রক্তেই কামব্যাক! এবার রাজনীতির ময়দানে মহারাজ?

Sourav Ganguly: কামব্যাকই তাঁর জীবনের দর্শন। এবার কি তিনি নতুন ভূমিকায়?

মেজাজটাই তো আসল রাজা! ক্রিকেট থেকে প্রশাসন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই কথাটা অত্যন্ত মানানসই। বোর্ড-রাজনীতির পাকেচক্রে বিসিসিআই-এর মসনদ তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে সম্প্রতি। দু'দিনও কাটেনি, আর তারই মধ্যে এবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন তিনি। সাফ জানিয়ে দিলেন, পিছনে না তাকিয়ে আরও বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে চান তিনি। তাহলে কি এবার আইসিসি-র চেয়ারম্যান হতে চলেছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক? সম্ভবত নয়, কারণ সেই দৌড়ে যে এই বাঙালি ক্রিকেটারকে সমর্থন করবে না বিসিসিআই, তা ধারেভারে জানিয়েই দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড। তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি জল্পনা শুরু হয়েছে কোচ বা মেন্টর হিসেবে আইপিএল গ্রহে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘিরেও।

১৩ অক্টোবর শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে একটি ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রাখার সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, "খেলা ছাড়ার পর দীর্ঘদিন প্রশাসনিক দায়িত্ব আমি সামলেছি। সিএবি এবং বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেছি বেশ কয়েক বছর। তবে সবকিছুরই কিন্তু একটা শেষ থাকে। আপনি যেমন সারা জীবন ক্রিকেট খেলতে পারবেন না, তেমনই প্রশাসনের ক্ষেত্রেও একটা নির্দিষ্ট টার্ম আছে। চিরকাল প্রশাসক পদে কেউ থাকতে পারে না। তবে এর ফলে যে জীবন থমকে যাবে, এরকমটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আগামী দিনে আরও বড় কিছু করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে আমি এখনও বলব, ১৫ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারটাই ছিল আমার জীবনের সবথেকে উপভোগ্য সময়।"

বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের পারফরম‍্যান্সের মূল্যায়ন করতে গিয়ে মহারাজ বলেন, "আমি ক্রিকেটারদের প্রেসিডেন্ট ছিলাম। হ্যাঁ, হয়তো অনেক সময় খেলার স্বার্থে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়েছিল। তবে দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিল আমার প্রথম লক্ষ্য। বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে আমার সময়টা খুব একটা খারাপ কাটেনি। আমি ভাগ্যবান যে, ক্রিকেটার, অধিনায়ক এবং প্রশাসক- তিন ভূমিকাতেই আমি নজর কাড়তে পেরেছি। প্রত্যেকের জীবনেই একটা কঠিন সময় আসে, প্রত্যাখ্যান দরজায় কড়া নাড়ে। তবে আমি ইতিহাস আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চাই না। একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে এই জায়গায় পৌঁছেছি আমি। কেউ একদিনেই সচিন তেন্ডুলকর বা নরেন্দ্র মোদি হতে পারে না। প্রয়োজন হয় পরিকল্পনার। ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করতে হয়। তাই আগামী দিনে আমি যা-ই করি না কেন, সবই করব নিষ্ঠার সঙ্গে।"

আরও পড়ুন: বারবার ব‍্যর্থতা, বারবার ঘুরে দাঁড়ানো! ফিরে দেখা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেরা পাঁচটি কামব‍্যাক

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির পাশাপাশি খেলোয়াড়ি জীবনের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণাও এদিন অনুষ্ঠানে করলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। লর্ডসের অভিষেক ম্যাচ থেকে শুরু করে ইডেন গার্ডেন্সে ফলো-অনের ধাক্কা সামলে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো, কিংবা লর্ডসের ব্যালকনিতে জার্সি ওড়ানোর সেই সমস্ত স্মৃতি যেন নতুন করে হয়ে উঠল জীবন্ত। রীতিমতো আবেগতাড়িত লাগল তাঁকে। কথার পরতে পরতে যেন ঝরে পড়ছিল রাজকীয় সেই মেজাজ এবং দৃঢ়তা। তিনি যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা আগের সমস্ত তিক্ততা। 'কিছুই হয়নি' গোছের মনোভাব নিয়ে যেন সৌরভ পরবর্তী ডেলিভারির জন্য তৈরি হচ্ছেন! আর এখানেই উঠে আসছে নতুন সম্ভাবনা, তবে কি এবার রাজনীতিতে পদার্পণ করবেন মহারাজ? কারণ কামব্যাকই যে মহারাজের প্রধান মন্ত্র।

