এই শীতে ফের ফিরছে কোভিড আতঙ্ক! বাতাসে হু হু করে বাড়ছে মারণ ভাইরাস
Covid-19 Alert: উৎসবের মরসুমে সারা বিশ্বে দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা়। সেক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
সারা বিশ্বে দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে কোভিড। টানা কয়েক মাস যাবৎ শান্ত থেকে সবাইকে স্বস্তি দিলেও, শীতকালীন উৎসবের মরসুমে আবার মাথা চাড়া দিচ্ছে কোভিড। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজে়শনের (WHO) অতিমারী বিশারদ এবং কোভিড-১৯ প্রযুক্তিক প্রধান মারিয়া ভ্যান কারকোভ সাম্প্রতিক একটি টুইটে জানিয়েছেন কোভিড-১৯ তো বটেই, তার পাশাপাশি বাতাসে সাধারণ ফ্লুয়ের ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসও দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে। ২ ডিসেম্বরের একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন এই মুহূর্তে কেবল ওমিক্রোনেরই ৫০০ টি সাব-ভ্যারিয়েন্ট বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রেস্পিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর বা সর্দির মতো মৃদু উপসর্গ দেখা গেলেও, বয়স্ক বা শিশুদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের প্রভাব হতে পারে মারাত্মক।
WHO-এর আপৎকালীন স্বাস্থ্য কার্যক্রমের কার্যনির্বাহী অধিকর্তা ডা. মাইক রায়ান জানাচ্ছেন, “নোভেল করোনাভাইরাস এখনও দ্রুত নিজের রূপ বদলাচ্ছে। যার ফলে একাধিক সাবভ্যারিয়েন্ট এখনও আমাদের চিন্তায় ফেলছে। যদি জানতে চান কোভিড এখনও আমাদের বিপদে ফেলতে পারে কিনা, আমি বলব হ্যাঁ।"
Please take care. #COVID19, flu, RSV & other pathogens are circulating at very high rates right now. Use all available tools to keep you & your loved ones safe: vaccinate,mask,distance,ventilate,self test, stay home if unwell,clean hands… know your risk, lower your risk. https://t.co/lbYkYTZ4Qy
— Maria Van Kerkhove (@mvankerkhove) December 10, 2022
WHO-এর ১৪ ডিসেম্বরের সাপ্তাহিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ১১ ডিসেম্বর কোভিডে সংক্রামিতের সংখ্যা সারা বিশ্বে ৬৪৫ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় সপ্তাহে মৃত্যুর হার বেড়েছে ১০ শতাংশ। ১১ ডিসেম্বর সারা বিশ্বে কোভিডের কবলে মৃতের সংখ্যা ছিল ৬.৬. মিলিয়নেরও বেশি। "হয়তো সব দেশে এই মুহূর্তে কোভিড দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে না। তবে আপনি যদি সারা বিশ্বের নিরিখে দেখেন, তাহলে কিন্তু কোভিড আবারও মানুষকে সঙ্কটের মুখে ফেলছে। এবং নোভেল করোনাভাইরাস থাকবেই। এর নিশ্চিহ্ন হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই”, জানাচ্ছেন ডা. রায়ান।
আরও পড়ুন- ৮ কোটি শিশু বিপন্ন, ৩০ টি দেশ আক্রান্ত! করোনার পরে মহামারী হয়ে ফিরছে কলেরা?
