৪ বছরের সন্তানকে খুন মায়ের! ব্যাগে লাশ ভরে পালাতে গিয়ে যেভাবে ধরা পড়লেন কলকাতার মেধাবী

CEO Kills Son : সূচনা শেঠ যাতে বুঝতে না পারেন তাই চালকের সঙ্গে কোঙ্কনি ভাষায় কথা বলে গোয়া পুলিশ।

চার বছরের সন্তান। ছোট সন্তানকে নিয়েই হোটেলে উঠেছিলেন মা। অথচ চেক আউট করার সময় একা বেরিয়ে আসেন! সন্দেহ যে হয়নি তা নয়। সন্দেহ পোক্ত হয় হাউজকিপিং কর্মী যখন ওই ভাড়া করা হোটেল রুমের মধ্যে রক্তের দাগ দেখেন! মা আর সন্তান এল ঘরে, মা বেরোলেন একা, রক্তের দাগ! সহজ অঙ্ক কষতে অসুবিধা হয় না। সেই অঙ্কই নিয়ে যায় মর্মান্তিক এক হত্যার দিকে! সন্তানকে খুন করেছেন মা। তারপর ছেলের লাশ ব্যাগে নিয়ে সোজা ট্যাক্সি ধরে...

৩৯ বছর বয়সি এই মহিলার নাম সূচনা শেঠ। হাই প্রোফাইল। বেঙ্গালুরুর একটি স্টার্ট-আপের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। গোয়াতে একটি হোটেলের কামরায় নিজের চার বছরের ছেলেকে হত্যা করে ধরা পড়ার আগে ছেলের লাশ নিয়ে কর্ণাটকে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই বিষয়ক স্টার্ট-আপ মাইন্ডফুল এআই ল্যাবের সিইও সুচনা শেঠকে সোমবার কর্ণাটকের চিত্রদুর্গে আটক করা হয়। আটকের সময় সূচনার কাছে যে ব্যাগ ছিল সেই ব্যাগেই উদ্ধার হয় নিজের সন্তানের দেহ। উত্তর গোয়ার ক্যান্ডোলিমের একটি অ্যাপার্টমেন্টে তিনি তাঁর ছোট ছেলেকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ।

এই মর্মান্তিক অপরাধের উদ্দেশ্য কী তা এখনও জানা যায়নি তবে পুলিশের সন্দেহ, হত্যার পিছনে রয়েছে সূচনা আর তাঁর স্বামীর মধ্যেকার তিক্ততা। স্বামীর সঙ্গে সূচনার বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। স্বামীর সঙ্গে থাকেন না আর তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, সূচনা শেঠ আসলে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রী ছিলেন তিনি। সূচনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় ডিগ্রি অর্জন করেন। অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের পাশাপাশিই প্লাজমা ফিজিক্সেরও বিশেষজ্ঞ তিনি। স্বামী ভেঙ্কট রমনের সঙ্গে চলা বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকদিন ধরেই অসন্তুষ্ট ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন- ফুলন দেবীর খুনিই ভারতে আনেন পৃথ্বীরাজ চৌহানের অস্থি! জানেন, কে তিনি?

গত শনিবার সূচনা তাঁর ছেলের সঙ্গে উত্তর গোয়ার ক্যান্ডোলিমের সোল ব্যানিয়ান গ্র্যান্ডে হোটেলে ওঠেন। সূচনার স্বামী নিজে পেশায় একজন এআই ডেভেলপার। এই সময় তিনি ভারতের বাইরে ছিলেন। উইকেন্ড কাটিয়ে সোমবার সূচনা একাই রুম থেকে চেক আউট করেন এবং হোটেল কর্মীদের বেঙ্গালুরু অবধি যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সি বুক করতে বলেন। গোয়া থেকে বেঙ্গালুরু ট্যাক্সিতে! এতটা পথ সাধারণত মানুষ বিমানেই যাতায়াত করেন, নিদেনপক্ষে ট্রেনে! হোটেলের কর্মীরাও বিমানে যাওয়ারই পরামর্শ দেন। কিন্তু সূচনা বারেবারেই জোর দেন ট্যাক্সি করে যাওয়ার জন্য। এই সময়ই প্রথম হোটেলের কর্মীরা লক্ষ্য করেন, সূচনা একা। তাঁর ছেলেকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সূচনা একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে যাওয়ার পর, হাউজকিপিং কর্মী ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন সেখানে রক্তের দাগ!

হোটেল কর্মীরা গোয়া পুলিশকে ডেকে গোটা বিষয়টি জানায়। পুলিশ সোজা সেই ট্যাক্সি চালককে ফোন করে। ফোন করে নির্দেশ দেওয়া হয় সূচনা শেঠের সঙ্গে কথা বলতে। তখনই ওই চালক কথায় কথায় তাঁকে ছোট ছেলের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। সূচনা জানান, ছেলে একজন বন্ধুর সঙ্গে রয়েছে। তিনি সেই সময় ছেলের একটি ঠিকানাও দেন, যদিও পরে দেখা যায় সেই ঠিকানাটি জালি।

আরও পড়ুন- চিকিৎসার নামে খুন হয়েছে শ’য়ে শ’য়ে মুরগি! সাপের কামড়ের এই টোটকা শুনে শিউরে উঠবেন

এরপর পুলিশ আবার চালককে ফোন করে। সূচনা শেঠ যাতে বুঝতে না পারেন তাই চালকের সঙ্গে কোঙ্কনি ভাষায় কথা বলে গোয়া পুলিশ। পুলিশ ট্যাক্সি চালককে নির্দেশ দেয় গাড়িটিকে বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে চিত্রদুর্গর সবচেয়ে কাছের থানায় যেতে।

চালক পুলিশের কথা মতো চিত্রদুর্গ থানায় গেলে পুলিশ সূচনা শেঠকে গ্রেফতার করে। যে ব্যাগটি তাঁর সঙ্গে ছিল সেই ব্যাগ থেকেই তাঁর সন্তানের দেহ পাওয়া যায়। সূচনার স্বামীকেও পুলিশ ডেকে পাঠায় চিত্রদুর্গে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অভিযুক্ত খুনিকে।

মাইন্ডফুল এআই ল্যাবের লিঙ্কডিন পেজ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সুচনা শেঠ '২০২১ সালের এআই এথিক্সে সেরা ১০০ মহিলা'র তালিকায় ছিলেন। সূচনার নিজের লিঙ্কডিন অ্যাকাউন্ট বলছে, তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টারের একজন ফেলো ছিলেন। ডেটা সায়েন্স নিয়ে কাজ করা এবং স্টার্ট-আপ ও শিল্পসংক্রান্ত গবেষণার মেশিন লার্নিং সলিউশন স্কেলিং করার ১২ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর! সেই ডেটা সায়েন্টিসটই হয়ে উঠলেন নিজের সন্তানের খুনি! বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে মানসিক অস্থিরতা কি সত্যিই ছিল এতটা প্রবল? তদন্ত চলছে।

More Articles