১৯৯১ থেকে ২০১২, সুদীর্ঘ ২১ বছরের বঞ্চনা এবং অপেক্ষার তাপে পুড়তে পুড়তে জ্বলে উঠেছিলেন সৌরভ। আপস বিষয়টা যেন তাঁর অভিধানেই নেই। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে ভারতীয় দলে চলে আসা সভ্যতার অচলায়তনকে ভেঙে, গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তাঁর যুদ্ধে কখনও অস্ত্র হয়ে উঠেছে উইলো কাঠের একটা ব্যাট, কখনও কোকাবুরা বল আবার কখনও তাঁর ধুরন্ধর ক্রিকেট-মস্তিষ্ক। লড়াই, জেদ, সাহস, দৃঢ়তা এই শব্দগুলো কোলাজ তৈরি করে যেন সমার্থক হয়ে উঠেছিল কলকাতার বেহালায় বীরেন রায় রোডের গাঙ্গুলীবাড়ির ছোট ছেলের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। তাঁর ইস্পাতকঠিন মানসিকতাও হয়ে উঠেছিল তাঁর জেদের প্রতীক। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে তিনি এই ফুলের সুবাস ছড়িয়েছেন তামাম বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। তার সঙ্গে গড়ে তুলেছেন এক হার না-মানা মানসিকতা। বঞ্চনা আর অপেক্ষার মধ্য দিয়ে মাথাটা উঁচু করে বারবার লড়ে যাওয়ার এক ক্রিকেট সভ্যতা তৈরি করেছিলেন সৌরভ। হতে পারে জয়ের নিরিখে তিনি ভারতের অন্যান্য অধিনায়কদের থেকে অনেকটা পিছিয়ে। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাড়ে ১৮ হাজার রানের ইমারত স্থাপন, দুই ধরনের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে চল্লিশের বেশি গড়, ৩৮টি আন্তর্জাতিক শতরান, ১৩২টা উইকেট শিকার, ১৭১টা ক্যাচ, অধিনায়ক হিসেবে ২১টা টেস্ট আর ৭৬টা একদিনের ম্যাচে জয়, পরিসংখ্যান হিসেবে এটাও কিন্তু খুব একটা খারাপ নয়। কাব্যে বারবার উপেক্ষিত থেকেও লুকনো সব কবিতা ঠাসা খাতা হয়ে উঠেছিল তাঁর শৌর্য-বীর্যর প্রতীক। স্বাধীনোত্তর বাঙালিকে আবার সাহসী হতে শিখিয়েছিলেন তিনি। তাই মহারাজ নামটা শুধু তাঁর ডাকনাম নয়, তিনি সত্যিকারেই মহারাজ।

ছোটবেলা থেকে তাঁর প্রেম ছিল ফুটবল। ময়দানের তারকা মজিদ বাস্কার তাঁকে রীতিমতো সম্মোহিত করে রেখেছিলেন। কিন্তু, নিজের দাদার ক্রিকেট কিট নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই প্রেমের চরিত্র বদলাল তাঁর।‌ তবে প্রেমের সংজ্ঞা কিন্তু বদলাল না। ভিভ রিচার্ডস, ডেভিড গাওয়ার এবং কপিল দেবদের দেখে ক্রিকেটের প্রতি প্রেম যেন আরও তীব্রতা পেল। শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়। প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে নজর কেড়ে করে নিলেন বাংলার ছোটখাটো ক্রিকেট দলে জায়গা। কৈলাস ঘাটানীর স্টার ক্রিকেট দলের হয়ে প্রথমবার বিদেশযাত্রা করলেন সৌরভ। তখন সৌরভের মোহময় সুবাসে আবিষ্ট হতে শুরু করেছে কলকাতার মাঠ ময়দান। ‌২২ গজের প্রথম বড় লড়াই ইডেনের বুকে বাইশটা রান দিয়ে শুরু হলেও, নিজের জাত চেনানোর জন্য ওটুকুই ছিল যথেষ্ট। ঘরোয়া ক্রিকেটে, রঞ্জি ট্রফিতে ৩৯৪ রান আর ১৪টা উইকেট নিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিলেন এক বাঙালি ছেলে। আর সেই অলরাউন্ড পারফরম্যান্সই ১৯৯১ এর অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ করে দিল তাঁকে। ‌

