শহরে পুতিনের বোমা আর পুরুতমশাইয়ের নৈবেদ্যর ফুল
রোদটা কেমন যেন একটা নেশা ছড়িয়ে রেখেছে। একটা ঝিমঝিম ভাব। মনে হচ্ছে, হালকা-পাতলা, ঠান্ডা ঠান্ডা একটা তরঙ্গ যেন ছড়িয়ে পড়ছে শরীরময়। এইরকম সময়েই কি শীৎকার উৎপন্ন হয়? কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে। তবে, আমার এই মুহূর্তের প্রশ্ন, আজকে দুপুরে খাব কী?
পিছনে শুনলাম রিকশার প্যাঁক প্যাঁক!
যেন বাতাস বেয়ে উড়ে এসে আমার পিঠ ফুঁড়ে চলে গেল আওয়াজটা…
ওই যে আবার…
ওই যে আবার… প্যাঁক প্যাঁক
আবার…
প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক…
এটা হাঁসের ডাকও হতে পারত। কিন্তু—
মনে হল কেউ যেন আমাকে বিদ্রুপ করছে।
আমি এগিয়ে গেলাম। আবার! আমার পিছু নিয়েছে যেন ওই বিদ্রুপের মতো ধারালো আওয়াজটা… আমি কি পিছনে ঘুরে দেখব একবার। একটা কড়া ধমক দেব ওই বেয়াড়া রিকশায়ালাকে? ঘুরে দাঁড়াব তার মুখোমুখি? কিন্তু—
সত্যিই কি কেউ বিদ্রুপ করছে আমায়? সত্যিই কেউ কি পিছু নিয়েছে আমার?
ওই প্যাঁক প্যাঁক কি আমি ছাড়া আর কেউ শুনতে পাচ্ছে?
ঝিমঝিম করছে আমার সারাটা শরীর। যেন মহুয়া খেয়েছি। যেন মাদল বাজিয়ে কেউ অনেক দূরের রাস্তা দিয়ে কোথায় চলে যাচ্ছে। আমিও যেন এখন কোথায় চলেছি টলতে টলতে, ফাল্গুন মাসের এই রোদ্দুরটা গায়ে মেখে— ছন্দহীন, ব্যাকরণহীন, অপার উদ্দেশ্যহীন…
আবার!
প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক!
ঘুরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। এবার একটা এসপার-ওসপার হয়ে যাক! কে এই শয়তান অনুসরণকারী! কিন্তু যদি ঘুরে কাউকে না দেখতে পাই! যদি কেউ সত্যিই পিছনে না থাকে! এই বাজারের লাগোয়া রাস্তায় যদি মুহূর্তে সব, সাদা-কালো নির্বাক চলচ্চিত্রের মতো প্রর্দশিত হতে থাকে— দৃশ্যের পর দৃশ্য, দৃশ্যের পর দৃশ্য! নাগরিক সমাজের কি কোনও দায় আছে তাতে? কেউ কি ঘোষণা করে জানান দেবে তার দায়? অসহ্য!
আরও পড়ুন: করেন ফুল ফরেন ফুল ৷৷ নতুন ফুল আবিষ্কারের গল্প
কখন কোথায় নিজে নিজেই থেমে গেল আওয়াজটা। কাগজের স্টলের অনিমেষ বলল, কোথায় চলে যাচ্ছেন? কাগজটা নিয়ে যান। মনে হয় হুঁশ ফিরে পেলাম যেন। কী শান্তি! ঘুম থেকে জেগে উঠে বসলাম যেন। মনে হয় বোবায় ধরেছিল। ফাল্গুন মাসের রোদ্দুরটায় নেশা হয়, মনে হয়।
শনিবার ছ'টা কাগজ উনত্রিশ টাকা। আমার পকেটে পড়ে থাকবে আর একুশ। দুটো ডিম বাড়িতে আছে। চাল আছে ঘরে। চলে যাবে আরও কয়েকদিন। বাড়িতেই রান্না করে নেব, ডিমের ঝোল আর ভাত।
খুব ভাল!
