গিরগিটিও লজ্জা পাবে: রংবদলু নীতীশকে নিয়ে জয়রাম রমেশ
Bharat Jodo Nyay Yatra: জলপাইগুড়ি শহর সেজে উঠেছে সেই যাত্রার জন্য। 'মহব্বত কি দুকান' বাস নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন রাহুল। জনসংযোগ করছেন।
একরাতের মধ্যে বিহারের রাজনীতিতে উল্টেপাল্টে গেল খেলা। ২০২৪ লোকসভা ভোটে দেশ থেকে বিজেপিকে হঠানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ছাব্বিশটি বিরোধী দল। সেই জোটের অন্যতম ছিল জেডিইউ অর্থাৎ নীতীশ কুমার। কিন্তু এক রাতের মধ্যেই ভোল বদলে ফের এনডিএ-তে যোগ দিলেন তিনি। অবশ্য তার এই পালাবদলের সঙ্গে রাজনীতির দুনিয়া, বিশেষত বিহারের রাজনীতি ভালোই পরিচিত। এর আগেই একাধিক বার এ ডাল থেকে ও ডাল পরিবর্তন করেছেন তিনি। কিন্তু তখন দেশে 'ইন্ডিয়া'-র মতো এমন কোনও বিজেপি বিরোধী জোট গঠন হয়নি। যার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। এরই মধ্যে রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা ঢুকে পড়েছে বাংলায়। যে ন্যায় যাত্রা বাংলা থেকে ঢুকে পড়বে সোজা বিহারে। কিন্তু নীতিশের এই রংবদলের প্রভাব কতটা পড়বে কংগ্রেসের যাত্রায়। ইন্ডিয়া জোটের উপরেই বা কী প্রভাব পড়ত চলেছে তার?
বৃহস্পতিবারই অসম থেকে বাংলায় ঢুকে পড়েছিল কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা। তবে বিশেষ কারণে দিল্লি উড়ে যেতে হয়েছিল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে। সেই যাত্রা ফের শুরু হয়েছে রবিবার। দিল্লি থেকে উড়ে এসেছেন রাহুলও। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে যাত্রা। জলপাইগুড়ি শহর সেজে উঠেছে সেই যাত্রার জন্য। 'মহব্বত কি দুকান' বাস নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন রাহুল। জনসংযোগ করছেন। রয়েছেন জয়রাম রমেশের মতো কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারাও। তাঁকে নীতিশের দলবদল নিয়ে প্রশ্ন করা হল কার্যত জেডিইউ নেতাকে তোপের মুখেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন জয়রাম। তাঁর বক্তব্য, "নীতীশজির রংবদলের তীব্রতা যে কোনও গিরগিটিকেও লজ্জা দেবে।"
আরও পড়ুন: আবার প্রতারণা নীতীশের! যেভাবে এগোয় পল্টুরামের পাল্টির কিসসা
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। সকলকে চমকে দিয়ে হঠাৎই এনডিএ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। তারপর বহু জল বয়ে গিয়েছে গঙ্গা-যমুনায়। বিজেপি-বিরোধিতায় দেশে গড়ে উঠেছে মহাজোট। যে জোটে শরিক হয়েছিলেন জনতা দল ইউনাইটেডও। কিন্তু হঠাৎই কী থেকে কী হইয়া গেল। অবশ্য কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিলই যে ফের বিজেপিতে ফিরতে পারেন নীতীশ। হলও তেমনটাই। রবিবার বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নীতিশ কুমার। আর যার সঙ্গে সঙ্গেই 'ইন্ডিয়া' জোট থেকেও ছিটকে দেলেন প্রবীণ ওই নেতা।