তবে ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে ম্যাচ খেলতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে শুরু হলো অসভ্যতা। 'মহারাজকীয় হাবভাব', তিনি নাকি 'জল বইতে চান না', এই সমস্ত অপবাদ দিয়ে কেরিয়ার প্রথমে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হলো। ‌কিন্তু দমানো যায়নি সৌরভকে, হাতের ব্যাট হয়ে উঠেছিল অপমানের জবাব দেওয়ার একটা অস্ত্র। নানা অছিলায় চার বছর ভারতীয় দলের অন্দরমহলে জায়গা না দেওয়া হলেও, তিনি দমে যাননি। ‌ ইংল্যান্ডের মাইনর কাউন্টি ব্রুন্ডসবেরিতে খেলতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানী মাইক স্টুয়ার্টের পরামর্শ আর কোচ দেব মিত্রের ব্যাটিং পরামর্শ যেন একেবারে টনিকের মতো কাজ করল তাঁর জন্য। ঘরোয়া ক্রিকেট, রঞ্জি ট্রফি, দিলীপ ট্রফি আবার কখনও ভারতীয় এই দলের হয়ে রানের ফোয়ারা ছোটালেন তিনি। ‌

সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে ছিলেন পূর্বাঞ্চলের সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‌ ১৯৯৬ সালের ইংল্যান্ড সফরের আগে ভারতীয় দল নির্বাচনের দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর উপর। দল নির্বাচনে বাকিদের একাধিক আপত্তি সত্ত্বেও ইংল্যান্ড সফরে জায়গা দেওয়া হলো সৌরভকে। ‌চারপাশে সমালোচনার ঝড়, 'কলকাত্তা কা রসগুল্লা', 'সম্বরনের কোটা', জাতীয় নানা অপমানে বিদ্ধ হতে শুরু করলেন সৌরভ। কার্যত অসভ্যতার একেবারে চরম পর্যায়ে। প্রথম থেকেই একজন তরুণের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল বিসিসিআইয়ের অন্দরে। ‌ কিন্তু, সৌরভ এত সহজে থামতে শেখেননি। ‌ লর্ডসের মাটিতে জীবনের প্রথম টেস্টেই ঝকঝকে ১৩১ করে জানিয়ে দিলেন তিনি থাকতেই এসেছেন। ডোমিনিক্ কর্ক, অ্যালেন মুলালী, ক্রিস লুইসদের বল তাঁর ব্যাট নামক তরবারির মাঝখানে লেগে সবুজ গালিচা দিয়ে খুঁজে নিয়েছিল বাউন্ডারির বাইরে নিশ্চিত আশ্রয়। নটিংহ্যামের দ্বিতীয় টেস্টেও মণিমানিক্য ছড়ানো ১৩৬, যেন সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিল সেই সমস্ত সিলেক্টরদের গালে, যাঁরা লবিবাজি করে নিজের খেলোয়াড়কে সুযোগ করে দিতে চাইছিলেন সৌরভের জায়গায়। দুহাত ভরে দেওয়া সেই বিলেত সফরে সিরিজ সেরা হয়েছিলেন সৌরভ, ফলে একদিনের ক্রিকেটে দ্রুত জায়গা করে নেওয়া আর ফিরে তাকাতে হয়নি সৌরভকে।

