শপথ নিয়েও স্বস্তি নেই চম্পাইয়ের, সুপ্রিম কোর্টে অস্বস্তি হেমন্তেরও! কোথায় দাঁড়িয়ে ঝাড়খণ্ড?

Jharkhand Crisis: তবে শুধু শপথগ্রহণ করলেই হল না। আগামী দশদিন সময় দেওয়া হয়েছে চম্পাইকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার জন্য। আর আপাতত সোরেন-জোটের নয়া ভয় এই বেঁধে দেওয়া সময়।

শিয়রে লোকসভা ভোট। অন্তর্বর্তী বাজেটের ঘোষণা সেই দামামাকে আরও জোরালো করে তুলেছে। আর ঠিক এই সময়েই জমি-কেলেঙ্কারি মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের ঠিক আগে আগে মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন গ্রেফতারিতে অস্থিরতা তো তৈরি হয়েছেই ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে। যদিও সামনে ভোট আর বিজেপির আগ্রাসনের কথা মাথায় রেখে বুঝেশুনেই পদক্ষেপ নিয়েছেন হেমন্ত। রাজভবনে গিয়ে ইস্তফা দিয়ে রীতিমতো উত্তরসূরীর নাম ঘোষণা করে গিয়েছেন তিনি।

শুক্রবারই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা হেমন্ত সোরেনের মামলায় হস্তক্ষেপ করবে না। মামলাটি ফের হাইকোর্টের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, হেমন্তকে আগে হাইকোর্টে আবেদন জানাতে হবে। উচ্চ আদালতের এক্তিয়ার লঙ্ঘন করবে না সুপ্রিম কোর্ট। গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হেমন্ত। সেই মামলায় বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চও গঠন করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তবে এখনই সেই বেঞ্চের হাতে উঠছে না হেমন্তের মামলা। হাইকোর্টে আবেদন করতে হবে। সেখানে তাদের নির্দেশের পরেই ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো যাবে।

আরও পড়ুন: চম্পাই সোরেন ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হেমন্তের, এত করেও ঝাড়খণ্ডে বিজেপিকে রুখতে পারবে JMM?

তবে নিজের ক্ষেত্রে সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক না চললেও, নিজের রাজ্যের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনও ঝুঁকি নেননি হেমন্ত। ভোটের আগে হেমন্তকে নিয়ে ইডি-র টানাটানি শুরু হতেই সম্ভবত তিনি আঁচ করে ফেলেছিলেন, এই সুযোগটাই ব্যবহার করতে চলেছে বিজেপি। কারণ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হলেই সেখানে এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হবে। সেই সুযোগে বিধায়কদের ভাঙিয়ে জেএমএমের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ভাগ বসাতে পারে বিজেপি। তেমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সে জন্য গ্রেফতারির আগেই দলের কাছে নয়া জেএমএম সুপ্রিমো ও মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছিলেন হেমন্ত। গ্রেফতারির আগে তড়িঘড়ি রাজ্যপালের কাছে গিয়ে পদত্যাগও করে আসেন তিনি। রাজ্যের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দলের তরফে ঘোষণা করা হয় জেএমএমের গোড়ার দিকের সদস্য ও রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী চম্পাই সোরেনের নাম। তবে বৃহস্পতিবার রাত গড়ালেও রাজ্যপালের তরফে সরকার গড়ার ডাক পাননি চম্পাই।

আশঙ্কা ছিল, অন্য কোনও ষড়যন্ত্র চলছে না তো ভিতরে ভিতরে। তড়িঘড়ি সমর্থনে থাকা বিধায়কদের কংগ্রেসশাসিত তেলঙ্গানার রাজধানী হায়দরবাদে সুরক্ষিত করা হয়। তবে যা যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমন কিছুই হয়নি। রাজ্যপালের ডাকে সাড়া দিয়ে শুক্রবার সকালেই ঝাড়খণ্ডের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন জেএমএম নেতা তথা দলের সহ-সভাপতি চম্পাই সোরেন। শোনা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারই চম্পাইকে সরকার গড়ার ডাক দিয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল। শুক্রবার রাঁচীর রাজভবনে চম্পইকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণ। নয়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন কংগ্রেস বিধায়ক তথা দলের পরিষদীয় নেতা আলমগির আলম এবং লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডির সত্যানন্দ ভোগতা। আলমগির এবং সত্যানন্দ, দু’জনেই আগে হেমন্ত সোরেন মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।

