একেই বলে আদিবাসীর কলজে! আস্থা ভোটে জিতে ঝাড়খণ্ডের রাজদণ্ড 'টাইগার'-এর হাতেই

Jharkhand Floor Test: ঝাড়খণ্ডের বিধানসভায় শক্তির পরীক্ষায় জিতে গিয়েথেন চম্পাই সোরেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ৮১ সদস্যের বিধানসভা ৪৭টি ভোট পেয়ে ফ্লোরটেস্টে দিতে গিয়েছে।

ক্লাইম্যাক্সের সামনে দাঁড়িয়ে ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি। গত এক সপ্তাহ ধরেই রাজনৈতিক ভাবে উত্তাল ঝাড়খণ্ড। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের গ্রেফতারির পর ঝাড়খণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন জেএমএমের নেতা চম্পাই সোরেন। তবে সেই পথ সহজ ছিল না। শপথ গ্রহণের পরেই তিনি জানতে পারেন, পাকাপাকি ভাবে মুখ্যমন্ত্রীত্বের পদ পেতে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তবেই ঝাড়খণ্ডে গঠন করা যাবে ঝাড়খণ্ডের স্থায়ী সরকার। আর সেই অগ্নিপরীক্ষায় শুধু উতরেই গেলেন না চম্পাইরা, কার্যত জিতে দেখিয়ে দিলেন আজও আদিবাসীদের শক্ত ঘাঁটি ঝাড়খণ্ড। জেএমএমের কাছে গো-হারান হারল অন্য শক্তিরা। 

সোমবার আস্থা ভোট ছিল ঝাড়খণ্ডে। সেই আস্থাভোটে অংশ নেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ধৃত হেমন্ত সোরেনও উপস্থিত রয়েছেন সেই ভোটে। পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় সোমবার তাঁকে বিধানসভায় নিয়ে আসা হয়। প্রায় ৬০০ কোটি টাকার জমি জালিয়াতি মামলায় ইডির হাতে কিছু দিন আগেই গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। বর্তমানে রয়েছেন ইডি হেফাজতে। এর মাঝেই আস্থা ভোটে যোগ দিতে চেয়ে রাঁচীর বিশেষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হেমন্ত। আদালত তাঁকে সেই অনুমতি দেয়।

আরও পড়ুন: শপথ নিয়েও স্বস্তি নেই চম্পাইয়ের, সুপ্রিম কোর্টে অস্বস্তি হেমন্তেরও! কোথায় দাঁড়িয়ে ঝাড়খণ্ড?

ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় মোট আসনের সংখ্যা ৮১। তার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা হল ৪১। ঝাড়খণ্ডের জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের মোট বিধায়ক সংখ্যা ৪৭। এ ছাড়া বিজেপির ২৫ জন, অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়নের তিন জন এনসিপি এবং সিপিআই (এমএল)-এর এক জন করে বিধায়ক রয়েছেন। সিপিআই (এমএল) সমর্থন রয়েছে শাসক জোটের পক্ষে। তিন জন নির্দল বিধায়কও রয়েছেন ঝাড়খণ্ড বিধানসভায়। সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে গদির দখল নিতে পারে বিজেপি, এমন একটা আশঙ্কা গোড়া থেকেই ছিল। তার জন্য অবশ্য সমস্ত ব্যবস্থাই গোড়া থেকে করে গিয়েছিলেন হেমন্ত সোরেন। দলের ভার ও পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নামও আগেভাগেই ঘোষণা করে যান তিনি। এমনকী গ্রেফাতারির আগে রাজভবনে গিয়ে ইস্তফাপত্রও জমা দিয়ে আসেন তিনি। যাতে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রক্রিয়ায় চম্পাইয়ের কোনও অসুবিধা না হয়। বুধবার রাতে হেমন্তের গ্রেফতারির পর বৃহস্পতিবার বার কয়েক রাজভবনে যান চম্পাই। তবে রাজ্যপালের সরকার গড়ার ডাক পেতে পেতে গড়িয়ে গিয়েছিল রাত। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ঝাড়খণ্ডের 'টাইগার' চম্পাই। তবে দশদিনের মধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার কথা বলা হয় তাঁকে।

 

হেমন্ত বিধানসভায় আস্থা ভোটে অংশ নিতে এসে অভিযোগ করেছেন, তাঁর গ্রেফতারির নেপথ্যে রয়েছে রাজভবনের হাত। তিনি জানান, ৩১ জানুয়ারি রাতে. দেশে প্রথমবার কোনও একজন মুখ্য়মন্ত্রীকে এ ভাবে গ্রেফতার করা হয়। ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় এটি। একই সঙ্গে তিনি জানান, ঝাড়খণ্ডের শাসক জোটের প্রকতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে তাঁর। রয়েছে পূর্ণ সমর্থনও। গোড়া থেকেই বিধায়ক কেনাবেচা হতে পারে এই আশঙ্কায় সতর্ক ছিল জেএমএম। সে কারণে শুক্রবারই শাসক জোটের ৩৭ জন বিধায়ককে রাঁচী থেকে কংগ্রেসের এলাকা হায়দরাবাদের একটি রিসর্টে নিরাপদে রেখা আসা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও চার জন বিধায়কের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রবিবার রাঁচীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে তাঁদের। ঝাড়খণ্ডে মহাগাঠবন্ধনে রয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম), আরজেডি ও কংগ্রেস। জেএমএমের দাবি, ফ্লোরটেস্টে তেমন বিপাকে পড়তে হবে না, তাদের জোটকে। কারণ তাঁদের কাছে যথেষ্ট বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। চম্পাইয়েক কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যার চেয়ে পাঁচজন বেশি বিধায়ক রয়েছে বলেই খবর।

আরও পড়ুন:চম্পাই সোরেন ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হেমন্তের, এত করেও ঝাড়খণ্ডে বিজেপিকে রুখতে পারবে JMM?

আর তার ফল যা হওয়ার ছিল, তাই হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের বিধানসভায় শক্তির পরীক্ষায় জিতে গিয়েথেন চম্পাই সোরেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ৮১ সদস্যের বিধানসভা ৪৭টি ভোট পেয়ে ফ্লোরটেস্টে দিতে গিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছেন জেএমএম-র বহু পুরনো সদস্য চম্পাই সোরেন। স্থানীয় ভাবে তিনি টাইগার নামে পরিচিত। আর তিনি যে সত্যিই বাঘ, প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, এই অস্থিরতার মধ্যেই ঝাড়খণ্ডে পৌঁছেছে কংগ্রেসের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা। রবিবার সিধু-কানহু মাঠে রাতের বিরতির পর সোমবার সকালে মহাত্মা গান্ধী চক থেকে ফের শুরু হয় যাত্রা। সেখান থেকে ছুতুপালু উপত্যকা ঘুরে রাঁচির ইরাবতে পৌঁছন রাহুল। এদিন রাঁচিত শহীদ ময়দানে একটি জনসভা রয়েছে তাঁর। দিন কয়েক আগেই তিনি যখন বিহারে পৌঁছন, সেখানে তখন মিত্র শক্তি বদলে গিয়েছে প্রতিপক্ষে। হঠাৎ করেই বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তবে ঝাড়খণ্ডে অন্তত সেই পরিস্থিতিতে পড়তে হল না রাহুলকে। ঝাড়খণ্ড শেষপর্যন্ত হোমল্যান্ড-ই রইল রাহুলদের জন্য। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে জোটের মান রাখলেন আদিবাসিপুত্র।

 

More Articles