বছরখানেকের মধ্যেই ভারতীয় দলের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিলেন বাংলার এই দামাল ছেলেটি। ‌কখনো টরেন্টোতে বল হাতে আবার কখনও পদ্মাপারের দেশে স্বাধীনতা কাপে ব্যাট হাতে ভারতীয় দলকে রক্ষা করার তুরুপের তাস হয়ে উঠেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টানা চার ম্যাচে জয় হোক, বা ৩১৪ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতানোর অহংকার, সৌরভ তৈরি করে দিয়েছিলেন এমন একটি ক্রিকেট সভ্যতা, যার রেশ চলেছিল বহু বছর। দেশ-বিদেশের তাবড় তাবড় ক্রিকেটারদের পাশাপাশি খেলতে হতো ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি এবং দেশের ক্রিকেট রাজনীতির সঙ্গেও। ‌ কিন্তু কোন বাধাই যেন টলাতে পারেনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মনোবলকে। সৌরভ নামটা শুধুমাত্র ভারতীয় ব্যাটিংয়ের একটি স্তম্ভ ছিল না, ছিল প্রাদেশিকতার ভেদাভেদ টপকে দেশকে সবার আগে তুলে ধরা, আর সাহস এবং লড়াই দিয়ে বিপক্ষ শিবিরে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার উজ্জ্বলতম রূপ।

ইংল্যান্ডের মাটি ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সব সময় প্রথম পছন্দ। ‌ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ থেকে সৌরভ যেন বেছে নিয়েছিলেন এটা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যে, বিশ্বের সেরা মঞ্চেও তিনি লাবণ্য ছড়াতেই এসেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৯৭ রানের ইনিংস খেলেও তাকে শুনতে হয়েছিল তিনি নাকি দলের জন্য খেলেননি, স্লো-ব্যাটিং অ্যাভারেজের জন্য কু-চক্রীদের নানা সমালোচনা শুনতে হয়েছিল তাঁকে। তবে সেই সমালোচনা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, পরের ম্যাচে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ব্যাটে-বলে দুর্ধর্ষ খেলে আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কাউন্টি গ্রাউন্ডে অতিমানবীয় ১৮৩ করে যেন কুচক্রীদের এই অসভ্যতাকে ব্যঙ্গ করলেন সৌরভ। বিশ্বকাপটা সৌরভের দুর্দান্ত যাওয়ার পর বছর খানেকের মধ্যেই বেটিং কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ভারতীয় ক্রিকেট। ‌ আর তখনই ভারতীয় ক্রিকেটের হাল ধরার জন্য ডাক পড়লো তাঁর। তার আগেই যদিও শচীনের সহকারি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি, তবে এবার কোটার খেলোয়াড় হিসেবে নয়, বিশ্ব ক্রিকেটকে চারটে বছর ছেলেটা বুঝিয়ে দিয়েছিল, ভারতীয় দলের হাল ধরতে পারার জন্য যদি কেউ যোগ্য হয় তাহলে সেটা হলো এই দামাল বাঙালি ছেলেটাই। এবারে একেবারে দলের নেতা হয়ে।

ভারতীয় ক্রিকেট সাম্রাজ্যে সৌরভ এবং দলবল এমন একটি চক্রব্যূহ তৈরি করল, যে ক্রিকেট ফিক্সারদের লোলুপ দৃষ্টি সেই চক্রব্যূহ ভেদ করতে পারল না। জলন্ধর, দিল্লি, এলাহাবাদ, বরোদা, হায়দ্রাবাদ, রাঁচি এসব জায়গা থেকে উঠে এলেন হরভজন, জাহির, যুবরাজ, মোহাম্মদ কাইফ, বীরেন্দ্র শেহবাগ, ধোনির মতো কিছু প্রাণশক্তিতে ভরপুর তরজা যুবক। তৈরি হলো সৌরভের ব্রিগেড। তাঁরা ছিলেন অধিনায়কের নিবেদিত প্রাণ, আর হবে নাই বা কেন, তাদের পিঠে হাত রেখেই তো তাদের অধিনায়ক নিজের সাধের ব্যাটিং পজিশন ছাড়তেও দ্বিধাবোধ করেননি। দেশের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজে সৌরভের ব্রিগেড থামিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়ার অশ্বমেধের ঘোড়া। ওয়াঘার ওপারে হলো প্রথম সিরিজ জয়।ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়াতে টেস্ট সিরিজ ড্র আর ইংল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজ জয় হল, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে জয় হলো টেস্ট, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রানার্স আপ আর একবার যুগ্মভাবে জয়ী হলো সৌরভের দল। গলে মুরালির স্পিনের সামনে অনবদ্য ৯৮ রানের ইনিংস খেললেন সৌরভ। নটিংহ্যামের ৯৯, ইংল্যান্ডের সুইংয়ের সামনে ১২৮, অস্ট্রেলিয়ার চিন মিউজিকের সামনে প্রকৃত নেতার মতো ১৪৪ রান উপহার দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যাটিং রেকর্ডের বেশিরভাগটা নিজের নামে খোদাই করলেন সৌরভ।