তাঁর অবশ্য বিশেষ অসুবিধা হল না তাতে। ফের বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে চলেছেন তিনিই। হ্যাঁ, তবে দলটা খালি বদলে গেল। কে কে বিহারের উপমুখ্য়মন্ত্রী হতে চলেছেন, সেই তালিকাও মোটামুটি ফাইনাল। এ দিনই বিকেলে বিহারের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা তাঁর। নীতীশের এই ডিগবাজি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই তোলপার রাজনৈতিক দুনিয়া। তবে এত কোনও নতুন ব্যাপার দেখছেন না প্রবীণ কংগ্রেস জয়রাম রমেশ। তিনি বলছেন, এমন রাজনৈতির রং তো হামেশাই বদলে থাকেন নীতীশ। আর এই নাটকে বিজেপি সূত্রধর, আর প্রধান অভিনেতা নীতীশ কুমার। তাঁর মত, রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রার থেকে মানুষকে দিগভ্রান্ত করতেই এইসব নাটক রচনা করা হয়েছে।
তবে এর প্রভাব ইন্ডিয়া জোটের উপরে কোনওরকম পড়বে না বলেই মনে করছেন জয়রামজি। তাঁর মতে, ইন্ডিয়া জোটের ঐক্য ও একতায় দাগটুকুও ফেলতে পারবে না নীতীশের এই সিদ্ধান্ত। লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে তারা যে ভাবে এগোচ্ছে, তেমন ভাবেই এগোবে বলে মনে করছেন জয়রাম রমেশ। পাশাপাশি ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা নিয়েও একই রকম ভাবে আশাবাদী তিনি। জলপাইগুড়ি ঘুরে খুব শিগগিরই কিসানগঞ্জ হয়ে আগামীকালই বিহারে প্রবেশ করবে রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা। থাকছে তার 'মহব্বত কি দুকান' বাসও। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়িতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে তাঁর যাত্রা। বিহার থেকে অবশ্য ফের বাংলায় ফিরবে যাত্রা। সেখান থেকে বীরভূম, বহরমপুর হয়ে ঝাড়খণ্ডে পৌঁছবে মিছিল।
ইন্ডিয়া জোটের রূপকার হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেকটাই কৃতিত্ব দিয়েছেন জয়রাম রমেশ। এদিনের যাত্রাতেও এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কংগ্রেসের তরফে। যদিও মমতা আসছেন কিনা যাত্রায়, তা এখনও পরিষ্কার নয়। জয়রাম রমেশ জানান, তিনি ব্যস্ত মানুষ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। ফলে সেইসব কাজ সামলে তিনি আসতে পারবেন কিনা জানা নেই। তবে তিনি এলে তাঁকে স্বাগত জানাতে ত্রুটি রাখবে না কংগ্রেস দল, জানিয়েছেন দলের এই প্রবীণ নেতা।
আরও পড়ুন: প্রমাণ নেই, তবু নীতীশের বিজেপি-ওয়াপসি প্রচারে ব্যস্ত কেন গোদি মিডিয়া?
তবে মুখে কংগ্রেস নেতারা যাই বলুন না কেন, নীতীশ-শক্তির এইভাবে পিছু হাঁটা সত্যিই কি 'ইন্ডিয়া' জোটের পক্ষে অস্বস্তিকর নয়। এমনিতেই জোট 'ইন্ডিয়া'-তে খটাখটি লেগেই রয়েছে। কোনও একটি সিদ্ধান্তে ঐক্যমত হতে পারছে না সমস্ত দল। তার উপর আবার আসনবণ্টন নিয়েও সমস্যা দেখা গিয়েছে একাধিক দলের মধ্যে। বিভিন্ন রাজ্যে একা লড়ার কথাও ঘোষণা করেছে সেই রাজ্যর ক্ষমতাসীনরা। এই পরিস্থিতিতে নীতীশ বিজেপির হাত ধরায় বিশেষ কোনও সুবিধা কি পেতে চলেছে শাসকদল? পাশাপাশি জোট 'ইন্ডিয়া'-র ভাঙনের শুরুটা কি করেই দিলেন এই জেডিইউ নেতা। ভোট পর্যন্ত শক্তি বাঁচিয়ে রাখতে পারবে তো এই বিজেপি-বিরোধী জোট। একগুচ্ছ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।