হার্ভার্ডেও আছি, হনুমানেও! কলকাতার একদিকে কালীক্ষেত্র, অন্যদিকে সংকটমোচন
রোদ্দুরের তেজটাও আমার শরীরের অসুখবিসুখের মতো বাড়ছে কমছে। আমি আর ফাল্গুন মাসের এই রোদ্দুরটার মাঝখানে, মাঝে মাঝে দু'-একটা বড় গাছ, প্রোজেক্টের বাড়ির সারি, লাইটপোস্টের গায়ে লটকানো নানান রঙের, নানান ঢঙের সঙের হোর্ডিং ঢুকে...
এই যে জয়শ্রী সংঘ পর্যন্ত যাচ্ছি—
কেন?
কী হবে গিয়ে?
কী দেখব আমি?
কী দেখতে চাই আমি?
কী দরকার?
এতসব দেখে কী করব?
কালীবাড়ি ব্রিজ থেকে নামার মুখে, বাঁদিকে একটা দেওয়ালের গায়ে আর ব্রিজ থেকে নামলেই বাঁদিকে, আরও একটা ঢালাইয়ের লাইটপোস্টের গায়ে A-4 সাইজের কাগজে ডিজিটাল প্রিন্ট করা দুটো সাদাকালো পোস্টার চোখে পড়েছে ক'দিন। একটায় লেখা, "১লা ফেব্রুয়ারী আঞ্চলিক শহিদ দিবস পালন করুন", আরেকটায় লেখা, "শহিদ কমরেড যোগেন রায় লাল সেলাম"। দুটো পোস্টারই সিপিআই(এম)-এর। একজন শহিদের নামও জানা যাচ্ছে। কোন সালের ঘটনা, তা বলা নেই। এই খবরটা মনে হয় 'গণশক্তি'- তে দেখেছি।
কালীবাড়ি ব্রিজ থেকে নামলেই চায়ের দোকানে জমাট আড্ডা। এই আড্ডার সামনেও দুটো লটারির টেবিল। বাঁদিকে কয়েক পা গেলে আরও তিনটে টেবিল। সর্বত্রই মা তারা বিরাজমান। 'বিরাজমান' শব্দটায় আমার মনে পড়ল, "একবার বিরাজ গো মা হৃদি কমলাসনে"- এই গানটা আমার খুব ভালো লাগে। পরের লাইনটা হলো, "তোমার ভূবনভরা রূপটি একবার দেখে লই মা নয়নে"। ইউটিউব-এ গানটা আছে। স্বামী কৃপাকরানন্দ গেয়েছেন। খুব সুন্দর। অটো ডানদিকে গিয়ে আবার বাঁদিকে টার্ন করেছে।
আরও পড়ুন: তাঁর থেকে লটারির টিকিট কিনে লাখপতি হয়েছে অনেকে, কিন্তু নিজে কেমন আছেন বিশ্বনাথবাবু?
আমি দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল করতাম আগে। থিম বলে যাকে। যে থিম করে, সে 'থিমার'। তেলেঙ্গানবাগানে প্যান্ডেল করতে গিয়ে এই অভিধায় অভিহিত হয়েছিলাম। সে আরেক কাহিনি। যে প্রসঙ্গে একথা বললাম, তার কারণ হলো, একবার শোভাবাজার স্ট্রিটে প্যান্ডেল করতে গেছি, ওখানে একটা মুরগি কাটার দোকানে তারাপীঠের তারার খুব বড় একটা ছবি দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা এই ছবি রাখো কেন? উত্তরটা আমার এখনও মনে আছে, "কাটাকাটির জায়গায় রাধাকৃষ্ণ, রাম-হনুমান, গণেশ-কার্তিক চলে না। বাবা লোকনাথ, শিবদুর্গা, লক্ষ্মীনারায়ণ, চলে না। কালী লাগে। তারা লাগে। দোকানের বিক্রিবাট্টার জন্য তো ভগবান লাগবেই, তাই না?"
