উন্নয়নের কোপে পরিবেশ ধ্বংসের মাশুল! কোন ভয়াবহ সংকট আসন্ন
COP-27: উন্নয়নের কর গুনতে গুনতে আস্ত এক-পৃথিবী প্রাকৃতিক শরণার্থী নিয়ে এরপর কার দ্বারস্থ হবে আধুনিক মানুষ?
ব্যাঙ্ক আমায় লোন দেবে বলে দিনে চারবার ফোন করায় পঞ্চম ফোনে আমি দরখাস্ত জমা দিয়ে নতুন মডেলের গাড়ি কিনি। পায়ে হাঁটা পথে আজকাল সেই গাড়ি হাঁকাই। ঘরে একটা এসি বসিয়ে কূল না পেয়ে দ্বিতীয়টা কিনে ফেলি চৈত্র সেলে। পাড়ার মুদিখানায় এসি বসলে ভিড় বাড়ে, তাই সিঁড়ির তলায় বিড়ির দোকানেও কাচ-দরজা, ঠান্ডা ঘর। মুদি দোকানে কিনোয়া খুঁজি, কারণ লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন বলছে, দীর্ঘায়ুর ঠিকানা কিনোয়া। কিনোয়া চাষ করতে ওদিকে পেরু-বলিভিয়া-ইকুয়েডরে ভূমিক্ষয়, খরা। তাতে আমার কী? নিজের মাটিতে শয়ে শয়ে প্রাচীন শস্য নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, বদলে কৃত্রিম গম-চাল-তরিতরকারি তুলে নিচ্ছি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সুপারমার্কেটে।
কৃষক দেখছে সুজলা-সুফলা জমিতে ফলন নেই। চাইলেও ফিরতে পারছে না দেশীয় শস্যে। আবহাওয়ার মতিগতি বোঝা ভার। বছরকার ফলন মার গেলে তাকে টাকা দেবে কে? উৎপাদন বাড়াতে সার শুষে জমি বন্ধ্যাপ্রায়। বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব। বলা হচ্ছে, ৫০ বছরের মধ্যে আর কোথাও কোনও উর্বর জমি থাকবে না। এসবের থেকে মুখ ফিরিয়ে রেস্তরাঁয় বিদেশি খাবার খাচ্ছি। রোজ নষ্ট হচ্ছে পাহাড়প্রমাণ খাবার। সুপারমার্কেট থেকে বেছে নিচ্ছি সুদৃশ্য নিটোল ফল-সবজি, বাদবাকি সামান্য টোল খাওয়া ফসল ফেলে দেওয়া হচ্ছে। কারণ বাজারে তার কদর নেই। ঘুম ভাঙা থেকে রাতে বিছানায় যাওয়া অবধি আমার দৈনন্দিন কার্যকলাপ, সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া পড়ছে পরিবেশে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট বেড়ে চলছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে, পারিবারিক জীবনযাত্রায়, পেশাগত দায়বদ্ধতায়, নাগরিক দায়িত্বহীনতায়, তবু এই পরিণতির বালিতে মুখ গুঁজে ভাবছি, আমি ছাপোষা মানুষ, আমার ভূমিকা কী? রাষ্ট্র বুঝুক।
অথচ গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ক্ষতিপূরণ রোজ ভরছি। শিল্পবিপ্লবের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি শতাব্দীর শেষে আনুমানিক ২.৭ ডিগ্রিতে দাঁড়াবে। নাসা-র স্যাটেলাইট ছবি জানাচ্ছে গত দুই দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠ ১০ সেন্টিমিটার উঠে এসেছে, যার ফলে ভূমন্ডলীয় দক্ষিণের দ্বিপাঞ্চল ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। উপকূলবর্তী গ্রাম শহর থেকে পালানো লক্ষ লক্ষ মানুষ চাইছে পুনর্বাসন। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম দান এক নব্য জনগোষ্ঠী -Ecological refugees। আকস্মিক, অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা আজকের পৃথিবীতে নেহাৎ কম নয়। ইউরোপ-আমেরিকার বহু অঞ্চল এ-বছর খরা-কবলিত। সঙ্গে নতুন উপদ্রব নিয়মিত তাপপ্রবাহ। আদিগন্ত অরণ্যভূমি দাবানলে পুড়ছে। আফ্রিকার মানুষ দৈনন্দিন ব্যবহারের জলটুকুও পাচ্ছে না। বছরদুয়েক আগে আমফান ঝড়ে ভারত-বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষতিপূরণ সম্ভবত ৩০ বিলিয়ন ডলার। এতদসত্ত্বেও মানবপ্রজাতির অবিমৃশ্যকারিতার ফলস্বরূপ যে গ্রহের অস্বাভাবিক উষ্ণায়ন, এবং তার প্রভাবে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবজগতের শিরে সংক্রান্তি, তা নিয়ে আজও সন্দেহ পোষণ করে মূর্খ তর্ক করতে দেখা যায় একদল মানুষকে।