মহারাজের ব্রিগেড স্বপ্নভঙ্গের রাতও দেখল। ২০০৩ বিশ্বকাপে প্রথমে ধাক্কা খেয়ে অসাধারণভাবে ফিরে এসে বিজয়রথ স্তব্ধ হলো রিকি পন্টিং-এর অস্ট্রেলিয়ার সামনে। বিশ্বকাপ সুরভিত হলো সৌরভের তিনশো রানের সুবাসে। তবে, শেষ পর্যন্ত তো দেখা হয় শুধু জয়টাই।

যখন তিনি হাল ধরেছিলেন, ভারত তখন বিশ্ব তালিকায় একেবারে তলানিতে। আর যখন তিনি শেষ করলেন, ভারত তখন বিশ্বের দুই নম্বর দল। কার্যত অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর হাত থেকে, নাটকীয় চক্রান্তে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি, তাও কিনা বিদেশের মাটিতে হিথ স্ট্রিকদের জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে লড়াকু শতরানের পরেও! কিন্তু এই বাঙালি অন্য ধাতুতে গড়া। ৩৩-৩৪ বছর বয়সে বাদ পড়ে যখন কারও ক্রিকেট জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, তখন শুরু হলো জীবনযুদ্ধ। হাল না ছাড়ার এক রোমাঞ্চকর লড়াই। যখনই সুযোগ পেয়েছেন, দু'হাত ভরে গ্রহণ করেছেন ভারতীয় দলে ফিরে আসার সুযোগটাকে। নিভৃতে ফিটনেস ট্রেনিং করেছেন, পাঁচ বছর ভারতীয় অধিনায়ক হয়েও ইকোনমি ক্লাসের বিমানে চড়ে বরোদা, কিংবা গুয়াহাটির মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।‌ আর নতুন করে রচনা করেছেন নিজের ভবিষ্যৎ। গ্রেগ চ্যাপেলের যুবনীতি যখন রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে, তখন নতুন করে অভিষেক সৌরভের। রীতিমত রাজকীয়ভাবেই। দেশজুড়ে তখন শুরু হয়েছে 'ব্রিং ব্যাক সৌরভ' স্লোগান, এক সময় ভারতীয় দলের অন্দরমহলে ব্রাত্য হতে হতে আবার তিনি ফিরলেন। আর ঠিকরে বেরলো তাঁর সেই ছাই-চাপা আগুন। গোটা দেশ অনুরোধ করল, সবাই যখন ব্যর্থ, আবার হাল ধরো মহারাজ!

ফিরেই জোহানেসবার্গে শন পোলক এবং স্টেইনদের দুর্গে হানলেন আঘাত। সৌরভের ব্যাট থেকেই বেরিয়ে এল সিরিজের সর্বাধিক রান। ‌একদিনের ক্রিকেটে ফিরলেন একেবারে রাজার মতো। ব্রায়ান লারাদের বিরুদ্ধে ৯৮ রানের একটা ঝকঝকে ইনিংস উপহার দিলেন নিজের দেশকে। সে যেন একেবারে স্বপ্নের ফেরা। রানের ফুলঝুরি ছুটতে শুরু করল চতুর্দিকে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপুঞ্জের বিশ্বকাপে ভারত পরাজিত হলেও লড়াই করলেন সৌরভ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে খেললেন ২৩৯ রানের একটা ইনিংস, শোয়েবদের চূর্ণ করে নিজের হোম গ্রাউন্ড ইডেন গার্ডেনে করলেন সেঞ্চুরি। মেলবোর্নে খেললেন শততম টেস্ট আর ইংল্যান্ডের মাটিতে ৩০০ তম একদিনের ম্যাচ।

