সিসিটিভি-তে ফাঁক থেকে অরক্ষিত স্ট্রং রুম! NEET-এর নামে সামনে আসছে ছেলেমানুষী
NEET Row: নীট-আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পরীক্ষার থার্ড পার্টি রিভিউতে উঠে এসেছে বিস্ফোরক সব তথ্য। দেখা গিয়েছে, বহু পরীক্ষাহলেই সিসিটিভি ঠিক মতো কাজ করছিল না।
ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ। সেই নিয়ে উত্তাল দেশ। এক নয়, একাধিক অভিযোগে দুষ্ট NEET-UG পরীক্ষার গোটা প্রক্রিয়া। কোথাও লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের নালিশ, তো কোথাও নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ। কোথাও আবার বিলি করা হয়েছে ভুল প্রশ্নপত্র। কোথাও আবার পরীক্ষাহলে পূর্ণ সময় উত্তর দেওয়ার সুযোগটাই পাননি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা পরিচালনের দায়িত্ব ছিল যাদের হাতে, কেন্দ্রীয় সরকারের সেই স্বশাসিত সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির ভূমিকা নিয়ে উঠে গিয়েছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই সেই মামলার জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।
এদিকে, সেই নিট-আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পরীক্ষার থার্ড পার্টি রিভিউতে উঠে এসেছে বিস্ফোরক সব তথ্য। গত ৫ মে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়। ওই থার্ড পার্টি রিভিউতে দেখা গিয়েছে, বহু পরীক্ষাহলেই সিসিটিভি ঠিক মতো কাজ করছিল না। এমনকী পরীক্ষার স্ট্রংরুম , যেখানে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ করা হয়, সেই স্ট্রংরুমও বহু ক্ষেত্রেই অরক্ষিত হিসেবে পড়ে ছিল।
আরও পড়ুন: ৩০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে NEET প্রশ্ন! গ্রেফতারের পর কবুল মূল চক্রীর
গত ১৬ জুন সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। তার পরেই অভিযোগ উঠেছিল, বেশ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা দিতে পারেননি পরীক্ষার্থীরা। এর পরেই তার ক্ষতিপূরণ স্বরূপ তাদের গ্রেস নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় NTA। সেই নিয়ে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে, এবং মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সে সময় ওি ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং তাদের জন্য নতুন করে পরীক্ষারও ব্য়বস্থা করে NTA। যাঁরা নতুন পরীক্ষায় বসতে চাইবে না, তাঁদের ক্ষেত্রে পুরনো নম্বরই বহাল থাকবে কিন্তু তার থেকে বাদ যাবে গ্রেস নম্বরটি। তাঁদের সেই নতুন পরীক্ষাটি হতে চলেছে আগামী ২৩ জুন।
এরই মধ্যে আবার বিহারে ধরা পড়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্র। যেখানে ৩০-৩২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদেরকে প্রশ্নপত্র বিক্রি করা হত। এর নেপথ্যে বড়সড় দল রয়েছে বলেই সন্দেহ পুলিশের। এরই মধ্যে নিট পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বহু অভিযোগ উঠেছে, তার কিছু ভুয়ো, তো কিছু ঠিক। লখনউয়ের এক তরুণী NTA-র বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু পরে দেখা যায় জাল তথ্য আদালতে জমা করে সে। সে কারণে মামলাটি খারিজ হয়ে যায় তাঁর।
দেশ জুড়ে প্রায় ৪ হাজার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল নিটের। তার মধ্যে অন্তত ৩৯৯টি কেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছে থার্ড পার্টির রিভিউ টিমটি। সেই ৩৯৯টি কেন্দ্র ঠিক করা হয়েছিল এনটিএ-র সঙ্গে পরামর্শ করেই। পরীক্ষার দিন ওই সব কেন্দ্রগুলি পরিদর্শন করে ওই রিভিউ সংস্থাটি। দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশ পরীক্ষাকেন্দ্রে দুটি সিসিটিভি ভালো করে কাজ করছিল না। অর্থাৎ ৩৯৯টির কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ১৪৬টি কেন্দ্রেই সিসিটিভি ঠিক মতো কাজ করছিল। এদিকে, প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে সিসিটিভি থাকাটা বাধ্যতামূলক ছিল এ ক্ষেত্রে। যার লাইভ ফিড দেখা যাওয়ার কথা নয়াদিল্লিতে এনটিএ-র সদরদফতরের কন্ট্রোল রুমে। যার প্রতি কড়া নজর রাখার কথা ছিল একদল বিশেষজ্ঞের।
ওই ৩৯৯টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ পরীক্ষা হলে, হিসেব করলে যা দাঁড়ায় প্রায় ৬৭টি কেন্দ্রে স্ট্রংরুমের নিরাপত্তায় কোনও পাহারাদার ছিল না। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র বিলি করা না পর্যন্ত সেই স্ট্রংরুমের উপর কড়া নজরদারি রাখার নির্দেশ ছিল উপর থেকে। অথচ বহু ক্ষেত্রেই মানা হয়নি সে ব্যাপারটি। পাশাপাশি ৮৩টি পরীক্ষাকেন্দ্রে বায়োমেট্রিক স্টাফ ঠিক মতো ছিলেন না। সেই রিপোর্ট দিয়েছে ওই থার্ড পার্টি রিভিউ সংস্থা। কেন এই রিভিউয়ের ব্যবস্থা। পরীক্ষার সমস্ত নিয়মকানুন ঠিক মতো রক্ষিত হচ্ছে কিনা, কোথায় কোথায় হচ্ছে বা হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখার জন্যই এই রিভিউয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘০.০০১% গাফিলতিও ভয়ঙ্কর’! NEET নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে NTA
আর দেখা গিয়েছে বড়সড় গলদ রয়ে গিয়েছে সেই জায়গাতেই। NEET পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাকেন্দ্র নির্বাচন করা হয়, তখন বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেই সেই সিদ্ধান্ত নেয় NTA। অথচ এবার এনটিএ নির্বাচিত এত এত কেন্দ্রে ঠিকমতো নিয়ম মানা তো দূরের, বহু ক্ষেত্রেই নিয়ম ভাঙার নজির দেখা গেল। এবারের নিট পরীক্ষায় বিপুল সংখ্যক প্রার্থী অস্বাভাবিক ভাবে ৭২০-তে ৭২০ পেয়েছে। এই নিখুঁত নম্বর পাওয়া এত কঠিন পরীক্ষায় পাওয়া কীভাবে সম্ভব, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। সব মিলিয়ে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ও পরীক্ষাপদ্ধতিকেই বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে এই কেলেঙ্কারি। একদিন আগেই বাতিল হয়েছে ইউজিসি-নেট পরীক্ষা। সেই পরীক্ষাতেই স্বচ্ছতা রক্ষিত হয়নি অভিযোগ তুলে তা বাতিল করা হয়। এবার কি পালা ডাক্তারির প্রবেশকারও? সেই প্রশ্নই এখম ভাবচ্ছে গোটা দেশকে।