কাগজের স্টলে এই ফাল্গুন মাসেই বাংলা ক্যালেন্ডার, পঞ্জিকা, ১৪২৯ কেমন যাবে— এসব এসে গেছে। দড়িতে জামাকাপড় ঝোলানোর ক্লিপ দিয়ে লটকানো রয়েছে।
পঞ্জিকা বলতে, বেণীমাধব শীল আর শ্রীমদন গুপ্ত। বাংলা ক্যালেন্ডারও এঁদেরই।
স্টলে 'সাপ্তাহিক বর্তমান'-এর ২০২২ কেমন যাবেও আছে। বাংলা-ইংরেজি সালের বাঙালি-ভাগ্য স্টলে স্টলে লটকে রয়েছে ঐক্যবদ্ধভাবে।
মানুষের ভাগ্য আর বাঙালির ভাগ্য কি একই রকমের না কি কোনও তফাৎ আছে? মনে হয়, কোনও কোনও মানুষ বাঙালি, আবার কোনও কোনও বাঙালি মানুষ। কে জানে, এইরকম মনে হওয়ার কোনও পেটেন্ট কি কেউ আগেই নিয়ে রেখেছে? তাহলে আর এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে, বুদ্ধদেব বসুর উপলব্ধি ছিল, "পৃথিবী হঠাৎ ছেলেমানুষে ভ'রে গিয়েছে।"
কাগজয়ালা এখন কাগজ ছাড়া আরও অন্য অনেক কিছুই বিক্রি করে। যেমন—
মাস্ক। স্যানিটাইজার। অর্গানিক বিস্কুট। ঘি।
মায়াপুরের বৈদান্তিক ঘি। সুন্দরবনের নিমের মধু্। নারকেল নাড়ু। ধূপকাঠি। আরও কিছু।
এসব করোনাকালের অবদান। অতিমারীর টাইমে বিক্রির মাল-এ বৈচিত্র্য এসেছে। আমার যখন টাকা হবে তখন ওই বৈদান্তিক ঘি কিনব ঠিক করে রেখেছি। গরম ভাতের সঙ্গে বৈদান্তিক ঘি। আর ক'টা কাঁচালঙ্কা। কুমড়ো ফুলের বড়া। আহ্! জিভে জল চলে এল।
খেয়ে উঠে তারপর ভাষ্য লিখতে বসব। এখান থেকেই ব্রক্ষ্মবিদ্যাচর্চার একটা নতুন সংরূপ উন্মোচিত হবে। বঙ্গবিদ্যাচর্চার সঙ্গে ব্রক্ষ্মবিদ্যা— মায়াপুরের ঘিয়ের দৌলতে এক মুহূর্তে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। সেন্টারে-সেন্টারে আলোচনা হবে। তার কেন্দ্রে থাকবে— ঘি!