কিন্তু কামব্যাকের পরের বছর আবারও ধাক্কা খেল তাঁর ক্রিকেট সভ্যতা। সারা বছর একদিনের ক্রিকেটে রান করেও অস্ট্রেলিয়ার ট্রাইনেশন সিরিজে বাদ পড়তে হলো তাঁকে। এখানেও কারণ সেই যুবনীতি। তখন থেকেই হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, আর সময় নেই। এবার হয়তো একদিনের ক্রিকেটের পাশাপাশি টেস্টের ময়দান থেকেও বাদ পড়তে হবে তাঁকে। তাই ২০০৮-এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগের দিনেই বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন, এটাই হবে তাঁর জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ।

সেই দিনটা ছিল দুর্গাপুজোর অষ্টমী। আর সেই অষ্টমীর দিনেই বাঙালির মনে যেন বেজে উঠল বিসর্জনের বাজনা। যাওয়ার আগের শেষ রাগের মতোই এই সিরিজে উজ্জ্বল হলো তাঁর ব্যাট। শতরান এলো মোহালিতে। সঙ্গেই হলো অসিনিধন। টেস্টেও ৮৫ রানের একটা ঝকঝকে ইনিংস খেললেন। কিন্তু শেষ ইনিংসে রূপকথা তৈরি হলো না, তাই ফিরতে হলেও শূন্য হাতেই।

বিশ্ব ক্রিকেটে সফলতা পেলেও, আইপিএল সফরটা তাঁর খুব একটা ভালো ছিল না। কর্পোরেট দুনিয়ার ক্রিকেটে শুধুই অর্থের ঝনঝনানি। কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের অধিনায়ক প্রথম বছরে দলকে শেষ চারে নিয়ে যেতে পারলেন না সৌরভ। ‌ তবে করলেন প্রায় সাড়ে ৩৫০ রান। ধামাকাদার খেলাতেও নিজের জাত চেনাতে ভুল করেননি তিনি। তবে দ্বিতীয় বছরের লিগে তাল কাটল সৌরভের নেতৃত্বের। কর্পোরেট জগতের মানুষজন সৌরভের আবেগকে রীতিমতো গঙ্গার জলে বিসর্জন করে আগের বছরের স্টার পারফরমার ব্রেন্ডন ম্যাককালামের হাতে তুলে দিলেন দলের নেতৃত্ব। আর সেই সিজনে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ল দল।

ফলত তৃতীয় সিজনে আবারও নেতৃত্বের সুযোগ পেলেন মহারাজ। সেই সিজনে দলের বোলিং এবং ব্যাটিং ব্যর্থতার বিরুদ্ধে একা লড়াই করলেন তিনি। ৫০০-র কাছাকাছি রান করে লিগের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হয়ে উঠলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দিলেন এখনও কিন্তু মরচে ধরেনি তাঁর ব্যাটে। কিন্তু, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই চরম ধাক্কা খেলেন সৌরভ। দলের সেরা পারফরমারকে অবলীলায় ছেঁটে ফেলে দিল কেকেআর। পরের বছর পুনে-র হয়ে আইপিএল খেললেও অসহ্য হয়ে উঠেছিল তাঁর এই উপেক্ষা। ফলে আইপিএল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মহারাজ। হাতে তুলে নিলেন ধারাভাষ্যকারের মাইক্রোফোন আর সঙ্গে চলল দাদাগিরি।

