নতুন মানচিত্রে ভারতের একাধিক জায়গা নিজেদের বলে দাবি! ঠিক কী করতে চাইছে চিন?
China's New Map Dispute: চিন যে যে দেশের সঙ্গে তার সীমান্ত ভাগ করেছে তার চেয়েও বেশি দেশের সঙ্গে এর আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে।
নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে চিন। ২০২৩ সালের চিনের মানচিত্রের নয়া সংস্করণকে একেবারে দুরছাই করে উড়িয়ে দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক। চিনের মানচিত্র ভারত এমন নস্যাৎ করবেই বা কেন? গালওয়ান সংঘর্ষের পর চিনের সঙ্গে বোঝাপড়ার সম্পর্ক মোটেই ভালো যাচ্ছে না দেশের। এরই মাঝে চিন যে মানচিত্র গড়ে নতুন সীমান্ত নির্দেশ করেছে তাতে ভারতের অংশকে নিজেদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ঢুকিয়ে ফেলেছে ওদেশের সরকার। চিনের সরকার গত ২৮ অগাস্ট 'চিনের মানচিত্রের ২০২৩ সংস্করণ' প্রকাশ করেছে। এই নয়া মানচিত্রটি প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রক প্রকাশ করেছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই 'স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপ’-এ চিনের করা আঞ্চলিক দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের কোন কোন অঞ্চল নিজেদের বলে দাবি করছে চিন?
চিনের সংবাদপত্রগুলি বলছে, চিনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রক সোমবার ঝেজিয়াং প্রদেশের ডেকিং কাউন্টিতে জরিপ ও মানচিত্র প্রচার দিবস এবং জাতীয় মানচিত্র সচেতনতা প্রচার সপ্তাহ উদযাপনের সময় মানচিত্রটি প্রকাশ করে। মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশ এবং আকসাই চিনকে চিনের অন্তর্গত হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভারত এই অঞ্চলগুলিকে তার নিজস্ব ভূখণ্ডের অংশ হিসাবে দাবি করে। এখন চিন বলছে, এই অঞ্চলগুলি তার দেশের সীমানার মধ্যে। চিন দাবি করেছে অরুণাচল আসলে 'দক্ষিণ তিব্বত'। আর ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময় আকসাই চিনের উপর নাকি নিয়ন্ত্রণ লাভ করেছিল চিন।
আরও পড়ুন- গালওয়ান যুদ্ধের পর পাল্টা মার দিতে কীভাবে রণসাজে সেজেছিল ভারত!
তথাকথিত নাইন-ড্যাশ লাইন সমগ্র দক্ষিণ চিন সাগরকে ঘিরে আছে আগের মানচিত্রের মতোই। এছাড়াও, তাইওয়ানের পূর্বে একটি 'টেনন্থ ড্যাশ' বসানো। অর্থাৎ এই দ্বীপের উপর বেইজিংয়ের দাবি রয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রক বলছে, চিনের এসব দাবির কোনও ভিত্তি নেই। চিনের তরফে এই ধরনের পদক্ষেপ আসলে কেবল সীমান্ত সমস্যার সমাধানকেই আরও জটিল করে তুলছে। এই মানচিত্রে দক্ষিণ চিন সাগরের কিছু অংশ এবং তাইওয়ানকেও চিনের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করা হয়েছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলছেন, এসব নতুন না। চিন আগেও এমন মানচিত্র প্রকাশ করেছে যাতে এমন সব জায়গার দাবি তারা করেছে যেগুলি আসলে চিনের অংশই নয়, অন্যান্য দেশের অন্তর্গত। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। অভ্যাস শুরু হয়েছিল ১৯৫০-এর দশকে। আগে ২০১৭ এবং ২০২১ সালেও চিনের সিভিল অ্যাফেয়ার মিনিস্ট্রি অন্যান্য ভারতীয় জায়গার নাম পরিবর্তন করে রাজনৈতিক সংঘর্ষের সূত্রপাত করে।
চিন যে যে দেশের সঙ্গে তার সীমান্ত ভাগ করেছে তার চেয়েও বেশি দেশের সঙ্গে এর আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে। চিনের কমিউনিস্ট পার্টি শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে অন্যান্য সার্বভৌম অঞ্চলের উপর আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার চেষ্টায় প্রতারণামূলক কৌশলও ব্যবহার করেছে। বেইজিং ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়মও লঙ্ঘন করেছে।
আরও পড়ুন- বাংলা ভুলেছে তাঁকে, অথচ তিনি না থাকলে তৈরিই হতো না পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র!
এপ্রিল মাসেই অরুণাচল প্রদেশের ১১টি স্থানের নাম পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিল চিন যার মধ্যে ছিল পর্বত শৃঙ্গ, নদী এবং আবাসিক এলাকার নামও। সেই প্রচেষ্টা ভারত বানচাল করার কয়েক মাস পরেই আস্ত মানচিত্রেই এই অঞ্চলগুলিকে নিজেদের বলে দাবি করে বসল চিন। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শি জিনপিং বৈঠক করেন। সেখানে ভারত-চিন সীমান্ত অঞ্চলের পশ্চিম সেক্টরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অমীমাংসিত সমস্যাগুলির বিষয়ে কথাও হয়।
ভারত বলছে, দেশের সীমানা কী, নিজেদের অঞ্চলগুলি কী কী তা নিয়ে খুব স্পষ্ট ধারণা এই রাষ্ট্রের আছে। যে কেউ ভুলভাল দাবি করলেই অন্য দেশ তাদের হয়ে যায় না। চিন এবং ভারত তাদের সীমান্ত সংকটের সমাধানের বিষয়ে ইতিবাচক কথাবার্তা বলছিল। তারই মাঝে হঠাৎ এই মানচিত্রের জন্ম। তাহলে কি বাহ্যিকভাবে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলেও আসলে ভেতরে ভেতরে অন্য প্রস্তুতিই নিচ্ছে চিন?