বারাসতের জমায়েত থেকে আটক, রাত পেরোতেই সবার জামিন! মুখ পুড়ল সেই পুলিশের

RG Kar Protest at Barasat: রাতজাগা কর্মসূচী থেকে বহু বিক্ষোভকারীকেই টেনেহিঁচড়ে পুলিশের ভ্যানে তোলা হয় বলে অভিযোগ। বুধবারের ওই জমায়েতে পুলিশ প্রতিবাদীদের সঙ্গে ‘অমানবিক’ আচরণ করেছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

আরজি করে ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয়েছে রাতদখল কর্মসূচী। গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণী চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। তার সুবিচারের দাবিতে গত একমাস জুড়ে চলছে দফায় দফায় বিক্ষোভ। বুধবার বিভিন্ন জায়গার মতো বারাসতের ডাকবাংলো মোড়েও জমায়েত হয়েছিল বহু মানুষের। সেই জমায়েত থেকে আন্দোলনকারীদের টেনে হিঁচড়ে সরানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনকী মহিলা ও শিশুদেরও পুলিশ হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তিও হয় আন্দোলনকারীদের। বুধবারের ওই জমায়েত থেকে মোট ১৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। যদিও পরে তাঁদের সকলকেই নিঃশর্ত জামিন দেওয়া হয়। তবে যেভাবে রাতদখলের কর্মসূচীতে পুলিশি হেনস্থার অভিযোগ উঠল, তাতে উঠে গিয়েছে একাধিক প্রশ্ন।

বুধবার বারাসতের ডাকবাংলো মোড় ও কলোনি মোড়ে শয়ে শয়ে মানুষের জমায়েত হয়েছিল। যেখানে সামিল হন আট থেকে আশি- সকলেই। আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে দফায় দফায় স্লোগান উঠতে থাকে। অবস্থান দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হওয়ায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যানচলাচল বিঘ্নিত হয়। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় বারাসত থানার পুলিশ। তার পরেও মধ্যরাত অবধি ওঠেনি অবস্থান-বিক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বারাসত কলোনি মোড়ে নামানো হয় বিশাল পুলিশবাহিনী। ছিলেন বারাসাত পুলিশের এসডিপিও, আইসি-সহ প্রচুর পুলিশ। ছিলেন মহিলা পুলিশেরাও। রাস্তা ফাঁকা করা নিয়ে বাকবিতণ্ডা বাঁধে পুলিশের সঙ্গে। তা বিবাদের চেহারা নিতে দেরি হয়নি তারপর। ওই মধ্যরাতেই রীতিমতো বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এরপর। সেই ধস্তাধস্তির বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও সেই সব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

আরও পড়ুন: আরও এক রাতদখল! তিলোত্তমার জন্য যে ভাবে জেগে থাকল, জাগিয়ে রাখল বাংলা

রাতজাগা কর্মসূচী থেকে বহু বিক্ষোভকারীকেই টেনেহিঁচড়ে পুলিশের ভ্যানে তোলা হয় বলে অভিযোগ। বুধবারের ওই জমায়েতে পুলিশ প্রতিবাদীদের সঙ্গে ‘অমানবিক’ আচরণ করেছে বলেও অভিযোগ ওঠে। এই ছবি সামনে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে সমাজের বিভিন্ন মহলে। পুলিশ কর্তাদের দাবি, দীর্ঘক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভের কারণে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে পরে। এরপরই, বিক্ষোভকারীদের অবস্থান তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় বারাসত জেলা পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুলিশের প্রস্তাব না মেনে অবস্থান বিক্ষোভে অনড় ছিলেন। সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। জাতীয় সড়কে আটকে থাকা ট্রাক চালকেরাও পুলিশকে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক করতে। না হলে ট্রাকে থাকা কাঁচা সবজি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের জানায়, যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তার একদিক খালি করে দিতে। এ নিয়েই পুলিশের সঙ্গে বচসা ও ধস্তাধস্তি বাধে আন্দোলন কারীদের। আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজনকে টানা হেঁচড়া করে তোলা হয় প্রিজন ভ্যানে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায়।

পুলিশের অভিযোগ আন্দোলনকারীরা মহিলা পুলিশদের উদ্দেশে কটুক্তি করছিলেন। ঘটনায় পাঁচ মহিলা-সহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করে বারাসত থানার পুলিশ। প্রতিবাদে দীর্ঘ সময় জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গী জানান, পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার জন্য ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও তাঁদের সকলকেই পরে নিঃশর্ত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, বুধবার জমায়েত চলাকালীন বারাসত ডাকবাংলো মোড়ে ঘটে আরও এক অপ্রিয় ঘটনা। সারা রাজ্য যখন আরজি কর ধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে ব্যস্ত, ঠিক সে সময় বিক্ষোভে সামিল হওয়া মহিলাদের কটুক্তি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে এক মদ্যপ ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে বারাসত ডাকবাংলা মোড় থেকে প্রতিবাদ মিছিলে শেষের কিছুটা আগেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন দুই মহিলা। তাঁদের মধ্যে একজনকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর ছেলে। তিনি জানান, তিনি এসে দেখেন, এক মত্ত ব্যক্তি তাঁর মা ও তাঁর সঙ্গে থাকা অন্য মহিলাকে আপত্তিকর ভাষায় কটুক্তি করছে। তার প্রতিবাদ করতে গেলে ওই যুবককে মারধরও করে অভিযুক্ত। এমনকী মারধর করা হয় ওই দুই মহিলাকেও। পুলিশকে অভিযোগ জানালে পুলিশ এসে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে বারাসত থানায় নিয়ে যায়। গোটা ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে বারাসত থানার পুলিশ।

আরও পড়ুন:রাজ্য সরকারের ‘অপরাজিতা’ বিলে কেন আপত্তি বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের?

বুধবার রাতদখলের কর্মসূচীকে ঘিরে অশান্তি হয়েছে কোচবিহারের মাথাভাঙাতেও। সূত্রের খবর, আন্দোলন চলাকালীন একদল দুষ্কৃতী চড়াও হয় আন্দোলনকারীদের উপরে। বুধবার রাস্তা জুড়ে প্রতিবাদের প্রতীকী ছবি আঁকা হচ্ছিল। চলছিল অভিযোগ কর্মসূচী। এই সময় হঠাৎ ঘটনাস্থলে হাজির হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাঁরা প্রতিবাদীদের কথা কাটাকাটি হয়। তা পৌঁছায় মারধর পর্যন্ত। তাদের পথলিখন মুছে দেওয়া হয় বলেও খবর। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়।

More Articles