পরাজয় শব্দটা তাঁর অভিধানে নেই। তাঁর হাতে নেই আইসিসি ট্রফি, তিনি ক্রিকেটের ঈশ্বর নন, তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের দেওয়াল ও নন, তাঁর হাতে না আছে হেলিকপ্টারের উড়ান, আর না আছে হায়দরাবাদি কব্জির মোচড়। মুম্বাইয়ের মারকাটারি স্ট্রেট ড্রাইভও তাঁর হাতে নেই। তাঁর যা আছে, সেটা হল একজন চিত্রশিল্পীর তুলির টানের মত অসাধারণ কভার ড্রাইভ। ব্রেট লি বা শেন বন্ডের বাউন্সার ব্যাটের মাঝামাঝি লাগিয়ে বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দেওয়ার সাহস রয়েছে তাঁর মধ্যে। মাইন্ড গেমে বাজিমাত তিনি করতে পারেন। স্টিভ ওয়ার মত প্রভাবশালী অধিনায়কের ক্যাপ্টেন্সি স্ট্রাটেজিকে শুধুমাত্র মাইন্ড গেম দিয়ে ব্যর্থ করে দেবার ক্ষমতা ছিল সৌরভের মধ্যে। অস্ট্রেলিয়ার অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়ে দলের কোনও একজন শেহবাগ বা হরভজনের পিঠে ভরসার হাত রাখতে পারতেন তিনি। নবাগত মহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিজের পছন্দের তৃতীয় স্থানটা ছেড়ে দিতে কোন দ্বিধা হতো না তাঁর।

কোনও একজন অনিল কুম্বলেকে অস্ট্রেলিয়া সফরে রাখার জন্য নিজের অধিনায়কত্বকে বাজি রাখতে পেরেছিলেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে নবাগত হরভজন সিংকে খেলানোর ঝুঁকি তিনি নিতে পারতেন। একজন সাধারণ স্পিনারকে অসাধারণ করে তোলার জন্য নির্বাচনী বৈঠকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রাণ‌পাত করতে পারতেন তিনি। অবসর নেওয়ার ভাবনায় থাকা কোনও একজন জাবাগাল শ্রীনাথকে 'বিশ্বকাপে তোমায় চাই' কথাটা তিনিই বলেছিলেন। আবার কোনও একজন রাহুল দ্রাবিড়কে একদিনের দলে নিয়মিত জায়গা দিতে উইকেটরক্ষক বানিয়ে দিতে পারেন তিনি। আবার ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফকে শায়েস্তা করার জন্য ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি ফাইনাল জিতে লর্ডসের গ্যালারিতে জার্সি উড়িয়ে ছিলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটেই শুধু নয়, সৌরভের এই জার্সি-ওড়ানো বিশ্ব ক্রিকেটেও একটা আইকনিক ছবি দেশের জন্য, দলের জন্য তিনি সব করতে পারেন।

শুধু খেলোয়াড় হিসেবে নয়, প্রশাসক হিসেবেও তিনি সুদক্ষ। তার সময়ই গাব্বায় অস্ট্রেলিয়াকে পরাস্ত করতে পেরেছিল ভারত। কঠিন সময়ে আইপিএল পরিচালনা থেকে শুরু করে, ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, সবকিছুই সৌরভের মস্তিষ্কপ্রসূত। তবে ক্রিকেট প্রশাসনেও শুরুতেই কম বাধার সম্মুখীন হননি মহারাজ। বাংলা ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি হিসেবে প্রথম ম্যাচ আয়োজন করেছিলেন তিনি। দুপুরে বৃষ্টি থামলেও একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ করা যায়নি। সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছিলেন মহারাজ। তারপর পাল্টে দিলেন গোটা ইডেনের রূপ। এখন আর সেই সমস্যা নেই। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেও রাজার মতোই প্রবেশ করেছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের নিয়মের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে তিনি নিজেকে আরও উজাড় করে দিতে চেয়েছিলেন। তবে এখন হয়তো তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। কিছুদিন আগে ইডেনে দাঁড়িয়ে সঞ্চালক রবি শাস্ত্রী প্রশ্ন করেছিলেন সৌরভকে, তোমার কি মনে হয় না, ইডেনে তোমার নামে একটা স্ট্যান্ড হওয়া উচিত? তার পাল্টা সৌরভ জবাব দিয়েছিলেন, পুরো ইডেনটাই তো আমার। গ্যালারির গর্জনে মুখের ভাব পাল্টে গিয়েছিল খোদ রবি শাস্ত্রীর। বিষয়টা হয়তো প্রাসঙ্গিক নয়, তবে পরিস্থিতি যে-রকমই হোক, সৌরভ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