তবে, আমার এখনকার অবস্থাটা যেরকম, তাতে, খাবারের আগে এতসব কায়দামারা শৃঙ্গার বা অভিসার খুবই দুরভিগম্য।
মাঝে মাঝে মনে হয়, এই যে এইরকম সব ভাবনা আমার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে, হয়তো এসব ভুল। আমার হয়তো একদিন ভুল ভাঙবে। ওই চায়ের দোকানে আমি আরও কিছুক্ষণ বসতে পারব। কেউ হয়তো আমার পিছনে পিছনে আর বিদ্রুপের মতো তীক্ষ্ম শব্দে অনুসরণ করবে না। হয়তো আমার কোনওই অভাব নেই। কে জানে? যাই হোক, তবে একটা কথা ঠিক যে, করোনা এসেছে বলে আমরা 'মাকস' কী তা যেমন জানতে পেরেছি, তেমনি এটা যে থুতনিতে ব্রা-প্যান্টি বা জাঙ্গিয়ার মতো পরতে হয়, তা-ও দেখতে পেয়েছি। সবই হলো করোনার দান।
ছ'টা কাগজ ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছি।
আনন্দবাজার। আজকাল। বর্তমান।
এই সময়। সংবাদ প্রতিদিন। গণশক্তি।—
এই হলো ছ'টা কাগজ।
আমার নিত্যদিনের সঙ্গী।
কী যে আনন্দ হয় কাগজ পড়ে! একেবারে যাকে বলে, অর্গাজেমিক আনন্দ! তবে, বিশেষ বিশেষ দিনে আরও ক'টা বাংলা কাগজও কিনি। আজ কোনও বিশেষ দিন নয়। ভাবছি ছাতুমাখা কিনে নিয়ে যাই। অনেক দিন ছাতু খাই না। একুশ টাকায় হয়ে যাবে মনে হয় খানিকটা।
এখানেই ছাতুয়ালা আছে। এখন চাকা লাগানো গাড়িতে করে ঠেলে ঠেলে ছাতু নিয়ে আসে ছাতুয়ালা। আগে মাথায় ঝুড়িতে করে ছাতু, নুন, লেবু, পেঁয়াজ, চাটনি, লঙ্কা— আর কাঁধে ঝোলায় করে অ্যালুমিনিয়ামের কানা উঁচু থালা, ঘটি, বালতি নিয়ে আসত এই ছাতুয়ালার বাবা। রাস্তার পাশে বড় একটা আম গাছের তলায় ইঁট পেতে বসত সবাই।
ছাতুয়ালা ছাতু মেখে দিত। ঘটিতে জল থাকত। খাওয়ার পর থালা ধুয়ে রাখতে হত।
যে খাবে সে ধোবে। এটাই নিয়ম ছিল।
আমি তখন ছোট ছিলাম।
সুরজিৎ সেনগুপ্ত আর হাবিব তখন আমার খুব প্রিয় ছিল। দু'জনের ছবি কেটে রাখতাম বইয়ের মধ্যে। তখন মেট্রো রেল ছিল না। মোবাইল ফোন ছিল না। আমার এইরকম অভাব-অভাব ভাব ছিল না।
অভাবটাও একটা ভাব মনে হয়, এই যেমন সাধনার ক্ষেত্রে দাস্য ভাব, তেমন। হিন্দু মতে, নাকি চুরাশি লক্ষ যোনি অতিক্রম করে তবে মানুষের মুক্তি! বাপরে! বিরাট লম্বা পথ। জন্মের পর জন্ম পার হতে হতে, হতে হতে, হতে হতে…
"কখন তোমার আসবে টেলিফোন"
মনি দা এখন কোথায় আছে?
আমারই বা এখন কত নম্বর চলছে? কে জানে? কার কাছে গিয়ে হিসেব চাইবে জনতা? অবশ্য, জনতার কি এই বিষয়ে কোনও জিজ্ঞাসা আছে আদৌ?
