Climate Change: বদলাচ্ছে পৃথিবীর আকৃতি, যে ভয়াবহ বিপদের মুখে আমরা
Climate change: এই যে জলবায়ুর সামগ্রিক পরিবর্তন, তার ফলে নাকি ক্রমশ বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর আকার। এমনকী দিনের দৈর্ঘ্য নাকি ক্রমশ বাড়ছে।
মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে পৃথিবীর রূপ-রস-বায়ু নিংড়ে নিয়েছে। তার বদলে পৃথিবীকে কার্যত ভরিয়ে দিয়েছে দূষণে, বর্জ্যে। আর তার বদলা যেন সুদে আসলে তুলছে প্রকৃতি। গত কয়েক বছরে লাগাতার বাড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। যা অন্যতম একটি কারণ বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু পাল্টে যাওয়ার। লাগাতার পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক সম্পদকে ক্রমাগত খরচ করে ফেলার মতো আরও অজস্র কারণ রয়েছে অবশ্য তার পিছনে। যা ইতিমধ্যেই টের পেতে শুরু করেছে মানুষ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগেও ছিল। তবে গত কয়েক বছরে তা যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। কখনও ভূমিকম্প এসে ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা শহর, কখনও বা এলাকার পর এলাকার বানভাসি হচ্ছে। সম্প্রতি ভূমিধসে কেরলের ওয়েনাড়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৯৩ জনের। এখনও পর্যন্ত আড়াইশো জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। কতজন এখনও আটকে তার ইয়ত্তা নেই। গত বছরই ভয়াবহ ভূমিকম্পের মুখে পড়েছিল তুরস্ক। যার বলি হয় প্রায় ২৪ হাজার মানুষ। চলতি বছর হজ করতে গিয়ে প্রচণ্ড গরমে মৃত্যু হয়েছে হাজার হাজার হজযাত্রীর। এমনকী প্যারিস অলিম্পিকেও গরমের জেরে বিপাকে পড়েছেন বহু প্রতিযোগী। একের পর এক পাহাড়ি এলাকায় ধস, হিমাচলপ্রদেশ থেকে শুরু করে উত্তরাখণ্ড, এমনকী সিকিমের মতো ভারতের একাধিক এলাকাও প্রকৃতির কোপে।
আরও পড়ুন: মৃত ৪৭, ধ্বংসস্তূপে আটকে ৫০০-রও বেশি! কেরলে কীভাবে ঘটল ভয়াবহ ভূমিধস?
এ বছর এল নিনোর দাপটে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঘূর্ণাবর্ত, ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কাও। ক্রমাগত এক চরম আবহাওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। গত জুন, জুলাই মাসকে ইতিহাসের সবচেয়ে গরমতম সময় বলে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অতিরিক্ত গরমের জেরে গলে যাচ্ছে বিশ্বের হিমবাহগুলি। একের পর এক জায়গা প্লাবিত করে সমুদ্রের জল বাড়ছে ক্রমশ। এমনকী তাপমাত্রা বাড়ছে সমুদ্রের ভিতরেও। যার ফলাফল ভুগছে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলিও। এখানেই শেষ নয়, এই যে জলবায়ুর সামগ্রিক পরিবর্তন, তার ফলে নাকি ক্রমশ বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর আকার। এমনকী দিনের দৈর্ঘ্য নাকি ক্রমশ বাড়ছে। পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার যে নির্ধারিত সময়, তা-ও পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে। এমনটাই জানা গিয়েছে সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে।
এই যে লাগাতার পাল্টে যাওয়া জলবায়ু, তার নেপথ্যে কিন্তু রয়েছে মানুষেরই হাত। তেমনটাই মনে করেন বিজ্ঞানীমহল। চলতি বছরের গত ১৫ জুলাই ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (PNAS) জার্নালে একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়, যেখানে পৃথিবীর স্বাভাবিক আহ্নিক ও বার্ষিক গতির উপরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এই গবেষণার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আর এই বদলের কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা তুলে ধরেছেন, মেরু অঞ্চল বিশেষত গ্রিনল্যান্ড ও আন্টার্কটিকায় বরফ গলে যাওয়াকেই দুষেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী জুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সব অঞ্চলগুলিতে বরফের ক্ষয়ে যাচ্ছে দ্রুত। যার ফলে এই নীল গ্রহের ভরবণ্টনের বিষয়গুলি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। আর এই যে অতিরিক্ত জল, তা জমছে বিষুবরেখার কাছে। আর সে কারণেই পৃথিবীর মাঝের অংশটি বেশি ফুলে যাচ্ছে। আর তার প্রভাবেই পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার গতি কমে যাচ্ছে।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির ভূ-পদার্থবিদ সুরেন্দ্র অধিকারী জানাচ্ছেন, মেরু অঞ্চল থেকে বিষুবরেখায় ভরের পুনর্বণ্টনের কারণে দিনের দৈর্ঘ্যও বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে চাঁদের মহাকর্ষীয় টান ও পৃথিবীর তলগেশে গলিত শিলার জায়গা পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর দিনগুলি প্রতি শতাব্দীতে কয়েক মিলিসেকেন্ড করে বেড়ে যাচ্ছে। আর এই পরিবর্তন হচ্ছে বেশ দ্রুত।
প্রতি চার বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা একটা করে দিন লিপইয়ার হিসেবে পাই। সেই বছরগুলোতে ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের। আসলে পৃথিবী যে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে, তার সঙ্গে আমাদের ক্যালেন্ডার ও ঘড়িকে এক সুতোয় রাখতে গিয়েই বেড়ে যায় ওই দিন। বাড়তে থাকে লিপ সেকেন্ড। যে ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দ্রুত পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিতে পরিবর্তন আসছে, তাতে সেই সমস্ত নিয়ম নতুন করে কেচে গণ্ডুষ করার সময় এসে গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এই ভাবে চলতে থাকলে ২১ শতকের শেষের দিকে গিয়ে পৃথিবী-চাঁদের গতিশীলতায় বড়সড় পরিবর্তন ঘটবে, আর তার প্রভাব হাড়ে হাড়ে বুঝবে মানুষ।
আরও পড়ুন: ভয় দেখাচ্ছে গরমের লাল চোখ! যে ভাবে ১০০ বছরে আমূল বদল প্যারিস অলিম্পিকে
এতদিন জানা যেত, পৃথিবীর আকার ঠিক গোল নয়, অনেকটা চ্যাপ্টা কমলালেবুর মতো। খুব শিগগিরই পৃথিবীর আকার বোঝানোর জন্য অন্য কোনও কিছুর সাহায্য় নিতে হবে বলেই মনে করছেন বৈজ্ঞানিকেরা। আর পৃথিবীর প্রদক্ষিণের গতি ও তার আকার পরিবর্তনের ফল নাকি সরাসরি পড়বে মানুষের কাজকর্মেও। পৃথিবীর আকৃতি পরিবর্তন হলে সমুদ্রের স্রোতেও বড়সড় পরিবর্তন দেখা যাবে। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন, সেই প্রভাবগুলিকে ভালো মতো বোঝার এবং জানার। পাশাপাশি সেই প্রভাব কমানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ করা উচিত, তা নিয়েও শুরু হয়েছে গবেষণা।