আর এবার হয়তো তাঁকে আমরা পেতে পারি কোনও নতুন ভূমিকায়, নতুনভাবে। তাঁর রক্তেই কামব্যাক। সাপলুডোর খেলায় হয়তো 'বাপি বাড়ি যা' বলে আবারও খেল দেখাতে পারেন সৌরভ। বিতর্ক তাঁর জীবনেও রয়েছে। কিন্তু, সামান্য সুবিধা নিতে কখনও নিজের শিরদাঁড়া বিকিয়ে দেননি সৌরভ। তাই হয়তো, এবার সৌরভকে আমরা পাব অন্য ভূমিকায়। বঙ্গ ক্রিকেটের মসনদে হয়তো আবার বসবেন সৌরভ। অথবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আইসিসির মসনদে বসার জন্য।

তবে এরই মাঝে উঠে আসছে আরও একটি প্রসঙ্গ।‌ এবার কি ক্রিকেটের ময়দানের পাশাপাশি রাজনীতির ময়দানেও নাম লেখাবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়? ক্রিকেট মাঠের পাশাপাশি কি এবার প্রশাসনেও দেখা যাবে সৌরভের নাম? সম্ভাবনাটা খুব একটা জোরালো না হলেও, একেবারে যে উড়িয়ে দেওয়ার মতো, তাও নয়।

সৌরভ একজন যোদ্ধার থেকে কম কিছু নয়, ক্রিকেট মাঠটা তাঁর কাছে ছিল একটা যুদ্ধক্ষেত্র, আর ব্যাট-বলের মাধ্যমে সেই যুদ্ধে তরবারি আর গোলাবারুদ চালাতে তিনি ছিলেন সুদক্ষ সেনাপতি।‌ কখনও কখনও তাঁর কর্ণের চাকা বসে গেলেও, তিনি ফিরেছেন অর্জুন হিসেবে। তাঁর জন্য তাঁর প্রাণপ্রিয় বন্ধু শচীন তেন্ডুলকর পর্যন্ত বলতে পারেন- সৌরভের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাটা হলো তাঁর মানসিকতা। যে-কোনও পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। তাঁর জন্য রাহুল দ্রাবিড় বলতে পারেন, অফসাইডে সবার আগে ঈশ্বর, তারপরেই সৌরভ। তাঁর প্রিয় যুবরাজ বলতে পারেন, এমন অধিনায়কের জন্য মরতেও অসুবিধা নেই। তিনি হলেন এমন একজন ক্রিকেটার, যাঁর ১৪৪ রানের ইনিংসটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার জন্য, মানুষ ঘড়িতে অ্যালার্ম দিত, ইডেনে সেঞ্চুরি দেখার জন্য অফিস কামাই করত। তাঁর কাছে, 'তোমার চাকরিতে যদি কোনও সমস্যা না থাকে, সেটা কোনও চাকরিই নয়' উক্তিটা ছিল ততটাই দামি, যতটা ছিল তাঁর কেরিয়ার। তিনি ছিলেন এমন একজন বোর্ড প্রেসিডেন্ট, যিনি অফিসঘরের কর্মজীবনের শুরুর দিন ধুলো ঝেড়ে একটা পুরনো ব্লেজার পরে গিয়েছিলেন।

দিনের শেষে আজও তিনি একজন অধিনায়ক, দেশের ক্রিকেটকে পথ দেখানোর ক্ষমতা হয়তো তাঁর হাতে আর নেই, তবে তিনি হারিয়ে যাওয়ার মানুষ নন। আবার তিনি আসবেন ফিরে, নতুন রঙে, নতুন ঢঙে, নতুন আঙ্গিকে। ক্লিন শেভ ছেড়ে হালকা দাড়িতে তিনি যেভাবে নিজেকে সাজিয়েছেন, সেভাবেই হয়তো নিজেকে নতুন ভূমিকায় আমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন তিনি। হয়তো কোনও প্রশাসনিক পদে, কিংবা মাঠের দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে, কিন্তু সৌরভ যাই করুন না কেন, হারিয়ে তিনি যাবেন না। ফিনিক্স পাখির মতো আবার উত্থান হবে তাঁর। আর সৌরভের এই নতুন উড়ান দেখে বাঙালির মননে ভেসে উঠবে একটাই কথা, 'মহারাজা, তোমাকে সেলাম!'

More Articles