তাই কালী আর তারা। এমন সহজে এত গূঢ় কথা রামপ্রসাদ-কমলাকান্তও বলতে পারেন নি। এখানে, এই কালীবাড়ি ব্রিজের কাছে, লটারির টেবিলের একজনকেও এই একই প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি আরও বিস্তারিত করলেন ব্যাপারটা, "লটারির টিকিট বিক্রি করা আর কেনা, দুটোতেই ভাগ্য লাগে। যে কিনবে, তার নম্বর উঠলে টাকা পাবে, তাতে আমারও লাভ। কমিশন আছে। আর লোক ভাববে আমার কাছ থেকে কিনলেই লটারি পাবে। তাতে আমার টিকিট বিক্রিও বাড়বে। যত বিক্রি তত লাভ। এইজন্যই কালী ঠাকুর আর তারা মায়ের ছবি রাখা হয়। কালী আর তারা রাখলে ভাগ্য ভালো হয়। তারা মায়ের আশীর্বাদ না হলে চলবে না। সবাই না খেয়ে মরবে। অন্য ভগবান এখানে চলে না। বাঙালি কালী আর তারা মায়ের ছবি ছাড়া বাঁচতে পারবে না। তবে, লটারির লাইনে কোথাও কোথাও আপনি বড় কাছারি বা বাবা লোকনাথ আর রাম ঠাকুরের ছবিও দেখতে পারেন। কিন্তু মেন মেন জায়গায় কালী আর তারা থাকবেই।"
বোঝা গেল বিষয়টা। এইজন্যই কালীক্ষেত্র কলিকাতা। আর এখানেই কিনা এখন এত হনুমানের দৌরাত্ম্য! অটো জয়শ্রী কালীমন্দিরের কাছে চলে এসেছে। আমি নেমে গেলাম। মন্দির এখন বন্ধ। আমার খোঁজ শুরু হলো। এখানে একটা হনুমান মন্দির আছে কোথাও। কেন আমার এমন মনে হয়েছে, তার কারণ একটা হোর্ডিং। কয়েক বছর আগে গাছতলার বাস স্টপে ফুটপাথের রেলিংয়ের গায়ে ওই হোর্ডিং লাগানো ছিল। আমি তার একটা ছবি তুলে রেখেছিলাম ফোনে। সেটা এই ফোনেই আছে। সেই ছবির সূত্র ধরে একটা মন্দির খুঁজতে যাচ্ছি। এই মন্দির আমি দেখিনি এখনও।
জয়শ্রী কালী মন্দিরের উল্টোদিকে এগিয়ে যাচ্ছি। একজনের কাছে জানতে চাইলাম, হনুমান মন্দির এই রাস্তায় কিনা। বললেন, আর একটু গেলেই বাঁদিকে। গেলাম।
বাঁদিকে প্রথমে দেখলাম বাঁশদ্রোণী কালীতলা ফ্রি প্রাইমারি স্কুল। স্থাপিত ১৯৫৪ সাল। তারপর পেলাম রামকৃষ্ণ শিশু উদ্যান। তারপর বিরাট একটা কমলা রঙের লোহার বন্ধ গেট। গেটের গায়ে লেখা, বিবেকানন্দ যুব সংঘ, আর সাদা রঙে আঁকা স্বামীজির মুখ। গেটের ভেতরে ক্লাবঘর। স্থানীয় একজন বললেন, এটা ব্যায়ামাগার। এই গেটের পাশেই সংকটমোচন হনুমান মন্দির। মন্দির না বলে স্রেফ দালান বলাই ভালো। অবশ্য দালানের মতোও মন্দির হয়। আছেও এই বঙ্গদেশে। এখানে, এই দালানে একটা চুড়ো আছে। খুব বিশেষ কিছু নয়। বাংলাদেশের মন্দিরের মতো সুন্দর নয়। কোনও বিশেষত্ব নেই। এই অঞ্চলের নৈসর্গিক দৃশ্য, ঘর-বাড়ি-দোকান, মহাজন, সাধারণ লোকজন— কারও সঙ্গেই কোনও মিল নেই এই মন্দির স্থাপত্যের। কিন্তু আমার তাতে কিছুই যায় আসে না। আমি খুঁজছি অন্য কিছু। মন্দিরের প্রতিষ্ঠা কবে। কে উদ্বোধন করলেন, এই সব। কেন? কারণ ওই হোর্ডিং, যা গাছতলায় দেখেছিলাম। সেই হোর্ডিং-এ লেখা ছিল—
সংকটমোচন
হনুমান মন্দির
প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন (প্রথম বর্ষপূর্তি)
৩১ জানুয়ারী, ২০১৮, বুধবার
এরপর লেখা ছিল, সারাদিন ধরে 'পূজা, আরতি, সুন্দরকাণ্ড ও হনুমান চালিশা পাঠ'-এর কথা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাড়ে ছ'টায় শুরু। "প্রাঙ্গন: কালীতলা বিবেকানন্দ যুব সংঘ। প্রধান অতিথি, ড. সুগত বসু, মাননীয় সাংসদ (যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র)।" এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন বলে লেখা ছিল, অরূপ বিশ্বাস ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম। শোভন তখন কলকাতা পুরসভার মেয়র ছিলেন। অরূপ বিশ্বাস মন্ত্রী।
এখন প্রশ্ন হলো, 'হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসু' কি হনুমান মন্দিরের উদ্বোধনের দিনও এসেছিলেন?