শীত ছিল, বসন্ত চলছে, গরম এসে পড়ল বলে সরকারিভাবে, তবুও কি ঘুরেফিরে একবারও জানার উপায় আছে, কবে আমার দরজায় টোকা দিয়ে কেউ বলবে, তোমার মুক্তি হয়েছে। নাও, এবার গোটা পৃথিবী সুরম্য হলো তোমার কাছে।
এই ছাতুয়ালার সাইকেলের দু'টো চাকা লাগানো একটা বাকসো গাড়ি, কাঠের। তার ওপরটায় ঝকঝকে গ্যালভানাইজড্ টিন লাগানো। তার ওপর কাচের গ্লাস সাতটা। একটা ছাতু গোলানোর ঘটি। কাঠের ডালের কাঁটা। ছুরি। ছাতুর প্যাকেট। লেবু। নুন-লঙ্কা, মশলা, পেঁয়াজ, চাটনি। এছাড়াও রয়েছে দুটো নীল রঙের প্লাস্টিকের জলের ড্রাম। তার ওপরে লালশালুর কাপড় মেলে দেওয়া। আরও আছে, লেবু টেপার কাঠের যন্ত্র। আর একটা বড় বাটি। এখন সবাই ছাতুর ঘোল খায়। কেউ চাইলে, ওই বাটিতে ছাতু মেখে দেয় ছাতুয়ালা।
আমি খাব? খেলেই সব টাকা শেষ। পকেট গড়ের মাঠ। কী করব? খাব? আচ্ছা একটা হিসেব করি। খাবারের হিসেব।
ফাল্গুন মাসের রোদ্দুর আমায় বশ করেছে। আজকে নয়। আমিও যখন অনেকের মতো ছোট ছিলাম, তখন থেকেই আমার কাঁধে চেপেছে বেতালের মতো। "সব্বাই" যখন 'একছুট্টে' মায়ের কোলে এসে 'চুপটি' করে বসে থাকত, আর তাকে ঘিরে বাঙালি বাড়ির দিদুন, ঠাম্মা, ছোড়দি পিসি, বড়দি মাসি ইত্যাদি-প্রভৃতিদের ক্লাসিকাল নকশা চলত, তখনও আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম, শীত চলে গেলেই। তখন ফাল্গুনের এই মাহাত্ম্য জিভে আনতে পারতাম না বটে, কিন্তু তার উপস্থিতি টের পেতাম। সবাই যখন বাল্যসখা তৈরি করে ফেলেছে, আমি তখন ফাগুনের আগুনে মত্ত। সেই ফাল্গুনে এখন, এই মধ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে, হিসেব করতে খুব ভাল লাগে আমার। সারা গায়ে কেমন একটা শিরশিরানি শুরু হয়। পাশ দিয়ে কত মানুষ-গাড়ি-কুকুর-পাখি চলে যায়, সেদিকে নজরই পড়ে না। অসংখ্য লোকের মধ্যে দাঁড়িয়েও মনে হয়, আমিই একমাত্র— একা।
শরীরটা যেন ঝিমঝিম করে। অদ্ভুত রহস্যময় সত্য যেন একটা। ভিড়ে ঠাসাঠাসি বাসের মধ্যেও এইরকম হয় আমার। আগে খালাসিটোলাতেও হত। ওখানে ঢুকলেই যে লোকজনের ভিড় দেখতাম, দুটো পাঁইট গেলার পরেই সব আবছা, অদৃশ্য হয়ে যেত!
কী হিসেব করব?
চুল-দাড়িও বড়ো হয়েছে। সকালেই খেয়াল করলাম, ডান পাটির জুতোর সোলটার ঠিক মাঝবরাবর দু'টুকরো হয়ে গেছে। আর এক্ষুনি দেখলাম, বাঁ পায়েরটাও তথৈবচ। তার মানে, এখন অনেক খরচ হবে।
খাই?
হিসেব পরে হবে।
ঠিক হবে সেটা?
এখানে একটা লেবু গাছে অনেক ফুল ফুটেছে। খুব প্রচ্ছন্ন কিন্তু প্রবল দেমাকি একটা গন্ধ। সাদা সাদা ছোট ফুল, ভিতরে হলুদ। নিচে পড়ে আছে। গাছে ঝুলে আছে। এই ফুলে সকাল-দুপুর মিশে আছে। আমার মনে হয়, লেবু ফুল সবাই পুরুষ। এবং কিশোর। কেন মনে হয় জানিনা। খুব মনে হয়। এই ফুলের বয়স বাড়ে না। ফাল্গুন মাসের রোদ্দুর এই কিশোরের চির সখা। আমি ওদের দলে ঢুকতে চাই। তাই তো সেই ছোটবেলা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লাইনে অবশ্য আমি একাই।
আমার খুব মনে হয়, আমি মরে গেলে এই লেবু ফুলের গন্ধটা খুব খুব খুব মিস করব। আর ফাল্গুন মাসের এই রোদ্দুরটা।
ছাতু কি খাব?
