খুলছে রহস্যের জট! চাঁদের মাটিতে আশ্চর্য বস্তু খুঁজে পেল রোভার ‘প্রজ্ঞান’
Chandrayaan-3 Landing Anniversary: বছর ঘুরে গেলেও এখনও চাঁদের মাটিতেই ঘোরাফেরা করছে চন্দ্রযান ৩-র বোভার প্রজ্ঞান। গত বছর চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পরেই নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছিল প্রজ্ঞান।
আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই দিনটায় টিভির পর্দায় অধীর আগ্রহে চোখ পেতেছিলেন দেশবাসী। নতুন রেকর্ড ছুঁতে পারবে দেশ? শেষপর্যন্ত চাঁদের স্বপ্নপূরণ হবে তো। সকলের প্রত্যাশা পূরণ করে সন্ধে নাগাদ চাঁদের মাটি ছুঁয়েছিল চন্দ্রযান ৩। তৃতীয় বারের চেষ্টা সফল হয়েছিল ইসরোর। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল গোটা দেশ। সেই চাঁদজয়ের বর্ষপূর্তি ২৩ অগস্ট, শুক্রবার। ২০২৩ সালের এই দিনেই চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে অবতরণ করেছিল চন্দ্রযান তিনের রোভার প্রজ্ঞান।
সেই জয়ের মুহূর্তকে স্মরণে রেখে ২৩ অগস্ট দিনটিকে জাতীয় মহাকাশ দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। শুক্রবার সেই সাফল্যের বর্ষপূর্তি। ফলে ইসরো তো বটেই, গোটা দেশের বাসিন্দাদের কাছেই এই দিনটা আলাদা, বিশেষ। বছর ঘুরে গেলেও এখনও চাঁদের মাটিতেই ঘোরাফেরা করছে চন্দ্রযান ৩-র বোভার প্রজ্ঞান। গত বছর চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পরেই নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছিল প্রজ্ঞান। এই এক বছরে লাগাতার সে ইসরোর বিজ্ঞানীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে বিভিন্ন খবরাখবর। যা তাদের গবেষণাকে এগিয়ে দিয়েছে আরও সামনের দিকে। সেই চাঁদ ছোঁয়ার বর্ষপূর্তিতে ইসরোর তরফে জানানো হল, রোভার প্রজ্ঞানের সাফল্যের কথা। জানা গিয়েছে, এই একবছরে চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন রকম খনিজ শনাক্ত করেছে রোভার প্রজ্ঞান। শুধু তাই নয়, চাঁদে লাভার সমুদ্রও খুঁজে পেয়েছে এটি। এই বিশেষ দিনে প্রজ্ঞানের তোলা বেশ কয়েকটি নতুন ছবিও প্রকাশ করেছে ইসরো।
আরও পড়ুন: এবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যাচ্ছেন ভারতীয় নভোশ্চর! নয়া মাইলফলক ছুঁতে পারবে ISRO?
গত বছর ২৩ অগস্ট সন্ধে ৬.০৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পা রাখে ভারত। এর আগে চাঁদের ধারেকাছে পৌঁছেও সফল হয়নি চন্দ্রযান ২ মিশন। ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল সেটি। সঙ্গে ভেঙে গিয়েছিল ইসরোর বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন। সেই ক্ষত, হতাশা সরিয়ে রেখে তাঁরা মন দিয়েছিলেন চাঁদ জয়ের পরবর্তী অভিযানে। শেষমেশ শিকে ছেঁড়ে ভারতের কপালে। চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পা রাখে ভারত। তার আগে চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন। তবে ভারতের যেটা সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব, তা হল এর আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখেনি কোনও দেশই। সেদিক থেকে প্রথম হয়ে ইতিহাস গড়ে ভারত।
সেদিন চাঁদের মাটি চন্দ্রযান ৩-র ল্যান্ডার পা রাখার পর এক ঘণ্টা মতো সময় নিয়েছিল রোভারটি, চাঁদের উপর ধুলোর ঝড় শান্ত হয়ে আসার। তার পরেই ধীরেসুস্থে চাঁদের মাটিতে পা রাখে রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের যে জায়গাটায় নেমেছিল সেটি, সেখানটার নাম রাখা হয়েছিল শিবশক্তিপয়েন্ট। সেখান থেকে এই এক বছর ধরে নানাবিধ খবর, সন্ধানের তথ্য লাগাতার পাঠিয়ে গিয়েছে সে। চাঁদের মাটি থেকে খুঁজে এনেছে বিভিন্ন খনিজের নমুনা। শুধু খুঁজেই আনেনি, সেগুলিকে রীতিমতো বিশ্লেষণও করে দেখেছে সেটি।
চাঁদের মাটি থেকে সেই খনিজগুলো চেনার জন্য আলফা কণা এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করেছে সেটি। এর সঙ্গে ছিল লেজার ইনডিউসজ ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ (LIBS)। যা লেজার রশ্মির সাহায্যে চাঁদের ভূপৃষ্টে থাকা বিভিন্ন কণার রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করেছে নিয়ত। সম্প্রতি সেই সমস্ত তথ্য জানিয়েছেন ইসরোর কর্মকর্তা এস সোমনাথ। এই কদিনে চাঁদের ল্যান্ডিং সাইটের প্রায় ১০০ মিটার জায়গা জুড়ে ঘোরাঘুরি করেছে রোভার প্রজ্ঞান। যা ভূমিতে থাকা খনিজ পদার্থের পাশাপাশি বিস্তৃত এলাকার নমুনাও সংগ্রহ করেছে। যা চন্দ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে ইসরোকে। চাঁদজয়ের সাফল্যের পাশাপাশি মহাকাশ গবেষণার জগতেও এ এক বিরাট সাফল্য ইসরোর।
আরও পড়ুন:চন্দ্রযান ৩-র সাফল্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে শেষ ১৫ মিনিটেই! কেন জরুরি ‘সন্ত্রাস’-এর এই ১৫ মিনিট?
চাঁদের সাফল্যের পর পরই সৌর-অভিযানে আদিত্য এলওয়ান উৎক্ষেপণ করেছিল ইসরো। সেখানেও আসে সাফল্য। সূর্যের কক্ষপথে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠানো সম্ভব হয়েছিল সৌরযানটিকে। যেটি ইসরোকে সেখান থেকে পাঠিয়ে চলেছে নানা খবরাখবর। সব ঠিক থাকলে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের এপ্রিলের মধ্যেই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নভোশ্চর পাঠাতে চলেছে ইসরো। এই মিশনে ইসরোকে সাহায্য করছে নাসা। ইতিমধ্যেই অভিযাত্রীদেরও নির্বাচন করে ফেলা হয়েছে। আপাতত আমেরিকায় প্রশিক্ষণ চলছে বায়ুসেনার ওই দুই আধিকারিকের। এই প্রথম ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে যেতে চলেছেন কোনও ভারতীয় মহাকাশচারী। ফলে সেখানেও একরকম রেকর্ড গড়বে ইসরো। এছাড়াও একাধিক মিশনের পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর হাতে। সমস্ত কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী বছর একাধিক সাফল্য অপেক্ষা করছে ইসরোর দরজায়, তেমন সম্ভাবনার কথাই উস্কে দিয়েছেন ইসরো-প্রধান এস সোমনাথ।