চিনে হু হু করে শিশুরা আক্রান্ত নিউমোনিয়ায়, ফিরছে মাস্ক! নেপথ্যে ফের 'অজানা ভাইরাস'?
China Pneumonia Outbreak : চিনে ফ্লু, কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত ভ্যাকসিন ফের ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফের কি এক অজানা ভাইরাস? ফের উৎস চিন! বেশ কয়েকদিন ধরে চিনের শিশুদের এক বিশেষ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসার ঘটনা বাড়ছিল। এই বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিনের নজরদারি ব্যবস্থার তথ্য পর্যবেক্ষণ করে জানাচ্ছে উত্তর চিনে হঠাৎ করেই শিশুদের শ্বাসকষ্টের অসুস্থতার বৃদ্ধি ঘটছে। চিন বলছে, উত্তরে শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার পেছনে কোনও অস্বাভাবিক বা নতুন প্যাথোজেন শনাক্ত করা যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই বিষয়ে বিশদ তথ্য চেয়েছে বেইজিংয়ের থেকে। কারণ করোনা ভাইরাসের সূচনা হয়েছিল, এমনই এক শীতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এবং জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ প্রশাসনের সহায়তায় চিনা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এবং বেইজিং চিলড্রেনস হাসপাতালের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করেছে তারা। চিনের প্রশাসন তাতে জানিয়েছে, বেইজিং এবং লিয়াওনিং সহ কোথাও কোনও অস্বাভাবিক বা অভিনব প্যাথোজেন বা অস্বাভাবিক ক্লিনিকাল বিষয়ের চিহ্ন মেলেনি। একাধিক পরিচিত প্যাথোজেনের কারণে শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। চিন আরও জানিয়েছে, শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালগুলিতে যে রোগীদের শয্যার অভাব হচ্ছে বা হাসপাতালের ক্ষমতার বাইরে রোগী আসছেন এমনও না। কিন্তু বিষয়টি এবং এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তের যোগাযোগ রাখছে হু।
চিনের শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফ্লু, কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত ভ্যাকসিন ফের ব্যবহার করা হচ্ছে। অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা; অসুস্থ হলে বাড়িতে থাকা; প্রয়োজন অনুযায়ী পরীক্ষা এবং চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা; এবং মাস্ক পরার ঘটনাও ফিরছে আবার। চিন সফর করছেন যারা তাঁদের জন্য এখনই কোনও নির্দিষ্ট ব্যবস্থার সুপারিশ করেনি হু। নিউমোনিয়া এমনিতে অত্যন্ত সাধারণ রোগ তবে শিশুদের ক্ষেত্রে তা আশঙ্কার তো বটেই। নিউমোনিয়া আসলে ফুসফুসের সংক্রমণ এবং প্রদাহ। এটি বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের কারণে হতে পারে। চিন বলছে, উত্তর চিনে গত তিন বছর, এই একই সময়ে 'ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতার বৃদ্ধি ঘটেছে'।
আরও পড়ুন- কোভিড যাচাই যন্ত্রে কিস্তিমাত, জাতীয় শিক্ষকের শিরোপা পাচ্ছেন যে বাঙালি
চিন থেকে কোভিড-১৯ এর মহামারীর উৎপত্তি। সারা বিশ্বকে ছারখার করে রেখে দেওয়া সেই সময়, সেই স্মৃতি ভুলবে না মানুষ। তাই এই নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে বিশ্বজুড়ে হইইচই হবে স্বাভাবিক। গত সপ্তাহেই, চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, সারা দেশে বেশ কয়েকটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ বেড়েছে: বিশেষ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা, কোভিড, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া (সাধারণ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা শিশুদের প্রভাবিত করে) এবং শ্বাসযন্ত্রের সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)। প্রশাসন কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নেওয়াকেই এই ভাইরসা ও সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন।
যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য দেশগুলিও মহামারীর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরে ফ্লুর মতো অসুস্থতার বৃদ্ধি দেখেছিল। ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন জেনেটিক্স ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফ্রাঙ্কোইস ব্যালক্স বলছেন, চিনে সম্ভবত শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে, দীর্ঘ লকডাউনের পরে এটিই প্রথম শীত। শ্বাসযন্ত্রের সঞ্চালনকে মারাত্মকভাবে হ্রাস করেছে এই লকডাউন। তাই সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
উল্লেখ্য, ডিসেম্বর মাসেই চিনের উহানে কোভিড -১৯ এর প্রাদুর্ভাব হয়েছিল চার বছর আগে। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন, হু বারবারই চিনা কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার অভাবের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। উহানে প্রথমবার কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার তিন বছরেরও বেশি সময় পরে, এখনও কোভিডের উত্সকে ঘিরে উত্তপ্ত বিতর্ক চলছে।