লেবু গাছের নিচে কেবল ছাতুয়ালাই নেই।
তার পাশে আছে মুরগিয়ালার গাড়ি।
তারও কাঠের বাকসো। সাইকেলের চাকা। নিচে জাললাগানো খাঁচা। তাতে মুরগি।
ওপরে ঝকঝকে টিন। বালতি। ওজন মাপার যন্ত্র। স্টিলের গামলা। স্টিলের থালা। রক্ত মোছার কাপড়। প্লাস্টিকের ঝুড়ি। আর বিরাট একটা বটির ফলা— গাড়িতেই সেটা আটকানো। আর ছোট একটা 'তারা মায়ের' ছবি।
নিচে খাঁচায় মুরগি ডাকছে।
বাকসোগাড়িতে, চারদিকে চারটে কাঠের বাটাম লাগানো। ওই চার বাটামের ওপরের দিকে, চারদিকে আবার আড়াআড়ি করে বাটাম লাগানো। যেমন খাটে থাকে। ওখানে যেমন মশারি ঝোলে, এখানে তেমন বৃষ্টিতে প্লাস্টিক ঝোলে। এখন ফাঁকা। সেই বাটামে, দু'দিকে ঝুলছে দুটো স্লেট। তাতে চক দিয়ে লেখা, ১৬০ গোটা ২৪০ কাটা। ঠিক একমাস আগে এইখানেই দেখেছিলাম— ১২৫ গোটা ১৮০ কাটা।
এক মাসে কত দাম বেড়েছে! এইরকমই বাড়ে নাকি! আবার কমেও নিশ্চয়ই। আমাদের ছোটবেলায় স্লেটে হাতেখড়ি হয়েছিল। এখনও বোধহয় হয়। তবে, এখন 'স্লেট'ও 'প্লাস্টিকে'র তৈরি। এই মুরগির দোকানের দুটো স্লেট, দুটোই প্লাস্টিকের।
আমি ছাতু কি খাব?
ওদিকে তাকিয়ে ছিলাম কতক্ষণ জানি না। কক্ কক্ করে ডাকে মনে হলো সম্বিৎ ফিরে পেলাম। একটা মুরগি নিচের খাঁচা থেকে ওপরে এসেছে। ওজন যন্ত্রে বসেছে। মুরগিয়ালার ডান হাতের দুই আঙুলের ফাঁকে মুরগির গলা পেঁচিয়ে গেছে। বটির ফলার সামনে গলা।
বালতিতে বডি।
কাটা মাথাটা ঝকঝকে টিনের ওপর।
তার ওপর লেবু ফুলের দেমাকি গন্ধটা।
কয়েকটা ফুল টপ্ টপ্ করে কাটা মাথাটার ওপরে পড়ছে—
না।
পড়ছে না।
কায়দা করে গল্প লিখতে এইরকম দৃশ্য তৈরির দরকার পড়ে অবশ্য। তবে,
লেবু ফুল বোধহয় ভোরের শিউলি নয়,
তাই তার, মনে হয়, সাহিত্যের স্বার্থে অত টপটপানি নাই।
এইইই—
পড়ল।
পড়েছে।
পড়ছে।
একটা ফুল পড়ল।
কাটা মাথাটার ঠিক পাশেই পড়ল। আবার পড়ল আরও একটা…
যে ভাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার বোম পড়ছে,
ঠিক তেমন করে পড়ল। পুরুতমশাই যেমন দেবতার নৈবেদ্যের ওপর ফুল ছুঁড়ে দেন, ঠিক তেমন করে পড়ল।
পুতিনের বোমা আর, পুরুতমশাইয়ের নৈবেদ্য উৎসর্গে ফুল—
সবই টপ টপ করে ঝরে পড়ছে মনে হয়। আর এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে, এখন, এইখানে, কলকাতার এই রাজপথের ধারে, মানুষের প্রতি ওই কাটা মাথাটা উৎসর্গ করল মুরগিয়ালা।
১৬০ গোটা ২৪০ কাটা।
আমি কি ছাতু খাব?