মনের সুখে ভোটচুরি! চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচনে যে ভয়ঙ্কর ছবি দেখল দেশ

Chandigarh mayor polls: চণ্ডীগড়ে মেয়র ভোটে ব্যালট পেপার বিকৃত করার অভিযোগ উঠল খোদ প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে। যে ঘটনা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত।

ভোটে কারচুপি কোনও নতুন বিষয় নয়। তবে যাদের হাতে ভোট নিয়ন্ত্রণের ভার, সেই রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়ে বসে, তাহলে যে ঠিক কী হতে পারে, তার নজির দেখল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়। মেয়র ভোটে ব্যালট পেপার বিকৃত করার অভিযোগ উঠল খোদ প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে। যে ঘটনা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। যে পদ্ধতিতে সেখানকার বিজেপি নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন আপ-কংগ্রেসের জোট প্রার্থীকে হারিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে, তা আদতে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’।

গত ৩০ জানুয়ারি চণ্ডীগড় ছিল মেয়র নির্বাচন। বিজেপিকে রুখতে ওই নির্বাচনে যৌথ ভাবে লড়াই করেছে কংগ্রেস ও আপ। পুরপ্রতিনিধিদের ভোটের হিসাবে প্রথমে এগিয়েও গিয়েছিলেন আপ-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী কুলদীপ সিংহ। মোট ৩৬টি বৈধ ভোটের মধ্যে জোট পায় ২০টি। অন্য দিকে, বিজেপির মেয়র পদপ্রার্থী মনোজ সোনকর পান ১৬টি ভোট। কিন্তু পরে জোটপ্রার্থী কুলদীপ সিংহের পাওয়া ৮টি ভোটকে বাতিল ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং অফিসার অনিল।

আরও পড়ুন: একেই বলে আদিবাসীর কলজে! আস্থা ভোটে জিতে ঝাড়খণ্ডের রাজদণ্ড ‘টাইগার’-এর হাতেই

২০২২ সালে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়নি কংগ্রেস। তাতে আপের অঞ্জু কাটিয়ালকে ১ ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপির সরবজিৎ কউর। এ বার জোট বেঁধেছিল আপ-কংগ্রেস। সেই আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেস জোটের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, গণনার ঠিক আগেই প্রিসাইডিং অফিসার অনিল নাকি নিজেই পেন দিয়ে কয়েকটি ব্যালটে দাগ কেটে দেন। আর পরে সেগুলোকে বাতিলও করেন নিজে। মেয়র নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে ভোট দেন চণ্ডীগড়ের বিজেপি সাংসদ কিরণ খের। বিরোধী প্রার্থীর ৮টি ভোট বাতিল হওয়ায় তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১২তে। ১৬টি ভোট পেয়ে ৩৫ আসনের চণ্ডীগড় পুরনিগমে জয় পায় বিজেপি।

ভোট বাতিলের ঘোষণা হওয়ার পরেই পুরনিগমে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আপ এবং কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধিরা। জোটের তরফে প্রথমে পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাই কোর্টে আবেদন জানানো হলেও তা খারিজ হয়ে যায়। এর পরে কুলদীপ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

সেই মামলার শুনানিতে কড়া পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। বেঞ্চ জানায়, ‘‘স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মেয়র নির্বাচনের সময় প্রিসাইডিং অফিসার অনিল মসিহা ব্যালট পেপার বিকৃত করেছিলেন। এট শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’’ আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পুরপ্রতিনিধিদের নির্ধারিত বৈঠকের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ‘গণতন্ত্রের নামে প্রহসন হয়েছে চণ্ডীগড়ে। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে’। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পর্দাওয়ালা ও মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ রিটার্নিং অফিসারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বেঞ্চ জানায়, প্রিসাইডিং অফিসার কেন ক্যামেরার দিকে তাকাচ্ছিলেন? গণতন্ত্রের সঙ্গে একটা রসিকতা।


আরও পড়ুন: ‘অখণ্ড ভারত’ তুরুপের তাস! লোকসভা ভোটের আগেই ভারতের দখলে পাক অধিকৃত কাশ্মীর?

ইতিমধ্যেই প্রিসাইডিং অফিসার অনিল মসিহা র বিরুদ্ধে নোটিস জারি করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি ভাইরাল হয়েছে সেই ব্যালট বিকৃত করার ভিডিও-ও। সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্বাচনের ব্যালট ও ভিডিও সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে। সামনেই লোকসভা ভোট। দেশ জুড়ে বেজে গিয়েছে নির্বাচনী দামামা। এই পরিস্থিতিতে চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপ-কংগ্রেসের জোটে সাড়া দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট, তা কি অস্বস্তি বাড়াবে বিজেপির। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ফের ওই মামলার শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টে। তার আগে সোমবার বিকেল পাঁচাটার মধ্য়ে মেয়র নির্বাচনের সব রেকর্ড সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

More Articles