আরও পড়ুন: ঘৃণা আর ভুয়ো খবরের দরজা খুলে দিলেন এলন মাস্ক? টুইটার কিনে আদতে যা চাইছেন তিনি
COP-27 চলছে এখন মিশরের শারম এল-শেখ শহরে। রাষ্ট্রসংঘ আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত ২৭তম বার্ষিকী বৈঠক। COP, অর্থাৎ Conference of Parties- ১৯৯২ সালে United Nations Framework Convention on Climate Change চুক্তি সই করেছিল যে ১৯৭টি রাষ্ট্র, অর্থাৎ 'parties', তারা একজোট হয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধ করার সামগ্রিক পরিকল্পনা করবে। দু'সপ্তাহব্যাপী লাগাতার লেনদেন এবং সন্ধিস্থাপনের চেষ্টা চালাবে বিশ্বের তাবড় নেতা-আমলা। অন্যদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি, আর শক্তি-সংকটের চোখরাঙানো এড়িয়ে রাষ্ট্রসমূহ মাথা চুলকাবে, কীভাবে কমানো যায় গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদন?
ক্লাইমেট ফিনান্স ফান্ডে ধার্য্য হবে কত? কার দেশ কত ধনী? কার বেশি ক্ষয়ক্ষতি? হিসেব চলবে কার অর্থনৈতিক পেশি কতখানি স্ফীত, আগামী বছরগুলোয় আরও কত স্ফীত হবে, তার নিরিখে। এই অর্থনৈতিক উন্নতির হিসেবনিকেশ হবে উৎপাদন ক্ষমতার ওঠাপড়ায়।
যে-কোনও রাষ্ট্রের উন্নয়ন মাপা হয় তার অর্থনৈতিক বাড়বাড়ন্তে। দেশের উৎপাদনশক্তির ওপর নির্ভরশীল দেশের বাজারদর। উৎপাদন করলেই হবে না, মূল্যের বিনিময়ে সেসব সামগ্রী বেচার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেন অক্ষয় থাকে, উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। তাকে ভুলিয়ে রাখা হোক কাল্পনিক অপরিসীম ক্রয়ক্ষমতায়, সামনে সাজানো হোক পসরা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনবে, ব্যবহার করুক না করুক, আরও কিনবে। বর্তমানে তার হাতে টাকা না থাকলে ভবিষ্যৎ থেকে ধার করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। অনিশ্চিত এবং অদেখা আগামীর এই মডেল বিভ্রান্তিকর, যার নেপথ্যে কাজ করে কিছু অনুমান- বাজারের গ্রাফ, যা চির-ঊর্ধ্বগামী, উৎপাদনের সম্ভাবনা অপরিসীম, প্রাকৃতিক সম্পদের কোনও তলানি নেই, জল-স্থল-মাটি সব সীমাহীন সর্বংসহা।
এই অবাস্তব অনুমানের ভিত্তিতে এগিয়ে চলেছে আবিশ্ব অর্থনীতি। খোলা বাজার। যত উৎপাদন, তত রোজগার, তত জিডিপি, তত ক্ষমতা। অর্থাৎ, উৎপাদন থামানো যাবে না, এটাই কন্সট্যান্ট। ক্রেতাকে বলা যাবে না, তোমার হঠকারী ইগোসেন্ট্রিক কেনাবেচার সরাসরি যোগাযোগ বিশ্ব উষ্ণায়নে পড়ছে। অথচ, বলা হবে, ভোগবাদ থেকে প্রস্থান আমাদের একমাত্র উপায়। পুরো গল্পটা ফাঁপা মনে হয়। মনে হয়, হিপোক্রেসি। যে বাজার-ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের মূল্যায়ন হচ্ছে, তার আমূল পরিবর্তন না হলে প্রকৃতির ওপর চাপ বাড়বে মাত্রাতিরিক্ত। যতই ধনী দেশ গরিব দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামলানোর বাজেট নির্ধারণ করুক, তাদের অর্থনীতির অবাধ বিস্তারের মডেল থেকে নেমে বাস্তবের মাটিতে পা রেখে উন্নয়নের অন্য মাপকাঠি না তৈরি হলে COP সম্মেলনের মূল লক্ষ্য অর্জন করা আসলে এক বাৎসরিক ইউটোপিয়া। অথচ, কোনও মহলেই ভঙ্গুর এই বাজার-অর্থনীতি নিয়ে কথা উঠছে না। কেউ একবারের জন্য বলছে না, চলতি সময়ের বাজার-মডেল আসলে মস্ত বড় ভাঁওতা। বরং কয়েক বছর উৎপাদন কমিয়ে ভোগবাদী অর্থনীতি থেকে প্রস্থান করে টেকসই পরিবেশকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থার কথা ভাবি।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা বহু বছর আগেই বিপদের আশঙ্কা জানিয়েছে জনসমাজকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপকতা জনমানস এবং রাজনৈতিক মহলে প্রতিষ্ঠা পেতে কেটে গেছে COP-এর প্রাথমিক বৈঠকগুলি। শেষে ঠিক হয়, সব দেশকে রাষ্ট্রীয় স্তরে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেন গ্যাস উৎপাদন রোধ করতে তৎপর ব্যবস্থা নিতে হবে। উষ্ণায়নের নেপথ্যে মূল খলনায়ক এই দুই বায়বীয় পদার্থ পেট্রোল-ডিজেল ইত্যাদি জীবাশ্ম-শক্তির ব্যবহার বা কৃষিকার্যে রাসায়নিক প্রয়োগের বাইপ্রোডাক্ট। এইসব গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত সরাসরি প্রভাব ফেলবে দেশের অর্থনীতির ওপর। এর ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা উন্নয়নশীল দেশগুলির নেই। দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে সবরকম গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করে দিলেও গত শতাব্দীব্যাপী যে পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস জমা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে তার উল্লেখযোগ্য অবদান। এই অবদানকে বলা হয় legacy carbon credit. ঐতিহাসিক এই কার্বন দেনা শিল্পবিপ্লবের ফসল যার দায় মূলত আজকের ধনী দেশগুলির।
১৯৯৭ সালে কিয়োটো চুক্তিতে ঠিক হয়, কেবলমাত্র ধনী দেশগুলিই বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের দায়িত্ব পালন করবে, উন্নয়নশীল দেশের এতে কোনও দায় নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এই মর্মে যে, চিন, ভারত বা ব্রাজিলের মতো দেশগুলি আজকের দিনে বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদন করছে, দায়িত্বের কিছু ভাগ নিতে হবে তাদেরও। আলাপ-আলোচনা, বাকবিতণ্ডায় কেটে যায় বেশ কিছু বছর। ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে সিদ্ধান্ত হয় ধনী-দরিদ্র দেশ নির্বেশেষে শামিল হবে এই উদ্যোগে, তবে নিজের ক্ষমতাসাপেক্ষে।
ক্ষমতার সাপেক্ষে পদক্ষেপ, এই অংশটি এক্ষেত্রে বিশেষ জরুরি, কারণ কোন দেশ আর্থিকভাবে কতখানি সাহায্য করবে, তার কোনও লিখিত চুক্তি আজ অবধি হয়নি। গত বছর গ্লাসগো শহরের COP সমাবেশে এই আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনার পরিসর তৈরি হয় এবং এ-বছর মিশরে চলতি COP27-এ প্রথমবার সরাসরি আনুষ্ঠানিক অ্যাজেন্ডায় রাখা হয়েছে এই বিষয়। সারা পৃথিবী চেয়ে আছে আলোচনার সারাংশর দিকে। কার ঘরের টাকা যাবে কার ঘরে? যে কথা সভায় উঠবে না, তা হলো, সামর্থ থাকলে, ধনী রাষ্ট্রগুলি উৎপাদন কমানো শুরু করুক, ভোগবাদী অর্থনীতি থেকে সরিয়ে নতুন করে তারা ভাবুক অর্থনীতির কাঠামো। উন্নয়নশীল দেশের উৎপাদন কমানোর উপায় না থাকলে স্থানীয় সম্পদ ব্যয়ে বিচক্ষণতা দেখিয়ে নীতি-নির্ধারকরা কথাবার্তা চালু করুক উৎপাদনকারীদের সঙ্গে।