মন্দিরের নিচের দিকে কালো পাথরের ওপর খোদাই করে ইংরেজিতে লেখা আছে—
সংকটমোচন হনুমান মন্দির
ইনঅগারেটেড বাই
স্বামী গিরীশানন্দজি মহারাজ
ভারত সেবাশ্রম সংঘ
গড়িয়া ব্রাঞ্চ
কলকাতা
অন
৩১ জানুয়ারি, ২০১৭
তারমানে, ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি এক বছর পূর্তি ঠিকই আছে। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর নেই। কারা আরও উপস্থিত ছিলেন উদ্বোধনের দিন, তার হদিশ মিলছে না। এই সংকটমোচন হনুমান মন্দিরের বর্ষপূর্তি উপলক্ষেই সুগত বসু প্রধান অতিথি! আমার দেখা হোর্ডিং তাই-ই বলছে। এটা কি একটা রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা? ভোট কি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সংকটমোচন হনুমান মন্দিরকে এভাবেও অনায়াসে জুড়ে নিতে পারে? ফাটাফাটি!
অবশ্য, এতে হয়তো আমার যতটা অবাক লাগছে, ততটা অবাক হচ্ছে না 'সাধারণ' জনতা অথবা 'অ্যাকাডেমিক্সের' লোকজন।
ভোটের গণতন্ত্রে বোধহয় সবই ভৌতিক কাহিনি। তবে দেখতে পেলে মন্দ লাগে না।
মন্দির দেখা হল। হনুমান মন্দিরের হনুমান দেখা হলো। কিন্তু কলা বেচা হলো না। ওই খটকায় আটকে গেলাম— উদ্বোধনের দিন আর কারা এসেছিলেন।
দশ টাকা অটোতে ভাড়া লাগবে আবার যদি অটোতে উঠি। হাঁটা দিলাম। খিদেয় মাথা ঘুরছে আমার। বিস্ময়েও। সুগত বসু হনুমান মন্দিরের বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি! ইন্টারেস্টিং বলতে হবে।
আস্তে আস্তে হেঁটে চলে যেতে পারব। হাঁটা শুরু করলাম। জয়শ্রীর কালী মন্দিরের নাম দেখলাম লেখা আছে, বাঁশদ্রোণী কালীতলা মহামিলন মন্দির। অনেকদিনের পুরনো মন্দির। এখন মন্দির বন্ধ। কোলাপসিবল গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরের কালী দেখলাম। ছোট মূর্তি। সুন্দর। সেই সকাল থেকে ঘোরাঘুরি করছি। এখন আর পারছি না। গেট ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। মাথাটা একটু চক্কর দিল মনে হলো।
বাঁশদ্রোণী কালীতলা! সাতের দশকে খুব পরিচিত নাম ছিল। বহু বামপন্থী কর্মী তখন এখানে খুন হয়েছেন কংগ্রেস-সিআরপি-র হাতে। সিপিআই(এম)-নকশাল সমর্থকদের মধ্যেও খুনোখুনি হয়েছে। এখনও সেইসব গল্প এখানে শোনা যায়। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত বাঙালির কলোনি এলাকা। চারদিকে ছড়িয়ে আছে, বিনয় পল্লি, দীনেশ নগর, নিরঞ্জন পল্লি, বিধান পল্লি। সবই উদ্বাস্তু কলোনি। এখানেই হঠাৎ ২০১৭ সালে ঢাক পিটিয়ে একটা সংকটমোচন হনুমান মন্দিরের কী দরকার পড়ল, বোধগম্য হলো না। এবং তার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে ড. সুগত বসু প্রধান অতিথি কেন, তা-ও বিস্ময়কর! বাঙালি এখন মনে হয়, ঘোর সংকটে নিমজ্জিত। তারই বোধহয় মোচন দরকার।
অতএব প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সন্ধেবেলা তাই সুন্দরকাণ্ড এবং হনুমান চালিশা পাঠ-এর ব্যবস্থা। মেয়র-মন্ত্রী-সাংসদ হাজির থেকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন বলেই হয়তো হোর্ডিং-এর অবতারণা। অন্তত হোর্ডিং থেকে যা পাওয়া গেল, তা এইরকমই। তবে কি, হনুমান মন্দিরের যে হঠাৎ করে এত বাড়বাড়ন্ত, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক আছে? এই হনুমান কি তৃণমূলের? এবং তৃণমূলের এই হনুমান কি আসলে বিজেপির রামের অ্যান্টিডোট?