তবে শুধু শপথগ্রহণ করলেই হল না। আগামী দশদিন সময় দেওয়া হয়েছে চম্পাইকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার জন্য। আর আপাতত সোরেন-জোটের নয়া ভয় এই বেঁধে দেওয়া সময়। জুজু সেই একটাই। কোনও ভাবে সূঁচ হয়ে ঢুকে বিধায়ক কেনাবেচা করে না ঝাড়খণ্ডের গদি বাগিয়ে নেয় বিজেপি। এমনটা বহু রাজ্যেই করে থাকে বিজেপি। অতীতে এমন নজির ঝুড়ি ঝুড়ি রয়েছে। ৮১ আসনের ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় ‘জাদুসংখ্যা’ ৪১। শাসক জোটের হাতে রয়েছে ৪৮ জন বিধায়ক। জেএমএম ২৯, কংগ্রেস ১৬, আরজেডির ১ এবং সিপিআই (লিবারেশন) ১। এর মধ্যে হেমন্ত গ্রেফতার হওয়ায় তিনি বিধানসভায় ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারবেন না। বর্তমানে চম্পইয়ের সঙ্গে রয়েছেন ৪৩ জন বিধায়ক। বাকি চার জনের দেখা পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে, বিরোধী শিবিরে রয়েছেন ৩২ বিধায়ক। এঁদের মধ্যে বিজেপির ২৫, আজসুর ৩, এনসিপি (অজিত) ১ এবং নির্দল ৩ জন। অতীতে উত্তরাখণ্ড, অরুণাচল, কর্নাটক কিংবা মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বিধায়ক কেনাবেচা’র অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিক ভাবে শোনা গিয়েছিল, হেমন্তের গ্রেফতারির পরে তাঁর স্ত্রী কল্পনা সোরেনের কাছেই যেতে চলেছে ঝাড়খণ্ডের গদি। তবে শেষ পর্যন্ত চম্পাই কল্পনাকে পিছনে ফেলে এড়িয়ে যান গদির লড়াইয়ে। তবে লড়াইয়ের শেষ হয়নি এখনও। এখন ঝাড়খণ্ডের টাইগারের সামনে আরও বড় লড়াই বাকি। প্রমাণ করতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট থেকেও প্রত্যাখ্যাত হলেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। গত পাঁচ দিন ধরে ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। সোরেনের আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে জানান, হাইকোর্টে এর আগে একটি আবেদন করা হয়েছিল। পরে সেই মামলা প্রত্যাহার করা হয়। সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার যুক্তিও দিয়েছেন তিনি। হেমন্তের তরফে আইনজীবীর সওয়াল, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এক জন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই আমরা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চাইছি।’’ তবে তার সেই আর্জি সরাসরি খারিজ করে বিচারপতি সঞ্জীব খন্না জানেন, আদালতের কাছে সবাই সমান। তা-ই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলাদা কোনও সুবিধা পাবেন না হেমন্ত সোরেন। এর আগেও ইডির তলবের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হেমন্ত। সে বারও মামলা ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। হাই কোর্ট হেমন্তের আবেদন খারিজ করে দেয়। তাঁকে ইডির তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। জমি জালিয়াতি মামলায় ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে হেমন্তের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন:পরিবারেই লুকিয়ে বিপদ! হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনার মুখ্যমন্ত্রিত্বের পথের কাঁটা কে?

আপাতত ঝাড়খণ্ড এবং হেমন্ত সোরেন, কেউ-ই তেমন সুরক্ষিত নয়। নয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ, তা-ও আবার মাত্র দশ দিনের মধ্যে। অন্যদিকে, হেমন্তকে পেরোতে হাইকোর্টের অগ্নিপরীক্ষা, তবেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারবেন তিনি। কোনদিকে যাবে ঝাড়খণ্ডের ভবিষ্যত। লোকসভা ভোটের আগে আপাতত গোটা দেশের চোখ থাকবে সেদিকেই।

 

 

More Articles