ক্রেতা সেজে বার্গার কিংয়ে ৪০ রাউন্ড গুলি! যে বীভৎস হত্যাকাণ্ডে স্তব্ধ দিল্লি

Murder at Delhi Burger King: আমনকে লক্ষ্য করে প্রায় ৪০ রাউন্ড গুলি করা হয়। ঘটনার সময় বার্গার কিংয়ের ১২ জন কর্মীসহ প্রায় ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

দিল্লির ব্যস্ত একটি খাবারের দোকানে। প্রতিদিনের মতোই ভিড়। অর্ডার দেওয়া হচ্ছে, অর্ডার উড়ে আসছে, গুঞ্জনে গুঞ্জনে গমগম করছে জনপ্রিয় সেই ফুড জয়েন্ট। দিল্লির রাজৌরি গার্ডেনের জনপ্রিয় ওই দোকানে বছর তিরিশের এক যুবক বসে আছেন একজন প্রায় সমবয়সি যুবতীর সঙ্গেই। যুবতী গল্পচ্ছলেই যুবকের কাছে তাঁর ফোনটি চাইলেন। খাবারের অপেক্ষা করতে করতেই ফোন স্ক্রোল করছেন। খুব সহজ সাধারণ দৃশ্য।

দু'জন লোক ঢুকেছে দোকানটিতে। এগিয়ে যাচ্ছে কাউন্টারের দিকে। অর্ডার দিয়েছে নিয়মমাফিক। তারপর চুপচাপ ওই যুবক যুবতীর পিছনের একটি টেবিলে বস তারা। বাকিটা অস্বাভাবিক। বুধবার রাতে দিল্লির রাজৌরি গার্ডেনের বার্গার কিংয়ের ভিতরে যা ঘটে এরপর তা স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো! ওই যুবক যুবতীর পিছনের টেবিলে বসার কয়েক মুহূর্তের পিস্তল বের করে গুলি চালায় ওই দুই অজ্ঞাতপরিচয় লোক। তাঁদের লক্ষ্য ওই বছর তিরিশের যুবক — আমন জুন। একের পর এক গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান তিনি। ঘটনাস্থলেই মারা যান আমন। খুন করে আততায়ীরাও শান্তভাবে চলে যায়। আমনের সঙ্গে যে যুবতী ছিলেন এতক্ষণ, তিনিও চলে যান।

আরও পড়ুন- ফুলন দেবীর খুনিই ভারতে আনেন পৃথ্বীরাজ চৌহানের অস্থি! জানেন, কে তিনি?

ঘটনাস্থলের ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে, ওই দুই ব্যক্তি এই যুবক যুবতীর পিছনের চেয়ারে বসে পিস্তল তাক করছে এবং পরমুহূর্তেই গুলি করছে। গুলি চলার তীব্র শব্দে ওই ফুড জয়েন্টের আতঙ্কিত লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। আতঙ্কিত মানুষদের মধ্যে আমনকে নিজের প্রাণ বাঁচাতে কাউন্টারের পিছনে পালাতে দেখা যায়। কমলা ও সাদা শার্ট পরা দুই ব্যক্তি পিস্তল উঁচিয়ে তাঁকে ধাওয়া করে এবং খুব কাছ থেকে গুলি চালায়। এতক্ষণ আমনের সঙ্গে যে যুবতী ছিলেন, তিনি আশ্চর্যজনকভাবে এই গোলাগুলি দেখে বিন্তুমাত্র অবাক হননি, আতঙ্কিতও না। তিনি ধীরে ধীরে একাই রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে যান।

 

পুলিশ জানাচ্ছে, আমনকে লক্ষ্য করে প্রায় ৪০ রাউন্ড গুলি করা হয়। ঘটনার সময় বার্গার কিংয়ের ১২ জন কর্মীসহ প্রায় ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন সেখানে। যখন উপস্থিত মানুষরা বুঝতে পারে আসলে কী ঘটছে, ততক্ষণে বন্দুকধারী দুই দুষ্কৃতী দশটারও বেশি গুলি করে ফেলেছে। "সবটাই যেন ঘটে যায় পলক না ফেলতেই... দুষ্কৃতীদের প্রথম ম্যাগাজিন খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আতঙ্কিত মানুষজন দৌড়তে শুরু করেন,” বলছেন দোকানের একজন কর্মী। ওই বন্দুকধারীরা, একজন মহিলার সঙ্গে ভিড়ের মধ্যে মিশে পালিয়ে যায়।

ওই ফুড জয়েন্টের কাছেই একটি ঠেলা বসান রাকেশ বক্সী। ওই হইচই, আতঙ্কের মধ্যে রক্তাক্ত যুবকের লাশ পড়ে থাকার দৃশ্য ভুলতে পারছেন না তিনি। রাকেশ বলছেন, "প্রাথমিকভাবে, আমরা কমপক্ষে ১৫ রাউন্ড গুলি চালানোর শব্দ শুনি, প্রথমে অন্য কিছু ভেবে ভুল করেছিলাম। কিন্তু গুলির আওয়াজ চলতেই থাকলে আমি বাইরে গিয়ে দেখি লোকজন দৌড়চ্ছে।" পরে কয়েকজন লোক ভেতরে ঢুকলে রাকেশ দেখেন আমন মাটিতে পড়ে আছেন। পরে দোকানের কর্মীরা সবাইকে সরে যেতে বলেন।

আরও পড়ুন- সলমান খানকে খুনের চেষ্টা! ভাইজানের বাড়িতে ৫ রাউন্ড গুলি চালাল কারা?

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছেন, "এমন ঘটনা এই এলাকায় নজিরবিহীন। প্রথমে খানিক সন্ত্রাসবাদী হামলার মতো মনে হয়েছিল।" এই বীভৎস ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর, একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বিদেশের এক গ্যাংস্টার হিমাংশু ভাউ এই হামলার দায় স্বীকার করে। পোস্টে বলা হয়েছে, তারা 'শাকি দাদা'-র হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে। 'শাকি দাদা'-কে নাকি আরেকটি গ্যাং হত্যা করে। ওই পোস্টে অভিযুক্ত গ্যাংস্টার নবীন বালি, নীরজ বাওয়ানা, কালা খরমপুর এবং নীরজ ফরিদপুরের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে এই গ্যাংটি দিল্লি এবং হরিয়ানায় কাজ করে। তোলাবাজির জন্য কুখ্যাত এই গ্যাং। পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের সত্যতাও যাচাই করছে। আমনের সঙ্গে থাকা ওই যুবতী কে ছিলেন? কেনই বা তিনি এই গুলি চালানোর ঘটনায় নির্লিপ্ত থেকে পালিয়ে যান? তাহলে কি ওই মহিলাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেই খুন করা হলো আমনকে? তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

More Articles