গাছতলায়, কলোনির উপকণ্ঠে সেই এক কোটি টাকার ফ্ল্যাট ছেড়ে একটু এগিয়ে গেলে বাঁদিকে যে রাস্তা, তা একেবারে সেই অধুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া মালঞ্চ সিনেমার সামনে এনএসসি বোস রোডে উঠেছে। এই রাস্তার ওপরেই রয়েছে খুবই জাঁকজমকপূর্ণ তিনটে হনুমান মন্দির।
গাছতলার পর, এনএসসি বোস রোড-এ, নেতাজিনগর টপকে রানিকুঠিতে জিডি বিড়লা স্কুলের সামনে রিকশা স্ট্যান্ডের শনিমন্দিরেই হনুমান চালিশা পাঠ করেন মঙ্গলবার আর শনিবার করে, অনেক ভক্ত। মূর্তি ছাড়াই হনুমানজি বিরাজমান এখানে। বিজয়গড় কলেজের সামনে হনুমান মন্দিরের বিশেষ খ্যাতি আছে। তারপর, গাছতলা থেকে গড়িয়ার দিকে এগিয়ে গেলে, গাছতলার ঠিক পরেই সূর্য নগর। সেখানে এখন বিরাট এক প্লাইউড-এর শো রুম হয়েছে। নাম, প্লাইউড হাউস। তারপর থেকে সূর্য নগর আর কেউ বলছে না। অটোরিকশায় উঠলেই শোনা যায়, প্লাইউড হাউসে নামব। সূর্য নগর হারিয়ে গেছে এখন। এই 'হাউস'-এর গা দিয়ে যে রাস্তা ঢুকেছে, সেখানে খানিকটা গেলেই হনুমান মন্দির। শনিবার আর মঙ্গলবার খুব ভিড় হয়। সূর্য নগর ছাড়িয়ে গড়িয়ার দিকে এগিয়ে গেলে পথে পড়বে শ্রীগুরু আশ্রম। আশ্রমে যাওয়ার পথে বাঁদিকে তৈরি হয়েছে হনুমান মন্দির। এই মন্দিরের ভিড় বাংলা সিরিয়াল দেখার ভিড়ের সঙ্গে তুলনীয়। তারপর বাঁশদ্রোণী ব্রিজ টপকে ওপারে গেলে, আদিগঙ্গার গায়ে যে কালী মন্দিরে শনির মূর্তি ছিল, এই ইংরেজি বছরের শুরুতে, কলকাতা পুরসভার ভোটের পর, সেখানে হনুমান এসেছেন। সব মিলিয়ে জমজমাট অবস্থা। সর্বত্র হিন্দিভাষী পুরুত আছেন মাইনে করা। শনিবার আর মঙ্গলবার এইসব মন্দিরের সামনে প্রচুর ভক্ত জড়ো হয়। ওই দিন পুরুতমশাইরা হনুমান চালিশা পাঠ করেন সুর করে। বাঙালির শনি ঠাকুরের মন্দিরের কালী ঠাকুর অথবা কালী ঠাকুরের মন্দিরের শনি ঠাকুর এখন যেন বজরংবলীর শরণাপন্ন হয়েছেন। মাত্র দু'-এক কিলোমিটার এলাকায় এই দৃশ্য দেখা যায় এখন। এই পরিস্থিতিতে আমরা কলোনির উপকণ্ঠে ফ্ল্যাটের দাম এক কোটি টাকা কী করে হয় বা কেন হয় বা কারা কেনে— এসব ভেবে দেখতে পারি।
