এবার রাজস্থান! ফের 'খুন' বাঙালি শ্রমিক, কেন বাড়ছে বাঙালি-বিদ্বেষ?

Bengal's Migrant Worker Death: দিন কয়েক আগেই বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় গোমাংস খাওয়ার অভিযোগ তুলে বাংলার এক পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর চড়াও হয় স্বঘোষিত গোরক্ষকেরা। এবার রাজস্থান।

ফের ভিনরাজ্যে খুন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক। হরিয়ানার পর এবার বিজেপি শাসিত রাজস্থান। দিন কয়েক আগেই গোমাংস রান্না করার অপরাধে পশ্চিমবঙ্গের বাসন্তীর বাসিন্দা সাবির মল্লিককে পিটিয়ে খুন করা হয়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আরও এক ভয়ানক ঘটনা। মালদহের বাসিন্দা মতি আলিকে মারধর করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্ত্রী।

পেটের দায়ে, জীবিকার প্রয়োজনে বাংলা থেকে বহু মানুষ ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান। পরিবার সূত্রের খবর, রাজস্থানের জয়পুরে সোনার দোকানে কাজ করতে গিয়েছিলেন মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের মিসকিনপুর এলাকার বাসিন্দা মতি আলি। প্রায় ২০ বছর ধরে জয়পুরের ওই সোনার দোকানে কাজ করছেন তিনি। মতির স্ত্রী জানান, মঙ্গলবার সন্ধেবেলা খাওয়ার সময় সহকর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়ান তিনি। অভিযোগ, তার পরেই নাকি তাঁকে বেধড়ক মারধর করে তাঁর সহকর্মীরা। পেটে গুরুতর চোট লাগে মতির।

আরও পড়ুন: ‘ভুল করে’ ব্রাহ্মণ কিশোরকেই খুন! হাত কামড়াচ্ছে হরিয়ানার গোরক্ষক দল

স্ত্রী রুকাসানাকে ফোনে মতি জানিয়েছিলেন, তাঁর পেটে ভয়ঙ্কর ব্যথা। যে কোনও মুহূর্তে যেন তাঁর পেটটি ফেটে যেতে পারে যেন। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করানো হয়। তবে বাঁচানো যায়নি তাঁকে। জয়পুরের হাসপাতালেই মৃত্যু হয় ওই শ্রমিকের। গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল আলমের কথায়, "প্রথমে মতিউরকে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখান থেকে বলে দেওয়া হয়, ওর পরিস্থিতি ভালো নয় ৷ প্রচুর মারধর করা হয়েছে ৷ ভিতরে কিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ ওর এক ভাই মুম্বইয়ে থাকে ৷ আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি ৷ ওর ভাই সঙ্গে সঙ্গে মুম্বই থেকে জয়পুর চলে আসে ৷ মতির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল ৷ আমরাই এখান থেকে টাকাপয়সা পাঠাই ৷ ওর দোকানের ম্যানেজারও হাসপাতালে যান ৷ তিনি বলেন, দোকানের এক কর্মীর সঙ্গে ওর ঝামেলা হয়েছিল ৷" মতির দাদা সাব্বির আলি জানান, দু'টো বাচ্চা রয়েছে মতির, একজনের বয়স আট, অন্যটার ৬ বছর। বাড়িতে উপার্জনের লোক ছিল একমাত্র মতিই। না পরিবারের আছে কোনও জমি-জিরেত, না বিষয় সম্পত্তি। এবার গোটা পরিবারের কীভাবে চলবে, সেটাই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার মতির পরিবারের কাছে।

Colleagues beat Bengal man to death in Jaipur over argument

 

ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বারবার বাংলার শ্রমিকদের প্রাণ যাচ্ছে। এর নেপথ্যে কি রয়েছে আদপে বাঙালি বিদ্বেষের প্রবণতা। প্রশ্ন তুলেছেন, হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল বিধায়ক এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন। তাঁর কথায়, 'এই যে আমাদের বাঙালিকে খুব ওরা ছোট নজরে দেখছে, বাঙালিরা কেন বড় হবে, এই বাঙালি বলে ওদের ঘৃণা।ওদের ঘৃণা হচ্ছে বাঙালিকে দেখে। এইজন্য আজ আমাদের যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে যাচ্ছে, অনেকেই মারা যাচ্ছে।'

দিন কয়েক আগেই বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় গোমাংস খাওয়ার অভিযোগ তুলে বাংলার এক পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর চড়াও হয় স্বঘোষিত গোরক্ষকেরা। বাসন্তির বাসিন্দা সাবির মল্লিকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল খালের পাশ থেকে। ঘটনার নৃশংসতায় চমকে গিয়েছিল দেশবাসী। তার পরে ফের আরও এক বাংলার শ্রমিকের মৃত্যু বিজেপি শাসিত রাজ্যে।
স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনার দায় বিজেপির দিকেই ঠেলেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা। রবিবার নিহত মতির দেহ মালদহে ফেরে। সেই দেহ নিয়ে মৌন মিছিল করেন স্থানীয়রা। সেই মিছিলে ছিলেন মালদহ জেলার তৃণমূল সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি, রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন, ব্লক তৃণমূল সভানেত্রী মর্জিনা খাতুন-সহ অনেকেই।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে 'অপদার্থ' বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি বাংলার বিজেপি কর্মীদের কার্যত হুমকি দিয়েছেন আব্দুর রহিম। ওই মিছিল শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জানান, ‘যদি বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হত্যা বন্ধ না হয়, তবে বাংলার বিজেপি কর্মীদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটানো হবে।’

আরও পড়ুন:গো-রক্ষকদের তাণ্ডব থেকে ফ্যাসিবাদের জয়গান, ভারত হওয়া সত্যিই সহজ নয়!

সব মিলিয়ে ভিনরাজ্যে বিশেষত যেখানে যেখানে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি, সেখানে যেভাবে বারবার বাংলার শ্রমিকেরা হামলার মুখোমুখি হচ্ছে, তাতে নিন্দার ঝড় সর্বত্র। হরিয়ানায় নিহত পরিযায়ী শ্রমিকের নিহত স্ত্রীকে ইতিমধ্যেই চাকরির ব্য়বস্থা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাসন্তীতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে একবছরের জন্য অ্য়াটেনডেন্ট এবং পরে গ্রুপ–ডি পদে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। তাঁর চার বছরে শিশুসন্তানের পড়াশোনার ব্যবস্থাও সরকার করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি রাজ্য় সরকারের তরফে ৩ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হয়েছে তাঁর পরিবারকে।

More Articles