রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ চিনের একের পর এক মন্ত্রী! হচ্ছেটা কী চিনে?

China Ministers Missing: প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মন্ত্রিসভা এখন আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাসের মতোই রহস্যে ভরা!

চিনের রাষ্ট্রপতি নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন ভারতের জি ২০ সম্মেলন থেকে। ভারত চিনের সম্পর্ক মোটেও ভালো যাচ্ছে না। গালওয়ানের সংঘর্ষের পর থেকেই চিন প্রতিরক্ষায় কী কী বন্দোবস্ত বাড়াচ্ছে তা নিয়ে একাধিক খবর উড়ে এসেছে। চিন সম্প্রতি ভারতের একাধিক জায়গাকে নিজের দেশের মধ্যে ঢুকিয়ে নয়া মানচিত্রও প্রকাশ করেছে! তবে চিনের এক অদ্ভুত রহস্য সারা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। কীভাবেই বা চিন এত বড় খবর চেপে যাচ্ছে তা নিয়েও রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে! চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফু দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ! শুধু তাই নয়, এই ঘটনার কিছুদিন আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রীও! একাধিক মন্ত্রী নিখোঁজ, হচ্ছেটা কী চিনে?

চিনের বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাং রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরেই নিখোঁজ হয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও! বিদেশমন্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পরে তাঁর সম্পর্কে কোনও তথ্য না দিয়ে হঠাৎই একদিন দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পরে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চ স্তরের অখণ্ডতা ও ঐক্য বজায় রাখতে বলছেন। সামরিক দিকটিও স্থিতিশীল ও সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার দিকে জোর দিচ্ছেন।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের তৃতীয় মেয়াদে কিন গ্যাং-এর বদলি এবং পিপলস লিবারেশন আর্মি রকেট ফোর্সের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার পরেই এই ঘটনাগুলি ঘটতে থাকে। একটি দেশের, তাও আবার চিনের মতো ক্ষমতাশালী দেশের মন্ত্রীরা নিখোঁজ হচ্ছেন, অথচ দেশ বিষয়টি নিয়ে এত চুপ! কেন? তার আগে জানা যাক কে এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী?

আরও পড়ুন- G20 সম্মেলনে চৈনিক ব্যাগ রহস্য! প্রকাণ্ড ব্যাগে করে কী এনেছিল চিন?

লি শাংফু চলতি বছরের মার্চ মাসেই চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হন। রাশিয়ার প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারকের কাছ থেকে যুদ্ধ বিমান এবং সরঞ্জাম কেনার জন্য ২০১৮ সাল থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাঁর উপরে। লি শাংফু ১৯৮২ সালের অগাস্টে পিপলস লিবারেশন আর্মিতে (পিএলএ) যোগ দেন। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি দলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য।

ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে শেষবার সামনাসামনি দেখা গেছিল ২৯ অগাস্ট। বেইজিংয়ে তৃতীয় চিন-আফ্রিকা শান্তি ও নিরাপত্তা ফোরামে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি। তারপর কীভাবে হারিয়ে গেলেন তিনি? মার্কিন সরকারের একজন কর্মকর্তা বলছেন, দুর্নীতির কারণেই এই অন্তর্ধান!

গোটা বিষয়টাই বিশ্বের কাছে অজানা ছিল। জাপানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাহম ইমানুয়েল গত সপ্তাহে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি পোস্ট করলে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফুর রহস্যজনকভাবে উধারো হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ৮ সেপ্টেম্বর তিনি X-এ একটি পোস্ট করে জানান, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মন্ত্রিসভা এখন আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাসের মতোই রহস্যে ভরা! প্রথমে বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাং নিখোঁজ হন, তারপরে রকেট ফোর্সের কমান্ডাররা নিখোঁজ হন এবং এখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফুকে দুই সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাংকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। পরে জুলাই মাসে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২৫ জুন বেইজিংয়ে রাশিয়ার উপ বিদেশমন্ত্রী আন্দ্রে রুডেনকোর সঙ্গে দেখা করার পর থেকে কিনকে আর কোনওদিন জনসমক্ষে দেখা যায়নি। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঘনিষ্ঠই ছিলেন কিন গ্যাং। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। ৫৭ বছর বয়সি এই মন্ত্রী লন্ডনে চিনা দূতাবাসে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের চিনা কূটনীতিকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ।

কিছুকাল আগেই একটি গুজব শোনা যায়, একজন বিশিষ্ট টেলিভিশন অ্যাঙ্কারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন কিন। এর জেরেই কি অপসারণ? চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছিল, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার জেরেই কিনকে দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন- নতুন মানচিত্রে ভারতের একাধিক জায়গা নিজেদের বলে দাবি! ঠিক কী করতে চাইছে চিন?

মন্ত্রীরা তো বটেই চিনে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উধাও কেন?

জুলাই মাসে, শি জিনপিং পিএলএর স্থলপারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের দায়িত্বে থাকা দুই রকেট ফোর্স কমান্ডারের পদোন্নতি ঘটান। তবে পূর্ববর্তী কমান্ডার জেনারেল লিউ গুয়াংবিন এবং জেনারেল লি ইউচানোর বিষয়ে একটি কথাও উল্লেখ করা হয়নি।

বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, জোর করে এই কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া বিষয়টি আসলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েই তৃতীয় মেয়াদে দলের প্রেসিডেন্ট হন শি জিনপিং। ২০১৩ সালে প্রথমবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকেই জিনপিং দুর্নীতির অভিযোগ থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।

তবে চিনের হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিত্বদের এরম নিখোঁজ হওয়া নতুন বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক হু জিনতাও গত বছর বিংশতিতম পার্টি কংগ্রেসের পরে অদৃশ্য হয়ে যান। কয়েক মাস প্রকাশ্য কোনও অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যায়নি। হঠাৎ একদিন তাঁর পূর্বসূরি জিয়াং জেমিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তাঁকে দেখা যায়। চিনের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে শি জিনপিংও নিখোঁজ হন। তবে এই বিদেশমন্ত্রী, এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা সব কোথায় গেলেন, এই রহস্য জিনপিং ছাড়া আর কারও জানাও নেই সম্ভবত। মন্ত্রী উধাওয়ের মতো হাইপ্রোফাইল রহস্য ধামাচাপা দিতেও চিনের বিশেষ সময় লাগবে না।

More Articles