ভারতের পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব জানিয়েছেন, এই আর্থিক বন্টনের আলোচনায় ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। উন্নয়নশীল এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলির সাহায্য প্রয়োজন, নইলে জলবায়ুঘটিত সংকটের মোকাবিলা করা অসম্ভব, এবং লেগাসি কার্বন ক্রেডিট যেসব দেশের আকাশচুম্বী, তাদের এগিয়ে দেওয়া উচিত, সাহায্যের ডলার। COP-27 এইসব লেনদেনের স্পষ্ট কথা খাতায়-কলমে হোক, এমনটাই চাইছে ভারত। উল্লেখযোগ্য, সমাবেশে ভারতের প্যাভিলিয়নের স্লোগান, 'climate -friendly, sustainable lifestyle'. শোনা যাচ্ছে, প্যাভিলিয়নে ভিড় হচ্ছে অনেক, রোজ সকালে অংশগ্রহণকারীরা যোগাসন করছেন সুস্থ, টেকসই জীবনযাত্রার উদ্দেশ্যে। ভোগসর্বস্ব অর্থনীতি থেকে ভারত ঘুরে দাঁড়াবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিবেশমনস্ক জীবনধারণে। কীভাবে? কেবল ধনীরাষ্ট্রের টাকার জোরে এমন সমাধান সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের মত, ভারতে ভূমিক্ষয়, খাদ্যাভাব, জৈবিক জ্বালানির দিকে পদক্ষেপ সমস্তটাই সম্ভব কৃষিকাজে পরিবর্তন এনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে বিকল্প কৃষিব্যবস্থায় যেভাবে জমির উর্বরতা ফিরিয়ে আনা হিচ্ছে। পানীয় জলের সমস্যার সমাধানের দিকে এগোনো যাচ্ছে কিছু অঞ্চলে। সেখানে কৃষকরা এই পরীক্ষামূলক বিকল্প পদ্ধতি যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছেন রাষ্ট্রের সহায়তায়। রাষ্ট্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্টেকহোল্ডারদের কথাবার্তা সর্বস্তরে শুরু হচ্ছে না কেন? নাগরিক জীবনে পরিবেশ সচেতনতার জন্য কেন নেই তাৎক্ষণিক উৎসাহপ্রদান? পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা সাইকেল ব্যবহার করে কাজে গেলে কি আমি ট্যাক্স সুবিধা পাব?
মোট কথা, অর্থবন্টনের দায় মিটিয়েই কাজ শেষ হবে না। সমস্যার গভীরে চলতি অর্থনৈতিক মডেল, বিভ্রান্তিকর অনুমান এবং অন্ধত্ব। এর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বিশ্বের অবস্থা অচিরেই হবে জাকার্তা শহরের মতো। উন্নয়নের উদাহরণস্বরূপ সামনে রাখা হয় জাকার্তা শহরকে। গত অর্ধশতকে তার বিপুল বিস্তার। স্কাইলাইন দেখলে বোঝার উপায় নেই, নিউ ইয়র্ক না লন্ডন। জমির দাম বাড়ছে, রিয়েল এস্টেট আকাশছোঁয়া। ঝাঁ-চকচকে শপিং সেন্টারে বাজার করছে নাগরিক। এই সবই তো উন্নয়নের চিহ্ন। আত্মপ্রসাদের রসদ। অন্যদিকে নির্মীয়মান শহরের চাপে মাটি চুঁইয়ে নিঃশব্দে ঢুকছে সামুদ্রিক জল। রাস্তায় মাছ ধরছে ঘরহারা মানুষ। বংশানুক্রমিকভাবে জলের ধারে বাস নয় বলে যারা কোনও দিন সাঁতার শেখেনি। অলক্ষ্যে সলিলসমাধি হচ্ছে জাকার্তার।
উন্নয়নের কর গুনতে গুনতে আস্ত এক-পৃথিবী প্রাকৃতিক শরণার্থী নিয়ে এরপর কার দ্বারস্থ হবে আধুনিক মানুষ?