কোভিডের পাশাপাশি ছড়াচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা়ও
উৎসবের মরসুমে সারা বিশ্বে দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা়। সেক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ইনফ্লুয়েঞ্জা় প্রায় অতিমারীর আকার নিয়েছে উত্তর আমেরিকায়। সেখানে ইনফ্লুয়েঞ্জা়য় সব থেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ৬৫ ও তার উর্ধ্বে বয়স্করা এবং ৫ বছরের নীচে শিশুরা। বেড়েছে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঘটনাও। WHO জানাচ্ছে, উত্তর আমেরিকায় চলতি বছরে ইনফ্লুয়েঞ্জা় যে হারে বাড়ছে, বিগত পাঁচ বছরেও এমনটা দেখা যায়নি।
বর্তমানে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে চিন এবং কোরিয়াতে অত্যধিক না হলেও, সেখানকার ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ চিন্তায় ফেলছে WHO-এর মহামারী বিশারদদের। এই মুহূর্তে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ বা H3N2 সাবটাইপের দাপটই নজরে সবচেয়ে বেশি, জানাচ্ছে WHO। তবে আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এই সাবটাইপটির পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে Influenza A (H1N1) pdm09। অন্যদিকে, ইউরোপে H3N2 সাবটাইপ দাপিয়ে বেড়ালেও, Influenza A (H1N1) pdm09 ও Influenza B-এর উপস্থিতিও চোখে পড়েছে WHO-এর। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও এই তিন সাবটাইপেরই প্রকোপ বিভিন্ন তারতম্যে দেখা গিয়েছে।
LIVE: Q&A on #COVID19 with @DrMikeRyan and Dr @mvankerkhove. #AskWHO https://t.co/M5AWWZtSPU
— World Health Organization (WHO) (@WHO) December 15, 2022
ইনফ্ল্যুয়েঞ্জা়র পাশাপাশি উত্তর আমেরিকাতে বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা় লাইক ইলনেস (ILI)। কানাডাতেও হু হু করে বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা় লাইক ইলনেসের মতো ঘটনা। পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা় লাইক ইলনেসের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে এবং এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু এবং তরুণরা।
বর্তমান পরিস্থিতি মাথায় রেখে, উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ প্রতিরোধে নজরদারি বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজে়শন। পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা়র সংক্রমণ ও রোগের প্রকোপ কমাতে জনসাধারণকে ইনফ্লুয়েঞ্জা়র ভ্যাক্সিন নিতেও আবেদন জানাচ্ছে তারা।
নোভেল করোনাভাইরাসের রূপ বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে, বদলাচ্ছে কোভিড-ভ্যাক্সিনের নকশাও। আমরা ইতিমধ্যেই তৃতীয় প্রজন্মের কোভিড ভ্যাক্সিন ব্যবহার করছি। কিন্তু ভাইরাস যেহেতু ক্রমাগত রূপ বদলাবে, ভবিষ্যতের কোভিড-ভ্যাক্সিনগুলিতেও ক্রমাগত বদল আনতে হবে। "ঠিক এই সমস্যাটা দেখা যায় ইনফ্লুয়েঞ্জা় ভাইরাসের ক্ষেত্রেও। ইনফ্লুয়েঞ্জা়র ভ্যাক্সিনও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা়র নির্দিষ্ট ‘স্ট্রেইন’-কেই প্রতিহত করে মাত্র। তাই আমাদের বারে বারে ইনফ্লুয়েঞ্জা়র ভ্যাক্সিন নিতে হয়", জানাচ্ছেন ডা. রায়ান।
আরও পড়ুন- করোনার পর ফের মহামারীর সামনে পৃথিবী? কারণ দেখিয়ে ভয়াবহ ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের
বায়ুবাহিত ভাইরাস থেকে বাঁচতে কী করণীয়?
"আমরা কোভিডের সঙ্গে বাঁচতে শিখে গেছি। বিগত দুই বছর ধরে আমরা সহাবস্থান করছি কোভিডের সঙ্গে। প্রথম প্রথম যেভাবে আমরা আতঙ্কিত হয়েছিলাম, সেই আতঙ্কের রেশ আর নেই বলেই আমার ধারণা।... কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে কোভিডের হাত থেকে বাঁচতে যা যা দরকার, তা কিন্তু সব দেশে এখনও নেই এবং সেখান থেকেই আবারও ছড়াতে পারে এই মারণ ভাইরাস," জানাচ্ছেন ডা. রায়ান।
"এখনও সারা বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ ভ্যাক্সিনের একটি ডোজ়ও পাননি। যারা ভ্যাক্সিন এখনও নেননি, তাঁরা যেন অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাক্সিন নেন। নইলে কিন্তু আমরা বারবার কোভিডে আক্রান্ত হতে থাকব", জানাচ্ছেন মারিয়া ভ্যান কারকোভ।
তাঁর মতে কোভিড-১৯, ফ্লু, রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস এবং অন্যান্য বায়ুবাহিত ভাইরাস থেকে নিজেদের বাঁচাতে ভ্যাক্সিন অবশ্যই নিতে হবে। তার পাশাপাশি মাস্ক ও স্যানিটাইজা়রের ব্যবহার করতে হবে। নিজের হাত ঘন ঘন পরিষ্কার রাখা কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি ঘরের মধ্যে পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে। অসুস্থ বোধ করলে নিজেকে সাময়িকভাবে সবার থেকে আলাদা রাখা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টিতেও জোর দিয়েছেন মারিয়া ভ্যান কারকোভ।