আমি হাঁটতে হাঁটতে রাইফেল ক্লাবের মাঠের সামনে এলাম। এখানে একটা খুব উঁচু এবং খুব মোটা পাঁচিল আছে। ইংরেজ আমলে এখানে নাকি রাইফেল শুটিং হত। তাই থেকে এই নাম। এই গোটা এলাকা— পুরসভার ১১১ থেকে ১১৪ নম্বর ওয়ার্ড জুড়েই সাতের দশকে বামপন্থীদের অনেকে শহিদ হয়েছেন। এঁদের মধ্যে সিপিআই(এম) এবং নকশাল— উভয় দলের কর্মী এবং সমর্থকরাই আছেন। খুনে অভিযুক্তরা কংগ্রেস-পুলিস-সিআরপি। এই অভিযোগের পাশাপাশি, নকশালদের অভিযোগ, সিপিআই (এম) সমর্থকদের হাতেও খুন হয়েছেন নকশাল কর্মীরা, এবং বিপরীতে একই বক্তব্য সিপিআই(এম)-এর সমর্থক ও কর্মীদেরও। এই শহিদদের স্মরণেই A-4 সাইজের ছোট ছোট পোস্টার কালীবাড়ি ব্রিজের কাছে দেখেছি।
সেই সকালে যে করেন ফুল দেখে, রোদ্দুরের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছি, এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছি। রোদ্দুরের তেজটাও আমার শরীরের অসুখবিসুখের মতো বাড়ছে কমছে। আমি আর ফাল্গুন মাসের এই রোদ্দুরটার মাঝখানে, মাঝে মাঝে দু'-একটা বড় গাছ, প্রোজেক্টের বাড়ির সারি, লাইটপোস্টের গায়ে লটকানো নানান রঙের, নানান ঢঙের সঙের হোর্ডিং ঢুকে পড়ছে। ওই সঙেরা মনে হয় সৃষ্টির সেই আদিম মুহূর্ত থেকে হাত জোড় করে, পাবলিকের দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তবে, এইসব যখন আমার আর রোদ্দুরের মাঝখানে এসে পড়ছে, তখন ছায়া— আমার খানিক আরাম। যদিও, এই সময়ের রোদ্দুর আমার ভালো লাগে। তার তেজ, তার ছায়া, তার মায়া— আমি সবেরই প্রত্যাশী। আর তো ক'দিন। তারপর এই মায়া উধাও হবে। এই শিরশিরানি তখন বেপাত্তা। রোদ্দুরের এই শৃঙ্গার তখন ভ্যানিশ। বাউন্সারের মতো রক্তচক্ষু তখন তার। খিটখিটে। দজ্জাল। কুচুটে।
কাগজ কিনে একুশ টাকা ছিল। তারপর কী করলাম? অটো ভাড়া দশ টাকা দিলাম। আর? আর কিছু না। এই যে এগারো টাকা আছে। আর ব্যাগে কিছু খুচরো পয়সাও আছে। খুব খিদে পেয়েছে। কী হবে এই টাকায়! হাঁটতে হাঁটতে আবার কালীবাড়ি ব্রিজের দিকেই চলে এলাম। ব্রিজে না উঠে সূর্য সেন মেট্রো স্টেশনের দিকে চললাম। বাড়ি চলে যাই। ভাত বসাই। ডিম আছে। সিদ্ধ করে, পেঁয়াজ কুচি আর সরষের তেল দিয়ে মেখে গরম গরম ভাত খেয়ে নেব। ইনসুলিনও তো নিতে হবে। নিডল্ কেনা দরকার। এখন আর হবে না। আর টাকা নেই। পরে হবে। বাড়িই যাই।