসকেও।
আরও পড়ুন:আরজি কর: মাথায় কার হাত? কেন পুলিশ কমিশনারের নামে নথিভুক্ত ধৃতের বাইক?
দেবাশিস ও সন্দীপদের পরিচিত যাঁরা, তাঁদের একটি অংশের দাবি, দেবাশিস অত্যন্ত ধুরন্ধর ও বুদ্ধিমান। নিজেকে বাঁচানোর জন্য তিনি এই পরিস্থিতিতে কী পরিকল্পনা আঁটছেন, তা নিয়ে উস্কে উঠেছে জল্পনা। এই পরিস্থিতিতে সিবিআইয়ের মর্গে এসে তদন্ত করা নিয়ে শুরু হয়েছে নয়া জল্পনা। তবে কি শাসক-ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের বিরুদ্ধে বড়সড় কোনও প্রমাণ হাতে পেল সিবিআই। যদিও এ নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে তেমন কিছু খোলসা করে জানানো হয়নি।